1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

কারা বাংলায় তালেবানি শাসন চায়?

ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আইয়ুব আলী : আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতা দখল করেছে এ খবরে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল ও সমর্থকদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর মধ্যে। বিএনপিও ফুরফুরে মেজাজে আছে। কী মাহাত্ম আছে তালেবানের মধ্যে- তা তারা বলে না। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তালেবানকে সমর্থনের কথা জানায়। তালেবানের আদর্শ কী, কর্মসূচি কী- তা তারা বলে না। কিছু চাকরিজীবীদের মধ্যে বিশেষ করে শিক্ষক-অধ্যাপকদের মধ্যে তালেবানের প্রতি এত আবেগ উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে যে, তারা তা আর লুকিয়ে রাখতে পারেননি। তাদের কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তালেবানের ক্ষমতা দখল নিয়ে লিখেছে- ‘আমি মক্কা বিজয় দেখিনি, কাবুল বিজয় দেখেছি।’ কেউ লিখেছে- ‘এমন বিজয় কি কেউ কখনও দেখেছেন’? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গ্রুপ লিখেছে, ‘তালেবানের জয় ইসলামের জয়’। অনেকে খুশিতে তালেবানে যোগ দিতে আফগানিস্তানে চলে গিয়েছে। পুলিশ অবশ্য বলেছে, যারা আফগানিস্তানে তালেবানি ট্রেনিং নিতে গিয়েছে তারা ফিরলেই গ্রেফতার করা হবে। আফগানিস্তানে যেতে গিয়ে কেউ কেউ ভারতে গ্রেফতার হয়েছে। এদের কর্মকাণ্ড দেখলে মাইকেল মধুসূদন দত্তের আত্মবিলাপ কবিতার কথা মনে পড়ে। কবি বলেছেন,

“জ্বলন্ত পাবক শিখা লোভে তুই কাল ফাঁদে
উড়িয়া পড়িলি?
পতঙ্গ যে রঙ্গে ধায়, ধাইলি, অবোধ, হায়!
না দেখিলি, না শুনিলি, এবে রে পরাণ কাঁদে!”

পতঙ্গ ঝকমকে আগুন দেখে মনে করে- না জানি কত মধুর বস্তু ওইখানে রয়েছে। তাই অগ্র পশ্চাৎ না ভেবে অস্থির হয়ে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঝাঁপিয়ে পড়ে পতঙ্গ বুঝতে পারে কোথায় এলাম? কিন্তু ফিরে আসার আর উপায় থাকে না। আইএস এর মতো একটি জঙ্গিগোষ্ঠীতে যোগ দিতে সারা পৃথিবী থেকে শত শত ছাত্র, যুবক, যুবতী, অধ্যাপক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হন্যে হয়ে ছুটে যেতে লাগল সিরিয়ায়। আশি-নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ থেকে শত শত যুবক আফগানিস্তানে গিয়েছিল জিহাদ করতে, জিহাদের ট্রেনিং নিতে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে দেয়ালে দেয়ালে লেখা দেখতে পাওয়া যেত- “আমরা সবাই তালেবান/বাংলা হবে আফগান।” সম্প্রতি একই স্লোগান আমাদের দেশে আবার দিতে দেখা গিয়েছে।  যারা বাংলাকে আফগানিস্তান বানাতে চায় তারা কারা? তারা কি বাংলার হিতাকাঙ্খী? তারা কি ইসলামের হিতাকাঙ্খী? তারা ইসলাম ধর্মকে বিশ্বে সন্ত্রাসী, জঙ্গি হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে।

”১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক ছিলেন, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে পাকিস্তানের পক্ষেও বহু শিক্ষক ছিলেন। তাদের প্রেতাত্মা ও চেলারা এখনও বহাল তবিয়তে আছে।”

যারা বাংলাকে তালেবান রাষ্ট্র বানাতে চান তারা কি এর পরিণতির কথা ভেবে দেখেছেন? বাংলাদেশের অর্তনীতি বলতে কিছু থাকবে? বাংলাদেশের আয়ের বড় দুটি খাত হচ্ছে জনসংখ্যা রপ্তানি ও তৈরি পোশাক শিল্প। বাংলাদেশ থেকে কোনও লোককে কি কোনও দেশ নেবে? বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ইউরোপ আমেরিকায়। তারা পোশাক নেয়া বন্ধ করে দেবে। বাংলাদেশে কোনও দেশ বিনিয়োগ করবে না। কোনও দেশের সাথে অর্থনৈতিক লেনদেন থাকবে না। বাংলাদেশ হবে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন একটা দ্বীপ। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে তালেবান আসা মানে বাংলাদেশ শেষ। বাংলাদেশকে শেষ করার জন্য স্বাধীনতা বিরোধীরা উঠে পড়ে লেগেছে। তারা বাংলাদেশকে এখন তালেবান রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্ন দেখছে। ফেসবুকে নানা স্ট্যাটাস দিচ্ছে। কেউ কেউ হুমকিও দিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন, দেশে সুষ্ঠ নির্বাচন হলে আফগানিস্তানের কাবুল বিমান বন্দরে যা হচ্ছে তার চেয়েও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে ঢাকা বিমানবন্দর। তিনি এ কথা দ্বারা কি হিংসাকে উস্কে দিলেন না? তালেবানরা কাবুল দখল করার পর আফগানরা তালেবানের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে কাবুল বিমান বন্দরে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, বাংলাদেশে সুষ্ঠ নির্বাচন হলে, ক্ষমতার পালা বদল হলে বাংলাদেশ থেকেও মানুষ পালাবে। নির্বাচন হলে, ক্ষমতার পালা বদল হলে, দেশের মানুষ দেশে থাকতে পারবে না, পালাতে হবে- এটা কি গণতান্ত্রিক ভাষা? তা-ও একজন অধ্যাপকের কাছ থেকে শুনতে হয়। অধ্যাপক সাহেবের কথার মর্ম হচ্ছে, তারা ক্ষমতায় এলে দেশের পরিস্থিতি আফগানিস্তানের মতো হবে। তখন বুঝিয়ে দেবেন কত ধানে কত চাল। ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে দেশে যে পরিমাণ খুন, ধর্ষণ, দখল, লুটপাট হয়েছে, সরকার বদলালে সামনে তার চেয়ে বেশি হবে। আর তিনি হবেন ভিসি। একজন অধ্যাপকের লেখা পড়ে মানুষ আলোকিত হবে এটাই তো প্রত্যাশা। অথচ এসব অধ্যাপক লেখেন মানুষকে হিংসায় প্রজ্জ্বলিত করার জন্য, উগ্র করার জন্য। শত শত প্রতিক্রিয়াশীল লোক লাইক দিয়ে, কমেন্ট করে তাকে সমর্থন করেছেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষক ছিলেন, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে পাকিস্তানের পক্ষেও বহু শিক্ষক ছিলেন। তাদের প্রেতাত্মা ও চেলারা এখনও বহাল তবিয়তে আছে।

”বনের পাখিও সারাদিন খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। দিন শেষে সন্ধ্যায় ঘরে ফেরে। মানুষও সব কর্মকাণ্ড করে তার বাড়িঘরকে কেন্দ্র করে। সে বাড়িঘর ফেলে মানুষ কখন পালায়? যখন জীবনের নিরাপত্তা থাকে না, তখনই তো পালায়। তাহলে তালেবান এমন কী মহান শাসন আনলো যে, মানুষকে পালাতে হচ্ছে?”

যাহোক, তালেবান প্রসঙ্গে ফিরে আসি। তালেবানকে যারা আশীর্বাদ মনে করেন, তাদের নিকট প্রশ্ন- তালেবান যদি মহান আশীর্বাদই হবেন, তাহলে আফগানরা তালেবানের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে কেন? আফগানরা তালেবানদের স্বাগতম জানিয়ে রাস্তায় রাস্তায় আনন্দ মিছিল করছে না কেন? তালেবানকে যদি মানুষ পছন্দ করে, ভালোবাসে, তাহলে তালেবানরা রাস্তায় অস্ত্রের টহল দিচ্ছে কেন? বনের পাখিও সারাদিন খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। দিন শেষে সন্ধ্যায় ঘরে ফেরে। মানুষও সব কর্মকাণ্ড করে তার বাড়িঘরকে কেন্দ্র করে। সে বাড়িঘর ফেলে মানুষ কখন পালায়? যখন জীবনের নিরাপত্তা থাকে না, তখনই তো পালায়। তাহলে তালেবান এমন কী মহান শাসন আনলো যে, মানুষকে পালাতে হচ্ছে?

”জঙ্গিতন্ত্রের মূলমন্ত্র ভীতি প্রদর্শন, বল প্রয়োগ, জিহাদ। ভিন্নচিন্তা, ভিন্নমত, বাক-স্বাধীনতা, বিনোদন-সংস্কৃতি জঙ্গিতন্ত্রে এ সব চলবে না।”

বাংলাদেশের কিছু লোক গণতন্ত্রের জন্য মায়াকান্না করেন, আবার তালেবানকে সমর্থন করেন। তাদের প্রতি প্রশ্ন, তালেবান কি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে? গণতন্ত্র হচ্ছে তালেবান তথা উগ্র বিশ্বাসীদের ঘোর শত্রু।  গণতন্ত্র ছাড়া জনপ্রিয়তা পরিমাপের মাপকাঠি কী? সাহস থাকলে তালেবান নির্বাচন দিক। নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করুক তারা জনপ্রিয়, তাদের জনসমর্থন আছে। গণতন্ত্র ব্যতীত সভ্য জগতে নেতা নির্বাচিত হবে কিভাবে, আইন প্রণেতা হবে কিভাবে, প্রাদেশিক ও স্থানীয় প্রশাসক কারা হবে, কিভাবে হবে? গণতন্ত্র ব্যতীত যা করা হয়- তা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়। রাষ্ট্র শাসনের কতগুলো পদ্ধতি আছে। যেমন- গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, সমাজতন্ত্র। এগুলোতে তালেবানের আস্থা নেই। তাহলে এর বাইরে কী আছে? এর বাইরে আরেকটি তন্ত্র আছে, তা হলো- জঙ্গিতন্ত্র। জঙ্গিতন্ত্র ছাড়া তালেবানের পথ কী? জঙ্গিতন্ত্রের মূলমন্ত্র ভীতি প্রদর্শন, বল প্রয়োগ, জিহাদ। ভিন্নচিন্তা, ভিন্নমত, বাক-স্বাধীনতা, বিনোদন-সংস্কৃতি জঙ্গিতন্ত্রে এ সব চলবে না। জঙ্গিরা যা খুশি তাই করবে, যাকে খুশি তাকে মারবে, যাকে খুশি তাকে বিয়ে করবে, আবার ভালো না লাগলে ত্যাগ করবে। জঙ্গিতন্ত্রে জঙ্গিরা স্বাধীন, সার্বভৌম, আইনের উর্ধ্বে, তারা দেশের মালিক, বাকিরা তাদের দাস এবং দাসী।

পৃধিবীর শতকরা ৮০-৯০ ভাগ মাদক উৎপাদিত হয় আফগানিস্তানে। আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের ২২টি প্রদেশে ২ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে পপির (আফিম) চাষ হয়। পপির রস থেকে হয় হেরোইন, মরফিন ইত্যাদি। আমেরিকা ৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করে, প্রণোদনা দিয়েও পপি উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। কারণ মাদক উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সাথে জড়িত তালেবান। তালেবানের আয়ের উৎস। পপি চাষীদের নিকট থেকে কর বাবদ তালেবানের আয় বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার। আমেরিকা সমর্থিত সরকারের নিয়ন্ত্রণ শহরগুলোতে থাকলেও গ্রাম ও পাহাড়ি অঞ্চলে তালেবানের প্রাধান্যই ছিল। তালেবান রাজনীতি করে ইসলামের নামে। ইসলামে মাদক উৎপাদন, বিপনন, গ্রহণ সবই হারাম। অথচ তালেবান তা নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে। আর এ দিকে নারীর ওপড়, দাড়ির ওপড় শরিয়া আইন প্রয়োগ করছে। মাদকের উৎপাদন, বিপননের বেলায় শরিয়া আইনের প্রয়োগ নেই।

আফগানিস্তানে ২ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে পপির (আফিম) চাষ হয়। ছবি- সংগৃহীত।

ধর্মের নামে উগ্রবাদ পারমানবিক বোমা ভিন্ন কিছু নয়। পারমানবিক বোমা কাউকে খাতির করে না। উগ্রবাদিরাও কাউকে ছাড় দেয় না। প্রথমে তারা শেষ করবে নাস্তিক, মুক্তচিন্তুক, সেকিউলারদের। কার মুখে দাড়ি নেই ধরবে তাদের। তারপরে ধরবে বিধর্মীদের। তাদের দৃষ্টিতে ইসলাম ব্যতীত কোনও দীন নেই। মুসলমান ব্যতীত সবাই বিধর্মী, কাফির। বিধর্মী, কাফিরদের হত্যা করা জায়েয। বিধর্মী, কাফিরদের সম্পত্তি ও নারী হবে গণিমতের মাল। গণিমতের মালকে আল্লাহ মুসলমানদের জন্য বৈধ করেছেন। তারপরে ধরবে কাদিয়ানি ও শিয়াদের। ওরাও মুসলমান নয়। তারপরে লাগবে নিজেদের মধ্যে মাঝহাব নিয়ে। তারপরে এক মৌলভী আরেক মৌলভীকে বলবে- ওই লোক মুসলমান নয়। মুসলমান না হলে বাঁচার অধিকার থাকে কী করে? এভাবে চলবে মনগড়া ফতোয়া, হত্যা, রক্তপাত, ধ্বংসলীলা। কেননা,  টাকায় টাকা আনে, ভালোবাসায় ভালোবাসা আনে, হিংসায় হিংসা আনে, যুদ্ধ যুদ্ধ আনে, উগ্রতায় উগ্রতা আনে, রক্তে রক্ত টানে। তাই শান্তি বহু দূর।

”উগ্রবাদী ওহাবি জঙ্গিদের মতে, কবি ওমর খৈয়াম, হাফিজ, শেখ সাদি, রুমি, জামি, আত্তার, খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি, কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকী, নিজামুদ্দিন আউলিয়া, আমির খসরু, ইবনে খালদুন, কবি আলাওল, এমনকি ইবনে সিনা, আল রাযি, ইবনে রুশদ, ফারাবি, কিন্দি, ইমাম গাজ্জালি এঁরা মুসলমান ছিলেন না।”

ধর্মীয় উগ্রবাদিদের কাছে যুক্তির কোনও স্থান নেই। তারা মনে করে, যুক্তি হলো দুর্বলের অস্ত্র, শক্তি হলো সবলের অস্ত্র। যদিও শেখ সাদি বলেছেন, “যুক্তিতে পারিব না, শক্তিতে পারিব এরই নাম বর্বরতা।” এরা শেখ সাদিকে মুসলমান মনে করে না। কেননা তিনি ছিলেন সুফি। উগ্রবাদী ওহাবি জঙ্গিদের মতে, কবি ওমর খৈয়াম, হাফিজ, শেখ সাদি, রুমি, জামি, আত্তার, খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি, কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকী, নিজামুদ্দিন আউলিয়া, আমির খসরু, ইবনে খালদুন, কবি আলাওল, এমনকি ইবনে সিনা, আল রাযি, ইবনে রুশদ, ফারাবি, কিন্দি, ইমাম গাজ্জালি এঁরা মুসলমান ছিলেন না। এঁরা ছিলেন সুফি। সুফিরা গান গায়, গান শুনে, মাজার পূজা করে, ওরস করে, শিরনি করে। সুফিরা সমা (ধর্মীয় সঙ্গীত) কে ইবাদততুল্য মনে করে। ওহাবি জঙ্গিদের মতে, এসব বেদাত। এসব যারা করে তারা মুসলমান নয়। এ জন্য ওহাবিরা হযরত মুহাম্মদ সঃ এর মাজারও ভেঙ্গে ফেলেছিল। [William Hunter, The Indian Musalmasns, p. 51]। অথচ  ইসলাম প্রচার ও প্রসারে সুফিদের রয়েছে বিরাট অবদান।

ধর্মীয় উগ্র বিশ্বাসীরা কথায় কথায় ফতোয়া দেন, ক মুসলমান নয়, খ মুসলমান নয়? কারও সাথে মতবিরোধ হলেই ঘোষণা করে সে মুসলমান নয়। একজন মুসলমান যদি স্বেচ্ছায় ইসলাম ত্যাগ করে নিজেকে অমুসলিম ঘোষণা না করে, তাহলে কার কোনও অধিকার আছে তাকে অমুসলিম বলার? একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে কি অমুসলিম বলতে পারে? সে যদি জীবনে কোনও দিন নামাজ রোজা নাও করে, তাই বলে কি সে অমুসলিম হয়ে যাবে? আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে বিশ্বাস করলে তাকে অমুসলিম বলা যায় না। রাসুল সঃ কলেমা তৈয়ুব পাঠ করিয়ে অমুসলিমদের মুসলমান বানিয়েছেন। কলেমা পাঠ ও বিশ্বাস করলে আল্লাহ ও রাসুলের খাতায় মুসলমান হিসেবে তার নাম নথিভুক্ত হয়ে যায়। তাকে আর অমুসলিম বলার কোনও বিধান নেই। তারপরে যে যতটুকু ইবাদত বা কর্ম করবে সে ততটুকু ফল পাবে। অথচ উগ্রবাদিরা একে অপরকে অমুসলিম বলতেই আছে। যেমন আইএস এবং উগ্র সুন্নিরা ইরানের শিয়াদের বলে অমুসলিম, জামাতিরা কাদিয়ানিদের বলে অমুসলিম। আবার যারা সেকিউলার মুসলিম তাদেরকে বলে নাস্তিক। কাফির, নাস্তিক, মুরতাদ, অমুসলিম এগুলো হচ্ছে উগ্রপন্থিদের মুখের বুলি। যাকে পছন্দ হবে না তাকে এসব বলবে আর রক্ত নেবে। বাংলাদেশের উগ্রপন্থিরাও রক্ত নেয়ার জন্য দিন গণনা করছে আর দা, ছেনি ধার দিচ্ছে। তাই তালেবানি শাসন হলে তারা তাদের অস্ত্রগুলো প্রয়োগ করতে পারে।

উগ্র বিশ্বাসীদের দর্শন হচ্ছে, তারা ব্যতীত সবাই ভ্রান্ত। তারাই একমাত্র সঠিক পথের অনুসারী। তারা যা করে তাই ঠিক। অন্যেরা যা করে তা বেঠিক। তাদের কাছে ভিন্ন মত, ভিন্ন পথ গ্রহণযোগ্য নয়। তাই যারা তাদের মত, পথ অনুসরণ করবে না, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। উগ্রবাদে গণতন্ত্র, উদারতা, মানবতা, বাক-স্বাধীনতার কোনও স্থান নেই। পৃথিবীতে বৈচিত্র্য বলতে কিছু থাকবে না। সবাইকে হতে হবে তাদের মতো একমুখি, এক বিশ্বাসী। দেখা যাক, মানুষ কোন পথ বেছে নেন। তবে বাংলাদেশে তালেবানি শাসন প্রতিষ্ঠা করা সহজ বা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের ধর্মীয় উগ্রপন্থিরা ৮০ ও ৯০ এর দশকেও আফগানিস্তানে গিয়েছিল, ট্রেনিং নিয়েছিল, মুজাহিদীন ও তালেবান বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। বাংলাদেশে ফিরে তারা তাদের জঙ্গি কার্যক্রম শুরু করেছিল। কিন্তু হালে পানি পায়নি, জনসমর্থন মেলেনি। তাছাড়া, দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে উগ্রবাদী জঙ্গি কার্যক্রম যত সহজ, ঘন বসতিপূর্ণ সমতল ভূমিতে তত সহজ নয়।

 

লেখক ● রাজনীতি ও ইতিহাস বিশ্লেষক।।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ