1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট : হাওয়া ভবনেই চূড়ান্ত হয় হামলার নীলনকশা

ইবার্তা সম্পাদনা পর্ষদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ২১ আগস্ট, ২০২১

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ যেভাবে হত্যা করে জিয়া-মোশতাক চক্র তা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। বিংশ শতাব্দীর নৃশংসতম এই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে খুব সহজেই বোঝা যায় যে, খুনিদের এক ও অদ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধু পরিবারকে চিরতরে নিঃশেষ করে দেয়া। সে সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা- বর্তমান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা দেশে না থাকায় অসম্পূর্ণ থেকে যায় সেই মিশন। কিন্তু পরবর্তীতে একের পর এক ষড়যন্ত্রে তাদের  হত্যার সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে খুনির দল।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে পরিকল্পিত এক ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার বর্বর প্রচেষ্টা চালায় ঘাতকচক্র। বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায় রচনা করে এই নারকীয় হামলার ঘটনা। যার মূলহোতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য নায়ক জিয়াউর রহমান ও তৎকালীন জামাতপন্থী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক জিয়া। আর এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে কাজ করে তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের বুকে সন্ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠাকারী- পাকিস্তান সমর্থিত হুজি জঙ্গিগোষ্ঠী।

১৯৯৯ সালের মার্চ থেকে ২০০৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় বছরে এই জঙ্গিগোষ্ঠী দেশে ১৩টি বোমা ও গ্রেনেড হামলা চালায়। এতে ১০৬ জন নিহত হন। আহত হন ৭০০–র বেশি মানুষ। আওয়ামী লীগ ও সিপিবির সমাবেশ, উদীচী ও ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর এসব হামলা হয়। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকেই হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে অন্তত চার দফা।

আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে গভীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশার অন্যতম প্রকাশ ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ভয়ঙ্কর সে হামলায় নেতৃত্ব দেয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বহুল আলোচিত ‘হাওয়া ভবনে’ বসে হামলার পরিকল্পনা হয়েছিল। শুধু তাই নয় হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শেখ হাসিনার গতিবিধি মনিটরিংয়ের কাজও পরিচালিত হয় হাওয়া ভবনের প্রত্যক্ষ নির্দেশনা অনুস্বারে। আর ঘটনার পর খুনিদের রক্ষার কাজও এখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

বীভৎস গ্রেনেড হামলা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, আদলতে একাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং আসামিদের জবানবন্দীতে এসব তথ্য পরিষ্কারভাবে উঠে আসে।

সাক্ষীদের জবানবন্দি ও আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়, তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন ও হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের সহায়তায় ২০০৩ সালে কাশ্মীরভিত্তিক সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের নেতা আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট ও তেহরিক-ই-জিহাদিল ইসলামী (টিজেআই) নেতা মুজ্জাফর শাহ বাংলাদেশে আসে এবং জঙ্গি তৎপরতা চালানোর জন্য পাকিস্তান থেকে গ্রেনেড ও গুলি আনে।

সে সময় আবদুস সালাম, মাওলানা তাজউদ্দিন, মুফতি হান্নান, মাওলানা আবদুর রউফ ও আবদুল মাজেদ ভাট মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদে একত্র হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, জঙ্গি তৎপরতা চালানোর ‘প্রধান বাধা’ আওয়ামী লীগ বিশেষ করে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের হত্যা করা গেলে তাদের কর্মকাণ্ড চালানোর পথ সুগম হবে। তখন বিএনপির নেতৃত্বে জোট সরকার ক্ষমতায় থাকায় এ আক্রমণ চালানো সহজ হবে বলেও তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।

এরপর তারা কুমিল্লার মুরাদনগরের এমপি মোফাজ্জল হোসেইন কায়কোবাদের সহযোগিতায় ২০০৪ সালের প্রথমদিকে ঢাকার বনানীতে ‘হাওয়া ভবনে’ গিয়ে তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যাসহ জঙ্গি কার্যক্রম চালানোর জন্য তারা সহযোগিতা চায়। তারেক রহমান তাদের সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

মামলার চার্জশিটে আরও বলা হয়েছে, মুফতি হান্নান তার বাড্ডার অফিস, মোহাম্মদপুর ও অন্যান্য জায়গায় সহযোগীদের নিয়ে সভা করে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আবারও তারা তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিছ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, এনএসআইর তৎকালীন মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার আবদুর রহিম, সিআইডির তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার (পরে মেজর জেনারেল) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর সঙ্গে সভা করে। তারেক রহমান উপস্থিত সবার সামনে মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীদের সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আশ্বাস অনুযায়ী মুফতি হান্নান ও তার অন্য সহযোগীরা মোহাম্মদপুর, বাড্ডাসহ বিভিন্ন জায়গায় আবারও সভা করে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কর্মপন্থা নেয়।

পরবর্তীতে ২০ আগস্ট মুফতি হান্নানের সহযোগী আহসান উল্লাহ কাজল ও মুফতি মঈন আবু জান্দাল, আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমন্ডির বাসা থেকে মাওলানা তাজউদ্দিনের সরবরাহ করা ১৫টি গ্রেনেড পশ্চিম মেরুল বাড্ডায় কাজলের ভাড়া করা বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে মুফতি হান্নান মুন্সীসহ হরকাতুল জিহাদের সদস্যরা ২১ আগস্টের গ্রেনেড আক্রমণের কৌশল নিয়ে আলোচনা করে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়।

২১ আগস্ট কাজলের বাসা থেকে সবশেষ প্রস্তুতি নিয়ে মুফতি হান্নান, আবদুল মান্নান ও ডা. জাফরের নির্দেশনা এবং তত্ত্বাবধানে জঙ্গিরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সভাস্থলে যায় ও প্রাণঘাতী হামলা চালায়।

মূলত, ২০০৪ সালে দেশব্যাপী জঙ্গিদের বোমা হামলা এবং গোপালগঞ্জে পুলিশি বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদে ২১ আগস্ট বিকেলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও তৎকালীন প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে বিকেল পাঁচটায় পৌঁছালে, একটি ট্রাকের ওপর তৈরি মঞ্চে তিনি তাঁর বক্তব্য রাখেন। কুড়ি মিনিটের বক্তৃতা শেষে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করার ঘোষণা দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা মঞ্চ থেকে নিচে নেমে আসতে থাকেন। আর ঠিক এমন সময় শুরু হয় মঞ্চ লক্ষ্য করে একের পর এক গ্রেনেড হামলা। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে অন্তত ১৩টি শক্তিশালী আর্চেজ গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয় যার মধ্যে বিস্ফোরিত হয় ১১টি।

বর্বরোচিত এই হামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রায় তিন শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আহত হন। সহিংস এ হামলায় আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। নিহত আইভি রহমান বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি প্রয়াত বর্ষীয়াণ আওয়ামী লীগ জিল্লুর রহমানের স্ত্রী।  এতে ঘটনাস্থলেই ১২ জন এবং পরে হাসপাতালে আরও ১২ জন নিহত হন। এখনও সেই হামলার শিকার বহু নেতাকর্মী গ্রেনেডের স্প্লিন্টার শরীরে বয়ে নিয়ে বেঁচে আছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর ক্ষমতাসীনদের এমন প্রাণঘাতী হামলার নজির খুব কমই আছে।

এ ঘটনায় পরবর্তীতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক জিয়া, চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পিন্টু, হরকাতুল জিহাদ প্রধান মুফতি হান্নান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ৫২ জনকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে অন্য মামলায় মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড হওয়ায়, তিনজন ছাড়াই বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ