1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ষোড়শ সংশোধনীর পর্যবেক্ষণ বাতিলে আইনী পদক্ষেপ নিতে সংসদে প্রস্তাব গৃহীত

ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

জাতীয় সংসদে আজ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে সংশোধনীকে এখতিয়ার বহির্ভূত ঘোষণাকে বাতিল এবং জাতীয় সংসদসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অসাংবিধানিক আপত্তিকর, অপ্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ বাতিলে যথাযথ আইনী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
জাসদের সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল সংসদ কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ (১) বিধিতে এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
প্রস্তাবটি হলো, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন মামলার রায়ে এখতিয়ার বহির্ভূত ঘোষণাকে বাতিল করার জন্য ও প্রধান বিচারপতি কর্তৃক জাতীয় সংসদ সম্পর্কে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যে অসাংবিধানিক, আপত্তিকর ও অপ্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে, তা বাতিল করার জন্য যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।’
প্রস্তাব উপস্থাপন করে মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে ক্ষুণœ করেছে। প্রধান বিচারপতি যে কথা বলে সংবিধানের ৯৬ ধারা বাতিল করেছেন, তা তিনি কোনোভাইে প্রমাণ করতে পারবেন না যে, সংসদ তার সীমালংঘন করেছে।
তিনি বলেন, সংসদ কোনোভাবেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চায় না।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের কোন অবকাশ নেই। রাষ্ট্রের তিন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ৭৫’র পর যে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছিল, তা জনগণ মানেনি। একইভাবে এবারও মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়নি, বরং আরো দায়িত্বশীল হবার সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানকে অবমাননা করা হয়েছে।
মইন উদ্দীন খান বাদলের প্রস্তাবের প্রতি úূর্ণসমর্থন ব্যক্ত করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে যথাযথ আইনী পদক্ষেপ নেয়া হোক।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। জনগণ দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিকে যদি কেউ খাটো করার চেষ্টা করেন, তাহলে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে খাটো করা হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বসম্মতিক্রমে এই সংসদ ষোড়শ সংশোধনী পাস করেছিল। এর লক্ষ্য ছিল ৭২ এর ৯৬ অনুচ্ছেদে ফিরে যাওয়া। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে যতœবান হয়ে এই কাজটি করা হয়েছে। কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট একটি রায় দিয়েছে। সে রায়ের আগে আদালতের বন্ধু হিসেবে কয়েকজনকে নিয়োগ করা হয়েছে। যাদের বলা হয়, এ্যামিকাস কিউরি। জাতির কাছে প্রশ্ন রাখি আদালতের বন্ধু এরা কারা? ড. কামাল হোসেন তিনি আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীর বিরোধী। ব্যরিস্টার আমিরুল ইসলাম তিনি আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত নন। তিনি নিজে সংবিধান প্রণেতা দাবি করেন, আবার ষোড়শ সংশোধনীরও বিরোধীতা করেছেন। রোকন উদ্দিন মাহমুদ তিনি হাইকোর্টে এক কথা বলেছেন আবার সুপ্রিমকোর্টে আরেক কথা বলেছেন। এজে মোহাম্মদ আলী তিনি দৌড় মোহাম্মদ আলী হিসেবে পরিচিত। হাসান আরিফ বিএনপি দ্বারা নিযুক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। ফিদা কামাল ওয়ান ইলেভেন সরকারের এ্যাটর্নি জেনারেল। আব্দুল ওয়াদুদ বিএনপি আমলের অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল। টিএইচ খান জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। এদের মধ্যে শুধু আজমালুল হোসেন কিউসি ষোড়শ সংশোধনী সমর্থন করেছিলেন।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আদালত কি একজনও নিরপেক্ষ বা আওয়ামী লীগের বন্ধু খুঁজে পেলেন না?
ড. কামাল হোসেনের একটি বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, তিনি এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমাদের সংবিধান শুরুই হয়েছিল ‘আমরা’ দিয়ে।’ কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণাই শুরু হয়েছিল ‘আমি’ দিয়ে। আর তা বলেছিলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের অনুপ্রেরণা ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ‘আমি’ এবং ‘আমরা’ এসব কথা টেনে এনে একটি অহেতুক বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি আদালতকে পাকিস্তানের আদালতের সাথে তুলনা করেছেন। এটা তিনি করতে পারেন না। কারণ পাকিস্তানের আদালতের পেছনে রয়েছে সেনাবাহিনীর বন্দুক। আসমা জাহাঙ্গীরের ভাষায় দুটি বিষয়ে পাকিস্তানে বিচার হয় না- একটি বিচার বিভাগ, আরেকটি সেনাবাহিনী। পৃথিবীর কোন সভ্য দেশেই সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল নেই। সেখানে সংসদ সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। আর যেখানে রয়েছে সেখানেও অকার্যকর।
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের পরেও পাকিস্তানে কোনো প্রতিক্রিয়া হয়নি। সেখানে সুপ্রিম কোর্টের তদন্ত কমিটিতে দু’জন সামরিক অফিসার ছিলেন। সেই কোর্টের সঙ্গে তিনি বাংলাদেশকে তুলনা করলেন! অবাক লাগে, সংসদের গ্রন্থাগারে দেখলাম ১৯৫৩ সালে বেসিক প্রিন্সিপাল কমিটি গঠন হয়, সেই কমিটি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিটি প্রস্তাব করে। ’৫৬ এর সংবিধানেও ছিল, সংসদ বিচারপতিদের অপসারণ করবে না। সেই আইয়ুব খানের আমলের কথা বলছেন প্রধান বিচারপতি!’
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দ্বারা নিযুক্ত বিচারপতিরা নাকি পরিপক্ক, আর আমরা জনগণ দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অপরিপক্ক এটা দুঃখজনক।’
মইন উদ্দীন খান বাদলের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে তোফায়েল আহমেদ আইনমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়ে বলেন, ‘বিনয়ের সঙ্গে প্রধান বিচারপতিকে বলি, কথা কম বলা ভালো। অনেক পোড় খাওয়া লোক আমরা এখানে আছি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ কত সুন্দরভাবে চলছে। এ রায় দিয়ে বিএনপিকে উৎফুল্ল করার চেষ্টা করা হয়েছে।’
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিচার বিভাগের সম্মান, স্বাধীনতা ও বিচারপতি অপসারণে নিরপেক্ষতার লক্ষ্যেই ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়েছিল। ষোড়শ সংশোধনী যখন পাস করা হয়, তখনই এ বিধানকে যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে আরো একটি আইন করার কথা বলা হয়। আর সে অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করা হচ্ছিল।
তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর বিধান অনুযায়ী কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও অযোগ্যতার অভিযোগ উঠলে এবং তা সংসদে আসলে যথাযথ মূল্যায়নের পর অভিযোগ তদন্তে একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য দ্বারা অনুমোদিত হলে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি সম্মতি দেয়ার পর তা কার্যকর হবে। এখানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণœ হওয়ার তো কিছু নেই।
আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ হলো সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। এই সংসদ থেকেই দেশের আইন পাস হয়। সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতাও রয়েছে। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে তাই করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী সম্পর্কে এই রায় ‘আইনগত চ্যালেঞ্জ ব্যতিত ছাড় দেয়া হবে না।’
আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচাপতির আসন একটি প্রতিষ্ঠান। এ আসনে যেই বসুক না কেন তাকে আইনী ভাষায় মর্যাদা নিয়ে কথা বলতে হবে।
সরকারি দলের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, আদালতকে প্রধান বিচারপতি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম বানিয়ে সেখানে যা ইচ্ছে তাই বলেছেন। তার বক্তব্য উদ্দেশ্য প্রণোদিত, তিনি সেটা করতে পারেন না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাস করে তারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু বলতে পারেন না। অথচ তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক অনেক কথা বলেছেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়কে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতি যেসব কথা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। রায়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতার অবদান, দেশের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি সংসদকে অকার্যকর ও সংসদ সদস্যদের অপরিপক্ক বলা উদ্দেশ্যমূলক।
রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করলে অর্ডার অংশটিই তাদের বিরুদ্ধে যাবে উল্লেখ করে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া আইনমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে যেসব কথা বলা হয়েছে তা এখতিয়ার বহির্ভূত।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, সুপ্রিমকোর্টের রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের পর আর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল কার্যকর নেই। এটিও বাতিল হয়ে গেছে। ফলে এ বিষয়ে রায় দেয়ার এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নেই। তাই সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী এখনো বহাল রয়েছে। তিনি এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর প্রতি আহবান জানান।
আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সরকারি দলের সদস্য ডা. দীপু মনি, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পী, তাহজিব আলম সিদ্দিকী, জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম ও স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী। খবর, বাসস।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ