1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ছাত্র ধর্ষণে বহিষ্কার হয়ে এমএলএম করে ১৭ হাজার কোটি আত্মসাৎ

সুভাষ হিকমত : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

পিরোজপুরের একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন রাগীব আহসান। মাদ্রাসার এক ছাত্রকে ধর্ষণের ঘটনায় ইমামতি থেকে বহিষ্কার হন। এরপর ঢাকার একটি এমএলএম কোম্পানিতে ৯০০ টাকা বেতনে চাকরি নেন। চাকরি হারিয়ে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এমএলএম কোম্পানি খোলেন। নাম দেন এহসান গ্রুপ। কওমি মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক ও মসজিদের ইমামদের কোম্পানিতে নিয়োগ দেন। ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে গ্রাহকের ব্যবস্থা করে দেন তারাই। এভাবে ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন রাগীব আহসান।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন পিরোজপুর জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা মীর মো. ফারুক আব্দুল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘ন্যক্কারজনক ওই কাজের জন্য তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এরপর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। রাগীব আহসান পৌরসভার বড় খলিশাখালী গ্রামের আবদুর রব খানের ছেলে। রাগীবের তত্ত্বাবধানে তিন শতাধিক মাঠ পর্যায়ের কর্মী ছিল। খলিশাখালী এলাকায় বাড়ি হলেও বিভিন্ন স্থানে অপকর্ম করেছেন।’

ফারুক আব্দুল্লাহ বলেন, রাগীব আহসান শহরতলির কেনগর তালিমুল কোরআন মাদ্রাসা মসজিদে ইমামতি করতেন। ২০০৭ সালে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর এলাকা ছেড়ে চলে যান। এক বছর পর এলাকায় ফিরে রাগীব পিরোজপুরে এমএলএম ব্যবসা শুরু করেন। তখন আমি অনেক ব্যক্তিকে নিরুৎসাহিত করেছি। রাগীবের কাছ থেকে দূরে থাকতে বলেছি। কিন্তু অনেকে তার ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়েছেন। এরমধ্যে অনেক ইমাম ও মাদ্রাসা শিক্ষকও রয়েছেন। আজ সবাই সর্বস্বান্ত।

মাওলানা মীর ফারুক আব্দুল্লাহ আরও বলেন, আমি যখন তাদের নিষেধ করতাম তখন তেড়ে আসতো। যারা এহসানে টাকা রাখতো, তারা বলতো, সুদবিহীন প্রতিষ্ঠানে আমরা টাকা রাখছি, আপনি বিরোধিতা করছেন কেন। আপনার পেছনে নামাজ হবে না। আফসোস, তাদের কোনোভাবেই বোঝাতে পারলাম না। যখন তারা বুঝেছে তখন সবশেষ।

ফারুক আব্দুল্লাহ বলেন, আমি রাগীব আহসানের কঠোর শাস্তি চাই। পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, প্রতারিত মানুষগুলো যাতে টাকা ফেরত পায়, তার একটা ব্যবস্থা করুন।

চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর রাগীব আহসানের বিরুদ্ধে মামলা করেন হারুন অর রশিদ। তার বাড়িও পিরোজপুর সদর উপজেলার মূলগ্রাম রায়েরকাঠী এলাকায়। হারুন অর রশিদ নিজেও একটি মাদ্রাসার শিক্ষক।

তিনি বলেন, রাগীবের এই প্রতারণার ব্যবসা পিরোজপুরের পাশের ঝালকাঠি ও বাগেরহাট জেলায়ও বিস্তার লাভ করেছে। ওসব জেলার মানুষও এখন নিঃস্ব।

pirojpur pic ragib---

হারুন অর রশিদ মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে ২০০৮ সাল থেকে শরিয়াভিত্তিক ও সুদমুক্ত হালাল ব্যবসার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া শুরু করেন রাগীব আহসান। একই সঙ্গে সুদমুক্ত হালাল ব্যবসার প্রচার চালান। তিনি আমাদের বলেছেন, ইসলামে সুদ জিনার সমান পাপ। তাই হারাম ও সুদভিত্তিক ব্যবসা করা যাবে না। ব্যবসার ওপর লাভের কথা বলে মানুষের কাছ থেকে ব্যাংকের মতো টাকা নিতেন। বলতেন, আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন। কৌশল হিসেবে একই পরিমাণ লাভ না দিয়ে এক লাখ টাকায় মাসে কখনও দুই হাজার আবার কখনও এক হাজার ৮০০ টাকা দিতেন। কখনও দুই হাজার ২৫ টাকা দিতেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বলতেন, ব্যবসায় যখন যেমন লাভ হয় তেমন দিচ্ছি। কিন্তু মূল টাকা ফেরত চাইলে তার প্রতারণা ধরা পড়ে যায়।

তিনি বলেন, আমি যে মামলাটি করেছি তাতে ৯৫ জনের টাকার হিসাব রয়েছে। আমার আছে ১৬ লাখ টাকা। আমার মতো কয়েক হাজার মানুষ প্রতারিত হয়েছেন।

হারুন অর রশিদ বলেন, রাগীব আহসান শুরুতে এহসান গ্রুপ নামে কাজ শুরু করলেও পরে ১৭টি প্রতিষ্ঠান খোলেন। প্রতিষ্ঠানগুলো দিয়ে হালাল ব্যবসার কথা বলতেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো এহসান গ্রুপ বাংলাদেশ, এহসান পিরোজপুর বাংলাদেশ (পাবলিক) লিমিটেড, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড, নুর-ই মদিনা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট অ্যাকাডেমি, জামিয়া আরাবিয়া নুরজাহান মহিলা মাদ্রাসা, হোটেল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল, আল্লাহর দান বস্ত্রালয়, পিরোজপুর বস্ত্রালয়-১ ও ২, এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, মেসার্স মক্কা এন্টারপ্রাইজ, এহসান মাইক অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম, এহসান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, ইসলাম নিবাস প্রজেক্ট, এহসান পিরোজপুর হাসপাতাল, এহসান পিরোজপুর গবেষণাগার এবং এহসান পিরোজপুর বৃদ্ধাশ্রম।

২০১০ সালে পিরোজপুর সদর উপজেলার খলিশাখালী এলাকায় রাগীব আহসান ‘এহ্সান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়েন। পরবর্তী সময়ে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে ‘এহ্সান গ্রুপ’ রাখেন। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন রাগীব আহসান। প্রতিষ্ঠানে তার তিন ভাই, বোন, শ্বশুর, বোন জামাইসহ আত্মীয়দের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়। পরে পৌর শহরের সিও অফিস মোড় সংলগ্ন বাইপাস সড়কের পাশে জমি কিনে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন।

পিরোজপুর জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর খান মো. আলাউদ্দিন বলেন, ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় রাগীব আহসান ও তার তিন ভাইকে গ্রেফতার করে র‌্যাব ও পুলিশ। রাগীব আহসানের অন্য তিন ভাই হলেন—মাওলানা আবুল বাশার, মো. খাইরুল ইসলাম ও মুফতি মাহমুদুল হাসান। তারা এখন পিরোজপুর কারাগারে।

সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাগীব আহসানসহ তার তিন ভাইয়ের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন পিরোজপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. মহিউদ্দীন। এ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। আদালত যে মামলায় তাদের রিমান্ড দিয়েছেন ওই মামলায় ৯১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ মামলার অভিযোগে বলা হয়, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে ৯১ কোটি ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৩ টাকা নেয়।

গত বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০-এর একটি দল রাজধানীর শাহাবাগ থানার তোপখানা রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাগীব আহসান ও তার সহযোগী আবুল বাশার খানকে গ্রেফতার করে। পরে পিরোজপুর থেকে তার তিন ভাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ