1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

টেকসই উন্নয়ন এবং অতি-দারিদ্র্য নিরসনের চ্যালেঞ্জ : ড. আতিউর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৭
ড. আতিউর রহমান

এক সময় শিল্পায়ন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সামনে রেখে রাষ্ট্রসমূহ তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতো। কিন্তু শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন কেন্দ্রিক কর্মকাণ্ড যে পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে সেই উপলব্ধি থেকে সূচনা হয় টেকসই উন্নয়নের ধারণা। পরিবেশ ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ ২০১৫ সাল পর্যন্ত যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) নির্দিষ্ট করেছিল তার পরিবর্ধিত লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২০১৬ থেকে ২০৩০ সাল মেয়াদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (SDG)। পরিভাষাগতভাবে টেকসই উন্নয়ন প্রচলিত না থাকলেও ইতিবাচক উপায়ে ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক হবার ঐতিহ্য আমাদের দীর্ঘদিনের।
১৯০৭ সালের ১৮ জুন চট্টগ্রাম সফরে এসেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাকে দেয়া সংবর্ধনার জবাবে সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘প্রাচীন বা মধ্যপন্থি এবং নবীন বা উগ্রপন্থি কোনো দলই দেশের প্রকৃত কাজ করছেন না, কেননা দেশের অতি সাধারণ মানুষদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসে তাদের নিয়ে কাজ কোনো পক্ষই করছেন না, অথচ এটাই এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ।’ (দ্র: শিমুল বড়ুয়া, রবীন্দ্র জীবনে ও সাহিত্যে চট্টগ্রাম, অমিতাভ প্রকাশন, ২০১৬, পৃ. ২৫)।
রবীন্দ্রনাথ নিজে শিলাইদহ, পতিসর ও শান্তিনিকেতনে এই অতি-সাধারণের মাঝে কাজ করেছেন বলেই এই উপলব্ধি তার হয়েছিল। আরেক শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এই অতি-সাধারণ ঘেঁষা এক দূরদর্শী নেতা। চুয়ান্নর নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি এক গরিব বৃদ্ধার ঘরে গিয়েছিলেন। তিনি তাকে এক গ্লাস দুধ খেতে দিলেন। আর চার আনা পয়সা। তার নির্বাচনের খরচের জন্য। বঙ্গবন্ধু তাকে ঐ পয়সাসহ আরো কিছু টাকা দেবার অনেক চেষ্টা করেও দিতে পারলেন না। শুধু মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। দু’চোখে পানি নিয়ে বঙ্গবন্ধু বের হয়ে এলেন তার ঘর থেকে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ (পৃ. ২৫৫-২৫৬) তাই তিনি লিখেছেন, “সেই দিনই আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ‘মানুষরে ধোঁকা আমি দিতে পারব না।’” ধোঁকা তিনি দেননি। দিয়েছেন নিজের প্রাণ। আর দিয়েছেন এই মুক্ত বাংলাদেশ। তিনিও রবীন্দ্রনাথের মতোই অতি-সাধারণের মুক্তির কথা সর্বক্ষণ বলতেন। সেই মতো কাজও করতেন। ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে (পৃ. ১৫৩) ১৯৬৬ সনের ৮ জুলাই তারিখে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘চুপ করে শুয়ে চিন্তা করতে লাগলাম গ্রামের কথা, বস্তির কথা। … অভাবের তাড়নায়, দুঃখের জ্বালায় আদম সন্তান গ্রাম ছেড়ে চলে এসেছে শহরের দিকে। অনেকক্ষণ শুয়ে শুয়ে ছোটবেলার কত কাহিনিই না মনে পড়ল। কারণ আমি তো গ্রামেরই ছেলে। গ্রামকে আমি ভালোবাসি।’
রবীন্দ্রনাথের মধ্যপন্থা অনুসরণ বা বঙ্গবন্ধুর দেশ, জনগণ, গ্রাম ও প্রকৃতিকে ভালোবাসার যে আন্তরিক প্রয়াস পরিলক্ষিত হয় তা-ই বর্তমানের পরিভাষায় টেকসই উন্নয়নের সারকথা যা শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজনও মেটাবে।
এমডিজি পূরণে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা সর্বজনবিদিত। এর উত্তরসূরি এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ। এসডিজি এখন বিশ্ব এজেন্ডা। সতেরোটি লক্ষ্য পূরণে জাতিসংঘের নেতৃত্বে পুরো বিশ্ব আজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সকলেই তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের দিকে, এমডিজির মতো এসডিজি পূরণে কি একই ধরনের সাফল্য দেখাতে পারবে?
এ কথা ঠিক, এসডিজি পূরণে চ্যালেঞ্জটা অনেক কঠিন। টেকসই উন্নয়নের নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্বের আবহ জোরদার করে ২০৩০ সাল নাগাদ বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলার অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। সুখের কথা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা বাংলাদেশের সরকার এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য খুবই আন্তরিক। সম্প্রতি শিশু ও প্রসবকালীন মাতৃ মৃত্যুর হার ব্যাপকভাবে হ্রাসের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক ও জন্‌স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শেখ হাসিনাকে পুরস্কৃত করেছে ইউএনডিপি। মানুষের জীবনমান পরিবর্তনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের এটুআই বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তার কার্যালয়ে একটি এসডিজি বাস্তবায়ন সমন্বয় সেল স্থাপন করা হয়েছে। প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে এসডিজির লক্ষ্য অনুযায়ী অনুরূপ বাস্তবায়ন সেল গঠন করতে বলা হয়েছে। এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বিশ্ব মঞ্চে তার সরব উপস্থিতি আমরা সকলেই দেখতে পাচ্ছি।
যদিও বাংলাদেশের পক্ষে বিপুল সংখ্যক অতি-দরিদ্র মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা দিয়ে পুরোপুরি দারিদ্র্যমুক্ত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ, তবে তা মোকাবিলা করার মতো শক্তি ও সামর্থ্য একমাত্র বাংলাদেশেরই রয়েছে। দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশের ব্যাপক সাফল্যের কথা সকলেরই জানা। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গরিব-হিতৈষী নীতিকৌশলের ফলে এ দেশের গরিব-দুঃখী মানুষ তাদের বঞ্চনা ও দুরবস্থা থেকে কীভাবে উঠে এসেছে—সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ছিয়ানব্বইয়ে প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই তিনি বয়স্কভাতা ও বিধবা ভাতা প্রদানের সামাজিক সুরক্ষা নীতি চালু করেন। এর পরের বার ক্ষমতাসীন হয়ে তিনি এর ভিত্তি ও ব্যাপ্তি দুই’ই বাড়িয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকে কাজের অভিজ্ঞতা থেকেই আমি বলতে পারি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষেই এসডিজি’র এই প্রধান লক্ষ্য পূরণ খুবই সম্ভব। দীর্ঘদিন এ দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকার কারণে যে অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতা তিনি অর্জন করেছেন সেসবের আলোকেই তিনি অতি দারিদ্র্য নিরসনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতা রাখেন।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে দরিদ্র-সহায়ক বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। ভূমিহীন ও প্রান্তিক চাষিরা উপকৃত হচ্ছেন। শ্রম বাজারেও এসেছে পরিবর্তন। চুক্তিভিত্তিক শ্রম বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। সকল খাতে ব্যাপক আধুনিকায়ন ও বিনিয়োগ অব্যহত রয়েছে। বিশ্বে অর্থনৈতিক মহামন্দার মাঝে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ থেকে ৭ শতাংশে সীমাবদ্ধ ছিল যা অভাবনীয় সাফল্য। যদি ২০৩০ সাল নাগাদ ৭% শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রেখে আমাদের যোগ্য নেতৃত্ব, অসংখ্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, তরুণ্যে ভরা প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং দারিদ্র্য নিরসনের বিপুল অভিজ্ঞতা ইত্যাদির সমন্বয় ঘটানো যায় তাহলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হব। পুরো জাতির মনে এই আশাবাদ সঞ্চারিত হোক।
::: বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে সংক্ষেপিত।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ