1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ছয় লেনের চার সেতুতে বদলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩

নামে মহাসড়ক হলেও বাস্তবে সরু, আঁকাবাঁকা। এর ফলে ছিল দুর্ঘটনা আর যানজটের চরম ভোগান্তি। সেই ক্ষীণকায় সড়কের দৃশ্য আমূল বদলে যাচ্ছে। ছয় লেনের চারটি সেতু মহাসড়কটির চেহারা পাল্টে দিচ্ছে। এতে খরচ হচ্ছে ৭৫১ কোটি টাকা। পাশাপাশি হচ্ছে সড়ক সম্প্রসারণ। এর ফলে গতি আসবে মহাসড়কটিতে।

এমন পরিবর্তন হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের। উন্নয়ন কাজ শেষ হলে স্বস্তি পাবেন দেশের প্রধান পর্যটন শহর কক্সবাজারে যাতায়াত করা যাত্রীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তঃদেশীয় পরিবহন ও লজিস্টিকস নেটওয়ার্ক উন্নত করা এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে বাংলাদেশের প্রধান আন্তর্জাতিক সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত করার মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সহজ করার লক্ষ্যে মহাসড়কটির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করা হচ্ছে। ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (সিবিআরএনআইপি)-এর আওতায় ওই মহাসড়কে নির্মিতব্য সেতু চারটির কাজ শেষ পর্যায়ে। এগুলো পুরোপুরি ব্যবহার শুরু হলে বান্দরবান, কক্সবাজারের পর্যটন বিকাশ এবং আন্তঃদেশীয় যোগাযোগে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল ব্যবহারকারীরাও সুবিধা পাবেন।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ৩৬৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (সিবিআরএনআইপি) হাতে নেওয়া হয়। এরমধ্যে সরকারি অর্থ বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ২ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপানি সাহায্য সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।

এশিয়ান হাইওয়ের আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে আন্তঃদেশীয় সড়ক যাতায়াত নিরাপদ করতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এশিয়ান হাইওয়ের জন্য সড়ক নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে যশোর জেলার শার্শা ও ঝিকরগাছা, নড়াইল জেলার সদর ও লোহাগড়া, গোপালগঞ্জের সদর ও কাশিয়ানী, খাগড়াছড়ির পার্বত্য জেলা, চট্টগ্রামের মীরসরাই, ফটিকছড়ি, পটিয়া ও চন্দনাইশ এবং কক্সবাজারের চকরিয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে।

এরমধ্যে সিবিআরএনআইপি-এর প্যাকেজ সি-এর আওতায় ৭৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চারটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চট্টগ্রাম থেকে ২৫ কিলোমিটারের মাথায় পটিয়ার চাঁনখালী খালের উপর ইন্দ্রপুল, ৩৯ কিলোমিটারের মাথায় চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া বরগুনি খালের উপর মাজারপয়েন্ট, ৪৭ কিলোমিটারের মাথায় দোহাজারী শঙ্খ নদীর ওপর সাঙ্গু এবং ১০০ কিলোমিটারের মাথায় চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর উপর চিরিঙ্গা সেতু নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

চিরিঙ্গা সেতু ৩২১ মিটার, সাঙ্গু সেতু ২৩৮ মিটার এবং মাজারপয়েন্ট ও ইন্দ্রপুল সেতু দুটি ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের। সবগুলো সেতুই ৩১ দশমিক ২ মিটার প্রস্থের। পাশাপাশি চিরিঙ্গা সেতুতে ৫৭৫ মিটার, সাঙ্গু সেতুতে ৭৩৮ মিটার, মাজারপয়েন্ট সেতুতে ৮৭০ মিটার এবং ইন্দ্রপুল সেতুতে ৮১৩ মিটার ৬ লেনের সংযোগ সড়ক হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চারটি সেতু দিয়েই এরই মধ্যে গাড়ি চলাচল আংশিক শুরু হয়েছে। চলছে সংযোগ সড়কের কাজ।

ইন্দ্রপুল অংশে দেখা গেছে, সেতু নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। সময়ের ব্যবধানে ওই স্থানটি চেনাই যাচ্ছে না। সেতুর কাজের কারণে পুরো এলাকার দৃশ্য পাল্টে গেছে। সরু ২৪ ফুটের সড়ক বিস্তৃত হয়ে ৬ লেনে পরিণত হচ্ছে। সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ভেঙে ফেলতে হয়েছে বেশ কয়েকটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবনও। বর্তমানে নতুন নির্মিত উঁচু রাস্তার কারণে পাশের বেশ কয়েকটি ভবনের নিচতলা সড়কটির নিচে পড়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সেতুর কারণে পাশের একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুল খুবই ঝুঁকিতে পড়েছে। আল্লাই ওখাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামের ওই স্কুলটিতে স্থানীয় চার শতাধিক শিশু পড়ালেখা করে। সেতু ও সংযোগ সড়ক হয়ে গেলে স্কুলটিতে শিশুদের চলাচলে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

এ নিয়ে পটিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু আহমদ বলেন, ইন্দ্রপুল সেতু ও সড়কটি সম্প্রসারণের কারণে আল্লাই ওখাড়া প্রাইমারি স্কুলটি খুবই ঝুঁকিতে পড়েছে। সড়কটি হয়ে গেলে চলাচলকারী গাড়িগুলোর গতি বেড়ে যাবে। তখন শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করবে। তাই ওই স্থানে একটি ওভারব্রিজ জরুরি। সড়কের পাশাপাশি একটি ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হলে শিশুরা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারবে।

এ ব্যাপারে কথা হলে দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ শেষ পর্যায়ে। দু-এক মাসের মধ্যেই টানেল চালু হতে পারে। টানেলের জন্য আমরা কালাবিবির দিঘি টানেলের মুখ থেকে শিকলবাহা ক্রসিং পর্যন্ত ৬ লেনের সড়ক নির্মাণ করেছি। আমাদের প্রকল্পের কাজও শেষ পর্যায়ে। টানেল চালু হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে চাপ বাড়বে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে এখন যে চারটি সেতু ও ছয় লেনের সড়ক হচ্ছে তার সুফল টানেল ব্যবহারকারীরা ভোগ করবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে শিকলবাহা ক্রসিং থেকে কেরানি হাট পর্যন্ত পৃথক ৫টি প্যাকেজের আওতায় ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ কিলোমিটার সরু সড়ককে সম্প্রসারণ করে ৩৪ ফুট করা হচ্ছে। দুই প্যাকেজে শিকলবাহা থেকে পটিয়া পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। পটিয়ার পর থেকে আরও দুই প্যাকেজে ১২ কিলোমিটারের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট একটি প্যাকেজের টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন।

ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-এর প্রকল্প পরিচালক ও সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমদ বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি একটি আন্তঃদেশীয় সংযোগ সড়ক এবং এশিয়ান করিডোরের একটি অংশ। মহাসড়কটি দিয়ে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত ও একটি সুন্দর সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চারটি ৬ লেনের সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। আগে সেতুগুলো দুই লেনের ছিল। এখন সেতুগুলোর কাজ শেষ হচ্ছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে তিনটি সেতুর কাজ ৯৯ শতাংশ এবং পটিয়ার ইন্দ্রপুল সেতুর কাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী জুলাইয়ের মধ্যেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ‘সি-প্যাকেজ’ এর পুরো কাজ শেষ করতে পারবো।

তিনি বলেন, সেতু চারটি পুরোপুরি ব্যবহার শুরু হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ভ্রমণ আরামদায়ক হবে। সড়কে আগের তুলনায় অনেক সময় বাঁচবে। গাড়ি চলাচলেও গতি আসবে। পাশাপাশি পর্যটন ও আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণেও ব্যাপক ভূমিকা রাখবে


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ