1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মাদ্রাসা ও ফেসবুকের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের যুক্ত করা হচ্ছে জঙ্গিবাদী মিশনে

ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আরিফ আজাদ
‘রোহিঙ্গা’ একটি শব্দ, অথচ কতো গভীর বেদনার ক্ষতজুড়ে আছে এই নাম, তা কীভাবে বর্ণনা করবো?
মায়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন সম্পর্কে সকলেই জানেন। তাদের উপর বার্মা সরকারের অকথ্য অত্যাচার, নির্যাতনের চিত্র মিডিয়ার থ্রুতে কিছুটা হলেও আমরা দেখেছি।
আমাদের রমজানের ‘ইফতার প্রজেক্ট’ নিয়ে আমরা এবার গিয়েছিলাম সেরকম একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, যারা বার্মা সরকারের নির্যাতনের ফলে দেশ, মাতৃভূমি, স্বজনদের ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছে অন্য এক অচেনা, অজানা ভূমিতে….
গিয়েছিলাম কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।
ভেবেছিলাম সেখানে গিয়ে কিছু মানুষকে আহার করাবো, তাদের কিছুক্ষণের জন্য হলেও হাসাবো।
তাদের কিছু দুঃখের কথা শুনবো।
কিন্তু সেখানে যে দৃশ্য দেখে এসেছি, ওয়াল্লাহি, এরচেয়ে দূর্দশা, নাজুক অবস্থা আর কিছু হতে পারে বলে আমি জানি না।
কিছু শেয়ার করি।
সেখানকার কিছু বাচ্চাদের কারো একটি হাত নেই, কারো বা দুটিই। কারো একটি পা নেই। কারো চোখ একটি অন্ধ পুরোপুরিভাবে।
ভাবছেন তারা বোধকরি জন্মগতভাবেই এরকম, তাই না?
জ্বি না। তারা আপনার-আমার মতোই পূর্ণাঙ্গ শরীর নিয়ে এই ধরণীর আলোতে চোখ মেলেছিলো। কিন্তু নিজের দেশে মাইনের আঘাতে তারা হারিয়েছে হাত, হারিয়েছে পা।
কারো চোখ নেই। কারো বা কানের একপাশ থেঁতলানো।
কারো বাবা নেই, কারো মা নেই। কারো বোন, ভাই নিঁখোজ।
অনেক বাবা-মা সন্তানের শোকে পাথর।
১০ হাতের ছোট্ট একটি খুঁপড়ি, তাতে ঢেঁশাঢেঁশি করে থাকছে ৮-১০ জন।
কীভাবে থাকছে আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
খাবার? সামান্য একবেলার ডালভাত যেন এদের জন্য পূর্ণিমার চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো।
ওরা চাতক পাখির মতোন চেয়ে থাকে কারো সাহায্য, কারো ত্রাণের আশায়।
পেলেই হুমড়ে পড়ে যেন আরাধ্য বস্তু এসে পৌঁছেছে তাদের লোকালয়ে।
আমরা গিয়েছিলাম কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি মাদ্রাসায়। মাদ্রাসার নাম- ‘খালিদ বিন ওয়ালিদ মাদ্রাসা।’
বিশ্বাস করবেন না, এই মাদ্রাসার গরীব রোহিঙ্গা ছাত্র এবং সেখানকার অবস্থা এতোই নাজুক যে, আমরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।
সেখানে যারা রেজিস্টার্ড, তারা কিছুটা হলেও সরকারের কাছ থেকে ত্রাণ পায়, কিন্তু যারা আনরেজিস্টার্ড (যাদের ভোটাধিকার নেই) তাদের কোন গতিই নেই। তাদের অবস্থা দেখে আমরা কান্না করেছি জায়গায়।
আরো আশ্চর্যের কথা কী জানেন? এই এলাকায় যা ত্রাণ আসে, তা সরাসরি অই এলাকার মেম্বার বখতিয়ার উদ্দীনের মাধ্যমে আসে। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানালেন যে, এই মেম্বার ত্রাণের ৮০-৯০% নিজে এবং তার দালালেরা মিলে ভাগ করে নিয়ে ফেলে। বাকী ত্রাণ দিয়ে কেউ পায়, কেউ পায় না।
যারা পায়, তাদের টেনেটুনে দু বেলা চলে, এরকম….
যে মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম, সেই মাদ্রাসায় আজ বেশ কয়েক মাস যাবৎ বিদ্যুৎ সংযোগ নেই।
কারণ, বেশকিছু মাসের বিদ্যুৎের বিল (২০,০০০ টাকার মতো) পরিশোধ করতে না পারায় মেম্বার বখতিয়ারের নির্দেশে অই মাদ্রাসার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
এখন ওই মাদ্রাসার বাচ্চাদের রাতের পড়াশুনা এবং মসজিদে নামাজ, তারাবী পড়তে যে কী বেহাল দশা, তা আমরা সরেজমিনে দেখেছি।
মাথার উপরে এসির হাওয়াতেই নামাজ পড়তে আমরা হাঁপিয়ে উঠি, তারা এই তপ্ত পরিবেশে যে কীভাবে নামাজ, রোজা করছে, কীভাবে দিনানিপাত করছে তা আল্লাহই ভালো জানেন।
আমরা গত সপ্তাহে আমাদের সাধ্যানুযায়ী কিছু ইফতার সামগ্রী তাদের জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম আলহামদুলিল্লাহ্‌।
আমরা জানি, তাদের চাহিদার তুলনায় সেসব কিচ্ছু না। আমাদের সামান্য জিনিস নিয়ে আমরা আরো বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম।
কী করবো? কাকে রেখে কাকে দিবো? সবাই তো অসহায়! সবাই তো চায়!
আমরা যখন ফিরছিলাম, তখন মাদ্রাসার পরিচালক কান্না কান্না কন্ঠে বললেন,- উনারা বেতন পান না আজ অনেক মাস। তবুও, আল্লাহর উপরে তায়াক্কুল করে উনারা মাদ্রাসা চালিয়ে নিচ্ছেন।
আরো বলেছেন, বিদ্যুৎ না থাকায় উনারা পানি উঠাতে পারছেন না। প্রচুর কষ্টে আছেন সবাই। খুবই মানবেতর জীবনযাপন।
উনি আমাদের হাত ধরে অনুনয় করে বলেছিলেন,- ‘ভাই, যদি পারেন, আমাদের মাদ্রাসা আর মসজিদের বিদ্যুৎ সংযোগটা ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের দয়া করে সহায়তা করবেন।
আপনারা যেখান থেকে এসেছেন, (উনি ভেবেছেন আমরা কোন এনজিও’র লোক) দরকার হলে সেখান বরাবর আমি দরখাস্ত করবো আমাদের দূর্দশার কথা জানিয়ে’…
আমরা ফিরেছি একবুক বেদনা নিয়ে। আমাদের ভাইদের দুঃখ, দূর্দশা দেখে আমরা স্থির থাকতে পারিনি, ওয়াল্লাহি।
সবাইকে জানিয়েছিলাম, ১০০ লোকের সমন্বয়ে একটি ফাউন্ডেশন তৈরি করেছি আমরা। এমন ১০০ জন, যারা সত্যিকার অর্থেই গরীব, অসহায় মুসলমানদের সাহায্য সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
আমাদের এই ১০০ মেম্বারের একটি সিক্রেট গ্রুপ আছে। ‘আস-সাদিক ফাউন্ডেশন’ নামের এই গ্রুপের উদ্যোগে আমরা একবার সেখানে ইফতার নিয়ে গিয়েছি। ইনশাআল্লাহ, আমরা নিয়্যাত করেছি, আমরা এই গ্রুপের উদ্যোগে আবারো সেখানে যাবো আরো কিছু খাবার সামগ্রী নিয়ে। এবং বকেয়া টাকা পরিশোধ করে সেখানকার বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে আনবো, কিছু পানির কল বসিয়ে দেবো (যদি পারি) এবং মাদ্রাসার শিক্ষকদের হাতে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে আসবো, ইনশাআল্লাহ….
কেউ যদি আমাদের সাথে শরীক হতে চান, তারা চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
অথবা, গ্রুপে
https://m.facebook.com/groups/165967907273752?ref=bookmarks জয়েন করতে পারেন।
সেখানে আমরা সেদিন ইফতার সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি তাদের জন্য খিঁচুড়ি বিরিয়ানির ব্যবস্থা করেছিলাম, আলহামদুলিল্লাহ্‌।
কতো উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে যে তারা সেগুলো দিয়ে ইফতারি করেছে, তা দেখে চোখ জুড়ে গিয়েছিলো আমাদের।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ