1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

নজরুল ও বঙ্গবন্ধু : অভিন্ন স্রষ্টা

আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০২৩

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গভীর যোগ ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উদ্ভাবনের পেছনে যে নামটি জড়িত তা হলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাই তো কবির ৭৩তম জন্মবার্ষিকীতে ২৪ মে (১১ জ্যেষ্ঠ) ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনেন স্বাধীন বাংলাদেশে। তিনি জানতেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে কবি নজরুল ছিলেন অবিরাম প্রেরণার উৎস। তার কবিতা ও গান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উজ্জীবিত করেছে।

বাঙালির চেতনা ও মননে এই মহান দুই পুরুষের আবির্ভাব ছিল বাংলার আকাশে ধূমকেতুর মতো। দুজনেই ছিলেন স্বাধীনতার অগ্নিপুরুষ। বাঙালি উজ্জীবিত হয়েছিল এই দুই স্বাধীনতাকামী মহান পুরুষের দ্বারা। ‘বাঙালির জয় হোক’ বলে যে মুক্তির কথা কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, বঙ্গবন্ধু সেই ইচ্ছাকে পরিপূর্ণতা দিলেন ‘জয় বাংলা’ বলে। দুজনেই আজীবন সংগ্রাম করেছেন সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে। সাহিত্যের কবি কাজী নজরুল, আর রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধু।

নজরুলের বিদ্রোহী কবিতার ৯০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ভারত যৌথ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বলেছিলেন, ‘বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল এবং বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানসিকতার দিক থেকে সমান্তরাল অবস্থানে রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ইচ্ছা ছিল শোষণহীন বাংলাদেশ গড়া। নজরুলও চেয়েছেন বঞ্চনাহীন, অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়তে। দুজনের স্বপ্ন ছিল এক ও অভিন্ন। দু’জনেই ছিলেন বিদ্রোহী। একজন সাহিত্যে, অন্যজন রাজনীতিতে। এজন্য একজনকে বলা হয় ‘পোয়েট অব লিটারেচার’, অন্যজনকে ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’।

পশ্চিমবঙ্গের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮ সালের বিশেষ সমাবর্তনে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতির পিতা যেমন দেশের শোষণপীড়িত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম, আন্দোলন করেছেন, কারাবরণ করেছেন, আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, ঠিক তেমনি নজরুলও শোষিত-বঞ্চিত মানুষের কথা লেখার মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন। আর এ কারণেই কারাবরণ করতে হয়েছে। তাই একদিকে বাংলা সাহিত্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম, তেমনি অন্যদিকে রাজনীতির কবি শেখ মুজিবুর রহমান’।

কবিকে অসম্ভব শ্রদ্ধাভরে দেখতেন বঙ্গবন্ধু। বাঙালির জয়ে কবির জন্মোৎসব দেশে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরই বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টায় বিদ্রোহী কবিকে ঢাকায় আনা হয়। ‘হে কবি’ সম্বোধন করে নজরুল ও তার পরিবারের সদস্যদের বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি লেখেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭২ সালের ২০ মে বঙ্গবন্ধু তার ব্যক্তিগত প্রতিনিধি হিসেবে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক ও সমাজসেবা সম্পাদক মোস্তফা সারওয়ার এবং পূর্তমন্ত্রী মতিউর রহমানকে কলকাতায় পাঠান।

একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু যোগাযোগ করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। চিঠির বিবরণে লেখা হয়, ‘আমি আমার বন্ধু ও সহকর্মী জনাব মতিউর রহমান এবং আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক জনাব মোস্তফা সারওয়ারকে আপনার কাছে পাঠাচ্ছি। অনুগ্রহপূর্বক আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন। মুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জনগণ ও আমার পক্ষে আমি আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনার জন্মবার্ষিকীতে আপনার আদর্শে বাংলাদেশকে সিক্ত হতে দিন। আমরা বাংলাদেশে সাগ্রহে আপনার আগমনের প্রতীক্ষা করছি। আমি আশা করি, আপনি অনুগ্রহ করে আসবেন। জয় বাংলা।’ (বাংলাদেশ : প্রবন্ধ, বক্তৃতা, বিবৃতি, বাণী, নির্দেশ ও সাক্ষাৎকার, শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমি, পৃ. ৬৭৩)।

বাংলাদেশে আসার পর নজরুলকে নিয়ে যাওয়া হয় কবিভবনে, ধানমন্ডি ২৮ নম্বর রোডের ৩৩০/বি নম্বরের একটি দ্বিতল বাড়িতে। ধানমন্ডিতে নজরুলের জন্য এই বিশেষ বাড়িটিও রাষ্ট্রীয়ভাবে দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির খুব কাছেই ছিল নজরুলের জন্য বরাদ্দকৃত বাড়িটি। বাড়িটি পছন্দ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু নিজেই। ২৪ মে নজরুল পা রাখলেন খোলামেলা এই বাড়িতে, সবুজ ঘাসের আঙ্গিনা কবিকে মনে করিয়ে দেয় বাংলাদেশে আছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে শ্রদ্ধা জানাতে তার ভবনে এলেন। তার হাতে বিশাল ফুলের ডালি। গভীর শ্রদ্ধাভরে পুষ্পমালা পরিয়ে দিলেন কবিকে। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব কবির হাতে তুলে দিলেন নিজ হাতে অতিযত্নে বানানো ফুলের তোড়া।

বঙ্গবন্ধু পরম স্নেহে বারবার হাত বুলিয়ে দিতে থাকলেন কবির মাথায় ও পিঠে। নির্বাক কবি অপলক দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইলেন বঙ্গবন্ধুর দিকে। হাত বাড়িয়ে কী যেন বিড়বিড় করে বললেন বঙ্গবন্ধুকে। বাকশক্তিহীন সে মুখের ভাষা বোঝা গেল না। বেশ কিছুক্ষণ বঙ্গবন্ধু কাটালেন কবির সান্নিধ্যে (দৈনিক বাংলা, ২৫ মে, ১৯৭২)। এ সময়ের স্মৃতিচারণে কবির নাতনি খিলখিল কাজী লেখেন, ‘…এর কিছুক্ষণের মধ্যে সেই মহান নেতা বঙ্গবন্ধু হাসি মুখে দাদুকে শ্রদ্ধা জানাতে এলেন। পরিবারের পক্ষ থেকে বাবা ও চাচা শ্রদ্ধাভরে দাদুর কাছে নিয়ে গেলেন। …তাকে দেখেই বুঝতে পেরেছিলেন দাদুর প্রতি তার অসীম শ্রদ্ধাবোধ ও অফুরন্ত ভালোবাসা।’

সে যুগের সদা প্রাণোচ্ছল কবি কাজী নজরুল ইসলাম। পরাধীন বাংলার সর্বত্র চষে বেড়িয়েছেন তিনি বিদ্রোহের গান গেয়ে, মূক মানুষের মুখে ভাষা ফুটিয়ে, জাগিয়ে তুলেছিলেন ঘুমন্ত বাঙালিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে। দেশমাতৃকার মুক্তিপথে কবির সে স্বদেশভূমি আজ স্বাধীন। বাঙালি জাতি মুক্তির আনন্দে উদ্বেল। কিন্তু মহাবিদ্রোহের সে কবিকণ্ঠ আজ নির্বাক। মূক-মুখে ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে কবি এসেছেন এক নতুন বাংলাদেশে, পরম সম্মানিত রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে। কলকাতা থেকে ঢাকায় আসার পরপরই কবিকে দেখতে যান বঙ্গবন্ধু। সঙ্গে ছিলেন বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব, দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং ছোট্ট শিশু শেখ রাসেল।

গণভবন থেকে কাজ সেরে বঙ্গবন্ধু গেলেন তার ধানমন্ডির বাড়িতে। বুকসেলফ থেকে বের করলেন বিদ্রোহী কবির কাব্যগ্রন্থ ‘সঞ্চিতা’। আবেগ আর উচ্ছ্বাস জড়িয়ে আবৃত্তি করলেন ‘বিদ্রোহী’ কবিতা। বঙ্গবন্ধু বিদ্রোহী কবিকে দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কবি পরিবারের মতামতকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই কবির বাড়ি নির্ধারণের পর কবিপুত্র কাজী সব্যসাচী ও কাজী অনিরুদ্ধ’র সঙ্গে আলোচনাও করেছেন। জন্মদিনের আগের দিনে দেশে এলেন বাংলার কবি, বাঙালির কবি নজরুল। কাজী নজরুল ইসলামের ৭৩তম জন্মদিবস উপলক্ষে নজরুল একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বাণী দিয়েছিলেন তার সংক্ষিপ্ত নিম্নরূপ ‘নজরুল বাংলার বিদ্রোহী আত্মা ও বাঙালির স্বাধীন ঐতিহাসিক সত্তার রূপকার। বাংলার শেষ রাতের ঘনান্ধকারে নিশীথ-নিশ্চিন্ত নিদ্রায় বিপ্লবের রক্তলীলার মধ্যে বাংলার তরুণরা শুনেছে রুদ্র বিধাতার অট্টহাসি কাল ভৈরবের ভয়াল গর্জন নজরুলের জীবনে কাব্যে সংগীতে ও কণ্ঠে প্রচণ্ড সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের মতো, লেলিহান অগ্নিশিখার মতো, পরাধীন জাতির তিমির-ঘন অন্ধকারে বিশ্ববিধাতা নজরুলকে এক স্বতন্ত্র ছাঁচে গড়ে পাঠিয়েছিলেন এই ধরার ধুলায়। সাহিত্যে সম্মানের সুউচ্চ শিখরে নজরুলকে পথ করে উঠতে হয়নি, পথ তাকে হাত ধরে ঊর্ধ্বে তুলেছে।

মহাঅভ্যাগতের মতো তার আগমন নন্দিত হয়েছে। সে এসেছে ঝড়ের মাতম তুলে, বিজয়ীর বেশে। সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, পরাধীনতার বিরুদ্ধে নজরুলের অগ্নিমন্ত্র বাঙালি জাতির চিত্তে জাগিয়েছিল মরণজয়ী প্রেরণা, আত্মশক্তিতে উদ্বুদ্ধ হওয়ার সুকঠিন সংকল্প। শুধু বিদ্রোহ ও সংগ্রামের ক্ষেত্রেই নয়, শান্তি ও প্রেমের নিকুঞ্জেও কবি বাংলার অমৃতকণ্ঠ বুলবুল। দুঃখের বিষয়, বাংলা ভাষার এই বিস্ময়কর প্রতিভার অবদান সম্বন্ধে তেমন কোন আলোচনাই হলো না। বাংলার নিভৃত অঞ্চলে কবির বিস্মৃৃত-প্রায় যে সব অমূল্য রত্ন ছড়িয়ে আছে তার পুনরুদ্ধারে যে কোনো প্রচেষ্টাই প্রশংসার যোগ্য। …শুধু ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে তার অনন্য সৃষ্টি, আর জীবন্ত অবস্থায় পাথরের মূর্তির মতো সকলের কৃপাপ্রার্থী ও অসহায় বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ও সংগীতকার।’

বঙ্গবন্ধু প্রিয় কবির জন্য এক হাজার টাকা মাসিক ভাতা মঞ্জুর করেন (দৈনিক বাংলা, ২৫ মে, ১৯৭২)। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বরে কাজী নজরুল ইসলামকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। নজরুলকে ভারতে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ ছিল। বঙ্গবন্ধু চাইছিলেন নজরুল যেন বাংলাদেশে থাকেন। তাই তিনি এ বিষয়ে কবি পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেন। তারা বলেন, কবি যেন বাংলাদেশেই থাকেন। কেননা বাড়িটি খোলামেলা, নজরুল এখানে সুস্থবোধ করছেন। নজরুলের পুত্রবধূর কাছ থেকে সমর্থন পেয়ে সিদ্ধান্ত নেন। তিনি যখনই নজরুলের বাড়িতে যেতেন তখন বাড়ির পরিচ্ছন্নতা, খাবার আর চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবিভবনে আসা প্রসঙ্গে নজরুলের নাতনী খিলখিল কাজী লিখেছেন, ‘তিনি প্রায়ই দাদুকে দেখতে চলে আসতেন ধানমন্ডির কবিভবনে। মাকে খুব স্নেহ করতেন, মাকে নাম ধরে ডাকতেন উমা বলে। মায়ের কাছে খোঁজখবর নিতেন দাদুর স্বাস্থ্য, খাওয়া-দাওয়া। সব বিষয়ে তার নজর ছিল প্রখর। এত সুন্দর বাগানওয়ালা বাড়ি পেয়ে দাদুও খুব খুশিতে বিভোর থাকতেন। আমাদের ছোটদের সঙ্গেও বঙ্গবন্ধু কথা বলতেন, ‘কেমন লাগছে এই দেশে? এখানে থেকে যাবা-আর যাবা না ভারতে।’ যখন তিনি আসতেন দাদুকে দেখতে আমরা তাকে ঘিরে থাকতাম। মাঝে মাঝে আমরা, মা, বাপি সবাই মিলে বঙ্গবন্ধু ও দাদুর সামনে গান গাইতাম, তিনিও মাঝে মাঝে গলা মেলাতেন। তার আগমনে আমাদের বাড়িতে আনন্দের বন্যা বয়ে যেত। তিনি সবসময় আমাদের পরিবারের একজন অভিভাবকের মতন ছিলেন। মায়ের সাথে দাদুর সবরকম আলোচনা করতেন। তার ব্যবহার কোনোদিন রাজনৈতিক গণ্ডির মধ্যে পাইনি, অসামান্য আন্তরিকতা ছিল তার ব্যবহারে।’

কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বহু আগেই। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে (পৃ. ১৫-১৬) তিনি লিখেছেন, ‘একটা ঘটনার দিন-তারিখ আমার মনে নাই, ১৯৪১ সালের মধ্যেই হবে, ফরিদপুর ছাত্রলীগের জেলা কনফারেন্স, শিক্ষাবিদদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা হলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির, ইব্রাহিম খাঁ সাহেব। সে সভা আমাদের করতে দিল না, ১৪৪ ধারা জারি করল। কনফারেন্স করলাম হুমায়ুন কবির সাহেবের বাড়িতে। কাজী নজরুল ইসলাম সাহেব গান শোনালেন।

এক অভিন্ন চিন্ত-চেতনা ও স্বপ্নের নায়ক ছিলেন নজরুল ও বঙ্গবন্ধু। জাতি-ধর্মের বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনের দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিলেন এই দুই মহান নেতা। বিদ্রোহী কবি উচ্চারণ করেন ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান/ মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ’। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাঙালি-অবাঙালি হিন্দু-মুসলমান সবাই আমাদের ভাই তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের’।

বিদ্রোহী কবি ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-সমিতির রজত-জুবিলি অনুষ্ঠানের ভাষণে বলেন ‘বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি, আমি নেতা হতে আসিনি’। বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চের ভাষণে বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই’।

‘বিদ্রোহী’ কবিতার শেষাংশে কবি বলেন, ‘যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না, বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত’। বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণে লড়াইয়ের ডাক দিয়ে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে নজরুলের গানকে রণসঙ্গীত হিসেবে মর্যাদা দেন। নজরুল ও বাংলাদেশকে এমনি করে একীভূত করেছিলেন বাঙালির মহানায়ক।

অসুস্থ কবির খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি তার নির্দেশে স্বাস্থ্য পরীক্ষার মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের জুলাইয়ে কবির স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। বঙ্গবন্ধু তার উন্নত চিকিৎসার জন্য নির্দেশ দেন। ২২ জুলাই কবিকে ভর্তি করা হয় তৎকালীন পিজি হাসপাতালে। ১১৭ নম্বর কেবিনে কবির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এর প্রায় এক মাস পর ১৫ আগস্ট খুনিরা সপরিবারে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুকে। আর কবিও ফিরে যেতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বাড়িতে। হাসপাতালে এক বছরেরও অধিক সময় চিকিৎসা নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, সেটাও ২৯ আগস্ট। বঙ্গবন্ধু ও কবি নজরুল ইসলামের তুলনা করতে গিয়ে খিলখিল কাজী একজনকে বলেছেন মহাকবি, অন্যজনকে মহানেতা। খিলখিল কাজীর ভাষায় এই মহাকবি ও মহানেতা দেশের জন্য দেশের মানুষের কল্যাণে ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক এবং স্বতন্ত্র ও এককভাবে বাঙালির প্রাণে আজীবন স্পন্দিত হতে থাকবেন, যার ক্ষয় নেই।

লেখক : আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন, উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক), গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ