রাশিয়া-ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর ইমরান খান মস্কো সফরে যান। রাশিয়ার তেল কিনতে চাইলেন। নিজেকে তিনি ভারতের সমপর্যায়ে ভাবতে চেয়েছিলেন আর কী! কিন্তু আমেরিকা আর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গোলামদের যে সবকিছু করা যায় না তা ভুলে গিয়েছিলেন ইমরান খান। তখন থেকেই তার পতন শুরু। পেছনে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। ভারতও রাশিয়া থেকে কমদামে তেল কিনেছে। এতো সস্তায় তারা তেল কিনেছে যে বিভিন্ন দেশে গড়ে তুলেছে তেলের ব্যবসা। আমেরিকার সাহস হয়নি তাকে কিছু বলবে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত রাশিয়ার সহায়তা আর বঙ্গবন্ধুর মেয়ে হিসাবে রাশিয়ার প্রতি একটা সফট কর্ণার শেখ হাসিনার আছে। আমেরিকা আর পশ্চিমা দেশগুলোর এতে ক্ষোভ আছে মনের মধ্যে। কিন্তু তারা ডালে ডালে চললেও দেশের স্বার্থের প্রশ্নে শেখ হাসিনা চলেন পাতায় পাতায়। গত ১৪ বছরে সব দেশকেই তিনি ব্যবসা দিয়েছেন। রাশিয়াকেও দিয়েছেন রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। যা তিনি পরিত্যক্ত করতে পারেন না।
আমেরিকা যে নানা কারণে শেখ হাসিনার ওপর গোস্বা তা তিনি ভালো জানেন বলে প্রতিটি পদক্ষেপ মেপে চলেন। আমেরিকার চাইতে দেশের দালালগুলো যে বেশি ক্ষতিকর তা তিনি ভালো জানেন। আগামী কয়েক মাস শুধু শেখ হাসিনার জন্য না, বাংলাদেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতো এমন একজন ফুল টাইমার প্রাইম মিনিস্টার বিশ্বের আর কোথাও নেই। ২০১৪ সালের নির্বাচন শেখ হাসিনা এভাবে করতে চাননি। ভারতের চাপে করেছিলেন। কারণ ভারত দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত নেতাদের আবার বাংলাদেশের ক্ষমতায় চায় না। তারেকের মতো নেতা আমেরিকা বা পশ্চিমাদেরও পছন্দ নয়। সে জন্য তারা নির্বাচন নয়, ১/১১ এর মতো একটি সরকার আগামী কয়েক বছরের জন্যে চায়। কিন্তু শেখ হাসিনা চান নির্বাচন। আরেকটি ১/১১ ঠেকাতে তিনি নির্বাচনের চেষ্টা করে যাবেন। সেপ্টেম্বরে দিল্লি সফরের সময় ভারত নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারে।
কাতার গিয়ে দেশের জন্য বিশেষ একটি লাভ নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাতারের আমিরের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বাড়তি এলএনজি চেয়ে বসেন। আমির তা না করতে পারেননি। দু’সপ্তাহের মধ্যে প্রতিশ্রুতি রেখেছেন আমির। বৃহস্পতিবার দুই দেশের মধ্যে যে ১৫ বছর মেয়াদী চুক্তি হয়েছে তাতে দেশের জ্বালানি সমস্যার বেশ লাঘব হবে। টানা ক্ষমতায় থাকায় আর ফুলটাইমার প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় শেখ হাসিনা এমন যা পারেন তা আগের কোনো সরকার প্রধান পারেননি। আল্লাহ তাঁকে সুস্থ রাখুন।
দেশে বিদ্যুৎ সমস্যা যেটা চলছে এর মূলে কয়লা সংকট। ডলার সংকটের কারণে সময়মতো কয়লা কেনা যাচ্ছে না। দেশের বেশকিছু বুঝদার মানুষ এসব নিয়ে হাউমাউ করছেন আর বলছেন সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে দাবি করেছিলো তা নাকি ভূয়া। ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে দুনিয়ার অবস্থা কি একটু অনলাইনে গেলে পাবেন। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে বাড়ি ভাড়া উচ্চ দ্রব্যমূল্যে চারপাশে হাহাকার অবস্থা। মুদ্রাস্ফীতির কারণে ১৭ হাজাহ নির্মান প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে নিজেদের ঘোষণা করেছে দেউলিয়া। অথচ বাড়ির সমস্যা সর্বত্র। অস্ট্রেলিয়া আসার পর আমার বাড়ি ভাড়া সপ্তাহে ছিলো ২৮০ ডলার। এখন ৭০০ ডলার। প্রতিটি জিনিসের দাম এক বছর আগে যা ছিলো এরচেয়ে দ্বিগুনের বেশি। এদেশের আয় আছে মানুষের। বাংলাদেশের সমস্যা আয় নেই। কয়লা বিদ্যুৎ সমস্যা বাংলাদেশে হয়তো নির্বাচনের আগে কেটে যাবে। এর আগে সরকারের যা ক্ষতি হবার তাতো হয়েই গেলো।
লেখক : ফজলুল বারী – অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক