1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

ইয়াহিয়া নয়ন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২১

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। এই যোগাযোগমাধ্যমে ঢুকে পড়েছে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক লোকজন। যৌনতা, জঙ্গি, ধর্মান্ধ, চোরাকারবারি থেকে শুরু করে ই-কমার্সের এক শ্রেণির ধান্ধাবাজরাও ঢুকে পড়েছে। ই-কমার্সের কথাই বলি, করোনার সময়ে বেড়েছে ই-কমার্সের ব্যাপ্তি। বিশেষ করে ফেসবুকভিত্তিক ই-কমার্সের প্রসার ঘটেছে বেশি। ঘরবন্দি মানুষ অনলাইনের মাধ্যমে শুধু পণ্য নয়, খাবারও অর্ডার দিয়েছেন অনলাইন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। দ্রুত পৌঁছে গেছে তাদের অর্ডারকৃত পণ্যটি। কিন্তু, সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহককে পণ্য বুঝিয়ে না দেয়ার অভিযোগ ওঠে। সঠিক সময়ে পণ্য বুঝিয়ে না দেয়া এবং টাকা ফেরতের টালবাহানার কারণে একাধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী । যারা পলাতক আছে তাদেরকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, ঢাকায় প্রায় ৬৫০টি ফেসবুকভিত্তিক অনলাইন শপিং এর পেজ চালু আছে। আর বাকি ১৫০টি ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহর ও জেলাতে চালু আছে। পুলিশ বলছে, যারা ফেসবুক ভিত্তিক ই-অনলাইনে শপিংয়ে প্রতারণার শিকার হবেন তারা যাতে থানায় গিয়ে মামলা করেন। তাহলে প্রতারকদের আইনের আওতায় আনা যাবে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকলে শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া কঠিন। এতে প্রতারকরা দ্রুত আদালত থেকে জামিন নিয়ে আবার সরব হচ্ছে ফেসবুক অনলাইন শপিং এর প্রতারণায়।

সিআইডি’র সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন ই-কমার্স এর ব্যবসার দ্রুত প্রচার ঘটেছে। প্রায় ৮০০টি প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করছে। প্রযুক্তির কারণে মানুষ ঘরে বসেই সব পণ্য পাচ্ছে। কিন্তু, এতোগুলো প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে সব প্রতিষ্ঠানকে নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তবে পুলিশের সাইবার ইউনিট কিছু আগের চেয়ে বেশি সক্রিয়। কারণ কয়েকটি বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের টাকা নয়-ছয় করতে দেখা গেছে। পরে গ্রাহকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইভ্যালির সিও মো. রাসেলসহ তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এতো গেল বাণিজ্য। ‘ফেক নিউজ’, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগের এক জটিল সমস্যা। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই এখন এই বিষয়টি মোকাবিলা করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে।

২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। কক্সবাজারের রামুতে হঠাৎ শোনা গেলো সেখানকার একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে উত্তম বড়ুয়া নামে কোন এক বৌদ্ধ তরুণের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ইসলাম ধর্ম, ইসলামের ধর্মগ্রন্থ কোরআন অবমাননা করা হয়েছে। এ নিয়ে অনেক ঘটনা ঘটলেও সেই আইডির আসল ব্যক্তিকে আর পাওয়া যায়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার মতো দূরে অবস্থিত নাসিরনগর। ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবরের কথা। সেখানে সেদিন যে হামলাটি হয়েছিলো তাও ঘটেছিলো একই কায়দায়, একই কারণে। ফেসবুকে কথিত একটি ইসলাম বিদ্বেষী ছবি পোস্ট করার অভিযোগে নাসিরনগরে হিন্দুদের অন্তত ৫টি মন্দির ও বহু বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছিলো। আর এই ঘটনায় সামনে এসেছিলো রসরাজ নামের এক ব্যক্তির নাম। তবে ঘটনার সূত্রপাত হামলার দুদিন আগে।

নাসিরনগর থেকে বারো কিলোমিটার মতো দূরে হরিপুর নামের একটি গ্রামে এক হিন্দু যুবক রসরাজ দাস। তার নামে একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে যে ছবি প্রকাশের অভিযোগ উঠেছিলো তা সেখানকার গ্রামবাসীকে ক্ষিপ্ত করে তুলেছিল। অভিযোগ ছিল মুসলমানদের কাবা ঘরের সঙ্গে হিন্দুদের দেবতা শিবের একটি ছবি জুড়ে দিয়েছিলেন রসরাজ। স্থানীয় লোকজন সেদিনই রসরাজ দাসকে ধরে পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছিলো। তার বিরুদ্ধে পরদিনই মামলা করে তাকে চালানও দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু তবুও থেমে যায়নি বিষয়টি। সেদিন একাধিক স্থানীয় ইসলামপন্থি সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ আহ্বান করেছিলো। হঠাৎ করেই ক্ষুব্ধ জনতা যেন সংঘবদ্ধ হয়ে উঠলো এবং নাসিনগরের হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা করা শুরু করলো।

প্রথম দিনই আটটি হিন্দু পাড়ায় অন্তত তিনশোটি বাড়ি-ঘর, মন্দির, দেব-দেবীর মূর্তি ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর হয় রসরাজের বাড়িও। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের নভেম্বরের চার তারিখ আরেক দফা হামলা হয় নাসিরনগরের হিন্দুদের উপরে।

ঘটনার আড়াই মাস পর জামিনে বের হয়েছিলেন পেশায় জেলে রসরাজ। বের হয়ে তিনি বলেছিলেন তিনি ফেসবুক চালাতে জানেন না। পাসওয়ার্ড কাকে বলে সে নিয়েও তার কোন ধারণা নেই। যে পোস্টটিকে ঘিরে এত ঘটনা সেটিও পরে আর পাওয়া যায়নি।

নাসিরনগরে হামলার ঠিক এক বছরের মাথায় ২০১৭ সালের নভেম্বরের ১০ তারিখ রংপুরের গঙ্গাচড়ার ঘটনাটি গড়িয়েছিল গুলি ও একজনের মৃত্যু পর্যন্ত। আবারো ফেসবুকের ছড়ানো খবরই এই ঘটনার সূত্রপাত। আর এক্ষেত্রেও এক হিন্দু যুবকের ফেসবুক থেকে ইসলামের নবীকে অবমাননার অভিযোগে স্থানীয়ভাবে দানাবাঁধা ক্ষোভ থেকে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছিলো।

সেসময় পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, টিটু রায় নামে যে ব্যক্তির ফেসবুক পোস্ট ঘিরে এই ঘটনা সেই টিটু রায়ের বাড়ি গঙ্গাচড়ায় হলেও তিনি নারায়ণগঞ্জে বসবাস করেন। ঘটনার দিন একটি মানববন্ধন শেষে হঠাৎ করে আশপাশের গ্রাম থেকে শতশত মানুষজন জড়ো হতে শুরু করেছিলো। তারপর মিছিল আকারে হিন্দু-পাড়ায় গিয়ে হামলা করা হয়েছিলো। পুলিশের গুলিতে সেদিন একজন নিহত হয়। যে টিটু রায়ের বিরুদ্ধে অবমাননার অভিযোগ, তার বিরুদ্ধে সেসময় যে মামলাটি দায়ের করা হয় সেটিতে চার্জশিট দেয়ার পর গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। পরে জানা গেলো সেই টিটু রায় ফেসবুক সম্পর্কে কিছুই বোঝে না।

২০১৩ সালের ৫ই মে ঢাকার শাপলা চত্বরে জড়ো হয়েছেন কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার সমর্থক। ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করার অভিযোগে বেশ ক’জন ব্লগারের বিরুদ্ধে কর্মসূচির অংশ হিসেবে সেদিন তাদের ঢাকা অবরোধ ছিলো। ভোর থেকে ঢাকার প্রবেশপথগুলো দখলে নিয়েছিলো হেফাজতে ইসলামের সমর্থকরা। এক পর্যায়ে ঢাকার শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিলো হাজার হাজার মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষক।

সেদিন শাপলা চত্বর রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছিলো। পরদিন ভোর নাগাদ পুরো মতিঝিল এলাকাকে মনে হয়েছিল যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি অঞ্চল। রাতের বেলায় হাজার হাজার র‌্যাব, পুলিশ বিজিবির মিলিত অভিযানে খালি করে ফেলা হয়েছিলো শাপলা চত্বর।

৫ই মে হেফাজতের হাজার হাজার কর্মী, মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থী শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু ৫ই মে দিবাগত রাতে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে চালানো পুলিশি অভিযানে মৃতের সংখ্যা আসলে কত ছিলো সেনিয়ে সেসময় নানারকম দাবি উঠেছিলো। ছড়িয়েছিল নানা ধরনের খবর। সারারাতজুড়ে নানা ধরনের ফেসবুক পোস্ট চোখে পড়ছিলো। তখন ফেসবুকে দাবি করা হয়েছিলো আড়াই হাজারের মতো নিহত হওয়ার। শাপলা চত্বর ট্রাজেডি বলে নানা রকমের খবর বের হয়েছিলো সারারাতজুড়ে। কিন্তু অভিযানের পর সেখানে উপস্থিত সংবাদকর্মীরা জানিয়েছিলেন বড় আকারে হতাহতের ঘটনা তারা দেখেননি।

তখন ফেসবুকে নানা খবরে গণহত্যার দাবি তোলা হচ্ছিলো। ট্রাকে করে মরদেহ গুম করার অভিযোগ উঠেছিলো। আর সেই সাথে নানারকম ছবি ছড়িয়েছিলো ফেসবুকে।

তবে এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ৫ই এবং ৬ই মে দুই দিনে সারাদেশে ২৮ জনের নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছিলো।

২০১৮ সালের জুলাই মাসের শেষে ঢাকার এয়ারপোর্ট রোডে বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা আর এরপর বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে সরকারের এক মন্ত্রীর করা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ঢাকার স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলো তা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। কিশোরদের আন্দোলনে রীতিমতো বিব্রত হয়ে উঠেছিলো সরকার।

এক পর্যায়ে এসে আন্দোলনকারী কিশোর কিশোরীরা হামলার শিকার হয়েছেন। হামলার অভিযোগ উঠেছে সরকারি দলের সমর্থকদের দিকে। শেষের দিকে এসে ফেসবুকে এই আন্দোলনকে ঘিরে নানা খবর ও ভিডিও ভাইরাল হয়ে উঠছিলো।

পিস্তল হাতে যুবকরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করছেন সেই ছবি যেমন ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে, তেমনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মেরে ফেলা হচ্ছে, ছাত্রীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে এমন দাবি করা কিছু ফেসবুক পোস্টও ফেসবুক লাইভ ভাইরাল হয়েছে। তখন আলোচিত হয়েছিলো মডেল ও অভিনেত্রী নওশাবার গ্রেফতার। ছাত্ররা যেদিন হামলার শিকার হয়েছিলেন, নওশাবা সেদিনই ফেসবুকে একটি লাইভ করেছিলেন। যাতে তিনি আন্দোলনরত ছাত্রদের মৃত্যু ও এক ছাত্রের চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। সেসময় গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

সরকারের পক্ষ থেকে সেসময় বহু ফেক আইডি শনাক্ত করে সেগুলো থেকে গুজব ছড়ানোর দাবি করা হয়েছে।

লেখক : ইয়াহিয়া নয়ন, সাংবাদিক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ