1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

‘ওয়াশ ফর টি পিকারস’ : পাহাড়ে পাইপলাইনে বিশুদ্ধ পানি

ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর, ২০১৮

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে হরিণছড়া চা বাগান-সংলগ্ন দুর্গম পাহাড়ি জনপদ ‘আলুবাড়ি’। সমতল থেকে প্রায় ১২০ ফুট উঁচু এ পাহাড়ে বসবাস করে ৬৭টি পরিবার। দরিদ্র এই মানুষগুলোর জীবিকা নির্বাহ হয় চা বাগানে শ্রমিকের কাজ করে।
জীবনযাত্রার আধুনিক সুবিধা দূরের কথা, এক সময় এই পাহাড়ে খাবার পানির ব্যবস্থাটুকুও ছিল না। গৃহস্থালির পানি সংগ্রহ করতে হতো আধা কিলোমিটার দূরের একটি ছড়া থেকে। পাহাড়ের ঢালে ছিল একটি মাত্র নলকূপ। ছড়ার নোংরা পানি দিয়েই চলত রান্নাসহ গৃহস্থালির সমস্ত কাজ। আলুবাড়ির তিনশ’র বেশি মানুষের ডায়রিয়া ও টাইফয়েডের মতো রোগ লেগেই থাকত। তবে ওই পরিস্থিতি আর নেই। আলুবাড়ির চা শ্রমিকদের বিশুদ্ধ পানির অভাব দূর হয়েছে, কষ্ট ঘুচেছে নারীদের।
প্রত্যন্ত জনপদের সুবিধাবঞ্চিত চা শ্রমিকদের জীবনে এ পরিবর্তন এনে দিয়েছে ‘ওয়াশ ফর টি পিকারস’ প্রকল্প। প্রকল্পের আওতায় এখানে স্থাপন হয়েছে একটি গভীর নলকূপ ও ১০ হাজার লিটার ধারণক্ষমতার পানির ট্যাঙ্ক। সাবমারসিবল পাম্প দিয়ে সরাসরি পানি ওঠে রিজার্ভ ট্যাঙ্কে। সেখান থেকে পাইপলাইনে পানি সরবরাহ করা হয় ৬৭টি পরিবারে। ৫-৭টি পরিবারের পানি সংগ্রহে রয়েছে একটি করে ট্যাপ স্টেশন। এর বাইরেও আলুবাড়ির অপেক্ষাকৃত সমতলে বসানো হয়েছে অর্ধশতাধিক নলকূপ। পাশেই করে দেওয়া হয়েছে পাকা স্নানাগার।
শুধু আলুবাড়ি টিলা নয়; পার্শ্ববর্তী মেকনিছড়া, টিপড়াছড়া ও মাজদিহি পাহাড়েও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে; যার মাধ্যমে খুব সহজে ও স্বল্প সময়ে পানি সংগ্রহ করতে পারছেন এসব পাহাড়ের বাসিন্দারা।
আলুবাড়ি চা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, বহু বছর আগে ছড়ার পানির ওপর ভরসা করে দুর্গম পাহাড়ে বসতি গাড়েন চা শ্রমিকরা। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বৃক্ষনিধনের প্রভাবে এক সময় পানির স্তর নেমে যায়। ছড়া শুকিয়ে যাওয়ায় পাহাড়ের চা শ্রমিকদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। সংকট দেখা দেয় সুপেয় পানির। সেই কষ্ট ও দুর্ভোগ থেকে পাহাড়ের চা শ্রমিকদের মুক্তি দিয়েছে ‘ওয়াশ ফর টি পিকারস’ প্রকল্প।
পানি সংগ্রহে আলুবাড়ির নারীদের কষ্টই ছিল বেশি। কেননা, তারাই প্রতিদিন দীর্ঘ পাহাড়ি পথ হেঁটে পানি সংগ্রহ করতেন। এতে দীর্ঘ সময় যেমন লেগে যেত; তেমনি শারীরিকভাবেও তারা দুর্বল হয়ে পড়তেন। বায়স্কদের পাশাপাশি কিশোরীদেরও এই কষ্ট ভোগ করতে হতো প্রতিদিন। এখন, পাহাড়ে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা হওয়ায় অন্তত কিছু নারী ও কিশোরীর প্রতিদিনের সেই কষ্ট লাঘব হয়েছে।
টিলার বাসিন্দা অঞ্জলি মানকিন বলেন, ‘বছর আড়াই আগেও পানিভর্তি কলস নিয়ে পাহাড়ের খাঁজ ধরে হাঁটতে বাধ্য হয়েছি। সেই কষ্ট এখন আর নেই। জীবন অনেক সহজ হয়েছে। সুচিত্রা চামুগং দিলেন অন্যরকম এক তথ্য। বললেন, পাইপে যেদিন পানি দেওয়া শুরু হয় সেদিন খুশিতে আলুবাড়ির নারীরা পূজা দিয়েছেন।
কিন্তু দুর্গম এ এলাকায় পানির ব্যবস্থা করা মোটেও সহজ ছিল না। ভৌগোলিক কারণে পাহাড়ি এলাকায় পানির স্তর সহজলভ্য নয়। তার ওপর এ এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির উৎস-সংক্রান্ত কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি; যা কি না গভীর নলকূপ স্থাপনে খুবই প্রয়োজন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সরকারিভাবে কখনই এ এলাকায় পানির স্তর নিয়ে জরিপ হয়নি; যদিও সাধারণভাবে সারাদেশেই এমন জরিপ হয়। এলাকাভিত্তিক পানির স্তরের ওই তথ্য না থাকায় কয়েকবার চেষ্টার পর খুঁজে পাওয়া যায় পানির কাঙ্ক্ষিত স্তর, যেখান থেকে চাহিদামত পানি উত্তোলন সম্ভব। গভীর নলকূপ খনন কাজে যুক্ত প্রকৌশলীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সাফল্যের সঙ্গে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব হয়।
প্রকল্পের প্রকৌশলী মৃণাল কান্তি দাশ জানান, কাজটা রীতিমতো দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছিল এক সময়। ভঙ্গুর ও পাথুরে মাটির কারণে পাঁচবারের চেষ্টা ভেস্তে যায়। কোনোভাবেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে পাইপ স্থাপন সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে ষষ্ঠবারের প্রচেষ্টায় পাঁচশ’ ফুট গভীরে পানির স্তর মেলে। আরেক প্রকৌশল মো. ইব্রাহিম আমান বলেন, ‘দুঃসাধ্য মনে হলেও আমরা দমে যাইনি। স্থানীয়দের নিয়ে বারবার চেষ্টা চালিয়েছি।’
শ্রীমঙ্গলে আইডিয়ার এই প্রকল্প চালু হয় ২০১৬ সালের অক্টোবরে। প্রকল্প ব্যবস্থাপক পঙ্কজ ঘোষ দস্তিদার বলেন, যাদের জীবনযাত্রায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি, যাদের জীবনযাত্রা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ; দুর্গম পাহাড়ে বসবাসকারী সেই চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে ওয়াশ ফর টি পিকারস প্রকল্পটি ছিল একটি চ্যালেঞ্জ। সবার সহযোগিতায় তাতে সফলতা এসেছে। এর অংশীদার বাগান পঞ্চায়েত ও স্থানীয় জনগণ।’
পঙ্কজ ঘোষ জানান, এই কার্যক্রম টেকসই করে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও নজরদারি জরুরি। তাই ১৫ সদস্যের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপকারভোগী প্রতিটি পরিবারের কাছে মাসে ১০ টাকা জমা নিয়ে গঠন হয়েছে একটি তহবিল। নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে রয়েছে সেই অর্থ। গভীর নলকূপ রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় নির্বাহ হচ্ছে ওই তহবিল থেকে।
‘ওয়াশ ফর টি পিকারস’ প্রকল্প বাস্তবায়নে আইডিয়াকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে দাতা সংস্থা ওয়াটারএইড, বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইমামুর রহমান বলেন, ‘ওয়াটারএইড বাংলাদেশ-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করছি চা বাগানের সুবিধাবঞ্চিত ও দুর্গম এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার ব্যবস্থা করা এবং সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার ও বাগান কর্তৃপক্ষের পানি ও পায়খানা বিষয়ক দক্ষতা বৃদ্ধি ও জবাবদিহি নিশ্চিত কল্পে আমরা কাজ করছি।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রেম সাগর হাজরা মনে করেন, চা শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহের প্রকল্পটি খুবই আশাব্যঞ্জক এবং সুবিধাবঞ্চিত এই জনগোষ্ঠীর কাছে আলোকবর্তিকাস্বরূপ। কেননা, বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা ও স্যানিটেশন সুবিধা নাগরিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। তাই ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রমের পরিধি বিস্তৃত হওয়া দরকার।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ