1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিশ্ববাজারে হঠাৎ জ্বালানি তেলের বাজারে আগুন, আঁচ লাগছে বাংলাদেশেও!

অশোক আখন্দ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সারা দেশে চলছে পরিবহন ধর্মঘট। যদিও এটা সত্য যে বাংলাদেশে জ্বালানী তেলের দাম এক লাফে বেড়েছে, তবে আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণে উঠে আসছে আরো বড় আশঙ্কার খোরাক। আন্তর্জাতিক বাজারের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। (বণিক বার্তা অনলাইন)। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের ভবিষ্যত সরবরাহ মূল্য ৮৭ সেন্ট বেড়ে ব্যারেল প্রতি ৮৫ ডলার ৭৩ সেন্টে উন্নীত হয়েছে। এ মূল্য ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। কোভিডজনিত বিধিনিষেধ শিথিলের সময়ে জোরালো চাহিদায় জ্বালানি তেলের দামে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত ০১ নভেম্বর ২০২১ তারিখ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যটির দাম কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। খবর রয়টার্স।

গ্যাস ও কয়লার দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ উৎপাদকরা জ্বালানি তেলের দিকে ঝুঁকছেন যে কারণে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি পণ্যটির দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, মূলত ওপেকের কারণেই আরও বাড়ল তেলের দাম। গত অক্টোবরে যে গতিতে উৎপাদন বাড়ানোর প্রত্যাশা করেছিল শীর্ষ তেল উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের জোট ওপেক তার চেয়ে উৎপাদন কম হওয়ায় জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্বের অন্যতম আমদানিকারক দেশ চীনে ডিজেলের সংকটে তেলের চাহিদা বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে দামে। গতকাল সোমবার অপরিশোধিত তেলের আগাম লেনদেনের দাম শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ব্যারেল প্রতি ৮৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ হয়েছে। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম বেড়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ, ব্যারেল প্রতি হয়েছে ৮৪ দশমিক ২৪ ডলার।

বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমণ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল হচ্ছে আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জ্বালানির চাহিদা। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে দাম, তৈরি হচ্ছে সংকট। প্রায় দেড় বছর কম দামে বিক্রির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তেল উত্তোলনকারী দেশগুলো দাম বাড়ানোর কৌশল হিসেবে দৈনিক তেল উত্তোলনের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে অব্যাহতভাবে বাড়ছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। গত ০১ নভেম্বর ২০২১ তারিখ বিশ্ববাজারে আবারও আড়াই শতাংশ বেড়েছে দাম। সম্প্রতি তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক এবং অন্য বড় উৎপাদনকারীরা তেলের উৎপাদন না বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারও প্রভাব পড়ে তেলের বাজারে। বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ওয়ান্দার বিশ্লেষক ক্রেগ এরলাম বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘বাজারে এখনো অস্থিরতা রয়েছে। সামনের মাসগুলোতে জ্বালানিসংকট বড় উদ্বেগের কারণ হিসেবে থাকবে। এর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি এবং কঠোর মুদ্রানীতির সম্ভাবনা বাজারে চাপ তৈরি করছে।’

এছাড়াও, বিশ্ববাজারে সর্বোচ্চ দাম উঠেছে প্রাকৃতিক গ্যাসেরও। এতে দেশগুলো তেল আমদানিতে জোর দেওয়ায় তেলের দামও বাড়ছে। করোনা কেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার শুরু হওয়ায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যায় গত বছরের নভেম্বর থেকেই। তবে চলতি বছরের জুন থেকে দাম বাড়ার প্রবণতায় নতুন হাওয়া লাগে। এদিকে নাগালের বাইরে জ্বালানি সংকট, ডিজেল কেনায় সীমা বেঁধে দিয়েছে চীন। ডিজেল কেনায় সীমা বেঁধে দিচ্ছে চীনের অনেক পেট্রল স্টেশন। দাম বাড়ায় ও সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই ব্যবস্থা চালু করতে হয়েছে পেট্রল স্টেশনগুলোকে। বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। চীনের বিভিন্ন জায়গায় পেট্রল স্টেশনে ট্রাকগুলোকে শুধু ১০০ লিটার ডিজেল নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, যা তাদের ধারণক্ষমতার মাত্র ১০ শতাংশ। দেশের কিছু অংশে অবস্থা আরও কঠোর করা হয়েছে। চালকদের শুধু ২৫ লিটার পর্যন্ত কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দর বাড়ায় ইউরোপের ভোক্তাদের বাড়তি মূল্য দিতে হচ্ছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের অকল্পনীয় মূল্যবৃদ্ধি, কয়লার দর আকাশছোঁয়া, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলও অচিরেই ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারে পৌঁছানোর আভাস দেওয়া হচ্ছে। চাহিদা বৃদ্ধি ও মৌসুম পরিবর্তনে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটও দিন দিন তীব্র হচ্ছে। অথচ পশ্চিম গোলার্ধে আসন্ন শীতে ঘর আলোকিত ও উষ্ণ রাখতে জ্বালানির ব্যবহার বাড়বে বই কমবে না। জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে তাই উৎকণ্ঠাও বাড়ছে সব দেশেরই সরকারি মহলে। জ্বালানির দরস্ফীতিতে যেন ভোক্তাদের ওপর পড়া প্রভাব সীমিত রাখা যায়, সরকারি পর্যায়ে সে চেষ্টাই চলছে। কারণ ভোক্তারা ব্যয় সংকোচনে বাধ্য হলে ব্যাহত হবে মহামারি থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার।বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দর বাড়ায় ইউরোপের ভোক্তাদের বাড়তি মূল্য দিতে হচ্ছে। জ্বালানি গ্যাস ক্রয়ে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ায় কয়লা ও তেলের বাজারেও আগুন লেগেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে আগস্টের পর থেকে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য বেড়েছে ৪৭ শতাংশ। ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে তেলের দর। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম সাত বছরের রেকর্ড অতিক্রম করায় আমদানি করা তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দর বৃদ্ধি চাপে ফেলেছে জ্বালানি বিভাগকে। তবে এই সংকটকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে শুধু বাংলাদেশই নয় বরং সারা বিশ্বই আকষ্মিক জ্বালানি সংকটের জন্যে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছে। যার জের টানতে হচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের। এই সংকটের পিছনে বিশ্ববাজারের অনিয়ন্ত্রিত গতি যেমন দায়ী তেমনি দায় এড়াতে পারে না বিশ্বমোড়লদের খামখেয়ালিপনাও। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিঃসন্দেহে পার করতে হবে চ্যালেঞ্জিং সময়। তবে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি পণ্যের দর বাড়ায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোরও বাংলাদেশমুখী হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে অগভীর সমুদ্রে ভারতের জাতীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি ওএনজিসির দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনায় সাগরে গ্যাস-তেল অনুসন্ধানে গতি ফিরবে বলে মনে করে সরকারের জ্বালানি বিভাগ। এখন শুধু সময়ের জন্য অপেক্ষা!


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ