1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

কয়লা কেলেঙ্কারি: খনি কর্তৃপক্ষের সাবেক চার এমডি জড়িত

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৮

পেট্রোবাংলার তদন্ত প্রতিবেদন, ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা
বড়পুকুরিয়া কয়লা চুরির ঘটনায় গঠিত পেট্রোবাংলার তদন্ত প্রতিবেদনে কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক চার এমডিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়ী করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে তদন্ত প্রতিবেদনটি জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের কাছে জমা দেওয়া হয়। পরে প্রতিমন্ত্রী প্রতিবেদন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান। সূত্র জানিয়েছে, সদ্য বিদায়ী এমডিসহ সাবেক চার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বর্তমান ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সাবেক চার এমডি হলেন, হাবিব উদ্দিন আহমেদ, এস এম নুরুল আওরঙ্গজেব, আমিনুজ্জামান ও কামারুজ্জামান। আওরঙ্গজেব বর্তমানে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা কোম্পানি এবং কামারুজ্জামান রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি-আরপিজিসিএলের এমডির দায়িত্বে রয়েছেন। কয়লা চুরির ঘটনা প্রকাশের পর হাবিব উদ্দিনকে সরিয়ে পেট্রোবাংলায় সংযুক্ত করা হয়েছে। আমিনুজ্জামান সবচেয়ে দীর্ঘদিন খনি কোম্পানির এমডির দায়িত্বে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে কয়লা উত্তোলনকারী চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে। যদিও তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
প্রতিবেদনে কাদের দায়ী করা হয়েছে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, কয়লার বাস্তব হিসাব যেহেতু কেউ রাখেননি, সঙ্গত কারণে সাবেক ও বর্তমান অনেকেই দায়ী। দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, ঘটনাটি বিশদ তদন্তের জন্য জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি করা হবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাকেও রাখা হবে।
এদিকে বড়পুকুরিয়ার কয়লা চুরির ঘটনায় সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ১৯ কর্মকর্তার নামে পার্বতীপুর থানায় মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে খনির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনিছুর রহমান বাদী হয়ে দুর্নীতি দমন আইনের ৫ (২) ও ৪০৯ ধারায় মামলাটি করেন। পুলিশ বলছে, মামলাটি দুদক তদন্ত করবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এমডি কামারুজ্জামান ও আমিনুজ্জামান বলেন, তারা তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে অবহিত নন। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না। আর আওরঙ্গজেব ও হাবিব উদ্দিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি।
পেট্রোবাংলার তদন্ত প্রতিবেদন :বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি নিয়ে পেট্রোবাংলার প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর গতকাল বিকেলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান। প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, জ্বালানি সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ।
তদন্ত-সংশ্নিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কয়লা খনিটি পরিচালনা করে বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ। অধিকাংশ কর্মকর্তা এখানে দীর্ঘকাল ধরে চাকরি করছেন। শুধু প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ওপরের কিছু পদে পেট্রোবাংলা থেকে লোকবল পাঠানো হয়। দীর্ঘদিন একই স্থানে থাকার কারণে খনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়লার ডিলারদের অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্ক ধরেই চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০৫ সাল থেকেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কয়লা তোলা হচ্ছে। কিন্তু কয়লা মজুদের সঠিক হিসাব কখনই করা হয়নি। এ ছাড়া লক্ষাধিক টন কয়লা একদিনে চুরি হয়নি; বছরের পর বছর ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। ফলে বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তারাই এ জন্য দায়ী। তিনি বলেন, মজুদ থেকে কয়লা নেওয়ার সময় পরিমাপে বেশি দিয়ে বাড়তি অর্থ নেওয়া হতো। এভাবে দিনের পর দিন বেশি কয়লা বিক্রি করা হয়েছে। যদিও হিসাবে কম দেখানো হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সংকট দেখা দিলে কেলেঙ্কারির ঘটনা ধরা পড়ে।
মামলায় যা বলা হয়েছে :বাদী বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনিছুর রহমান মামলার এজাহারে বলেছেন, খনি উন্নয়নের সময় ২০০১ থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত মোট এক কোটি এক লাখ ৬৬ হাজার ৪২ দশমিক ৩৩ টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। মজুদ কয়লা থেকে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬৬ লাখ ৮৭ হাজার ২৯ টন কয়লা সরবরাহ করা হয়। বেসরকারি ক্রেতাদের (কয়লা ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন ইটভাটা) কাছে ডিওর মাধ্যমে ৩৩ লাখ ১৯ হাজার ২৮০ টন কয়লা বিক্রি এবং কয়লা খনির বয়লারে ১২ হাজার ৮৮ দশমিক ২৭ টন কয়লা ব্যবহার করা হয়। কয়লার উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার হিসাব করলে ১৯ জুলাই কোল ইয়ার্ডে রেকর্ডভিত্তিক কয়লার মজুদ দাঁড়ায় এক লাখ ৪৭ হাজার ৬৪৪ দশমিক ৪০ টন। বাস্তবে মজুদ ছিল প্রায় তিন হাজার টন কয়লা। অর্থাৎ এক লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ দশমিক ৪০ টন কয়লা ঘাটতি রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৩০ কোটি টাকা। অভিযোগে বলা হয়, এ ঘটনায় চারজনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাকি ১৫ জন আসামি অনেক আগে থেকেই তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে সংঘটিত কয়লা চুরির ঘটনার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট বলে অনুমিত।
পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানান, কয়লা চুরির বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর খনি কর্তৃপক্ষ সিস্টেম লসের কথা বলে আসছে। কিন্তু এ বিষয়টি পেট্রোবাংলা থেকে গ্রহণ করা হয়নি। তারা আগে কেন সিস্টেম লসের কথা বলেনি- প্রশ্ন তোলেন তিনি।
মামলায় অভিযুক্ত ১৯ কর্মকর্তা :খনি কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে- ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হাবিব উদ্দিন আহমদ (বর্তমানে ওএসডি), মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) আবু তাহের মো. নুরুজ্জামান চৌধুরী (সাময়িক বরখাস্ত), উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলাম (সাময়িক বরখাস্ত), মহাব্যবস্থাপক ও কোম্পানি সচিব আবুল কাশেম প্রধানিয়া (বর্তমানে বদলি), ব্যবস্থাপক (এক্সপ্লোরেশন) মোশারফ হোসেন, ব্যবস্থাপক (জেনারেল সার্ভিসেস) মাসুদুর রহমান হাওলাদার, ব্যবস্থাপক (প্রডাকশন ম্যানেজমেন্ট) অশোক কুমার হালদার, ব্যবস্থাপক (মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন) আরিফুর রহমান, ব্যবস্থাপক (ডিজাইন, কন্সট্রাকশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) জাহিদুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপক (সেফটি ম্যানেজমেন্ট) একরামুল হক, উপ-ব্যবস্থাপক (কোল হ্যান্ডলিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট) খলিলুর রহমান, উপ-ব্যবস্থাপক (মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন) মোর্শেদুজ্জামান, উপ-ব্যবস্থাপক (প্রডাকশন ম্যানেজমেন্ট) হাবিবুর রহমান, উপ-ব্যবস্থাপক (মাইন ডেভেলপমেন্ট) জাহিদুর রহমান, সহকারী ব্যবস্থাপক (ভেনটিলেশন ম্যানেজমেন্ট) সত্যেন্দ্রনাথ বর্মণ, ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) সৈয়দ ইমাম হাসান, উপ-মহাব্যবস্থাপক (মাইন প্লা্যনিং অ্যান্ড অপারেশন) জোবায়ের আলী, সাবেক মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) আবদুল মান্নান পাটওয়ারী এবং মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) গোপাল চন্দ্র সাহাকে। মামলায় ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ টন কয়লা উধাও-এর কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে উধাও কয়লার বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ২৩০ কোটি টাকা।
পার্বতীপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফকরুল ইসলাম মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলাটি দুদক তদন্ত করবে। তবে দুদকের দিনাজপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বেনজির আহম্মেদ জানান, মামলা হলেও তিনি বুধবার বিকেল পর্যন্ত মামলার কপি হাতে পাননি। হাতে পেলে তা দুদকের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। দিনাজপুর পুলিশ সুপার হামিদুল হক জানান, মামলার কপি তিনি হাতে পেয়েছেন। মামলাটি আজ বৃহস্পতিবার দুদক কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে গতকাল বুধবার সকালে কয়লা খনিতে ঝটিকা সফরে যান পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ। সঙ্গে ছিলেন পিডিবির সদস্য (প্রশাসন) জহুরুল হক, পেট্রোবাংলার পরিচালক ও কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইয়ুব খানসহ বড়পুকুরিয়া কোল মাইন কোম্পানির পরিচালনা পরিষদের ছয় সদস্য। সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তারা খনির কোল ইয়ার্ড ও তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করে দুপুরেই ঢাকা ফিরে আসেন।
বুধবার সকাল ১০টায় বড়পুকুরিয়া খনির সামনের বাজারে কয়লা উধাও-এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন-বড়পুকুরিয়া বাজার শাখা। তারা কয়লা চোরদের চাকরিচ্যুত করে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের দাবি জানান।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ