1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাংলাদেশে আশ্রয়ের চার বছর : নিজ দেশে ফিরতে চায় রোহিঙ্গারা

নাজিম আজাদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২৫ আগস্ট, ২০২১

কক্সবাজারে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার চার বছর আজ। গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা নির্যাতনের মুখে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় আশ্রয় নেওয়া শুরু করে রোহিঙ্গারা। সেই থেকে এই দিনটিকে রোহিঙ্গারা ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।

দুই-তিন মাসের মধ্যেই উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয় সাড়ে ৮ লাখের মতো রোহিঙ্গা। এছাড়া কক্সবাজারে আগে থেকে আশ্রয় নেয়া সাড়ে ৩ লাখ রোহিঙ্গা সহ ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গাকে ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হয়। পরবর্তীতে জাতিসংঘের তত্বাবধানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর খাদ্য সহায়তা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করে। পরবর্তীতে দুই দফা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিলেও একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফেরত যায়নি। রোহিঙ্গা নেতারা দাবি করেন,শুধু  ২০১৭ সালেই বার্মিজ সেনাদের দ্বারা ১৮ হাজার নারীদের ধর্ষণ, ৩০০ গ্রামকে নিশ্চিহ্ন, ৩৪ হাজার শিশুকে এতিম, ২৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা, ৯ হাজার ৬০০ মসজিদ, ১২০০ মক্তব, মাদ্রাসা ও হেফজখানায় অগ্নিসংযোগ, আড়াই হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমকে বন্দি ও ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আরকান রাজ্য থেকে বাস্তচ্যুত হয়।

বর্তমানে মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা নানা কারণে থমকে আছে। কখন তারা স্বদেশে ফিরে যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রত্যাবাসন। প্রতিনিয়ত স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন দেখছে রোহিঙ্গারা।

নাগরিকত্ব, জাতিগত পরিচয়, জায়গা জমি ও গণহত্যার বিচারের নিশ্চয়তা না পেলে, তারা মিয়ানমারে গিয়ে আবারও সেদেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পড়বে না এমনটিই  দাবি তাদের। বাংলাদেশ সরকারের কর্মকান্ডে রোহিঙ্গা নেতারা সন্তুষ্টির কথা জানালেও প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের কালক্ষেপণে তাদের মাঝে হতাশার কথাও জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া এসব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার সরকারের কাছে প্রাথমিকভাবে ৫ লক্ষ ৯৮ হাজার ৩১৯ জন রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করেছিলো। মিয়ানমার সরকার এদের মধ্য থেকে মাত্র ১০ হাজার ৭০৪ জনকে ফেরত নেওয়ার জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে। কিন্তু এ ছাড়পত্র পাওয়ার দীর্ঘ আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও একজন রোহিঙ্গা শরনার্থীও মিয়ানমার সরকার নেয়নি। পর পর ২বার রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য দিনক্ষণ ঠিক হলেও মিয়ানমার সরকারের অনীহায় ২টি প্রত্যাবাসন উদ্যোগ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে যায়। গত এক দেড় বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আর কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি। কুটনৈতিক মহলেও রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসনের ইতিবাচক কোন লক্ষণ নেই।

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে-৭ এর বাসিন্দা আবদুল হক (৩৮) বলেন, “ক্যাম্পের জীবন আর ভাল লাগে না। আমাদেরকে আমাদের দেশে সুষ্ঠুভাবে যাওয়ার সুযোগ দিলে খুশি হবো। তবে এই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্যর্থ হয়েছে। জানি না আমরা আমাদের দেশে ফিরে যেতে পারব কিনা।”

উখিয়ার কুতু পালং মেগা ক্যাম্পের বাসিন্দা রহিমা খাতুন, আবুল কাশেম আর রহিম উল্লাহ বলেন, “মিয়ানমারে এখনো নির্যাতন চলছে। আমি আমাদের সব অধিকার, নিরাপত্তা পেলে ফিরে যাবো। কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের বাসিন্দা আব্দু সালাম বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী না হলে আমরা হয়তো এতদিন বাচঁতে পারতাম না। তাই শেখ হাসিনার প্রতি আমরা সবাই কৃতজ্ঞ।”

চার বছর শরণার্থী জীবনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে হাকিমপাড়া ক্যাম্পের মাঝি নবী হোছন জানান, বাংলাদেশ সরকার তাদের সাহায্য সহযোগীতা, থাকা খাওয়া, স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করেছে তাতে তারা খুশি। তবে মাতৃভূমির জন্য বার বার মন কাঁদে। তবে তারা নিজ দেশে ফেরার অপেক্ষার প্রহর গুনছে। সরকার প্রত্যাবাসনের জন্য বেশ তৎপর হলেও মিয়ানমার সরকারের বাহানার কারনে বাস্তবায়ন না হওয়ায় চিন্তিত রোহিঙ্গারা।

আরকান রোহিঙ্গা ন্যাশলান ইউনিয়নের কনসোলার এডভাইজার মাষ্টার মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, “রোহিঙ্গা আগমনের ৪ বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের একটিমাত্র ভাবনা কবে আমরা মিয়ানমারে ফিরতে পারব। তবে মিয়ানমারে বর্তমানে তিনটি সরকার। একটি হচ্ছে এনএলডি, অন্যটি সেনা শাসিত সরকার। যে সরকার আমাদের উপর নির্যাতন করছে। আরেকটি হচ্ছে রাখাইন আর্মি। তিনটি গ্রুপ সরকারের মধ্যে রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কোন উদ্যোগ নেই। এই অস্থিরতায় আমরা মিয়ানমারে ফিরতে পারব কিনা সন্দেহ। এরপরও ‘ইউএনএইচসিআর’ থেকে শুরু করে বিশ্বনেতাসহ কোন শক্তিশালী দেশ এগিয়ে এসে যদি আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করে তাহলে আমরা তাদের স্বাগত জানাবো।”

আরকান রোহিঙ্গা ন্যাশলান ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ ইউসুফ (৬০) বলেন, “রোহিঙ্গা আগমনের দীর্ঘ ৪ বছরে অসংখ্য রোহিঙ্গা শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। তাদের কোনো শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় রাখাইনে যারা শিক্ষার্থী ছিল, তাদের সবাই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এ কারণে অনেকে অপরাধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও প্রতিবছর তো আরও নতুন করে সন্তান জন্ম হচ্ছে। সুতারাং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সমস্যাটি দিন দিন জটিলতার দিকে যাচ্ছে।”

উখিয়ার কুতুপালং এলাকার ৯নং ওযার্ডের মেম্বার হেলাল উদ্দিন বলেন, উখিয়া ও টেকনাফে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসবাসের কারণে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি সহ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, “রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করছে। তাদেরকে একসময় তাদের দেশে ফেরত যেতে হবে। রোহিঙ্গারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।”


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ