1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ময়মনসিংহ-৮ :আ’লীগের দুর্গে জাপা, পুনরুদ্ধার চায় বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮


আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে ঈশ্বরগঞ্জের রাজনীতি। জাতীয় পার্টি আসন ধরে রাখতে চাচ্ছে, আবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি চাচ্ছে পুনরুদ্ধার করতে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন জোরেশোরে।
আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত ময়মনসিংহের এই আসনটি ২০১৪ সালের নির্বাচনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।বর্তমানে এ আসনের এমপি জাতীয় পার্টির অন্যতম নীতি নির্ধারক ফখরুল ইমাম। বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের আসন ভাগাভাগিতে তিনি পার্শ্ববর্তী গৌরীপুর উপজেলার বাসিন্দা হয়েও এমপি নির্বাচিত হন এ আসনে। বিগত দশটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বহিরাগত এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিনবার। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ক্ষোভ হতাশায় মিশ্র প্রক্রিয়া রয়েছে। ২০১৪ থেকে এ পর্যন্ত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হয় নি বললেই চলে। জনমত বিবেচনা করলে বর্তমান সাংসদের জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে।
অন‍্যদিকে আসন জাতীয় পার্টির হওয়ার কারণে সরকারি দলের সাংগঠনিক অবস্থা তুুলনামূলকভাবে দুর্বল। দলের অনেকে সাংসদের কর্মি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। দেশের যে কয়েকটি আসনের মাঠ পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিশ্বাসঘাতক ও দলের স্বার্থ বিরোধীদের সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়েছেন তারমধ্যে এ আসনটি অন‍্যতম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অন‍্য দলের সঙ্গে আঁতাতকারীদের সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তার, যাকে ঈশ্বরগঞ্জের উন্নয়নের রূপকার ও দুর্দিনের কাণ্ডারি বলা হয়। দলীয় প্রধানের নির্দেশে বিগত নির্বাচনে তিনি এ আসনটি ছেড়ে দিয়ে সভানেত্রীর আস্থার স্থানটি আরো বেশি শক্তিশালী করেন। ধর্মমন্ত্রী ও আবদুস সাত্তারের দলীয় আনুগত্য আওয়ামী লীগে দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।
রাজনৈতিক মেরুকরণে ক্ষমতার বলয়ের বাইরে থাকায় রাজনীতির মাঠে অনেকটাই কোণঠাসা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকেই এ আসনটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ঝিমিয়ে পড়া আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী সংগঠনে রূপ দেন সাবেক এমপি আবদুস সাত্তার। কিন্তু বর্তমানে রাজনীতির মাঠে ঘরের শত্রুতে বিভীষণ অবস্থার মধ্যে আছেন তিনি। জানা গেছে, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো অবস্থাতেই জাতীয় পার্টিকে আর ছাড় দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। যদিও স্থানীয় আওয়ামী লীগে আরও দুটি ছোট ভাগ রয়েছে তবে আবদুস সাত্তারের ব‍্যক্তিত্ব ও গ্রহণযোগ্যতার বিচারে তা নিতান্তই গুরুত্বহীন।
সূত্রমতে, বিগত দশটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে চারটিতে জাতীয় পার্টি, তিনটিতে আওয়ামী লীগ ও তিনটিতে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এ কারণেই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি ধরে রাখতে মরিয়া তিন দলই। ফলে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন দলের নবীন-প্রবীণ প্রার্থীরা ভোটারদের নজর কাড়তে ডিজিটাল ব্যানার ও ফেস্টুনে চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা।
সূত্রমতে, ১৯৭৩ সালে মরহুম অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল কাদির, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আবদুস সাত্তার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এ আসনের এমপি নির্বাচিত হন। এ ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে বিগত উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রায় সবকটি প্রার্থীই নির্বাচিত হয় আওয়ামী লীগের। ফলে বর্তমানে এ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের না হলেও ভোটের মাঠে সমান তালে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
জানা যায়, দীর্ঘ সময় উন্নয়ন বঞ্চিত এ উপজেলায় উন্নয়নের প্রথম ছোঁয়া লাগে ১৯৯৬ সালে আবদুস সাত্তর এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর। ওই সময় তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নজির সৃষ্টি করেন। কিন্তু ক্ষমতার পালা বদলে ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলহাজ শাহ নূরুল কবীর শাহীন। নির্বাচিত হলেও এ উপজেলার প্রায় সকল উন্নয়নই এমপি সাত্তারের হাত ধরে হয়েছে বলেও দাবি করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
মনোনয়ন প্রশ্নে তরুণ ছাত্রনেতা তারিকুল হাসান তারেক বলেন, নৌকার জন্য কাজ করছি। দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা তার জন্যই কাজ করব।
উচাখিলা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. সাইদুল হক সরকার বলেন, বিগত সময়ে এলাকার উন্নয়নে এমপি সাত্তারের অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তৃণমূল জনপ্রিয়তায় ভোটের মাঠে তার সমপর্যায়ের প্রতিপক্ষ কেউ নেই। আগামী নির্বাচনে এ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরে তুলতে হলে নৌকার প্রার্থিতায় এমপি সাত্তারের কোনো বিকল্প নেই। এর ব্যতিক্রম হলে আসনটি হাতছাড়া হওয়ার সম্ভবনা বেশ প্রবল বলেও তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেও আবদুুস সাত্তারের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে তার সমর্থক উপজেলা বিআরডিবির চেয়ারম্যান ও ঈশ্বরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের সাবেক জিএস সুলতান আহাম্মদ মাছুম বলেন, ঈশ্বরগঞ্জে উন্নয়নের অন্যতম রূপকার আ. সাত্তার। নৌকার মনোনয়নে তার জনপ্রিয়তা ব্যাপক। কারণ বিগত সময়ে উপজেলার কাঁচামাটিয়া নদীর ওপর ১১টি ব্রিজ নির্মাণ, বিপুল পরিমাণ সড়ক পাকাকরণ, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ ও পৌর ভবন নির্মাণসহ এলাকার দৃশ্যমান বেশির ভাগ উন্নয়ন হয়েছে তার হাত ধরেই।
অপরদিকে এ আসনে প্রধান দুটি দলেই গ্রুপিং থাকলেও বিএনপির অভ‍্যন্তরীণ কোন্দল তীব্র। ১৯৭৯ ও ১৯৯৬ সালে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন যায়েদী এবং ২০০১ সালে শাহ নুরুল কবীর শাহীন এ আসনে বিএনপির মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই উপজেলা বিএনপির হাল ধরেন তিনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় বিএনপি। এর একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য শাহ নূরুল কবীর শাহীন এবং অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু। ফলে বর্তমানে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নেই দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কমিটি রয়েছে। এ কারণে নেতৃত্ব বিড়ম্বনায় পোহাতে হচ্ছে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের। যদিও দুই পক্ষেরই দাবি তাদের বৈধ কমিটি। কিন্তু আসলে কোন কমিটি বৈধ এ নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আছেন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তবে উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক স্বাক্ষরিত কমিটির আহ্বায়ক মাজেদ বাবু। এমন দাবি স্থানীয় নেতাদের।
জানা যায়, নেতৃত্ব নিয়ে দু’পক্ষের মাঝে রশি টানাটানি থাকলেও দলের দুঃসময়ে দলীয় কর্মসূচি পালনে মাঠে ছিলেন না কোনো নেতাই। মাঝে মাঝে তাদের অনুসারীরা নামমাত্র কর্মসূচি পালন করলেও বেশির ভাগ কর্মসূচিতে অনুপস্থিত ছিলেন দুই গ্রুপের দুই নেতাই। ফলে এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
সূত্রমতে, মাজেদ বাবু ওরফে কালা বাবু হঠাৎ করেই সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এলাকার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। প্রথম দিকে তিনি জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আওয়াজ থাকলেও শেষতক তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদটি বাগিয়ে নেন। ফলে আগামী নির্বাচনে এ আসনে শাহ নূরুল কবীর শাহীনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন মাজেদ বাবু।
সূত্রমতে, এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- সাবেক এমপি শাহ নুরুল কবীর শাহীন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি কামরুজ্জামন লিটন, সৌদি আরব পশ্চিম বিএনপির উপদেষ্টা চিকিৎসাবিজ্ঞানী ড. কাজী মনজুরুল হক সেলিম, তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আওরঙ্গজেব বেলাল প্রমুখ।
অন‍্যদিকে আওয়ামী লীগে মাঠ রাজনীতি এমপি সাত্তারের ২০০১ সালের নির্বাচনে নিজ দলের অ্যাডভোকেট সৌমেন্দ্র কিশোরের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হয়ে পরাজিত হন। এরপর খুব বেশি দিন সৌমেন্দ্র কিশোর মাঠ রাজনীতিতে টিকে থাকতে না পারলেও
আগামী নির্বাচনের আগে বিভেদ ভুলে ঐক্যে ফিরলে এ আসনটি এবারো আওয়ামী লীগের ঘরে আসার সম্ভাবনা প্রবল। এক্ষেত্রে দলীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই বলেও দাবি তাদের।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ