1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূলতা পেরিয়ে সক্ষমতা ও গর্বের স্মারক পদ্মা সেতু

ই-বার্তা সম্পাদকীয় : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২০ জুন, ২০২২

বাঙালির সক্ষমতা ও গর্বের স্মারক হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। কিন্তু এই অসাধ্য সাধনে পাড়ি দিতে হয়েছে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত অধ্যায়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরই ফেব্রুয়ারি মাসে পদ্মা সেতুর জন্য ডিজাইন কনসালট্যান্ট নিয়োগ করে। কনসালট্যান্ট সেপ্টেম্বর ২০১০-এ প্রাথমিক ডিজাইন সম্পন্ন করে এবং সেতু বিভাগ। ২০১১ সালে সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তিবদ্ধ হয়। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি বাতিল করে। এ সময় শুরু হয় ষড়যন্ত্রের খেলা। বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি জাইকা, এডিবিসহ দাতাসংস্থাগুলোও সরে দাঁড়ায়। সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়। সংশ্লিষ্ট সচিবসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে ড. ইউনুস। বিশ্বব্যাংক পদ্মা প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ানোর আগের বছর ২০১১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে ড. ইউনুসকে সরিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এটি দিয়েই বিশ্বব্যাংককে পদ্মা-বিমুখ করার পেছনে প্রভাবিত করা হয়েছে।

পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংক সরে দাঁড়ানোর পর নানা সমালোচনা আর কটাক্ষে প্রকল্প কাজকে বিদ্ধ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনসহ দলের নেতারা।

বিএনপি চেয়ারপারসন সেই সময় বলেছিলেন, পদ্মা সেতু এ আওয়ামী লীগের আমলে আর হবে না। যদি জোড়াতালি দিয়ে বানায় সেই সেতুতে কেউ উঠতে যাবেন না। অনেক ঝুঁকি আছে।

২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ছাত্রদলের এক আলোচনায় বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কিন্তু পদ্মা সেতু আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। এ সেতু জোড়াতালি দিয়ে বানানো হচ্ছে। এ সেতুতে কেউ উঠবেন না। অনেক রিস্ক আছে।’

২০১৮ সালের ১২ জানুয়ারি পল্টন কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘একটা ভ্রান্ত ও ভুল ডিজাইনের উপরে পদ্মা সেতু নির্মিত হলে সেটা যে টিকবে না, সেটা তো উনি (খালেদা জিয়া) ভুল বলেননি। বরং তিনি সাচ্চা দেশপ্রেমিকের কাজ করেছেন। তোমরা এখনও এলার্ট হও, চেঞ্জ দ্য ডিজাইন এবং সেটা সঠিকভাবে নির্মাণ হতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ড. তাজমেরি এসএ ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প দাতা সংস্থা ছাড়া কোনো ভাবেই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আর বিকল্প অর্থায়নে এই প্রকল্প করা সম্ভব নয়।পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে সভা সমাবেশ করার আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সিপিডির বক্তব্য ছিল, আমাদের মতো দুর্বল অর্থনীতির দেশের বিপুল উন্নয়ন চাহিদা শুধু দেশীয় বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ দিয়ে মেটানো সম্ভব নয়।…..পদ্মা সেতু হলে আগামী বছরগুলোয় সামাজিক খাতে বরাদ্দ যথোপযুক্ত বৃদ্ধি না পাওয়ার আশঙ্কা রয়ে যাবে। এর পরও প্রশ্ন উঠতে পারে, বছর বছর উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ দিয়ে নামী-দামি বিদেশি ঠিকাদার নির্মাতাদের আকর্ষণ করা যাবে কি না।

অর্থমন্ত্রণালয়ের সাবেক উপদেষ্টা ড: আকবর আলী খান বলছেন, সরকার পদ্মা সেতু করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দিকগুলো যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করা হয়নি।

নিজস্ব অর্থায়ন হলেও পদ্মা সেতু গড়া কঠিন বলে মন্তব্য করেছিলেন সিঙ্গাপুরস্থ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. স্বপন আদনান৷ প্রযুক্তি এবং সংগঠনের অভাবকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে আধা নান বলেন, পুনর্নির্বাচনের আশায় সরকার হয়তো যে কোনো পথে এগিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রতীকি সূচনা শুরু করার পথে চলতে পারে৷ তবে বাংলাদেশের মানুষ হয়তো এত বোকা না, যে তারা এই অবস্থায় প্রকল্পের বাস্তবায়নের সম্ভাবনায় বিশ্বাস করবে৷

অর্থনীতি বিষয়ক গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণের প্রধান রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, যদি এই ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হয় তাহলে সামাজিক অবকাঠামো খাত তথা শিক্ষা, স্বাস্থ্য সামাজিক প্রতিরক্ষণ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) পটুয়াখালী জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলে আলী খান বলেন, বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি এডিবি ঋণ প্রস্তাব ফিরিয়ে নেওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্প আদৌ আলোর মুখ দেখবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার ফোরাম ভোলা জেলার সভাপতি মোবাশ্বির উল্ল্যাহ চৌধুরীও মনে করেন, বাংলাদেশের পক্ষে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব নয়। এটা অবাস্তব।

বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলেছিলেন, সেতুর নিমার্ণ করা তাদের লক্ষ্য ছিল না, এ সরকারের লক্ষ্য ছিল ২ হাজার ৪শো কোটি টাকার ঘুষ নেয়া, এটাই মূল লক্ষ্য।

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার দাবি করেছিলেন, লাগামহীন দুর্নীতির বড় উদাহরণ পদ্মা সেতু। আর সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। প্রশ্ন তোলে টিআইবিও।

বদিউল আলম মজুমদার বলেছিলেন, দুর্নীতি কিভাবে আমাদের পেছনে নিয়ে যাচ্ছে তার আরেকটি উদাহরণ এটি (পদ্মা সেতু)। জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।

দুর্নীতি দমন কমিশনরে ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল কোনো প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু কানাডার পুলিশ এসে সেই প্রমাণ দিয়ে গিয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে তদন্ত করার ক্ষমতা আছে কিনা দুদকের, সেটি নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সরে দাঁড়ানো আর নানা সমালোচনার মধ্যেও নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৩ সালে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয় সরকার। সংশয় ছিল অনেকের মধ্যে কতটা বাস্তবে রূপ নিবে পদ্মাসেতুর স্বপ্ন। অনেকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি। অবশেষে মন্ত্রীসহ কারোর বিরুদ্ধেই দুর্নীতির কোনও অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি। পরে কানাডার এক আদালতে মামলা করা হয়। বিশ্বব্যাংক সেখানেও কোনও প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।

সব সমালোচনা আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর দৃশ্যমান হয়েছে গর্বের এই সেতু।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা মনোভাব এবং ঐকান্তিক চেষ্টায় শত প্রতিকূলতা থাকার পরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ।

ইতোমধ্যেই পদ্মার অপর প্রকল্প রেলসেতুর কাজ শেষ হবে শীঘ্রই। শুধু যোগাযোগই নয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু। ধারণা করা হচ্ছে, পদ্মা সেতু দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়াবে অন্তত ১ দশমিক ২ শতাংশ। পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন সাফল্য, সক্ষমতা ও গর্বের স্মারক হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ