প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ ময়মনসিংহ-ভৈরব রেললাইনের ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত সোহাগি রেলস্টেশন। ওই এলাকার রেললাইনের বেশির ভাগ জায়গায় নেই কোনো পাথর ও কাঠের স্লিপার। দুই পাশে জন্মেছে আগাছার জঙ্গল। গত জুন মাসে এই স্থানেই বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হয়।
এতে নিহত হন স্থানীয় বগাপুতা সোনা মিয়া নামের এক ব্যক্তি। গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে সোহাগি রেলস্টেশন এলাকায় গিয়ে লাইনে কোনো পাথর ও কাঠের স্লিপার চোখে পড়েনি। অনেক জায়গায় স্লিপার চলে গেছে মাটির নিচে। ক্লিপও হয়ে গেছে নড়বড়ে। কিছু জায়গায় পাথর থাকলেও তা ঘাসে ঢেকে গেছে। লাইনের অনেক জায়গার ক্লিপ চুরি হওয়ায় ও পাথর সরে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই ‘মরণ ফাঁদে’ পরিণত হয়েছে ওই এলাকার রেলপথ। খোদ রেলের লোকজনই স্বীকার করেছেন এই ভয়াবহ অবস্থার কথা। অনেক জায়গায় রেললাইনের ভেতর দিয়ে হেঁটে মানুষজন চলাচল করায় মাটির সঙ্গে রেললাইন একাকার হয়ে গেছে।
অভিযোগ, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের লাইন পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে গাফিলতি রয়েছে। লাইনের ভেতর এমন ত্রুটি রয়েছে, যা খতিয়ে না দেখলে ধরা পড়ে না। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। তারা জানায়, দ্রুতগতির ট্রেন এই লাইন দিয়ে যাওয়ার সময় বিকট শব্দ হয়। আগে এটা হতো না। তা ছাড়া লাইনের সর্বত্রই আগাছার স্তূপ। স্টেশনজুড়ে রয়েছে ময়লা-আর্বজনা।
অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ঈশ্বরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে সোহাগি স্টেশনের কোনো কার্যক্রম নেই। তাই ওই এলাকার রেললাইনের এই দুরবস্থা। এই রেলপথের যন্ত্রাংশ পুরনো হওয়ায় ট্রেন চলাচলের সময় ক্লিপ-হুক, স্লিপার রেললাইন থেকে ওপরে উঠে যায়। কাঠের স্লিপার পড়ে যাওয়ায় ট্রেনের চাপ নিতে না পেরে অনেক স্লিপার বেঁকে যায়। এতে লাইন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, এই পথ দিয়ে চট্টগ্রাম মেইল ও বিজয় এক্সপ্রেস নিয়মিত যাতায়াত করে।
ময়মনসিংহ জোনের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ণ প্রসাদ সরকার জানান, দীর্ঘদিন ধরে চলছে লাইনের এ দুরবস্থা। এটা শুধু সোহাগী বা আশপাশের রেললাইন নয়। পুরো ৮০ কিলোমিটারই এমন বেহাল। পাথর সরে গেছে। জায়গায় জায়গায় জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে লাইন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অচিরেই সংস্কারকাজ শুরু হতে পারে। তা ছাড়া এই লাইন দিয়ে দুটি ট্রেন চলাচল করায় কর্তৃপক্ষের নজরও কম।