বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে কালো দিন ২১ সেপ্টেম্বর। ১৯৮২ সালের এই দিনে (২১ সেপ্টেম্বর) খেলার মাঠ থেকে কারাগারে যেতে হয়েছিল আবাহনীর ১৪ ফুটবলারকে। পরদিন সকালে কয়েকজনকে ছেড়ে দিলেও বিভিন্ন মেয়াদে জেল খাটতে হয়েছিল চারজনকে।
ঢাকা লীগের শেষ ম্যাচে মোহামেডান-আবাহনীর খেলায় আবাহনীর অধিনায়ক আনোয়ার হোসেনের কর্নার থেকে বল গোললাইন অতিক্রম করে। কিন্তু মোহামেডানের গোলকিপার মোহসিন তা হাত দিয়ে ফিরিয়ে দেন। আবাহনীর খেলোয়াড়রা গোলের দাবি জানালে রেফারি আবদুল আজিজ তা বাতিল কর দেন। এতে উত্তেজিত হয়ে আবাহনীর ফুটবলাররা সহকারী রেফারি মহিউদ্দিন চৌধুরীকে মারধর করেন। মাঠের এ উত্তেজনা স্টেডিয়ামের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে।সমর্থকরা স্টেডিয়ামের ভেতর ও বাইরে ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এর জেরে ওইদিন রাতে আবাহনীর দুই বিদেশীসহ (পাকির আলী ও অশোকা) ১৪ জন খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে রমনা থানা পুলিশ।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের হোস্টেলে ছিল জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাম্প। রাতেই সরকারি সম্পত্তি বিনষ্ট, রেফারি লাঞ্ছিত, জনসম্পত্তি বিনষ্ট ও উসকানিমূলক আচরণের অভিযোগে ক্যাম্পে থাকা আবাহনীর ফুটবলারদের গ্রেফতার করে রমনা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
আবাহনী ক্লাব থেকে গ্রেফতার করা হয় দুই বিদেশীকে। পরদিন শ্রীলংকান দূতাবাসের কর্মকর্তারা এসে পাকির আলী ও অশোকাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। বাকিদের পাঠানো হয় আদালতে।
আদালত কাজী সালাউদ্দিন, গোলাম রব্বানী হেলাল, আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু ও আনোয়ার হোসেনকে দোষী সাব্যস্ত করে বাকিদের খালাস দেন।
অধিনায়ক আনোয়ার ও হেলালকে ছয় মাস এবং চুন্নু ও সালাউদ্দিনকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। আনোয়ার ও হেলালকে পাঠানো হয় রাজশাহী কারাগারে এবং চুন্নু ও সালাউদ্দিনের জায়গা হয় যশোর জেলে। তবে গণদাবীর মুখে ফুটবলাররা ১৭ দিন জেল খেটে মুক্তি পান।
ঘটনাবহুল ওইম্যাচে মোহামেডান ১-০ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তাই ফুটবলাঙ্গনে এই দিনটি ‘কালো দিন’ হিসেবেই পরিচিত।
তবে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে ‘ব্ল্যাক’ সেপ্টেম্বর আছে আরেকটি। সেটি জার্মানিতে। হিটলার আমলে ইহুদি নিধনযজ্ঞ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো অলিম্পিক আয়োজনের সুযোগ পায় তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি। সেই অলিম্পিকেই ইসরায়েলি এ্যাথলেটদের ওপর হামলা করে ফিলিস্তিনী গেরিলা গ্রুপের একটি দল। তারা ১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মিউনিকে গেমস ভিলেজে এই হামলা চালায়। ১১ এ্যাথলেটদের তারা পণবন্দী করে। তাদের মধ্যে দুজন ঘটনার সময়েই নিহত হন। পরে জার্মানির কমান্ডোরা পাল্টা হামলা চালিয়ে গেরিলাদের মেরে ফেলে।
এই ঘটনার দশ বছর পর বাংলাদেশের ফুটবলে ব্ল্যাক ডে’এর ঘটনা ঘটে। ফুটবলাঙ্গনে এখন আর ওই দিনটি নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না, কথা বলতেও আগ্রহ বোধ করেন না সালাহউদ্দিন, চুন্নু ও হেলালরা।