1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

চলতি বছরের অক্টোবরেই শেষ হচ্ছে তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৪

চলতি বছরের অক্টোবরেই শেষ হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ। চলছে শেষ মুহূর্তের কর্মযজ্ঞ। শিগগির বুঝে নেবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এ টার্মিনাল থেকে কবে নাগাদ ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হবে তা এখনো ঠিকঠাক জানা যায়নি। তবে একটি সূত্র বলছে, আগামী বছরের প্রথমে চালু হতে পারে।

বেবিচকের সংশ্লিষ্টরা জানান, শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ প্রকল্পের সময়সীমা অনুযায়ী আগামী অক্টোবরেই শেষ হবে। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরপরই শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালের কাজ থমকে যায়। যথাসময়ে নির্মাণকাজ শেষ করা নিয়ে তৈরি হয় এক ধরনের অনিশ্চয়তা। সংকট কাটিয়ে টার্মিনালে স্বাভাবিক গতিতে কাজ চলছে। অক্টোবরে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টার্মিনাল বুঝে নেওয়ার পর ফ্লাইট শিডিউল ঠিক করা হবে।

২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর ‘স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার সংযোগ’ স্লোগান নিয়ে তড়িঘড়ি করে টার্মিনালটির আংশিক উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখনই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, চলতি বছরের অক্টোবরে তৃতীয় টার্মিনাল থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করা যাবে। এতে শাহজালাল বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়বে আড়াই গুণ।

এখন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালে দিনে ৩০টির বেশি উড়োজাহাজ সংস্থার ১২০-১৩০টি প্লেন উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। প্রতিদিন এসব উড়োজাহাজের প্রায় ২০ হাজার যাত্রী বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল ব্যবহার করেন। এ হিসাবে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীর সেবা দেওয়ার সুযোগ আছে। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আরও ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার অধীনেই রয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। তবে তিনি এখনো তৃতীয় টার্মিনাল চালুর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

জানতে চাইলে বেবিচকের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, ‘এখন পর্যন্ত শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশাকরি অক্টোবরেই সব কাজ শেষ হবে। এ নিয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান, প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। টার্মিনাল ভবন বুঝে পাওয়ার পর আমরা ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নেবো।

ফ্লাইট চালু করতে ঠিক কতদিন লাগবে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি তিনি। বেবিচক সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। তবে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এই নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।

রাজধানীর নিকুঞ্জের লা মেরিডিয়ান হোটেলের উত্তর পাশে দাঁড়ালেই চোখে পড়বে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প এলাকা। সম্প্রতি সরেজমিনে চোখে পড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ। এর মধ্যে টার্মিনাল ভবনের ওপর দৃষ্টিনন্দন নকশার কাজ সবার নজর কাড়ছে। সেখানে কয়েক হাজার শ্রমিক বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে কাজ করছেন। তাদের কেউ বৈদ্যুতিক বাতি লাগাচ্ছেন, কেউ ধোয়া-মোছা করছেন, কেউ আবার বড় বড় যন্ত্রের সাহায্যে টার্মিনালের ছাদের অংশে সিলিং ফিট করছেন।

তবে টার্মিনালের দক্ষিণাংশে (ভিআইপি, ভিভিআইপি) তেমন কর্মযজ্ঞ নেই। সেখানে সারিবদ্ধভাবে বোর্ডিং কাউন্টার, চেকিংয়ের বিভিন্ন যন্ত্র, ইমিগ্রেশন ডেস্ক ধাপে ধাপে সাজানো। স্বয়ংক্রিয় চলমান ওয়াকওয়ে ‘মুভিং ওয়াক’, এসকেলেটর, লিফট স্থাপনের কাজও শেষ। টার্মিনালের ভেতর থেকে স্বচ্ছ কাচের মধ্য দিয়ে বিমানবন্দরের রানওয়েতে উড়োজাহাজ ওঠা-নামা, প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালের উড়োজাহাজ পার্কিং দেখা যায়।

দ্বিতীয় ফ্লোর থেকে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নামতেই দেখা যায় ভিআইপি বা ভিভিআইপি অংশে উন্নত দেশের আদলে আলাদা চারটি বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন করা হয়েছে। এই অংশের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসহ বৈদ্যুতিক সবকিছু সচল। বাইরে স্থাপন করা হয়েছে বড় একটি এলইডি বোর্ড।

শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক এ কে এম মাকসুদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আগামী অক্টোবরে তৃতীয় টার্মিনালের ফিজিক্যাল পার্ট শেষ হয়ে যাবে। আর ডিসেম্বর বা ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনা করা যাবে। শাহজালালের প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালে অধিকাংশ কাজ ম্যনুয়ালি হয়। তৃতীয় টার্মিনালে সবকিছু অনলাইনভিত্তিক হবে। এজন্য বেবিচকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’

বেবিচক সূত্র জানায়, বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরে দুটি টার্মিনালে জায়গা রয়েছে এক লাখ বর্গমিটারের কিছু বেশি। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে এর সঙ্গে যুক্ত হবে আরও দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার স্থান। তিনতলা টার্মিনাল ভবনে থাকছে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৪টি ডিপার্চার ও ৬৪টি অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ডেস্ক। নিরাপত্তা নিশ্চিতে থাকবে ২৭টি ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, ৪০টি স্ক্যানিং মেশিন, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১৬টি ক্যারোসেল ও ১১টি বডি স্ক্যানার।

তৃতীয় টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করা যাবে। রানওয়েতে উড়োজাহাজের অপেক্ষা কমাতে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি হাইস্পিড ট্যাক্সিওয়ে। পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য নির্মাণ করা হয়েছে দুটি ভবন। একসঙ্গে এক হাজার ৩৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তিনতলা ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। তৃতীয় টার্মিনালের মোট ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজের মধ্যে প্রথম ধাপে চালু হবে ১২টি। বহির্গমনের জন্য মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টারের মধ্যে ১৫টি থাকবে সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টার। ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারও থাকবে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরামের নির্বাহী কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান। বৈঠকে তিনি চলতি বছরের অক্টোবরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অত্যাধুনিক থার্ড টার্মিনাল চালুর কথা জানান।


সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক সংবাদ