1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা : মেহেদী রাঙা হাত মাখল রক্তে

ইবার্তা ডেস্ক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০২২

সুলতানা আহমেদ খুকী ছিলেন বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য ক্রীড়াবিদ। হার্ডলস, হাই জাম্প এবং লং জাম্প – এই তিন ক্ষেত্রেই স্বাধীনতার আগে এবং পরে তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম ফরিদপুরের কোনো এক পার্লামেন্ট সদস্যকে দিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠান সুলতানার বাবা দবিরউদ্দিনের কাছে। তারপর দুই পরিবারের সম্মতিতে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ও সুলতানার বিয়ে সম্পন্ন হয় ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই।

জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের বিয়ের মূল্যবান সব উপহার সরকারি তোষাখানায় জমা দেওয়া হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের স্মৃতিচারণকালে বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘শেখ কামাল এবং সুলতানা কামালের বিয়েতে যে সব মূল্যবান উপহার পাওয়া গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এবং বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের প্রত্যক্ষ সহায়তায় আমরা সরকারি তোষাখানায় জমা দিয়েছিলাম।’

ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘স্বভাবতই শেখ কামালের বিয়েতে অনেক দামি দামি উপঢৌকন এসেছিল। একটা সোনার নৌকা এবং একটা মুকুট রাখা হয়েছিল অ্যাজ এ সিম্বল। বাকি সব সরকারি তোষাখানায় জমা দেওয়া হয়েছিল। যে কারণে বঙ্গবন্ধুকে বর্বরতমভাবে হত্যা করার পর তারা শ্বেতপত্র প্রকাশ করার চেষ্টা করল। তন্ন তন্ন করে ৩২ নম্বরের বাড়িটা খুঁজল। কিন্তু তারা কিছুই পায়নি। কিচ্ছু পায়নি। বিদেশ থেকেও দামি দামি উপহার এসেছিল। সেগুলোও সরকারি তোষাখানায় জমা দেওয়া হয়।’

শেখ কামালের স্ত্রী হবার আগেই সুলতানা আহমেদ খুকী জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত মুখ ছিলেন। ১৯৭৩ সালের কথা। তখনো দেশসেরা নারী অ্যাথলেট সুলতানা আহমেদ খুকী সঙ্গে শেখ কামালের বিয়ে হয়নি। সে বছর অলইন্ডিয়া গেমসে স্বাধীন বাংলাদেশও অ্যাথলেটিকসে অংশ নিয়েছিল। যাওয়ার আগে পুরো দল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে যায়। বঙ্গবন্ধু সবাইকে মিষ্টিমুখ করিয়ে বললেন, তোরা সৌভাগ্যবান বাংলাদেশের হয়ে প্রথম বিদেশে খেলতে যাচ্ছিস। সুলতানাকে কাছে ডেকে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি জানি তোদের অনুশীলন ঠিকমতো হয়নি। তবুও তোর ওপর আমার আস্থা রয়েছে সোনা না হোক তুই হবি বিদেশের মাটিতে পদক জেতা প্রথম ক্রীড়াবিদ।’ বঙ্গবন্ধুর এমন কথায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সুলতানা। বললেন, ‘আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি ভারতের মাটিতে পদক জিতে দেশের মান উজ্জ্বল করব।’

বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া সেই কথা রক্ষা করেছিলেন সুলতানা। অলইন্ডিয়া গেমসে লংজাম্পে রৌপ্য পদক জেতেন তিনি। এটাই ছিল বাংলাদেশের কোনো ক্রীড়াবিদের বিদেশের মাটিতে প্রথম পদক জয়। শুধু সুলতানা নন, ওই গেমসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ব্রোঞ্জ পদক জেতেন শামিম আরা টলি। এমন সাফল্য বঙ্গবন্ধু দারুণ খুশি হয়েছিলেন। ভারত ফেরা দলকে ঘরোয়া পরিবেশে সংবর্ধনাও দেন। সুলতানার উদ্দেশে বললেন, ‘পদক তো জিতলি এখন তোরা কী চাস।’ সুলতানা আর দেরি করেননি। নিজের জন্য কিছু চান নি। চাইলেন দেশের নারীদের জন্য। বলে ফেললেন মেয়েদের জন্য আলাদা ক্রীড়া কমপ্লেক্স দরকার। বঙ্গবন্ধু মুচকি হেসে বললেন, ‘যা, পাবি। ধানমন্ডিতে পিডব্লিউডির জমি পড়ে আছে। ওখানেই তোদের ক্রীড়া কমপ্লেক্স হবে।’

বর্তমানে ধানমন্ডির মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সটি বঙ্গবন্ধুরই দেওয়া।

৬০ ও ৭০ দশকের রক্ষণশীল সময়ে নারী হয়েও সুলতানা ছিলেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলোয়াড়। তার দৌড় দেখতে তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে ভিড় জমে যেত। ১৪ বছর বয়সেই সুলতানা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নে লংজাম্পে মোহামেডানের হয়ে রেকর্ড গড়ে সোনা জেতেন। ১৯৬৮ সালে তো পুরো পাকিস্তান জুড়েই আলোড়ন তোলেন। পাকিস্তান অলিম্পিক গেমসে লংজাম্পে নতুন রেকর্ড গড়ে সোনা জেতেন। ১৯৭০ সালে অল পাকিস্তান অ্যাথলোটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে হার্ডলসে নিজের রেকর্ড ভেঙে সোনা জেতেন। স্বাধীনতার পর আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। ১৯৭৩, ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ টানা তিন বছর জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সুলতানা তার সাফল্য ধরে রাখেন।

বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সুলতানা আহমেদ সাধারণ্যে সুলতানা কামাল নামে পরিচিত লাভ করেন। স্বামী শেখ কামাল নিজেও ছিলেন সফল ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক। তাই বিয়ের পরও স্ত্রীকে উৎসাহ জোগান ট্র্যাকে দাপট ধরে রাখতে। সুলতানার স্বপ্নও ছিল এশিয়াতে সেরা হওয়ার। সেই স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন হলো না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে শেখ কামাল ও সুলতানা কামালও ঘাতকদের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন। বিয়ের মাস না পেরোতেই মেহেদী রাঙা হাত মাখল রক্তে।

 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ

নির্বাচিত