1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

কোটিপতি ভিক্ষুক মতিয়ারকে হজ‌ থেকে এলেই গ্রেফতার করা হবে

প্রবাস ডেস্ক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২

হজে গিয়ে ভিক্ষা করার সময় সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশি ব্যক্তি ছিলেন ডাকাত দলের সরদার। শীর্ষ এই ডাকাত সরদার মতিয়ার মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সিন্দুরকৌটা গ্রামের ঘাটপাড়া এলাকার ২০ বছর আগে বোমা বানাতে গিয়ে দুই হাতেরই কবজি উড়ে যায় তার। বিভিন্ন মামলায় তিনি বেশ কিছুদিন জেলও খেটেছেন। এরপর থেকেই এই শীর্ষ সন্ত্রাসী মতিয়ার রহমান পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছেন দীর্ঘদিন। এলাকায় তিনি মন্টু ডাকাত নামেও পরিচিত।

ঘটনাক্রমে হয়ে যান হাজি। শুরু করেন হজের নামে সৌদি আরবে ভিক্ষাবৃত্তি। হজে সবাই টাকা খরচ করে গেলেও উনি হজে খরচ নয়, উল্টো আয় করতেন লাখ লাখ টাকা। প্রতিবার হজ থেকে ফিরে কিনতেন জমি। বসতভিটার অবস্থা ভালো না হলেও কৃষি জমি রয়েছে ২০ বিঘা।

সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ও মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেলেও দেশে ফেরামাত্রই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। মতিয়ারকে হজে পাঠানো ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এয়ার সার্ভিসের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।

ওই ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা কেন নেয়া হবে না জানতে চেয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে নোটিশ দিয়েছেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ শাখার উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহিন।

মতিয়ার রহমানকে কেবল ভিক্ষুক বললেও তাকে কম হবে, কেননা তিনি আন্তর্জাতিক মানের ভিক্ষুক। দেশে নয়, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এমনকি সৌদি আরবও বাদ যায়নি তার ভিক্ষাবৃত্তির মানচিত্র থেকে।

এসব দেশের মধ্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক জায়গাটিও ঠিকঠাক চিনে গিয়েছিলেন তিনি। প্রতি বছর হজের মৌসুমে সৌদি আরবে ভিক্ষাবৃত্তি করেন। গত ১৫ বছরের আয় করা কোটি টাকায় আজ ২০ বিঘা কৃষি জমির মালিক ষাটোর্ধ্ব এই ব্যক্তি।

জানা যায়, এ পর্যন্ত ১২ থেকে ১৩ বার হজে গেছেন মতিয়ার। প্রতি বছর ভিক্ষা করে দেশে ফিরে একের পর এক কিনে চলেছেন জমি। এ পর্যন্ত ২০ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি। করোনার সময় বন্ধ থাকলেও এবার তিনি ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এয়ার সার্ভিস এজেন্সির মাধ্যমে হজে যান।

২২ জুন বিকেল ৫টার দিকে মদিনা শরীফে ভিক্ষা করার সময় তাকে গ্রেফতার করে সৌদি পুলিশ। সে সময় মতিয়ার মিথ্যা বলেছিলেন পুলিশকে। তিনি বলছিলেন, তার মানিব্যাগটি ছিনতাই হয়ে গেছে। তার হাতে কোনো টাকা-পয়সা না থাকায় সে ভিক্ষায় নেমেছেন। পুলিশের সন্দেহ হলে তাকে আটক করে স্থানীয় থানায় নেয়া হয়। ঘটনা জানার পর বাংলাদেশ হজ মিশনের একজন কর্মী থানায় মুচলেকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ-১ শাখার উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীনের সই করা কারণ দর্শানোর নোটিশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ২৬ জুন হজ সম্পর্কিত ওয়েব সাইটে এক নোটিশের মাধ্যমে বাংলাদেশ হজ্জ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে।

ভিসার শর্ত ভঙ্গের কারণে মতিয়ার রহমান গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় হজযাত্রীকে সৌদিতে পাঠানো ধানসিঁড়ি ট্রাভেলস এয়ার সার্ভিস নামে হজ এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই যাত্রী ‘সৌদি আরবে ব্যাগ ছিনতাই হয়েছে’ বলে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে ভিক্ষা করছিলেন। এতে সৌদিতে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা দারুণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। পরে তদন্তে জানা যায়, ধানসিঁড়ির সেই হজযাত্রীকে গাইড করার মতো সৌদিতে কোনো মোনাজ্জেম এবং তার বসবাসের বাড়ি কিংবা হোটেলও ছিল না। এ ধরনের কাজের জন্য হজ এজেন্সিটির বিরুদ্ধে কেনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে না; তা তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যাসহ জানতে চেয়েছে মন্ত্রণালয়।

স্থানীয়রা জানান, মতিয়ার রহমান ডাকাতিতে ধরা পড়ে দুই হাতের কবজি হারানোর পর ভিক্ষাবৃত্তিতে নামেন। তিনি গ্রামে ভিক্ষা করতে না। প্রতি বছর হজ মৌসুমে সৌদি চলে যেতেন তিনি। হজের মৌসুম শেষ হলে বেশিরভাগ সময় কাটাতেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। ধরা না পড়লে কেউ জানতো না যে তিনি বিদেশে ভিক্ষা করেন।

মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছেন যে হজের অজুহাতে মতিয়ার প্রতি বছর সৌদি গিয়ে ভিক্ষা করেন। যা দিয়ে তিনি কয়েক বিঘা জমিও কিনেছেন ইতোমধ্যে। প্রতারণা করে আজ তিনি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক।

মেহেরপুর জেলা হাজি সমিতির সভাপতি গোলাম রসুল এ ঘটনাকে বাংলাদেশি হাজিদের জন্য লজ্জার বলে মনে করেন। তিনি বলেন, এ বিষয়টি তিনি হাজি সমিতি ও ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানাবেন।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী খানম বলেন, ওই ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। মতিয়ার দেশে ফিরলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

মতিয়ার রহমানের স্ত্রী মমতাজ খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী প্রতিবারই হজে যান এবং মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে দেশে আসেন। আমি তো তাকে জিজ্ঞেস করেছি। কিন্তু তিনি কখনও আমাদেরকে বলেননি। এখন শুনছি সেখানে গিয়ে ভিক্ষা করেন তিনি।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ