1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

প্রযুক্তি খাত: বাজেট ও সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার

ড. মো. নাছিম আখতার : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ ১৫ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে এবং ২০২৫ সালে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা এবারের বাজেটকে দেখছি গুরুত্বসহকারে। বরাদ্দের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে প্রযুক্তি খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এক অনন্য উচ্চতায় উন্নীত করবে।

দীর্ঘ তিন বছর করোনার সঙ্গে খাপ খাইয়ে বিশ্ববাজারের সফটওয়্যার কম্পানিগুলো টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করেছে। স্বাভাবিক গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য তাদের আউটসোর্সিংয়ে ঝুঁকতে হয়েছে। বিশ্বে কিছু কম্পানি ছিল, যাদের প্রাতিষ্ঠানিক আইন আউটসোর্সের জন্য উপযোগী ছিল না। কিন্তু কস্ট, কোয়ালিটি, স্পিড—এই তিনটির সমন্বয় সাধন করতে বেশির ভাগ কম্পানি আউটসোর্সিংয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

এমন পরিস্থিতি আমাদের জন্য একটা বিশাল সুযোগ। আমেরিকাসহ ইউরোপের কোনো দেশ একক সফটওয়্যার জোগানদাতা দেশের ওপর এ মুহূর্তে নির্ভর করতে চায় না। তারা চায় দ্বিতীয় একটি দেশ অথবা নির্ভর করা যায় এমন প্রতিস্থাপনযোগ্য দেশ। তেমন প্রতিস্থাপনযোগ্য দেশই হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

সফটওয়্যার শিল্পে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশের। আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের মানসিক সক্ষমতা, সংস্কৃতি এবং দলবদ্ধ কাজ ভীষণ নান্দনিক, যা ইউরোপের দেশগুলোকে সন্তুষ্ট করতে পারছে। এই সুযোগটাই আমাদের কাজে লাগাতে হবে।

দ্বিতীয় আরেকটি সুযোগ হলো ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণ সফটওয়্যারের কাজ হতো পূর্ব ও পশ্চিম আমেরিকায়। কিন্তু বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমেরিকাসহ পশ্চিম ইউরোপের একটি বড় অংশ এই তিনটি দেশের সঙ্গে আর কাজ করতে চায় না।

সেখানে হঠাৎ করেই একটি বড় ধরনের মার্কেট তৈরি হয়েছে সফটওয়্যার শিল্পের জন্য। এরই মধ্যে বাংলাদেশের অনেক সফটওয়্যার কম্পানি এই সুযোগ বড় আকারে কাজে লাগাতে পেরেছে। সেই পরিমাণটা কিন্তু ৫০ হাজার থেকে এক লাখ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের কাজের ক্ষেত্রের সমান। তাই আশা করা যেতে পারে, পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হবে দেশে ও বিদেশে। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রায় ৬০টি দেশে রপ্তানি করে আইটি সার্ভিস। সেই দেশগুলোর যে চাহিদা আছে, তার ৫ শতাংশ কাজ যদি আমরা করে দিতে পারি, তাহলে ২০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত রপ্তানি আয় করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে দুটি খাতে বিশেষ বরাদ্দ দরকার। প্রথমত, স্বতন্ত্র এক্সপোর্ট সেল, দ্বিতীয়ত, দক্ষ জনবল সৃষ্টি।

বাংলাদেশ শিগগিরই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। আমরা প্রত্যাশা করছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছর হবে আমাদের ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিত্তি রচনার অর্থবছর। ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমাদের আইটি সেক্টরে করপোরেট ট্যাক্স ছাড় দেওয়া হয়েছে। সেটা যেন ২০৩১ সাল পর্যন্ত করা হয়। কারণ বর্তমান সরকারের লক্ষ্য ২০৪১ সালে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া। আরেকটি বিষয় না বললেই নয়, ২০১৮ সাল থেকে সরকার যে প্রণোদনা দেওয়া শুরু করেছে তা একটু বাড়ানো গেলে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার রপ্তানিকারকরা আরো বেশি উৎসাহ পাবে। সরকারি পর্যায় থেকে দেশীয় সফটওয়্যার ডেভেলপারদের সফটওয়্যার কেনা উচিত। এতে দেশীয় সফটওয়্যার কম্পানিগুলো অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। সরকার ৫৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ ইনোভেশন সেন্টার স্থাপন করবে এই অর্থবছরে। সরকারি উদ্যোগে স্মার্ট লিডারশিপ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে। এক লাখ তরুণ-তরুণীকে ফ্রন্ট এন্ডের টেকনোলজিতে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ দেবে সরকার।

এত উদ্যোগের পরও কোথায় যেন একটু কিন্তু থেকেই যায়। মানবসম্পদের উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে আমাদের আরো আন্তরিক হতে হবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে গুগল, মাইক্রোসফট, ফেসবুক ইত্যাদি জায়ান্ট কম্পানির গবেষণা ও উন্নয়ন শাখা রয়েছে। তাহলে কেন আমাদের দেশে এগুলোর শাখা গড়ে উঠছে না? এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা দরকার। বিশ্বের জায়ান্ট কম্পানি স্যামসাংয়ের প্রায় এক লাখ প্রগ্রামার আছে। তাদের ব্যবস্থাপনা বিভাগ একসময় খেয়াল করল যে নিয়োগ দেওয়ার পর অনেক দিন প্রগ্রামিংয়ের খুঁটিনাটি বিষয় চর্চা না করার ফলে তাদের নিয়োগকৃত জনবল প্রগ্রামিংয়ের অনেক বিষয় ভুলে গেছে। বিষয়টি উপলব্ধি করে স্যামসাং কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়োগকৃত জনবলের জন্য তিনটি প্রশিক্ষণ মডিউল ডিজাইন করেছে। স্যামসাংয়ে কর্মরত জনবলকে প্রতিবছর এই মডিউল পরীক্ষা দিয়ে পাস করে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়। আমরা তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষায় গ্র্যাজুয়েটদের জন্য এমন মডিউল প্রণয়ন করতে পারি। তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে মডিউলগুলোর ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে পারে। এতে সার্বিকভাবে জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।

নবপ্রজন্মের বেশির ভাগ ইন্টারনেট ও ইউটিউবকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছে। তাই ইন্টারনেটের উৎপাদনমুখী, শিক্ষণীয়, ইতিবাচক ব্যবহারের দিকনির্দেশনায় নবপ্রজন্মের জন্য আইসিটি বিভাগ থেকে সচেতনতামূলক প্রচার চালানো উচিত। শেখার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ও ইউটিউব জাগ্রত শিক্ষকের মতো কাজ করে। ইন্টারনেটের হাজারো ইতিবাচক ব্যবহারের উদাহরণ রয়েছে দৈনন্দিন জীবনে।

এখন বিশ্ববাজারে ব্লকচেইন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিকস প্রভৃতির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর সঙ্গে অবশ্যই সাইবার সিকিউরিটি আমেরিকার বাজারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন টেকনোলজির ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি বা অন্যদের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি এমন ভাবার কোনো অবকাশ নেই। আমাদের প্রকৌশলীরা যথেষ্ট যোগ্য। তাঁরা তথ্য-প্রযুক্তির বিশ্ববাজার ধরতে পারবেন এবং ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন। দরকার শুধু সঠিক প্রশিক্ষণ। প্রযুক্তি খাতের বাজেট বাস্তবায়নে আমাদের হতে হবে শতভাগ আন্তরিক। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সৃষ্ট সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে বৈশ্বিক পরিস্থিতির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ জরুরি। সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণই আগামীর বাংলাদেশের সমৃদ্ধির সোপান।

লেখক: ড. মো. নাছিম আখতার – উপাচার্য, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও  প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ