1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিকারীদের প্রতিহত করতে হবে

ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ২ জুন, ২০২৩

একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন ভারসাম্যপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ও সুন্দর শাসন ব্যবস্থা। অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা নিয়ে কোনও দেশই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। পৃথিবীতে যতগুলো দেশ উন্নত হয়েছে, সবখানেই উন্নয়ন হয়েছে ধারাবাহিক ও স্থিতিশীল শাসনের কারণে। স্থিতিশীল শাসন, সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের মাধ্যমে যে কোনও দেশের ভাগ্য বদলানো সম্ভব। বিশ্বজুড়ে এর নজির অহরহ। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে যে উন্নয়নের বিস্ময় তৈরি হয়েছে, সেটাও সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার ধারাবাহিক ও সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণে। উন্নয়নের এই ধারা বজায় রাখতে হলে, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হবে। নইলে বর্হিশত্রুদের নানা কূটকৌশলে পড়ে দেশ আবারও পেছনের দিকে হাঁটা শুরু করবে। যা কখনোই কাম্য হতে পারে না।

এই যেমন, আফ্রিকার এক সময়ের অত্যন্ত শক্তিশালী দেশ লিবিয়া। ১৯৬৭ সালে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি লিবিয়ার ক্ষমতা দখলের সময় উত্তরাধিকার সূত্রে একটি গরিব দেশই পেয়েছিলেন। আর খুন হওয়ার সময় লিবিয়াকে রেখে যান আফ্রিকার সবচেয়ে ধনী জাতি হিসেবে। তার দীর্ঘ ও ধারাবাহিক শাসন দেশকে একেবারে তলানী থেকে টেনে তুলে একটা উন্নত অর্থনীতি উপহার দিয়েছিল। যদিও  পশ্চিমা শক্তিসমূহ ও সংবাদ মাধ্যম তাকে একজন স্বৈরশাসক হিসাবে চিহ্ণিত করে।

গাদ্দাফি মারা যাওয়ার সময় আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে মাথাপিছু আয় এবং জীবনমানের দিক দিয়ে লিবিয়া ছিল এক নম্বরে। এ দেশটিতে ইউরোপের অন্যতম উন্নত দেশ নেদারল্যান্ডসের চেয়েও কম মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করত। কোনও বৈদেশিক ঋণ ছিল না, প্রত্যেক নাগরিককে বাসা প্রদান করার নিয়ম প্রচলিত ছিল, দেশে-বিদেশে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের খরচ সরকার বহন করবেন, সবার জন্য শিক্ষা স্বাস্থ্য-সেবা নিশ্চিত ছিল। কেউ বেকার ছিল না। প্রায় ৭০ হাজার বাংলাদেশি সেখানে কাজ করতেন এবং কেউ যথা সময়ে বেতন পাননি সে অভিযোগ গাদ্দফির আমলে শোনা যায়নি। গাদ্দাফি শুধু নিজের দেশের উন্নয়ন করেননি, সুদান, চাঁদ, নাইজারসহ প্রতিবেশী দেশের উন্নয়নেও গাদ্দাফি যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছিলেন। সুদানের করিন্থিয়া হোটেল খার্তুম, আল সালাম হোটেল খার্তুম, করিমা নুবিয়ান রেস্ট-হাউসসহ বড় হোটেল ও হাসপাতাল নির্মাণেও গাদ্দাফির অনবদ্য ভূমিকা ছিল। সেই লিবিয়ার এখনকার দূরাবস্থার কথা কে না জানে।

২০১১ সালে লিবিয়াতে মার্কিন সমর্থনপুষ্ট ন্যাটোর হস্তক্ষেপের পর লিবিয়া এখন একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র। বিপর্যস্ত অবস্থায় পরিণত হয়েছে তার অর্থনীতি। সেখানে সত্যিকারের কোনও সরকার ব্যবস্থা নেই। যে যার মতো করে অধিকৃত জায়গা শাসন করছেন। আর তেল উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। দেশ রূপ নিয়েছে যেন একটি কসাইখানায়। শকুনের মাংস কাড়াকাড়ির মতো করে লিবিয়াকে ছিঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল। অথচ এই লিবিয়ার মানুষ একটি উন্নত অর্থনীতি, উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখতো। সেই স্বপ্ন তাদের ভেঙে খান খান হয়ে গেছে।

যদিও লিবিয়াতে আগে থেকেই মিলিশিয়া সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা ছিল। তারপরও স্থানীয়, আঞ্চলিক, উপজাতিগত, ইসলামপন্থী ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সামাল দিয়ে গাদ্দাফি ভালোভাবেই দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু ন্যাটো হস্তক্ষেপের পর লিবিয়ায় দুটি যুদ্ধ চক্র গড়ে উঠেছে যাদের নিজস্ব প্রধানমন্ত্রী, পার্লামেন্ট এবং সামরিক বাহিনী রয়েছে। সেখানে দুটি সরকার গঠিত হয়েছে। এদের এক পক্ষ ইসলামি মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সমন্বয়ে রাজধানী ত্রিপোলীসহ কয়েকটি শহর নিয়ে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে সরকার গঠন করেছে। এই সরকারের নির্বাচন হয়েছে গেলো গ্রীষ্মে। অন্যদিকে, ইসলামি মিলিশিয়াদের বিরোধী পক্ষ দেশের পূর্বাঞ্চলে সরকার গঠন করেছে। লিবিয়ার বৈধ সরকার হিসেবেই এরাই কাজ করছে। গাদ্দাফি প্রশাসনের পতনের পর লিবিয়ায় একটি হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো যারা লিবিয়াবাসীকে স্বৈরাচারী গাদ্দাফির বিরুদ্ধে আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে ওই দেশকে স্বর্গময় করবে বলে অঙ্গীকার করেছিলো তারা এখন ধারে কাছে নেই। তারা তাদের দূতাবাস গুটিয়ে নিয়েছে। দেশের দক্ষিণ অঞ্চল পরিণত হয়েছে সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্যে। আর উত্তরাঞ্চল হয়েছে মানবপাচারের সিল্করুট। লিবিয়ার সাথে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে মিসর, আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়া। এসব কারণে বেড়েছে ধর্ষণ, খুন ও অত্যাচারের পরিমাণ, যা একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের ছবিকে ষ্পষ্ট করেছে। বিদেশি হস্তক্ষেপে একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধশালী দেশ কী করে ভেঙে পড়তে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ হলো লিবিয়া।

আমাদের সার্কভুক্ত একটি দেশ আফগানিস্তান। অথচ তাদের অবস্থাও আজ অত্যন্ত শোচনীয়। দেশটির অর্থনীতি বর্তমানে এক জরাজীর্ণ দশা পার করছে। চার কোটি মানুষের এ দেশটিতে মাথাপিছু দৈনিক আয় দুই ডলারেরও কম। বিশ্বব্যাংক বলছে, দেশটির মাথাপিছু জিডিপি পাঁচশ ডলার, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অনেক নিচে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ীও সেটা দারিদ্র্যসীমার অনেক নিচে। ২০০১ সালে আফগান যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার নাকি সেখানে ২ দশমিক ৩১৩ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। কিন্তু বিপুল এ অর্থের মধ্যে মাত্র ১৪৫ বিলিয়ন তারা ব্যয় করে আফগান পুনর্গঠনে।

২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) আফগানিস্তানের শোচনীয় পরিস্থিতি নিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গত এক দশকে আফগানিস্তানের বার্ষিক মাথাপিছু আয় কমেছে। ২০১২ সালে যেখানে মাথাপিছু ৬৫০ ডলার আয় ছিল, সেখানে ২০২০ সালে সেটা কমে দাঁড়ায় ৫০০ ডলার। ২০২২ সাল নাগাদ সেটা ৩৪০ ডলারে নেমে এসেছে প্রায়। ২০২২ সালে জিডিপির সংকোচন হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। ইউএনডিপির প্রতিবেদন থেকে আফগানিস্তানের মানবিক সংকটের ভয়াবহতা সম্পর্কে আঁচ করা যায়। ‘সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী, আফগানিস্তানে কেবল ৫ শতাংশ মানুষের হাতে পর্যাপ্ত খাবার আছে। তীব্র ক্ষুধার মুখোমুখি হয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা এখন ২ কোটি ৩০ লাখে পৌঁছেছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ শিশু খাদ্য অনিরাপত্তার মুখে পড়েছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী ৩৫ লাখ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। আর ১০ লাখ শিশু ক্ষুধা ও কম তাপমাত্রায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছে।

অথচ এই দেশটিও একটা সময় ভালো চলতো। অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। বাড়ছিল একটু একটু করে মানুষের জীবনযাত্রার মান। কিন্তু ২০০১ সালে মার্কিন আফগান যুদ্ধ দেশটিকে শেষ করে দিয়েছে। তালেবান নির্মূলের অযুহাতে আমেরিকা ন্যাটোর মাধ্যমে আফগানিস্তানে অভিযান চালিয়েছে। একের পর এক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে দেশে। আবার ঘুরে ঘুরে সেই তালেবানদের হাতেই পড়েছে আফগানিস্তান। সাধারণ মানুষ বেঁচে থাকার কোনও আশা খুঁজে পাচ্ছে না। দায়িত্বশীল ও কার্যকর কোনও শাসন বা সরকার ব্যবস্থা না থাকলে এমন পরিস্থিতি অবশ্যম্ভাবী, তা যে কোনও দেশেই হোক না কেন।

একই অবস্থা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দেশ সিরিয়ার ক্ষেত্রেও দেখা যায়। সব কিছু ঠিকঠাক চলতে থাকা দেশটি বর্তমানে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মার প্যাঁচে পড়ে আর সোজা হয়ে দাঁড়ানো পথ পাচ্ছে না। জাতিগত দ্বন্দ্ব আর আন্তর্জাতিক কূটচালে পড়ে একটি দেশ কীভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, তা সিরিয়ার অবস্থা না দেখলে বোঝা যায় না। সাত বছর ধরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে। ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, ইয়েমেনের পথ ধরে সিরিয়ায় রক্ত ঝরছে। এ যেন রক্তের স্রোতোধারা, না থেমে বাড়ছে দিন দিন। বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের আহাজারিতে বিশ্ব মানবাধিকার যেন মুখে যেন কুলুপ এঁটে আছে। ২০১১ সালে বিশ্বে আরব বসন্তের আগমন। তিউনিসিয়া টালমাটাল। এর ধারায় পরে যোগ দেয় মিসর, লিবিয়া। অনেকে মনে করেছিলেন, সিরিয়ায় হয়তো আরব বসন্তের প্রভাব পড়বে না। কেননা দেশটিতে গত ৪০ বছর ধরে নিজেদের শাসন পাকা করে ফেলেছেন বাসার আল-আসাদের বাথ পার্টি। এছাড়া বাশার ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র কায়েমে অনেক সুন্নি মুসলিমেরও সমর্থন ছিল। কিন্তু সিরিয়ায় গল্পটির শুরু একটু ভিন্নভাবে।

অত্যন্ত ছোট্ট ঘটনা থেকে বিরোধ ছড়িয়ে পড়ে সিরিয়ায়। ২০১১ সালের মার্চের মাঝামাঝি সময় সরকারবিরোধী গ্রাফিতির কারণে চারজনকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে সরকারি বাহিনী। দেশটির ডেরা শহরের এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে সরকারি বাহিনী ব্যাপকভাবে গুলি ছোড়ে। কয়েকজন বিক্ষোভকারী মারা যান। সেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে। বাশার আল-আসাদ ট্যাংক, আর্টিলারি এবং হেলিকপ্টার গানশিপ সহকারে দেশব্যাপী অপারেশন চালায়। মাত্র তিন মাসে ২০১১ সালের জুলাই নাগাদ প্রায় ১৬ হাজার বিক্ষোভকারী নিহত হন।

এরপরের ঘটনাপ্রবাহ এতই জটিল, সঠিক হিসাব রাখা মুশকিল। আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ, শহর দখল, দখল থেকে মুক্ত, আবার পুনর্দখলের মধ্য দিয়ে সাত বছর চলে গেলো। এতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ নিহত হয়েছেন। তালিকায় আছেন নিরীহ জনগণ, সেনাসদস্য, বিদ্রোহী এবং সরকারি সমর্থকেরাও। পশ্চিমারা আসাদকে হটিয়ে ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’-এর জন্য মাঠে নামে। কিন্তু সেই ক্ষমতায়ন আর হয়নি। গত কয়েক দশকে মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাবলী লক্ষ্য করলে দেখা যাবে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের কারণে এ অঞ্চলের সব কিছু কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে এবং মার্কিন নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সন্ত্রাসীরা অবাধে বিচরণ করছে। তাদের নাম হচ্ছে “আই-এস-আই”। তাদের পরিধান মিশরীয় কপটিক খ্রিষ্টানদের মতো। তবে পশ্চিমা বিশ্ব এদের ইসলামি টেরোরিস্ট হিসাবে প্রচার করে। আমেরিকা সন্ত্রাসীদের ওপর হামলার কথা বললেও বাস্তবে তারা ইরাক ও সিরিয়ার অবকাঠামোগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আর এ মিশন বাস্তবায়নে তারা দায়েশকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। আমেরিকার ধ্বংসলীলা ও অপরাধযজ্ঞের মাত্রা এতটাই বেশি যে, মার্কিন কর্মকর্তারাও তারা স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু তারপরও তারা বিশ্বকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য ‘ভুল করে বেসামরিক মানুষের ওপর বোমা বর্ষণ করা হয়েছে’ বলে দাবি করে থাকেন।

মার্কিন কর্মকর্তারা ইরাক ও সিরিয়ার ব্যাপারে তাদের সহিংসকামী চেহারার প্রকাশ ঘটিয়েছেন এবং হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ ছাড়া তারা আর কিছুই দিতে পারেননি। কখনও পারেনও না তারা। ২০১৬ সাল মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ইসলামিক স্টেট (আইএস) সিরিয়ার পাকাপোক্তভাবে ঘাঁটি গেড়ে বসে। একের পর এক হামলা চালিয়ে তারা জেরবার সিরিয়ার সরকারকে বেকাদায় রেখেছে। তবে রাশিয়ার কারণে আসাদ সরকার এখনও গদিতে রয়েছে। দেশটা স্বাধীন আছে। যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই অস্ত্র দিয়ে বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করে আসছে। ২০১৪ সালে তারা আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ শুরু করে। বিশ্লেষকেরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আইএস প্রতিষ্ঠা করে সিরিয়ায় নিজেদের প্রবেশ নিশ্চিত করে। মূলত নিজেদের লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যই এসব দেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্দেশ্যের কথা বলে সেখানে প্রবেশ করে পশ্চিমা শক্তি। যেখানে যায়, সেখানকার অর্থনীতি, জনজীবন সব বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের ২০ বছর হয়ে গেলো। এখনও দেশটি সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াতে পারলো না। এক সময় অত্যন্ত স্বচ্ছল জীবনযাপন করা ইরাকের মানুষ এখন ধুকছে নানা ধরনের সংকটে। ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের কাছে ধ্বংসাত্মক মারণাস্ত্র আছে এই অজুহাত দেখিয়ে ইরাকে আগ্রাসন চালিয়েছিল আমেরিকা, তা ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। তার ফল এখনও ভোগ করতে হচ্ছে ইরাকিদের। দুই দশক পরও ইরাকে সহিংসতা, হত্যা থামেনি। গত ফেব্রুয়ারিতেও বোমা, গুলি ও অন্য সহিংসতার বলি হয়েছেন ৫২ জন। ২০০৩ সালের মার্চে যে আগ্রাসন শুরু হয়েছিল, এটি তারই প্রভাব।

মার্কিন জোটের আগ্রাসন ও প্রচারের সামনে ইরাক কিছুই করতে পারেনি ইরাকে কোনও মারণাস্ত্র ছিল না, পাওয়া যায়নি, কিন্তু সে সব সরকার তার জন্য দুঃখ প্রকাশও করেনি।

সেই জোটে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ছিল যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও পোল্যান্ড। অভিযান চালানোর তিন সপ্তাহের মধ্যে সাদ্দাম হোসেনের শাসনের পতন ঘটে। সেই সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও তার জোটসঙ্গীরা ২৯ হাজার ১৬৬টি বোমা ও রকেট ইরাকে ফেলেছিল। এতে ইরাকি পরিকাঠামোর বড় অংশ মাটিতে মিশে গিয়েছিল। যুক্তরাজ্যের বেসরকারি সংস্থা বেবিকাউন্টের হিসাবে, ইরাক যুদ্ধে সাত হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ মারা গিয়েছিল। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ২ থেকে ১০ লাখের মধ্যে সর্বশেষ কতজন সে যুদ্ধে মারা যায় তার সঠিক চিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকার গণনা করতে দেয়নি। জাতিসংঘে প্রস্তাব এনে তা বন্ধ করে দেয়। ২০১১ সালে মার্কিন সেনা ইরাক ছাড়ে। পরে তারা ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আবার ফিরে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের ধাঁচে ইরাকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ইরাকের পরিস্থিতি ও সামাজিক অবস্থান ছিল আলাদা। সেখানে ধর্মীয় ও জাতিগত জটিলতা ছিল প্রবল। যুক্তরাষ্ট্রের অধিকারে থাকা প্রশাসনের সেই প্রস্তুতিও ছিল না। ২০০৩ সালের ১৯ আগস্ট বাগদাদে জাতিসংঘের অফিস চত্বরে বিস্ফোরণে ২২ জনের মৃত্যু হয়।

সত্য কথা হলো, পশ্চিমা হস্তক্ষেপ কোথাও কোনও উন্নতি করতে পারেনি, সেটা হোক লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান কিংবা সিরিয়া। বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল কিছু হলেই বিদেশি হস্তক্ষেপ, বিদেশি সাহায্য কামনা করেন। এই বিদেশিদের হস্তক্ষেপ, সাহায্য যে কতটা ভয়ানক হতে পারে, তার চাক্ষুস উদাহরণ লিবিয়া, সিরিয়া, ইরাকের মতো দেশগুলো। আমাদের এটা অন্তত মনে রাখতে হবে যে, পশ্চিমা হস্তক্ষেপের আগে এই তিনটি দেশই (লিবিয়া, ইরাক ও সিরিয়া) মধ্যপাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার সবচেয়ে সেক্যুলার দেশ ছিল। অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে ছিল। আর লিবিয়া তো পুরো আফ্রিকার মধ্যে জীবনমান এবং নারী অধিকারের শীর্ষে ছিল। অথচ সবগুলো দেশ এখন কোনোরকমে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এমন  কোনও পরিস্থিতি, এমন কোনও অস্থিতিশীলতা তৈরি করা যাবে না, যাতে বিদেশিরা বিশেষত পশ্চিমারা এখানে হস্তক্ষেপের সুযোগ পায়। ১৭৫৭  সালে বিদেশি বেনিয়াদের খপ্পরে পড়ে এই বাংলার স্বাধীনতা অস্তমিত হয় এবং প্রায় ২০০ বছর বেনিয়ারা এদেশের সম্পদ লুট করে দেশে এক শ্রেণির পশ্চিমা গোলাম তৈরি করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। বহু কষ্টে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া এই দেশ বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানো শুরু করেছে। বঙ্গভূমিতে বহু নেতা-নেত্রীর জন্ম হয়েছে, তবে বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কোনও নেতা স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে পারে নাই। এক সময়ে তলাবিহীন ঝুড়ি আজ গোটা বিশ্ববাসির বিস্ময়ের উন্নয়নে সবাই হতবাক। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সুযোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় জাতির পিতার স্বপ্নের আধুনিক ও উন্নত সোনার বাংলা বিনির্মাণে নিরলসভাবে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এই উন্নয়নের ধারা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। দেশের সরকার ও শাসন ব্যবস্থাকে সুসংহত রাখতে হবে। বিদেশিদের কাঁধে ভর করে ক্ষমতার লোভে যারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায় তাদের শক্তভাবে প্রতিহত করতে হবে।

লেখক: ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন – অধ্যাপক; সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি); পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)। 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ