বাংলাদেশকে বলা হয় জঙ্গিবাদের রোল মডেল। কিন্তু এ অর্জনের পথ সহজ ছিল না। বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্মের নামে যে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে লালন পালন করা হয়েছিল, জাতিকে তার ফলাফল ভোগ করতে হয়েছে বহুবার।২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ২১০টি জঙ্গি ঘাঁটি ছিল। রাজনৈতিক স্বার্থে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়ার ফলশ্রুতিতে পহেলা বৈশাখে হামলা, ময়মনসিংহে সিনেমা হলে হামলা, ৬৩ জেলায় এক যোগে বোমা বিস্ফোরণ, রাজশাহীতে জেএমবির ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের মতো অগণিত ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু উত্তরণের কোনো সদিচ্ছা দেখা যায় নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর শুরু হয় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান। প্রতিক্রিয়ায় সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রও হয়েছে। ব্যর্থ হয়ে পরিকল্পনা করা হয়
জঙ্গীবাদের ইতিহাসে নজিরবিহীন ও ভয়ঙ্কর হলি আর্টিসানে হামলা করার । জঙ্গীরা তাদের সাংগঠনিক শক্তিমত্তা জানান দিয়ে সারা দেশে অরাজকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এই হামলা চালানো হয়। হামলার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বিরোধী দল এই হামলার প্রেক্ষাপটকে সরকার পতনের জন্য ব্যবহার করবে।
হলি আর্টিসান হামলা: ঢাকায় সেদিন ছিল কালো রাত, কেঁপেছিল বিশ্ব।২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় ঢুকেই জঙ্গিরা জিম্মি করে ফেলে অবস্থানরত সবাইকে। জিম্মির এ ঘটনা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ঘটনার ভয়াবহতা তখনো আঁচ করতে পারেনি কেউ।
ভয়াবহ এ হামলায় নৃশংস হত্যাযজ্ঞ এবং প্রায় ১২ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস জিম্মি সংকটের ঘটনা স্তম্ভিত করেছিল পুরো জাতি, পুরো বিশ্বকে।
সেদিনের জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ মোট ২২ জন নিহত হন। কয়েকবার প্রস্তুতি নিয়েও রাতে অভিযান চালায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাত দেড়টায় ইন্টারনেটে হামলাকারী পাঁচ তরুণের ছবি প্রকাশ করে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। ২ জুলাই সকাল আনুমানিক ৭টা ৪০ মিনিট। জিম্মিদের উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করার জন্য অভিযান পরিচালনা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন। ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যেই সব সন্ত্রাসীকে নির্মূল করে ওই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তারা।
পরে নিহত ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে নয়জন ইতালির নাগরিক, সাতজন জাপানের, একজন ভারতের ও তিনজন বাংলাদেশি। সকালে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো সদস্যদের পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ অবসান হয় জিম্মিদশার। পুলিশের অভিযানে মৃত্যু হয় হামলাকারী পাঁচ জঙ্গির।
বিদেশি বিশ্লেষকরা বলেছিলেন বাংলাদেশ এ ঘটনা সামাল দিতে পারবে না। কিন্তু হামলাকে সফলভাবে দমন করে দেশব্যাপী শুরু হয় জঙ্গিবিরোধী অভিযান। জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড, অস্ত্রদাতা, অর্থদাতা, প্রশিক্ষণ-প্রশিক্ষক ও জঙ্গিদের আশ্রয়দাতাদের শনাক্ত করা হয়। তদন্তে উঠে আসে নিরাপত্তার হুমকি হয়ে দাঁড়ানো উগ্রপন্থী সংগঠন নব্য জেএমবি।
নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে মাঝে মধ্যেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি এবং গ্রেফতার অভিযানের কারণে এতে সফল হয়ে উঠতে পারছে না জঙ্গি সংগঠনগুলো। বর্তমানে দেশে জঙ্গিদের আগের সেই অবস্থান নেই। মাঝে মধ্যে অনলাইনকেন্দ্রিক সরব হওয়ার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারীর কারণে তারা গ্রেফতার হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ্যতা, দূরদর্শিতা আর সঠিক নেতৃত্বগুণের জন্য আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত একজন রাজনীতিবিদ। দেশ পরিচালনায় তিনি সাহস ও কর্মদক্ষতায় অনন্য। আর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের মাধ্যমে তিনি বর্তমানে বিশ্বশান্তির দূত ও মানবপ্রেমী হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। জঙ্গিবাদ দমনে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ জঙ্গিমুক্ত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।