1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আন্তর্জাতিকতাবাদ

ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০২১

ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম:  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বরাজনীতি পরিভ্রমণ করেছেন ঠাণ্ডা যুদ্ধ বা কোল্ডওয়ারের সময়ে (১৯৪৭-৯১)। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়, তখনো ঠাণ্ডা যুদ্ধের ছায়াতলে আবর্তিত হচ্ছে গোটা বিশ্ব।  ঠাণ্ডা যুদ্ধের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল বিশ্বরাজনীতিতে দুই মহাপরাশক্তি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্বের লড়াই। ঠাণ্ডা যুদ্ধ কেবল দুই দেশের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, সামরিক জোট কিংবা ক্ষমতার ভারসাম্যজনিত কোনো সাধারণ ঘটনা ছিল না। এটা ছিল মূলত মতাদর্শগত সংঘর্ঘ। আন্তর্জাতিক বিশ্ব ওই সময় দেখেছিল কিউবার মিসাইল সংকট (১৯৬২), ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে আমেরিকার হস্তক্ষেপ (১৯৬৫), চেকস্লোভাকিয়ায় সোভিয়েত হস্তক্ষেপ (১৯৬৮), ভিয়েতনাম সংকট সবই আন্তর্জাতিক আঙিনায় কীভাবে এক জটিলাবস্থা ও প্রবল রেষারেষির উদ্ভব ঘটিয়েছিল। এশিয়ার মাটিতে এই রেষারেষি বেশি প্রবল হয়ে ওঠে এবং পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ব্যাপক অনিশ্চয়তা ও রুদ্ধশ্বাস টানাপড়েনের জন্ম দেয়। ফলে বিশ্বশান্তি বিনষ্ট হয়। ন্যাটো, সিয়াটোর পাশাপাশি রুশ শক্তির গঠিত ওয়ারশ চুক্তি এ স্নায়ুযুদ্ধকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়।

সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের নেতা হয়েও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রচলিত ধারার সেই বিশ্বরাজনীতিতে সংযুক্ত না হয়ে তিনি বিশ্বের সব জাতি ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতি ও মিলনের আহ্বান জানালেন। যেটাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় আন্তর্জাতিকতাবাদ।  প্রচলিত অর্থে আমরা জানি আন্তর্জাতিকতাবাদ মতবাদ হলো এমন এক রাজনৈতিক দর্শন, যা রাষ্ট্রের সংহতি, বিভিন্ন জাতির মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং বিশ্বশান্তির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের বক্তৃতায়ই বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেছিলেন, ‘আজ বিশ্বজুড়ে যে ক্ষমতার লড়াই চলছে, সে ক্ষমতার লড়াইয়ে আমরা কোনোমতেই জড়িয়ে পড়তে পারি না। এজন্য আমাদের অবশ্যই সত্যিকারের স্বাধীন এবং জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করতে হবে। আমরা ইতিমধ্যেই সিয়াটো, সেন্টো ও অন্যান্য সামরিক জোট থেকে সরে আসার দাবি জানিয়ে এসেছি। ভবিষ্যতেও এ ধরনের কোনো জোটে জড়িয়ে না পড়ার ব্যাপারে আমাদের বিঘোষিত সিদ্ধান্ত রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত জনগণের যে সংগ্রাম চলছে, সে সংগ্রামে আমরা আমাদের সমর্থন জানিয়েছি।’

সেই প্রতিশ্রুতি বঙ্গবন্ধু রেখেছেন। এজন্য ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে ভাষণ দিতে গিয়েই তিনি উল্লেখ করেন,  ‘একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মুক্ত ও সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকারের জন্য বাঙালি জাতি বহু শতাব্দী ধরে সংগ্রাম চালিয়ে এসেছে। তারা চেয়েছে বিশ্বের সকল জাতির সাথে শান্তি ও সৌহার্দের মধ্যে বসবাস করতে।’ তিনি আরো বললেন, ‘বাংলাদেশের সংগ্রাম ন্যায় ও শান্তির জন্য সর্বজনীন সংগ্রামের প্রতীকস্বরূপ। সুতরাং বাংলাদেশ শুরু থেকে বিশ্বের নিপীড়িত জনগণের পাশে দাঁড়াবে, এটাই স্বাভাবিক।’

বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বান, রাষ্ট্রনায়কোচিত ভাব, স্বাধীন সত্তা বিশ্বদরবারে বাঙালির অহংকারে পরিণত করেছে কত মহাদেশ, সমুদ্রপাড়ের দ্বীপদেশ, জর্জরিত-নিষ্পেষিত স্বাধীনতাকামী বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়েছে, তার ভাবধারার সঙ্গে সংযুক্ত হতে চেয়েছে। এসব রাষ্ট্র বা দেশকে গভীর আত্মীয়তা সূত্রে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মেলবন্ধন করার চেষ্টায় উন্মুখ থাকতেন। হূদয় উজাড় করে মিশেছিলেন। শান্তিকামী রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধু বিশ্বমানবের মৈত্রীর কথা এমন সুন্দর করে বলে গেছেন, যা পৃথিবীর কম রাজনীতিবিদই পেরেছেন। তার কথা ছিল, ধ্বংস নয় সৃষ্টি, যুদ্ধ নয় শান্তি।

বিশ্বসাম্রাজ্যবাদের ইতিহাসে তিনি দেখেছিলেন ইউরোপ- আমেরিকার প্রত্যেকটি রাষ্ট্রই নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে চলছে এবং ক্ষমতা বৃদ্ধির এ প্রতিযোগিতাই মানবসভ্যতাকে তার চরম বিপদের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। নিজের স্বার্থই যেখানে একমাত্র সত্য এবং ক্ষমতাই একমাত্র লক্ষ্য। ফলে যুদ্ধ হয়ে ওঠে অনিবার্য। এ অবস্থা অনুধাবন করেই দীর্ঘদিনের রাজনীতির অভিজ্ঞতায় বঙ্গবন্ধু তখন বলেন, মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি একান্ত দরকার। এ শান্তির মধ্যে সারা বিশ্বের সব নর-নারীর গভীর আশা-আকাঙ্ক্ষা মূর্ত হয়ে রয়েছে। ন্যায়নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত না হলে শান্তি কখনো স্থায়ী হতে পারে না।

বিশ্বরাজনীতিতে উদার, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের জয়গান হলো আন্তর্জাতিকতাবাদের মূল কথা।  বঙ্গবন্ধুর দেয়া বিভিন্ন বক্তব্যে এ ধারণা খুব জোরালোভাবে দেখা যায়। ধর্মীয় ও বর্ণবাদের আদর্শে প্রোথিত জাতীয়তাবাদের পাশাপাশি স্বাজাত্যবাদী জাতীয়তাবোধেরও তিনি বিরোধী ছিলেন। তাই তো দেখি জাতিসংঘে দেয়া তার প্রথম ভাষণেই তিনি বলতে সক্ষম হন ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়সংগত জাতীয় অধিকারের কথা, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়ার জনগণের মুক্তির কথা।

বঙ্গবন্ধুর ভাষণে উল্লেখ করা জিম্বাবুয়ে ১৯৮০ সালে, নামিবিয়া ১৯৯০ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। ফিলিস্তিনের অবস্থা এখনো লড়াই- সংগ্রামের মধ্যে চলছে। যেসব দেশ মুক্তি-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে তাদের প্রতি ছিল তার অপরিসীম শ্রদ্ধা। বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় দিবস উপলক্ষে ১৯৭৩ সালে জাতির উদ্দেশে দেয়া বেতার টেলিভিশন ভাষণেও বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলাদেশ শুধু নিজেই মুক্তি-সংগ্রামে সাফল্য অর্জন করে ক্ষান্ত নয়। বিশ্বেও যেকোনো নিপীড়িত দেশ ও মুক্তি সংগ্রামীদের পাশে আমরা রয়েছি। দক্ষিণ ভিয়েতনামি বিপ্লবী সরকার ও গিনি বিসাউকে আমরা স্বীকৃতি প্রদান করেছি।’

বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনায় নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সংগত সংগ্রামকে তিনি বাংলাদেশের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করলেন।  বাংলাদেশের সংবিধানে সংযোজিত হলো: ‘সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ বা বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জনগণের ন্যায়সংগত সংগ্রামকে সমর্থন করিবেন।’

ঠাণ্ডা যুদ্ধ গোটা পৃথিবীকে দুই শত্রুশিবিরে বিভক্ত করতে সচেষ্ট হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নীতি নেতিবাচক কিংবা নিষ্ক্রিয় কোনোটিই ছিল না। তিনি চেয়েছিলেন ঠাণ্ডা যুদ্ধের শত্রুতা যাতে স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসে। এর বাইরে তখন ভূমিকা রাখছিল জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন বা ন্যাম। এটি গঠিত হয়েছিল ভারতের জওহরলাল নেহরু, মিসরের জামাল আবদুল নাসের, যুগোস্লাভিয়ার জোসেফ ব্রোজো টিটোর হাত দিয়ে। ১৯৭৩ সালে অটোয়ায় কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দেয়ার পথে বেলগ্রেডে বঙ্গবন্ধু জোসেফ টিটোর সঙ্গে দেখা করেন। বঙ্গবন্ধুও জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে বিশ্বাসী হন।  সম্পৃক্ত হন দুই পরাশক্তি মহাজোটের মধ্যকার পার্থক্যগুলোকে কমিয়ে আনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে পৃথিবীতে সংঘর্ষ যাতে পূর্ণ যুদ্ধে পরিণত না হয়। শুধু তা-ই নয়, সদ্য উপনিবেশমুক্ত দেশগুলো যাতে দুই বিরোধী জোটের কোনোটির অংশ না হয়, সে বিষয়েও সোচ্চার হন।

বঙ্গবন্ধু কেন জোটনিরপেক্ষ নীতিতে গেলেন, তার সুন্দর ব্যাখ্যাও তিনি জাতিসংঘে উপস্থাপন করলেন। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘বাংলাদেশ প্রথম থেকেই জোটনিরপেক্ষ বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করেছে। এ নীতির মূলকথা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সকলের সঙ্গে মৈত্রী। শান্তির প্রতি যে আমাদের পূর্ণ আনুগত্য তা এ উপলব্ধি থেকে জন্মেছে যে একমাত্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই আমরা আমাদের কষ্টার্জিত জাতীয় স্বাধীনতার ফল আস্বাদন করতে পারব এবং ক্ষুধা, দারিদ্র্য, রোগশোক, শিক্ষা ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য আমাদের সকল সম্পদ ও শক্তি নিয়োগ করতে সক্ষম হব।’

১৯৭৩ সালের ৫ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত হয় জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন ন্যামের চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন। এতে প্রথমবারের মতো যোগ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী গড়তে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। ৮ সেপ্টেম্বর স্বাগত ভাষণে সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, বর্ণবাদবিরোধী মজলুম জনগণের ন্যায্য সংগ্রামের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থনে জানাতে ‘জোটনিরপেক্ষ নীতি’ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

১৯৭৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আলজেরিয়ায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘জাতীয় মুক্তি- সংগ্রাম ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যাহারা জীবন বিসর্জন দিয়াছেন, আলজেরিয়া, ভিয়েতনাম তথা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সেইসব বীর শহীদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। আমি শহীদদের নামে প্রতিজ্ঞা করিয়াছি যে আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায় মুক্তি-সংগ্রামরত মানুষের পিছনে বাংলাদেশ সর্বদাই থাকিবে।’ জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভূমিকা রাখেন। পৃথিবীর অনেক বড় বড় নেতা যেটা বলতে পারলেন না, তিনি অকপটে সেটা বলে ফেললেন, ‘পৃথিবী আজ দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে শোষক শ্রেণী, আরেক ভাগে শোষিত। আমি শোষিতের দলে।’ আলজেরিয়ায় বঙ্গবন্ধুর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বক্তব্য দেয়ার জন্য অনেক নেতার সঙ্গেই এক উষ্ণ ও ও হূদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। ওই ভাষণের পর কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো শেখ মুজিবুর রহমানকে বলেছিলেন, ‘তুমি আজ যে ভাষণ দিলে, এখন থেকে সাবধানে থেকো। আজ থেকে তোমাকে হত্যার জন্য একটি বুলেট তোমার পিছু নিয়েছে।’ এমন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দৃঢ় ভূমিকা পৃথিবীতে কেউ রাখতে পেরেছেন কিনা সন্দেহ আছে। এক কথায় শৃঙ্খলিত বিশ্বকে তিনি শৃঙ্খলমুক্ত করার লক্ষ্যে বিশ্বমানবের অন্তর নিরীক্ষণ করেছিলেন। এভাবে বিশ্বের ইতিহাস ও জয়যাত্রার অভিযান তিনি উপলব্ধি করেছিলেন।

তৃতীয় বিশ্বের দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া সত্ত্বেও আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার যে দেশেই তিনি গেছেন তার বক্তব্য ছিল একটাই। সেটা হলো ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও ব্যাধির বিরুদ্ধে জয়ী হতে হলে বিশ্বের ধনী-দরিদ্র সব রাষ্ট্রের সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে এবং একমাত্র এ পন্থায় একটা সুসামঞ্জস্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং শান্তির স্থায়ী কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।

জাতিসংঘের কাছেও তার আবেদন ছিল— অনাহার, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও বুভুক্ষার তাড়নায় জর্জরিত, পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারা সম্পূর্ণ ধ্বংস হওয়ার শঙ্কায় শিহরিত বিভীষিকাময় জগতের দিকে আমরা এগোব না, আমরা তাকাব এমন এক পৃথিবীর দিকে, যেখানে বিজ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞানের বিস্ময়কর অগ্রগতির যুগে মানুষের সৃষ্টিক্ষমতা ও বিরাট সাফল্য আমাদের জন্য এক শঙ্কামুক্ত উন্নত ভবিষ্যৎ গঠনে সক্ষম। এ ভবিষ্যৎ হবে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা থেকে মুক্ত। বিশ্বের সব সম্পদ ও কারিগরি জ্ঞানের সুষ্ঠু বণ্টনের দ্বারা এমন কল্যাণের দ্বার খুলে দেয়া যাবে, যেখানে প্রত্যেক মানুষ সুখী ও সম্মানজনক জীবনের ন্যূনতম নিশ্চয়তা লাভ করবে। কিন্তু সেটা তো আন্তর্জাতিকতাবাদের মাধ্যমেই অর্জন সম্ভব। একমাত্র মানবিক ঐক্যবোধ-ভ্রাতৃত্ববোধের পুনর্জাগরণ ছাড়া এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো অসম্ভব, সেটা তিনি জাতিসংঘে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লাস্কি কিংবা গোল্ডস্মিথের আন্তর্জাতিকতাবাদের দেয়া ধারণা আমরা এখানে দেখতে পাই।

বঙ্গবন্ধুর আন্তর্জাতিকতাবাদ ছিল তার জীবনদর্শন থেকে নেয়া। সেই জীবনদর্শনের প্রধান কথা বিশ্বমানবতাবাদী চেতনা বা বিশ্বমানবতাবাদ। যেমন তিনি বলছেন, ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তা-ই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা—অক্ষয় ভালোবাসা—যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’ এ যেন সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই—এই ছিল তার আদর্শ।

 ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম: অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; সাবেক উপ-উপাচার্য, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ