1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

প্রশ্ন ফাঁস ও তদবির বাণিজ্য এবার বন্ধ হোক

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০২৪

সরকারি চাকরিতে প্রতিযোগিতা বেড়েছে অনেক। মেধাবীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা এখন তুমুল হয়। এরপরও অসংখ্য প্রশ্নফাঁসের ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। কোনো তদন্ত কার্যক্রম না করেই ওইসব পরীক্ষার ফল বিবেচনায় নিয়েই নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। ইতিপূর্বে তদন্ত না করার প্রবণতা দেখে অনুমান করা যায় যে যারা তদন্ত করার নির্দেশ দিবেন তারা নিজেরাও হয়তো প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত ছিল।

বেশ কিছু সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন থেকে প্রশ্নফাঁসের সাথে সক্রিয়। সম্প্রতি পিএসসির প্রশ্ন ফাঁস, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২য় এবং ৩য় ধাপের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ এসছে। পিএসসিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নিযোগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সাথে কে বা কারা জড়িত সেটিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তবে যাদের নাম এসেছে এর বাইরেও মূল হোঁতা খুজে বের করার বিষয়টি এই মুহূর্তে জরুরি। যদিও তারা সব সময়ই ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

সর্বশেষ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে ব্যাপক লেখালেখি এবং সমালোচনা আমাদের নজরে এসেছে। এসব অভিযোগের যথেষ্ট সত্যতা আছে সেটি নিজেরাই অনুধাবন করতে পারি। বিশেষ করে উক্ত নিয়োগ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পড়াশোনার মান, তাদের দক্ষতা বা মেধা থেকে অনুমান করা যায় যে উত্তীর্ণদের অনেকেরই সেই ধরনের যোগ্যতা নেই। কারণ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার প্রশ্নও যথেষ্ট মানসম্মত। আর মানসম্মত পরীক্ষায় কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়া যে কেউ উত্তীর্ণ হওয়ার প্রবণতাই প্রমাণ করে যে উক্ত পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কিংবা অন্য কোনো কারাসাজি হয়েছে। তারপরও এসব বিষয়ে যথাযথ তদন্ত না করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রাখার বিষয়টি কোনোভাবেই মানানসই নয়।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সর্বশেষ পরীক্ষায় আবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। পরীক্ষায় তিন ধাপে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রথম ধাপে জালিয়াতির অভিযোগে ৭৪ জন এবং তৃতীয় ধাপে একই অভিযোগে ১৩ জনকে আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।

দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের ওপর ন্যাস্ত। প্রাথমিক পর্যায়ে একজন শিশু শিক্ষার্থীর শিক্ষার ভিত গড়ে দিতে হয় তাদেরকেই। আর শিক্ষক যদি ফাঁস করা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ পান, তাহলে তারা কেমন কারিগর হবেন, তা বোঝার বাকি নেই। আমাদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের যখন মিডিয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, তখন তারা বরাবরের মতো একই উত্তর দেন; যাকে আমরা ‘সরকারি বক্তব্য’ বলি। বক্তব্যের ভাষা ছিল এরকম- “পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। আর পরীক্ষার পর এ ধরনের অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।” কতটুকু অবিবেচনাপ্রসূত ও অদক্ষতার পরিচয় এই বক্তব্যের মাঝে রয়েছে, তা বোধহয় ওই কর্মকর্তা ভেবে দেখেননি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের নামে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এর আগে সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর নামেও নিয়োগ ও বদলি বাণজ্যের অভিযোগ গণমাধ্যমসূত্রে পেয়েছি। এমনকি গণমাধ্যমসূত্রে জেনেছি কোনো কোনো প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে নিজেরা কোনোভাবেই বদলি হতে চান না।

এ জন্য কেউ কেই দীর্ঘদিন থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরেই রয়েছেন। তারা নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য অনায়াসেই করতে পারছেন বলে নিজেদের বদলির বিষয়ে সচেতন থাকেন। অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায় প্রশাসন ক্যাডারের বেশ কিছু কর্মকর্তা দীর্ঘ বছর ধরে একই পদে (পরিচালক) বহাল রয়েছেন।

গত বছর ২১ মার্চ দৈনিক দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত ‘টাকা হলেই বদলি’ শিরোনামে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বদলি নিয়ে অনিয়মের কথা জানা যায়। অধিদপ্তরের নতুন নতুন কৌশলী নীতিমালার কারণে অসংখ্য শিক্ষক বদলি হতে না পেরে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন। কারণ অনেকেই আছেন তাদেও নিয়মনীতির বেড়াজালে স্বামীর কর্মস্থলে বদলি হতে পারেন না। বাধ্য হয়ে চাকরি ছাড়তে হয়।
প্রাথমিক বিদ্যালয় হলো শিক্ষার সূতিকাগার। কিন্তু সেখানে এত অনিয়ম। বিশেষ করে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য আমাদেরকে ব্যথিত করে তোলে। আমরা হতবাক হয়ে যাই। প্রশ্নফাঁস করে নিয়োগ তারপর বদলি- এ নিয়ে ব্যাপক বাণিজ্যের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগে ভবিষ্যত জাতি অসাড়তার দিকে যাক, এমনটি কারও কাম্য নয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মধ্য দিয়ে আমাদের সেই পুরনো শঙ্কা আরও ভয়াবহতা পেতে যাচ্ছে। এখন আর কেবল ব্যক্তি নয়, এখন এই সর্বনাশা প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক চক্র এবং বড় বড় মহল।

লেখক: ড. সুলতান মাহমুদ রানা – অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক সংবাদ