1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পাহাড়-সমতলে জননিরাপত্তায় নজরদারি বাড়ানো জরুরি

মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.) : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩

২১ মে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরাজগঞ্জে চরমপন্থি গ্রুপের তিন শতাধিক সদস্য অবৈধ অস্ত্রসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। চরমপন্থিদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার সাফল্যের জন্যই তারা নানা সময় আত্মসমর্পণ করছে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বিপথগামীদের সুপথে ফেরাতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আর্থিক সহযোগিতা থেকে শুরু করে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। চরমপন্থিদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার এই সাফল্য প্রশংসার দাবি রাখেÑ এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। চরমপন্থিদের আত্মসমর্পণের সুযোগও মূলত এজন্যই দেওয়া হয়। তারা যেন অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারে অর্থ সংগ্রহ কিংবা অন্য কোনোভাবে ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে, এজন্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি সর্বাগ্রে থাকা উচিত। সিরাজগঞ্জে আত্নসমর্পণকারীরা আগে কী ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো ধারণা এখনও পাওয়া যায়নি। আমি মনে করি, এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান করা জরুরি। অন্তত এই সময়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রোহিঙ্গা সংকটের কথা গুরুত্বের সঙ্গে আমলে রেখে অবৈধ অস্ত্রের উৎস এবং তা কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তার পুরো তথ্যচিত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাখতে হবে।

সিরাজগঞ্জের এই ঘটনাটি কিছু প্রশ্ন দাঁড় করিয়েছে। বলা হচ্ছে, আত্মসমর্পণকারীরা চরমপন্থি। কিন্তু তারা কোন ধরনের চরমপন্থি তার ব্যাখ্যা বা সদুত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। এর আগেও প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ এই কলামে আমি বাংলাদেশে তিন ধরনের জঙ্গি বা চরমপন্থি গোষ্ঠীর বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছিলাম। ওই লেখাটির সূত্র ধরেই বলা যায়, চরমপন্থির এই ধরনকে সঠিকভাবে নির্ণয় করতে না পারলে কোনো দিনই আমরা সমস্যার মূলে পৌঁছুতে পারব না। এককালে চরমপন্থি বলতে ত্বোহা, আবদুল হক, কমিউনিস্ট পার্টিÑ তাদেরই বুঝতাম। এই চরমপন্থি গোষ্ঠীর নেতাদের একটি নির্দিষ্ট আদর্শ ছিল। ধনিকশ্রেণি ও ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে তারা সংগ্রাম করতেন। এখন এই ধরনের চরমপন্থিদের কথা আর শোনা যায় না। কিন্তু যেহেতু তাদের চরমপন্থি বলা হচ্ছে, সেহেতু তারা কোনো ভয়াবহ অপরাধ সংগঠনের পাঁয়তারা করছিল এ কথা বলা যায়। পাহাড়ে-সমতলে তারা নানাভাবে জনজীবন বিপন্ন করার জন্য বড় পরিকল্পনা নিতে পারে।

যাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র থাকে তারা ডাকাতি কিংবা অন্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের চিন্তা করে থাকে। অস্ত্র ব্যবহারে অপরাধের নতুন মাত্রা সংযোজিত হতে পারে। গ্রামাঞ্চলে চুরি-ডাকাতি হয়। আবার অনেক সময় পারস্পরিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ৩০ মে একটি সংবাদমাধ্যমে আমরা অস্ত্রের ব্যবহারে অদ্ভুত এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেখি। টেকনাফে পাত্রী দেখার কথা বলে তিন বন্ধুকে হত্যার ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। তবে সিরাজগঞ্জে চরমপন্থিদের আত্মসমর্পণের বিষয়টি ইতিবাচক। সরকার তাদের নানাভাবে আশ্বস্ত করতে পেরেছে। চরমপন্থিরা আত্মসমর্পণ করলে তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হবে, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে এবং সর্বোপরি তারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন। এই উদ্যোগের জন্য সরকার সাধুবাদ পাবে। আমি আশা করব, প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হবে। প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে চরমপন্থিরা আর ভুলপথে যাবে না। তা ছাড়া এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা গেলে অন্য চরমপন্থিরাও আত্মসমর্পণ করবে।

বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। সিরাজগঞ্জে তিন শতাধিক চরমপন্থি আত্মসমর্পণের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে পেরেছে। হয়তো র‍্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে আরও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হবে। কিন্তু অস্ত্র উদ্ধার করে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো অবকাশ নেই। অবৈধ অস্ত্রের উৎস এবং তা কিভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তা খুঁজে বের করতে হবে। অবৈধ অস্ত্র কোথা থেকে এলো, কীভাবে এলো, তা শনাক্ত করা দরকার। অবৈধ অস্ত্র সরবরাহের চ্যানেল শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। চ্যানেল বন্ধ করে দিতে পারলে সামাজিক পর্যায়ে অনেক অপরাধ কমে আসবে। আমরা দেখছি, সামাজিক পর্যায়ে অপরাধ বাড়ছে। অপরাধ বাড়ার পেছনে অসংখ্য কারণ রয়েছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে অস্ত্রের ব্যবহারে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই বেড়ে চলেছে।

সিরাজগঞ্জে যে অস্ত্র দেখা গেছে তা বড় ধরনের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নয়, দেশীয় নানা অস্ত্র। দেশে অনেক জায়গায় শট রাইফেল, দোনলা বন্দুক তৈরি করার কারখানা রয়েছে। আবার দেশীয় নানা অস্ত্র যেমন রামদা, চাপাতিও তৈরি করার কারখানার খবরও আমরা পেয়েছি। নিকট-অতীতে জানা গিয়েছিল, যশোর সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় অস্ত্র বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বেনাপোল সীমান্তের কাছে পুটখালী নামে একটি গ্রাম আছে। তার অন্যদিকে ভারত। পটুয়াখালীর দিকে নগর গভীর করা দরকার। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে অবৈধ অস্ত্রের কারখানা আছে। অর্থাৎ অবৈধ অস্ত্র প্রবেশের পথ এবং উৎসের বিষয়ে আমাদের কিছু ধারণা আছে। কিন্তু সমস্যা হলো, এই অবৈধ অস্ত্র ছড়িয়ে পড়ার চ্যানেল সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুব কম। কোনো কোনো বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীও আড়ালে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা করেন। অস্ত্র বিক্রি করার জন্য লাইসেন্স প্রয়োজন। দেশে বৈধ অস্ত্র বিক্রির কাজে জড়িত আছেন অনেকেই। কিন্তু অনেক সময় কোনো কোনো ব্যবসায়ী অধিকতর লাভের প্রত্যাশায় অবৈধ অস্ত্র চোরাচালানের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন এবং তা বিক্রি করেন। অর্থাৎ দেশীয় অস্ত্র দেশে উৎপাদন করা হয় এবং আধুনিক অস্ত্র চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করে।

অবৈধ অস্ত্রের বিষয়ে জোর দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করা জরুরি। ২৭ মে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ টেকনাফে দুর্গম পাহাড় থেকে তিনজনের গলিত লাশ উদ্ধারের পর ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। ওই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, ঘুরেফিরে দুই রোহিঙ্গা নারীর নাম পাওয়া যাচ্ছে এবং তাদের পরিচয় পাওয়া গেলে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হবে। কিন্তু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে। অর্থাৎ পাহাড় কিংবা সমতলে অপরাধ করার ক্ষেত্রে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক, কারণ এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা যেমন হুমকির মুখে তেমনি রাজনৈতিক পরিবেশও অনেকটা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি। জঙ্গি কিংবা চরমপন্থিদের দমনে সরকার দৃশ্যমান সাফল্য দেখিয়েছে। একসময় সুন্দরবনের মতো দুর্গম এলাকায় দস্যু ছিল। তা ছাড়া সমতলেও আমরা নানা চরমপন্থি সংগঠনের অপতৎরতা দেখেছি। তারাও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

এই মুহূর্তে অবৈধ অস্ত্র আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ দুটি। সামনে জাতীয় নির্বাচন এবং রোহিঙ্গা সংকট সম্ভবত সমাধান হতে চলেছে। দীর্ঘদিন দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদী রাজনৈতিক দলগুলো সক্রিয় নয়। কিন্তু অভিযোগ আছে, তারা গোপনে শক্তি বৃদ্ধি করছে। তাদের কাছে অবৈধ অস্ত্রের মজুত না থাকলেও সমস্যা নেই। অবৈধ অস্ত্রের চ্যানেলের সঙ্গে পরিচয় থাকলে অস্ত্র ভাড়া নেওয়া যেতে পারে। অনেক সময় চরমপন্থিরা অস্ত্র ভাড়া দিয়ে থাকে। এভাবে বড় জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাদের এক ধরনের সমঝোতা তৈরি হয়। জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচনী পরিবেশ অস্থিতিশীল করে তুলতে ভাড়াটে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। রাজনৈতিক পরিবেশ ক্রমেই হচ্ছে উত্তপ্ত। এই উত্তপ্ত পরিবেশের সুযোগ নিয়ে চরমপন্থিরা যদি তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায়, তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে দাঁড়াতে পারে। বাকি রইল রোহিঙ্গাসংকট। রোহিঙ্গাদের মধ্যে ক্রমেই অন্তঃকোন্দল বাড়ছে। তাদের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্রের সরবরাহ বাড়ছে এবং এও অভিযোগ আছে, অনেক রোহিঙ্গা ব্যক্তিকেন্দ্রিক চরমপন্থি সংগঠন গড়ে তুলছে। পুরো বিষয়টি আমাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। তাই অবৈধ অস্ত্র সরবরাহের চ্যানেল দ্রুত শনাক্ত করা জরুরি। এ ছাড়া চরমপন্থিদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে আমরা প্রতিবারই দেখেছি ফলোআপ করা হয়নি। এর আগেও জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা আত্মসমর্পণ করেছেন। কিন্তু তাদের কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং ওই অপরাধের সূত্র ধরে বড় চক্রকে ধরা গেছে কি না, সে সম্পর্কে কোনো ফলোআপ নেই। প্রত্যাশা করি, এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। অপরাধের সূত্রকে থামিয়ে রাখলে সমাধান পাওয়া যায় না। সূত্র ধরে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যেতে হয়। এ সময়ে অবৈধ অস্ত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে একটি বড় সূত্র। আর এই সূত্র অবলম্বন করে অন্যান্য অপরাধ বিশ্লেষণ করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাহাড়ে-সমতলে সমানতালে জরুরি কঠোর নজরদারি।

লেখক: মোহাম্মদ আলী শিকদার – বীর মুক্তিযোদ্ধা, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ

নির্বাচিত

৪১ দেশে ছড়িয়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট

২৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ভারত থেকে কেনা হচ্ছে ট্রেলিং সাকশন হোপার ড্রেজার

পুত্রজায়ার আদলে ‘মিনি সেক্রেটারিয়েট ফর চট্টগ্রাম’

পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন ও বেতনভাতাদি সরকার থেকে পাওয়ার দাবীতে সমাবেশ

পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন ও বেতনভাতাদি সরকার থেকে পাওয়ার দাবীতে সমাবেশ

‘ভাই’ ডাকায় রেগে গেলেন এসিল্যান্ড মামুন খান

বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রথম টিউবের কাজের সমাপ্তি ঘোষণা

ইইউ’র সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ: গুরুত্ব পাবে নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা ইস্যু

ষড়যন্ত্রতত্ত্বের ফাঁকে ‘তাঁদের’ অন্যায় আচরণগুলো আর সংশোধন হয় না!

টি্উবলাইট ফিল্মে সালমান

হাসি মুখে মৃত্যু : সাজ্জাদ হোসেন সাখাওয়াত

প্রধানমন্ত্রী নিয়ে প্রোপাগান্ডার থ্রিলার: বার্গম্যান-স্যামি-জাজিরার সম্পর্ক কী?