1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

কবর সংলগ্ন স্থান থেকে দরাজ কন্ঠে আওয়াজ এলো!

মো. মোজাম্মেল হক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২০ জুলাই, ২০২২

মানুষ মাত্রই আবেগপ্রবণ। যখন তার সামনে অখন্ড অবসর তখন অতীতের সুখ-দুঃখের দোলা চালের অনেক ঘটনা স্মৃতির পটে ভেসে ওঠে। তখন সম্ভবত আমি অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। আমাদের এলাকায় প্রচুর কাঁচা মরিচের আবাদ হতো। আমার নিজ গ্রাম সাহাপুরের পশ্চিম পাশে মুলত মরিচের চাষ হতো। আমার দাদী তখন জীবিত ছিলেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী ওই এলাকাটিতে এক সময় জনবসতি ছিল। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে আস্তে আস্তে শাহাপুর গ্রামের লোকজন ক্রমাগতভাবে বাড়িঘর পূর্বদিকে সরিয়ে নিয়ে আসে। এতে করে বিশাল ভিটা বাড়ি এলাকা হঠাৎ জনশুন্য হয়ে যায়।

যেহেতু মরিচের জমিতে পানি জমলে মরিচগাছ মারা যায়। সে কারনেই হয়তোবা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ভালো থাকার কারনে এলাকটিতে ঐতিহ্যেগতভাবে মরিচের চাষ হতো। ঐ এলাকায় যে জনবসতি ছিল তার বড় প্রমাণ মরিচের জমির পানি নিস্কাশনের জন্য পগার কাটা (ড্রেন তৈরী) কালীন সময়ে প্রচুর মাটির তৈরী তৈজসপত্রের ভাঙা অংশ পাওয়া যেত। এমনকি মরিচের জমিতে চাষ দেয়ার সময় কিংবা আগাছা পরিস্কার করা কালীন জমিতে নিড়ানি দেয়ার সময় তৈজসপত্রের ভগ্নাংশের সঙ্গে মাঝে মাঝে ব্রিটিশ আমলের ধাতব মুদ্রা এবং কড়ি পাওয়া
যেত। যেহেতু ঐ এলাকায় এক সময় গ্রাম বা জনপদ ছিল তাই ওই এলাকাকে গায়ের ভিতর বলতো গাঁয়ের ভিতর বলা হতো।

পৈত্রিক সূত্রে আমার বাবা গায়ের ভিতর বেশ কিছু জমি পেয়েছিলেন। এই জমিগুলোতে সবসময়ই মরিচের আবাদ করা হতো। শীতকালের শেষের দিকে মরিচের চারা সমূহ উত্তম চাষ করে জৈব সার ও রাসায়নিক সার দিয়ে জমি প্রস্তুতের পরে জমিতে অত্যন্ত যত্নসহকারে রোপণ করা হতো। মরিচের গাছ বা চারাগাছ যাতে করে পানির অভাবে মারা না যায় সে কারনে প্রতিদিন বিকেলে রোপিত মরিচ গাছে নিয়ম করে পানি দেয়া হতো। আমাদের একটি মোটামুটি বড় মরিচের জমি ছিল। এই জমিটিকে আয়েশার ভিটা বলা হত। দাদির বক্তব্য অনুযায়ী কোন এক সময় আমার বাবার দাদার দাদারা আয়শার ভিটাতে বসবাস করতেন। সে সময় আশপাশের পুরো এলাকায় অনেক বনজঙ্গল ছিল। সেই জঙ্গলে বন্য শুকর, শৃগাল এমনকি বাঘ বাস করতো। আমার বাবার দাদার দাদা ছিলেন গ্রামের বিশিষ্ট মাতবর। তার আয়শা নামের ৭/৮ বছরের ফুটফুটে সুন্দর কন্যা সন্তানকে বাঘে ধরে নিয়ে যায়। তিনি সেই শোক সহ্য না করতে পারায় অসুস্থ হয়ে পরেন। পরবর্তীতে ওখান থেকে বাড়ে আমাদের বর্তমান ভিটায় স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু তখন থেকে ঐ ভিটা জমির নাম হয়ে যায় আয়শার ভিটা।

আয়শার ভিটাতেও মরিচের চাষ করা হতো। যতদূর মনে পরে চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহ। তখন আমি সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র। ছোট ভাই মরহুম মোকারব আমার ২ বছরের ছোট। আমরা দুই ভাই আর দুই জন কামলা সহ আমরা মরিচের জমি কোদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটি আলগা করার জন্য আয়শার ভিটাতে গিয়েছিলাম। কাজ শেষ হতে হতে মাগরিবের আজান হলো। কামলা দুই জন এবং আমার ছোট ভাই মোকারব বাড়িতে ফিরে গেলেন। আমি মাটির কলসে থাকা পানি দিয়ে ওজু করে মাটিতে গামছা বিছিয়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করলাম। নামাজ শেষে শুন্য কলস হাতে নিয়ে বাড়ি অভিমুখে রওনা হলাম। পায়ে চলা মেঠো পথ। ফিরতি পথের মাঝে মাঝি জয়গায় ঈদগাহ মাঠ এবং পাশেই শাহাপুর পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদ। মসজিদেটি তখন টিনসেড ছিল। শুক্রবারে জুমার নামাজে বেশকিছু সংখ্যক মানুষ হলেও ওয়াক্তিয়া নামাজের সময় মুসুল্লি হয়না বললেই চলে। কারন মসজিদটি ছিল মুল শাহাপুর গ্রাম থেকে বেশ কিছুটা দূরে, তাছাড়া শাহাপুর গ্রামের মধ্য পাড়ায় আরো একটি মসজিদ ছিল। ঐ মসজিদটি গ্রামের মাঝখানে হওয়ায় অধিকাংশ মুসুল্লী ওয়ক্তিয়া নামাজ সেখানেই পড়তো।

পশ্চিম পাড়া মসজিদ এবং পায়ে চলা মেঠো পথের মাঝে তখন একটি মাত্র কবর ছিল। আমাদের গ্রামের প্রথম ম্যাট্রিকুলেশন পাশ এবং প্রথম সরকারি চাকুরীজীবি মরহুম রমজান আলী এবং মরহুম কিয়াম উদ্দীন ভাইয়ের বাবা মরহুম লখাই প্রামাণিকের কবর। কবরটির পরিধি ইট দিয়ে বাঁধানো ছিল। সূর্য অস্থ গেলেও তখনও গোধূলি লগ্ন। চলতি পথে আশেপাশে কাউকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। এদিকে কবরের পাশ দিয়ে একাকী সাহস পাচ্ছিলামনা। অবশ্য আমার মরহুম দাদাীমা আমাকে শিখিয়েছিলেন কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলতে হবে “আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুরি ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম; আংতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিলআছারি।’” আমি আবছা আলোতে একাকী কবরের পাশ দিয়ে যেতে বেশ ভয় পাচ্ছিলাম। তবু্ও কবরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে সভয়ে একটু জোর দিয়ে উচ্চারণ করলাম” আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুরি।” হঠাৎ মনে হলো কবর সংলগ্ন স্থান থেকে দরাজ কন্ঠে উত্তর এলো “ওয়ালাইকুম সালাম রহমতুল্লাহ ওয়া বারাকা তুহ।” কন্ঠের মধ্যে একধরনের অলৌকিক মাধুর্যতা। আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। মনে হল সমস্ত শরীর শিউরে উঠলো আমার হাত থেকে মাটির ছোট কলসটি পরে ভেঙে গেলো।

আমি ভয় পেয়ে উদভ্রান্তের মত দৌড়ে হাফাতে হাফাতে বাড়ি পৌঁছালাম। সব ঘটনা মা ও দাদীকে খুলে বললাম। দাদী বারান্দায় সপ পেতে আমাকে শুইয়ে দিলেন। একটি লোহার কাচি পরিস্কার করে গরম করে পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি খাইয়ে দিলেন। সন্ধ্যায় আমার গায়ে জ্বর এলো। আব্বা বাড়িতে ফিরে এলে কাঁসার থালা পিঠে বসিয়ে দেয়া হলো। আব্বা বললেন ভয় কেটে গেলে কাঁসার থালা আপনা আপনি পিঠ থেকে পরে যাবে। প্রায় তিন ঘন্টা পরে কাঁসার থালা খুলে মাটিতে পড়ে গেলো। ৭০ উর্ধ বয়সের দাদী ছিল আমাদের সকল অভয় এবং ভরসার কেন্দ্রবিন্দু। রাতে ভয়ে ভয়ে দাদীর গলা জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে গেলাম। ঘুম আসছিল না কিছুক্ষণ পর পর কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম। কানে বাজছিল অলৌকিক কন্ঠস্বরে” ওয়ালাইকুম সালাম রহমতুল্লাহ ওয়া বারাকা তুহ।”

লেখক : মো. মোজাম্মেল হক – পরিচালক, র‍্যাব-৪, ডিআইজি, বাংলাদেশ পুলিশ। 


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ