1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পশুবোঝাই ট্রাক আটকে ক্যাডার ও পুলিশের চাঁদাবাজি

ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭

মাসুদ রানা: কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সীমান্তসহ বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে আসা পশুবোঝাই ট্রাক আটকে পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের ক্যাডাররা চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা ও দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় এক ট্রাক গরু আনতে খরচ হচ্ছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও বিভিন্ন ঘাটে পশু বোঝাই ট্রাক সিরিয়াল নিতে ৫শ থেকে ৬শ টাকা নেয়া হচ্ছে। তার ওপর রয়েছে চাঁদাবাজি। গতকাল গাবতলীসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাট ঘুরে গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এতথ্য জানা গেছে। গরু ব্যবসায়ীরা জানান, দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দিলে চলে ব্যবসায়ীদের ওপর নির্যাতন ও হয়রানি। ফলে অনেকেই ঝামেলা এড়াতে ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়াও সীমান্তে গরু বৈধ করার অনুমোদন নিতে ৫শ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও নেয়া হচ্ছে ২ হাজার টাকা।
জানা গেছে, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও রাজবাড়ীসহ ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলা থেকে গরুর ট্রাক আনতে খরচ হচ্ছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। বান্দরবন খাগড়াছড়িসহ চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলা থেকে গরু আনতে খরচ হচ্ছে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোরসহ রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলা থেকে গরু আনতে খরচ হচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। সাতক্ষীরা, যশোরসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলা থেকে গরু আনতে খরচ হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। ভোলা, বনগুনাসহ বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা থেকে গরু আনতে খরচ হচ্ছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ সিলেট বিভাগের ৪ জেলা থেকে গরু আনতে খরচ হচ্ছে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। দিনাজপুর, লালমনিরহাটসহ রংপুর বিভাগের ৮ জেলা থেকে গরু আনতে খরচ হচ্ছে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। এছাড়া জামালপুরসহ ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলা থেকে গরু আনতে খরচ হচ্ছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা।
এবিষয়ে ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে অসাধু পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের নামে-বেনামে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা পশু বোঝাই ট্রাক ছাড়াও পণ্যবাহী ট্রাক আটকে চাঁদাবাজি করছে। জেলা পরিষদের নামেও চাঁদাবাজি হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করলেও কাজ হচ্ছে না। চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ নতুন কোন ঘটনা নয়। তবে কেউ যদি প্রমাণসহ অভিযোগ করেন, তাহলে অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে হাইওয়ে পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মহাসড়কে কোরবানির পশু বোঝাই ট্রাক আটক করে কোন পুলিশ সদস্য চাঁদাবাজি করলে তাৎক্ষণিক ক্লোজ করা হবে। পরে তার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করা হবে। এ জন্য পুলিশ সদস্যদের আগেই সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। পুলিশের নিচে ইন্সপেক্টর পদ মর্যাদার কর্মকর্তা ছাড়া কেউ যাতে গাড়ি না থামায় তার গাইডলাইন দেয়া হবে। বড় ধরনের সমস্যা হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ৯৬টি মহাসড়কের যেকোন স্থানে পশু বোঝাই ট্রাক আটক করে স্থানীয় সন্ত্রাসীরাও চাঁদাবাজি করলে তাদের গ্রেফতার করা হবে। প্রতিটি মহাসড়কে পুলিশের বিশেষ টিম মোতায়েন ও টহল দিবে। এসপি থেকে ঊর্ধŸতন কর্মকর্তারা সর্বক্ষণ মহাসড়কের বিষয়টি তদারকি করবেন।
গরু ব্যবসায়ীরা জানান, সাতক্ষীরা, যশোর ও মেহেরপুর ১৩৮ কিলোমিটার সীমান্ত পথে প্রতিদিন কয়েক হাজার গরু ও মহিষ আনা হয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরে। ভারতীয় গরু-মহিষ প্রবেশের বৈধতা দেয়ার জন্য সাতক্ষীরা সীমান্তে রয়েছে পৃথক ৪টি করিডোর। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ভারতীয় গরু বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশের পর তা করিডোরে আনতে হয়। করিডোরের পর গরু ও মহিষের গায়ে সিল মেরে বৈধ করা হয়। সিল মেরে বৈধ করতে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৫শ টাকা ভ্যাট দিতে হয়। কিন্তু বিভিন্ন কড়িডোরে বিভিন্ন মহল জোর করে গরুপ্রতি এক থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে।
গাবতলী গরুর হাটে চাঁদাবাজির বর্ণনা দিতে গিয়ে এক ব্যবসায়ী জানান, গত শনিবার রাতে ২৪টি গরু সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় নিতে ট্রাক ভাড়া করা হয় ১৪ হাজার টাকায়। গরু ট্রাকটিকে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকার গাবতলী গরুর হাট পর্যন্ত পৌঁছতে ১১টি স্পটে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে। এর মধ্যে আরিচা-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটেই দিতে হয়েছে এক হাজার টাকা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক ব্যবসায়ী জানান, গত বুধবার রাতে ৩২ হাজার টাকায় ট্রাকভাড়া করে গরু নিয়ে ঢাকা পর্যন্ত আসতে প্রায় ১৫ স্পটে সাড়ে ৯ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে। তিনি জনান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বিশ্বরোড মোড়, শিবগঞ্জ, রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ, গোদাগাড়ি, চারঘাট, জুলনপুর, খড়খড়ি, যমুনা সেতুর আগে রাইপুরসহ ১৫টি স্পটে রীতিমতো চৌকি বসিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। পুলিশ ও পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নামেই বেশির ভাগ জায়গায় চাঁদা তোলা হচ্ছে।
গরু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বিট বা খাটালে কয়েক দফা চাঁদা দিয়ে গরুর হাটেও দিতে হচ্ছে দফায় দফায়। তারপর পথে পথে চাঁদা দিতে দিতে ঢাকার গাবতলী হাটে গিয়েও রেহাই মিলছে না। সেখানেও চাঁদাবাজির শিকার হতে হচ্ছে। তাদের মতে, শুধু পথেই এক গরুতে ন্যূনতম দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা চাঁদা গুনতে হচ্ছে। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জ বা রাজশাহীর হাটে প্রতি ট্রাকে দিতে হচ্ছে আরও এক থেকে দুই হাজার টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, মহাসড়কে মোটর শ্রমিক নামধারীরা ট্রাক থামিয়ে যে চাঁদা নিচ্ছে সেখানে পুলিশেরও সংশ্লিষ্টতা আছে। অনেক জায়গায় মহাসড়কে কর্তব্যরত পুলিশ নিজেরাই চাঁদা নিচ্ছে গরুর ট্রাক থেকে। যশোর বেনাপোল সীমান্ত থেকে গাবতলী পর্যন্ত কোরবানির পশু পৌঁছাতে অন্তত ১৫ জায়গায় চাঁদা দিতে হচ্ছে বলে ব্যাপারীদের অভিযোগ। যশোরের বাগআঁচড়া, নাভারণ, ঝিকরগাছা, চাঁচড়া, খাজুরা, মাগুরা, মধুখালী, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোয়ালন্দঘাট, মানিকগঞ্জ, সাভার ও গাবতলীতে ঘাটে ঘাটে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এতে গরু আমদানি খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দুর্ভোগের শিকার ব্যাপারীরা। ভারতীয় গরুর পর্যাপ্ত আমদানি থাকলেও দেশে বিভিন্ন স্থানে চাহিদা কমেছে। গত বছরের তুলনায় এবার বেনাপোল সীমান্তের হাটগুলোতে বাইরের ব্যাপারীর আনাগোনা কম।
পুলিশ সদর দফতরের কর্মকর্তারা জানান, প্রতি বছরের মতো এ বছরও কোরবানির ঈদের আগে পশুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি বন্ধে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের বেশকিছু নির্দেশনা দেয়াসহ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চাঁদাবাজ যেই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাবে পুলিশ। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক বলেন, ঈদুল আজহা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া মহাসড়কে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক না থামানোর জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। কোরবানির পশু পরিবহনে ব্যবহৃত নৌকা ও ট্রাকে চাঁদাবাজি রোধে পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে বলেও জানান তিনি।
হাটের নিরাপওার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কোরবানির হাটগুলোয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়া হবে। কেন্দ্রীয় কন্ট্রোলরুম ছাড়াও প্রতিটি হাটে একটি করে কন্ট্রোলরুম থাকবে। সেখানে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরাও থাকবে। প্রতিটি হাটের ওয়াচ টাওয়ার থেকে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা হবে। কেউ মোটা অংকের টাকা বহন করার সময় পুলিশকে জানালে পুলিশ সহায়তা করবে। অজ্ঞান পার্টির বিষয়ে বিশেষ টিম কাজ করবে। এছাড়া জাল টাকা শনাক্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় হাটগুলোয় যন্ত্র থাকবে জানিয়ে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, হাটের আশপাশের ব্যাংকগুলোয় সান্ধ্যকালীন ব্যাংকিং সেবা চালু রাখার জন্য আমার অনুরোধ করেছি।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ