প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন বা চার হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে) এর পরিমাণ চার লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মাধ্যমে আজ মঙ্গলবার (২৪ আগষ্ট) প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৪৮ দশমিক শূন্য ৪ বিলিযন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এই রিজার্ভ দিয়ে প্রতি মাসে ৪ বিলিয়ন ডলার হিসেবে ১২ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ-সহায়তা যোগ হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একটি দেশের কাছে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার মজুত থাকতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে কমপক্ষে ১২ মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা সম্ভব। প্রতি মাসে সাড়ে তিন থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রার এই মজুদ দিয়ে ১২ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।
এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এই কারণে রিজার্ভ বাড়ছে।
তিনি বলেন, সর্বশেষ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ-সহায়তার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। তবে যে কারণেই রিজার্ভ বাড়ুক না কেন, এটা ইতিবাচক দিক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সর্বোচ্চ রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভের সেই রেকর্ড টিকে ছিল প্রায় তিন বছর। গত বছরের ৪ জুন প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে নতুন রেকর্ড গড়ে। এরপর থেকে গত ১০ মাসে একের পর নতুন রেকর্ড হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে।
গত ২৪ জুন রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলারে, ৩০ জুন ৩৬ বিলিয়ন ডলারে ও গত ২৮ জুলাই ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নতুন উচ্চতায় পৌঁছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট রিজার্ভ ৩৮ দশমিক ১৫ বিলিয়ন এবং ১ সেপ্টেম্বর ৩৯ দশমিক ৪০ ডলারে উন্নীত হয়। রিজার্ভ বৃদ্ধির গতি অব্যাহত থাকে এরপরও। ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলার, ৩০ অক্টোবর ৪১ বিলিয়ন ডলার, ১৫ ডিসেম্বর ৪২ বিলিয়ন ডলার এবং গত বছর শেষ হওয়ার একদিন আগে ৩০ ডিসেম্বর ৪৩ বিলিয়ন ডলারের উচ্চতায় উন্নীত হয় রিজার্ভ।
চলতি বছরের শুরু থেকেও রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি অব্যাহত ছিল। সেই সুবাদে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ৪৪ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এরপর রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে গত ৩ মে। এরপর ২৯ জুন ৪৬ বিলিয়ন ডলারের ল্যান্ডমার্কও পেরিয়ে যায় রিজার্ভ। সবশেষ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে ৪৮.০৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হলো।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই রিজার্ভে একের পর এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। ২০২০ সালের মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর পযন্ত প্রায় প্রতি মাসেই প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটির বেশি প্রবাসী রয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১২ শতাংশের বেশি। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশ হলো, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, সিঙ্গাপুর ও ইতালি।