থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, জাপান ও চীনে গরু মহিষের যৌনাঙ্গ, পেনিস বা লিঙ্গসহ পশুর বর্জ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় হয়েছে একশ ৭০ কোটি টাকারও বেশি। এ বছর এর পরিমাণ দুইশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে আশা করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে গরু বা মহিষের লিঙ্গ অত্যন্ত দামি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এসব দেশে পশুর একেকটি যৌনাঙ্গ ৬ থেকে ৭ ডলারেও বিক্রি হয়। এর বাইরে গরু-মহিষের দাঁত ও হাড় থেকে তৈরি হয় ক্যাপসুলের কাভার।
এখন পর্যন্ত কোরবানির জবাইকৃত পশুর হাড়, শিং, চামড়া, নাড়িভুঁড়ি, মূত্রনালি, চর্বি, রক্তের মতো বর্জ্যগুলো চারটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে প্রক্রিয়াজাত করা গেলে রপ্তানি বাড়িয়ে আরো বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কোনবানির পশুরু বর্জ্য লাগতে পারে জীবন সাজানোর কাজে, তেমনি জীবন বাঁচানোর কাজেও রয়েছে এগুলোর ব্যবহার। শুধু তাই নয়, এসব বর্জ্যের অনেকগুলোই রপ্তানিযোগ্য, যা থেকে উপার্জিত হতে পারে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও। এসব পশুর বর্জ্যের বড় বাজার হলো থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, চীন ও জাপান। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও প্রচার নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এদিকে, ট্যানারি থেকে পাওয়া উচ্ছিষ্ট চামড়া দিয়ে তৈরি জুতার সোল ও প্রক্রিয়াজাত করা চামড়ার ফেলে দেওয়া অংশ থেকে সিরিশ কাগজ তৈরি হয়। পশুর রক্ত সংগ্রহের পর তা সেদ্ধ করা হয় এবং শুকিয়ে গুঁড়ো করা হয়। পরে সেই গুঁড়োর সঙ্গে শুঁটকি মাছ, সয়াবিন তেল ও যব মিলিয়ে তৈরি দানাদার মিশ্রণ ব্যহার করা হয় মুরগি ও পাখির খাবারের জন্য। পশুর চর্বি দিয়ে তৈরি হয় সাবান। আর শিং থেকে আগে অডিও-ভিডিও ফিল্ম তৈরি হতো, ডিজিটাল ডিভাইসের বহুল ব্যবহারের কারণে যার চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। এখন শিংয়ের মূল ব্যবহার বোতাম ও চিরুনি তৈরিতে। আবার মহিষের শিংয়ের ডগা ব্যবহার করে জাপানে এক ধরনের খেলনা তৈরি করা হয়। গরু ও মহিষের নাড়ি প্রক্রিয়া করে মানুষের খাবারও তৈরি করা হয়। জাপানের জনপ্রিয় ও দামি ‘শোস্যাট রোল’ নামের খাবারটিও গরু ও মহিষের নাড়িভুড়ি দিয়েই তৈরি।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর একশ ৭০ কোটি টাকার পশুর হাড়, যৌনাঙ্গ ও গোল্লা বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পশুর বর্জ্যের বড় বাজার হলো থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, চীন ও জাপান।
জানা গেছে, রাজধানীতে রয়েছে পশুর বর্জ্যের বিশাল বাজার। বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জে রয়েছে এর দু’টি বাজার— একটি জিঞ্জিরায়, অন্যটি হাসনাবাদ এলাকায়। আগে কেবল ঢাকার আশপাশ থেকে এই বাজারে শিং ও হাড় এলেও এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই এই বাজারে আসছে গরু-মহিষের শিং ও হাড়। এখানে প্রতিমণ শিং ৬শ টাকা ও প্রতিমন হাড় বিক্রি হয় ৭শ থেকে সাড়ে ৭শ টাকা দরে।
প্রথমদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ডাস্টবিন ও রাস্তার পাশে পড়ে থাকা গরু-মহিষের হাড় ও শিং সংগ্রহ করে এ বাজারে বিক্রির জন্য আনত টোকাইরা। কেউ কেউ হাজারীবাগ ও পোস্তা এলাকা থেকেও এগুলো সংগ্রহ করত। তবে এখন টোকাইদের কাছ থেকে এসব হাড় ও শিং কিনে নেন মৌসুমী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তারাই ভ্যানে করে এসব বর্জ্য নিয়ে আসেন কেরানীগঞ্জের এই দুই বাজারে। এখান থেকে কেনা হাড় ও শিং চলে যায় ভারত ও থাইল্যান্ডে।