1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

জাতির পিতার কাছে খোলা চিঠি

হামজা রহমান অন্তর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৩

পিতা,
আমি তোমার এক গুণমুগ্ধ বঙ্গসন্তান। আমার জানতে বড় সাধ হয়, জহুরী হয়েও তুমি কেন জহরৎ চিনতে ভুল করলে? তোমার মনে আছে! ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে যেদিন তুমি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলে, সেদিন তুমি কি বলেছিলে? তুমি বলেছিলে, “কবিগুরু বলেছেন, ‘সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করোনি’। কবিগুরুর মিথ্যা কথা আজ প্রমাণ হয়ে গেছে, আমার বাঙালি আজ মানুষ”। পিতা, তোমার সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি আজ ১৭ কোটি। সবাই তোমাকে স্বীকার করেনা। সেসব পিতাহীন সন্তানদের আমি ‘রাও ফরমান আলী অথবা নিয়াজীর সন্তান’ বলে ডাকি।

পঁচাত্তরের ফেব্রুয়ারি মাসে তোমাকে হত্যাকারী ফারুক ও রশিদ তোমার আস্থাভাজন খন্দকার মোশতাককে জানায় এই ষড়যন্ত্রের কথা। ২ আগষ্ট মোশতাকের সঙ্গে পরামর্শ করেই তারা তোমাকে হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনাটি ঠিক করে তার নিজ বাসায়। তোমার মন্ত্রী পরিষদের আরেক সদস্য তাহের উদ্দিন ঠাকুর এই কথা স্বীকার করে পরবর্তীতে। তুমি নাকি বালি হাঁসের মাংস খেতে ভালবাসতে। তোমাকে খুন করবার মাত্র দুই দিন আগে মোশতাক বালি হাঁসের মাংস রান্না করে তোমার বাসায় দিয়ে যায়। পিতা, তোমার মঁসিয়ে লালীর কথা তোমার মনে আছে নিশ্চয়ই? ইংরেজদের কুমন্ত্রণায় ভুলে যাকে নবাব সিরাজউদ্দৌলা সসৈন্যে নির্বাসিত করেছিলেন ভাগলপুরে। যাবার আগে অশ্রুসজল নেত্রে লালী বলেছিলেন, “নবাব! আপনি রাজনীতির ভুল পথে পা বাড়ালেন”। পিতা, তুমি মোশতাকের কুমন্ত্রণায় ভুলে কাদের নির্বাসিত করেছিলে মনে আছে? তারা কেউই মোশতাকের মন্ত্রীসভায় যোগ দেননি। জেলখানায় নিঃশঙ্কচিত্তে জীবন দিয়েছেন, তবু তোমাকে অসম্মান করে ঘাতকদের সাথে হাত মেলাননি। বাংলার মেহনতি জনতা তাদের দিয়েছে ‘জাতীয় চার নেতা’র সম্মান। ১৫ আগষ্ট সপরিবারে তোমাকে নৃশংসভাবে খুন করে মোশতাক তোমার ‘রাষ্ট্রপতি’ পদটি দখল করেই শান্ত থাকেনি, তোমাকে যারা খুন করেছে তাদের কোনো দিন বিচার করা যাবে না- এই মর্মে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সও জারি করে!

ঘাতকেরা ভেবেছিল তোমাকে মেরে ফেলে বুঝি সাড়ে ৩ হাত মাপের একখণ্ড জমিতে তোমাকে বন্দি করা যাবে। কিন্তু ওরা বোধহয় জানতো না, তোমার চেতনা ছড়িয়ে আছে সারা বাংলার ৫৬ হাজার বর্গমাইলের পবিত্র ভূমিতে। ওরা বোধহয় জানতো না, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ!

পিতা মুজিব, পলাশীর লর্ড ক্লাইভ এবং খন্দকার মোশতাক আলাদা কেউ নয়। ক্লাইভ যেমন ক্ষমতার লোভ দেখিয়েছিল নবাবের প্রধান সেনাপতি মীর জাফরকে, তেমনি মোশতাকও হাত মিলিয়েছিল ‘উপ-সেনাপ্রধান’ কালো চশমাধারী জিয়ার সাথে। পিতা, মনে আছে তুমি এই জিয়াকে নিজের স্নেহধন্য জামাতা বানিয়েছিলে? ভাঙা ঘর জোড়া লাগানোর সময় তুমি বেগম খালেদাকে নিজের মেয়ে বলেছিলে। খালেদাকে ভালো রাখতে তুমি সেনাবাহিনীতে ‘উপ-সেনাপ্রধান’ নামে একটি পদ তৈরি করেছিলে। খুনি ফারুক এক বিদেশী সাংবাদিকের কাছে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলো, ১৯৭৫ সালের ২০ মার্চ সরকার পরিবর্তনের বিষয়টি তারা জিয়াকে জানিয়েছিল। জিয়া তাদের পরিকল্পনাকে উস্কে দিয়ে বলেছিল, “আমি সিনিয়র হিসেবে কিছু করতে পারবো না। তোমরা ইয়ং অফিসার, পারলে কিছু করো”। সেদিন তোমার ‘জামাতা’ জিয়ার ভূমিকা পরিচ্ছন্ন হলে আমরা হয়তো তোমাকে হারাতাম না। ১৫ আগষ্ট সকালবেলা এই জিয়া মেজর ডালিমকে জড়িয়ে ধরে উল্লাসে ফেটে পড়েছিল। আর তোমার সেই ‘মেয়ে’ খালেদা প্রতিবছর তোমার-ই মৃত্যু দিবসে মিথ্যা জন্মদিন উদযাপন করে উল্লাসে মেতে উঠে। তখন তোমার শিশুপুত্র রাসেলের মুখটা কি একবারও ভেসে উঠে না খালেদার চোখের সামনে? হায় পিতা, কাকে তুমি ‘কন্যা’ ডাকলে? জহুরী হয়ে জহরৎ চিনতে ভুল করলে!

কর্ণেল তাহেরের নেতৃত্বে তোমাকে হত্যা করবার একটি পরিকল্পনার কথা ফাঁস করে দিয়েছিলেন মেজর মুজিব নামে এক অফিসার। তুমি কর্ণপাত না করে উল্টো কর্ণেল তাহেরসহ অন্য ষড়যন্ত্রকারীদের পদন্নোতি দিয়েছিলে। পরে ওই মেজর মুজিবকেও চাকুরিচ্যুত করা হয়। নবাবের লোকদের মধ্যে ক্লাইভের সাথে হাত মিলিয়েছিল মীরজাফর, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ, জগতশেঠ, ঘসেটি বেগম, নন্দকুমার, ইয়ার লাতিফ, মানিকচাঁদ, কৃষ্ণবল্লভ প্রমুখ। আর তোমার সময়ের ৩০০ সংসদ সদস্যের মধ্যে মাত্র ১২ জন সাংসদ মোশতাকের অবৈধ সংসদে যোগ দান করেনি!

বাংলার সাধারণ খেটে খাওয়া কৃষক-শ্রমিকদের জন্য তুমি সমাজতন্ত্র এনেছিলে ‘বাকশাল’ নামে। তোমার দল আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্যরা কেউই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ‘বাকশাল’ নিয়ে মিথ্যা প্রোপাগান্ডার জবাবে গর্জে উঠে না। তোমার আজন্ম যত্নে সৃষ্টি করা ‘মুজিববাদ’ নিয়ে তারা কেউ কোন কথা বলেনা। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল তোমার প্রিয়ভাজন ছাত্রনেতা, রাজনৈতিক সচিব কিংবা সংসদ সদস্য। পিতা, তুমি জহুরী হয়ে জহরৎ চিনতে এভাবে ভুল করলে?

জনক আমার, তোমার মনে আছে? বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌল্লার ৫০ হাজার সৈন্যের বিরুদ্ধে পলাশীর প্রান্তরে লর্ড ক্লাইভ দাঁড়িয়েছিল মাত্র ৩ হাজার সৈন্য নিয়ে। নবাবের ৩২, ২৪, আর ১৮ পাউণ্ডের ৫৩টি কামানের বিরুদ্ধে তার ছিল ছোট্ট ৬ পাউণ্ডের মাত্র ৮টি কামান। পিতা, ঘাতকেরা সেদিন সংখ্যায় খুুব বেশি ছিলনা। তোমার নিজ হাতে গড়া সু-সজ্জিত ‘রক্ষীবাহিনী’ সেদিন ঘাতকদের গোলাবারুদবিহীন ফাঁকা ট্যাংকের সামনে নতজানু হয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল কোনরকম প্রতিরোধ ছাড়াই। সেদিন যদি রক্ষীবাহিনী একবার শুধু একবার প্রতিঘাত করতো, ঘাতকের দল গর্ত খুঁড়ে পালিয়ে কুল পেতো না। ফাঁকা হাতে বিশ্বাসঘাতকতা আর ষড়যন্ত্রের দাবাখেলায় লর্ড ক্লাইভের মতো ঘাতকরাও সেদিন সর্বস্ব বাঁজি রেখেছিল। কারন তাদের আসল শক্তি সৈন্যবাহিনী ছিলনা, ছিল বিশ্বাসঘাতকতা আর ষড়যন্ত্র। মহানন্দার তীরে অসহায় নবাবের থেকে ৩ ঘন্টার দূরত্বে ছিল পাটনায় থাকা তার অনুগত ৫০ হাজার সেনাবাহিনী। তোমার ৩২ নাম্বারের বাড়ি থেকে সেদিন মাত্র ৩০ মিনিটের দূরত্বে ছিল তোমার আস্থাভাজন রক্ষীবাহিনী।

পিতা, মনে আছে! পলাশীর আম্রকাননে সেনাপতি মোহনলাল এবং মীর মদন ছাড়া আর কেউই এগিয়ে আসেনি সেদিন ইংরেজদের বিরুদ্ধে নবাবকে রক্ষায়। তোমাকে রক্ষায় ধানমণ্ডি ৩২ নাম্বারে সেদিন ছুটে গিয়েছিল কর্নেল জামিল নামে এক অকুতোভয় সেনা কর্মকর্তা। একা, খালি হাতে।

মাত্র ৯ মাসে একটা বাচ্চার জন্ম হয়না, অথচ একটা দেশের জন্ম দিয়েছিলে তুমি। বাংলার মাটি ও মানুষের হয়ে স্বাধিকার আন্দোলন করতে গিয়ে তুমি ৪ হাজার ৬৭৫ দিন পাকিস্তানের কারাগারে কাটিয়েছিলে, সেই স্বাধীন দেশে ওরা তোমায় ১৩ শত ২৩ দিনের বেশি বাঁচতে দিলো না।

পিতা আমার, তবে জানো কি তোমাকে সাড়ে তিন হাত মাটির মধ্যেই সীমিত রাখার যে ষড়যন্ত্র ওরা করেছিলো তা আজ সম্পূর্ণ ব্যর্থ। বাংলার ১৮ কোটি প্রাণে প্রতিদিন তুমি ধ্বণিত হও পুরুষোত্তম পিতারুপে। পিতা তোমার মনে আছে? নবাব সিরাজ ও তার স্ত্রী লুৎফার শিশুকন্যা জোহুরার কথা? তোমার ‘হাচু’র কথা বহুবার বলেছো তুমি ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ আর ‘কারাগারের রোজনামচা’য়। শিশু জহুরা সেদিন ইংরেজ বেনিয়াদের কাছ থেকে বাংলাকে রক্ষা করতে না পারলেও তোমার হাচু ২১ বছর বিলম্বে হলেও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে হটিয়ে আবার ঠিকই বাংলার মসনদে বসেছিল, তার হাতেই তোমার সোনার বাংলা সবচাইতে নিরাপদ। তোমার ৩২ নাম্বারের বাড়িকে ঘাতকেরা পলাশীর প্রান্তরে টেনেহিচড়ে নিয়ে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তোমার ‘টুঙ্গিপাড়া’ আজ স্বাধীন বাংলার মুর্শিদাবাদ, যেখানে তুমি চির নিদ্রায় শায়িত আছো।
ভাল থেকো পিতা, ক্ষমা করো আমাদের। ক্ষমা করো হে জাতিরপিতা।

পদাবনত,
তোমার এক অভিমানী বঙ্গসন্তান।

‘জাতির পিতার কাছে খোলা চিঠি’
– হামজা রহমান অন্তর, উপ-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ