1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আওয়ামী লীগের কর্মীরা কেমন আছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০২০

সুভাষ সিংহ রায়
আওয়ামী লীগের কর্মীরা কেমন আছেন? এখনকার সময়ের জন্যে এরকম প্রশ্ন করাটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ন্যক্কারজনক ঘটনা, সব্বাই ছিঃ ছিঃ করছে। যথারীতি অভিযোগের আঙ্গুল ছাত্রলীগের দিকেই। কাউকে বোঝানো যাবে, এটা ছাত্রলীগের দলগত অপরাধ না। প্রয়াত বর্ষীয়ান সাংবাদিক সেই যে টেলিভিশনের টকশোতে ক্রমাগত বলতেন ‘চাপাতি লীগ ’ । কেননা তার সেই সময়ের বক্তব্যের একটা বাজার মূল্যও ছিল।
কেননা তিনি আওয়ামী ঘরাণার বিশিষ্ট সাংবাদিক ছিলেন, বঙ্গবন্ধুর সময়ে জাতীয় সংসদের সদস্য হয়েছিলেন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধানও হয়েছিলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতিও ছিলেন। অতএব তিনি যখন ছাত্রলীগকে ‘চাপাতি লীগ’ বলেন তখন তার একটা বাজারমূল্য থাকবেই। আরেকবার সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে আগুন জ্বালানোর ঘটনার পর বৃহত্তর সিলেটের তৎকালীন এক মন্ত্রী পরিদর্শন করতে যেয়ে পুড়ে যাওয়া দৃশ্য দেখে অঝোর ধারায় কেঁদেছিলেন। তখন বাংলাদেশের প্রায় গণমাধ্যম সেই দৃশ্য ধারণ করে প্রচার করেছিল। তাতে ছাত্রলীগের বিরেদ্ধে জনমনে বিদ্বেষ আরো সংক্রমিত হয়েছিল। সাধারণ মানুষের মনে ধারণা জন্মেছিল একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীও এখানে অসহায়, তাহলে ছাত্রলীগ কতটা দুর্বিনীত।
আমরা বলতে কি পারবো বিগত এগারো বছরে সরাসরি ছাত্রলীগের মিছিল করা শতকরা কতজন সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ পেয়েছে। মুখস্ত বিদ্যার মতো কিছু মুখোরোচক কথা বলা সহজ। দুঃসময়ে যারা আওয়ামী লীগ করেছেন তাদের সন্তানরা সরকারি চাকুরি খুব একটা পায় না। আবার যখন দেখে পাশের বাড়ির সারাজীবন বিএনপি জামায়াত ঘরাণায় থাকা লোকটির সন্তানরা একাধিক সরকারি পেয়ে যায় তখন তারা মনে করেন অন্যকিছুর যোগ আছে। দেওয়া নেওয়ার বিষয়টা মনে করতে বাধ্য হন
ওই মন্ত্রীর দশ বছরের মন্ত্রিত্বকালে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ রাজনীতির যুক্ত থাকাদের অবস্থান ঢাকাতে খুবই কম হতো। আওয়ামী লীগরা বেশ প্রাধান্য পেতো, যদিও বামঘেঁষাদের একটা ভালই গুরুত্ব ছিল। তিনি এমসি কলেজের সাবেক ছাত্র ছিলেন, সেই জঘন্য ঘটনার বিচারের জন্যে কার্যকর কিছুই করেনি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি নিশ্চয় নির্দেশ দিয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনার সৃষ্টি করে না। তাই ছাত্রলীগের, আওয়ামী লীগের কর্মীরা কেমন আছেন সময়ের বিবেচনায় এরকম প্রশ্নের প্রতিক্রিয়া হবে মিশ্র। কেউ কেউ বলবেন আওয়ামী লীগের প্রকৃত কর্মীরা এখন কোণঠাসা।
আওয়ামী লীগ কর্মীদের অনেকেই বলতে শোনা যায় সারাজীবন আওয়ামী লীগ করে কি পেলাম? পরিবেশটা এমনভাবে তৈরি হয়েছে মনে হয় যেন সর্বত্র ছদ্মবেশী কর্মীদের জয় জয়কার। আচ্ছা, আমরা বলতে কি পারবো বিগত এগারো বছরে সরাসরি ছাত্রলীগের মিছিল করা শতকরা কতজন সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ পেয়েছে। মুখস্ত বিদ্যার মতো কিছু মুখোরোচক কথা বলা সহজ। দুঃসময়ে যারা আওয়ামী লীগ করেছেন তাদের সন্তানরা সরকারি চাকুরি খুব একটা পায় না। আবার যখন দেখে পাশের বাড়ির সারাজীবন বিএনপি জামায়াত ঘরাণায় থাকা লোকটির সন্তানরা একাধিক সরকারি পেয়ে যায় তখন তারা মনে করেন অন্যকিছুর যোগ আছে। দেওয়া নেওয়ার বিষয়টা মনে করতে বাধ্য হন।
এসব আঁকাড়া চিন্তাভাবনা আওয়ামী পরিবারের সদস্যদের মধ্যে চলে আসে। সঠিক তথ্য দিয়ে বলা যায় না মোটেই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আরেকটি স্বাভাবিক প্রবণতা নিজেদের ভিতরে হিংসার প্রবণতা খুব প্রকট। এখনকার সময়ে এক আওয়ামী লীগার আরেক আওয়ামী লীগারের উপকার করে না। আওয়ামী লীগ আমলে চায়ের আসরের গল্পের শেষ নেই। যদিও আওয়ামী লীগারা যতটা অন্যের বিরুদ্ধে কথা বলে তারচেয়ে বেশি বলে নিজেদের বিরুদ্ধে। জেলা শহর, গ্রামে, গঞ্জের চায়ের দোকানে দশ বারো জনের আসরে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বার্তা শুনলেই ধরে নেওয়া যায় ওই আসরে সবাই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোয় কোনো না কোনো জায়গায় তাদের অবস্থান রয়েছে।
এক্ষেত্রে বলা যায় বাঙালি শুধু পরশ্রীকাতর জাতি নয়, আত্মশ্রীকাতর জাতিও। যে কথা কখনই বলা হয় না যে আওয়ামী লীগ আমলে আওয়ামী লীগরা বেশি বেশি সুবিধা পায়। এই বিষয়টা কি নতুন ধারার আওয়ামী লীগের চালচিত্র নাকি অনেকদিনের পুরানো রোগ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ বিধিতে এক ধরনের পরিবর্তন এসেছে। যে কোনো সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে একই ধরনের নিয়ম কার্যকরী হয়েছে।
এখনকার মতো বিএনপি সরকারের আমলেও লিখিত পরীক্ষায় আশি (৮০ ) , মৌখিকে বিশ (২০ ) ছিল । কিন্তু বিএনপি আমলে লিখিত পরীক্ষায় পাস নম্বর পেলেই মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হতো, সেখানে লিখিত পরীক্ষার নম্বর যোগ করার রেওয়াজ ছিল না। অর্থাৎ শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষার ওই বিশ (২০ ) নম্বরের এর ওপর ভিত্তি করে চাকরি দেওয়া হত। সেখানেই সরকারি দলের কর্মী ও নানানভাবে সুবিধাপ্রাপ্তদের প্রাধান্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের একই হলের ছাত্র, প্রায় কাছাকাছি মানের ছাত্র একজন ছাত্রলীগের মিছিল করা ছেলে, আরেকজন ছাত্রদলের মিছিল করা ছেলে। ছাত্রদল করা ছেলেটি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একাধিক সরকারি চাকুরি পেয়েছে। অথচ ছাত্রলীগের মিছিল করা ছেলেটির বিভিন্ন সরকারি নিয়োগে পরীক্ষা দিতে দিতে সরকারি চাকুরীর বয়স শেষ।
এ সব কারণে সারা দেশে আওয়ামী লীগের কর্মীদের হতাশাগ্রস্ত হয়ে নানাধরনের নৈতিকতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। লোভে পড়ে অনেকেই ঈমান নষ্ট করার ঘটনাও ঘটেছে। কিছুদিন আগে ‘ দৈনিক কালের কণ্ঠ’ এর একটি শিরোনাম ছিল ‘যুবদল থেকে আওয়ামী লীগ : নসিমন চালক থেকে কোটিপতি ’ । এই জাতীয় সংবাদ মাঝে মাঝেই পত্রপত্রিকায় দেখা যায় । রবিউল ইসলাম রবি নাটোর জেলার সিংগার ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। সে ২০১২ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। এতেই নাকি পেয়ে যায় আলাদীনের চেরাগ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আওয়ামী লীগের ভিতরে থাকা নব্য আওয়ামী লীগরা অনেক ক্ষতি করেছিল। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের ট্রাজেডির নাম ছিল ‘বাসন্তী’। কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় এক জেলে পরিবারের বাক প্রতিবন্ধী মেয়ে বাসন্তীর জাল পরে লজ্জা নিবারণের ছবি প্রকাশিত হয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায়। আর সেই বহুল আলোচিত এবং বিতর্কিত ছবির ফটোগ্রাফার ছিলেন ইত্তেফাকেরই নিজস্ব আলোক চিত্রি আফতাব আহমেদ। এই ছবি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু সরকারকে রাজনৈতিক সংকটে ফেলে দিয়েছিল। দেশের আনাচে কানাচে দুর্ভিক্ষের আগমনী বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল। সে সময় তিনজন লোক গিয়েছিল বাসন্তীদের বাড়িতে। এদের মধ্যে একজন ছিল তৎকালীন স্থানীয় রিলিফ চেয়ারম্যান তার নাম আনছার আলি পাঠান। এই আনসার আলি পাঠান ছিল নব্য আওয়ামী লীগার, মুক্তিযুদ্ধের সময় সে ছিল আওয়ামী বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী দলের সদস্য। ওই নব্য আওয়ামী লীগাররাই তখন বঙ্গবন্ধুর সরকারের বিরুদ্ধে নানাবিধ চক্রান্তের সাথে যুক্ত ছিল।
দুই.
২০১৮ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি সরকার কতটা কার্যকর করতে পারছে তা নিয়ে জনমতে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর জওহরলাল নেহরু অতিষ্ঠ হয়ে জিভিজি কৃষ্ণ মূর্তির নেতৃত্বে দুর্নীতি বিরোধী শক্তিশালী কমিটি করেছিলেন। এদিক-ওদিক কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে যতটা তৎপর ও সফল, ঠিক ততটাই পিছিয়ে পড়ছে সাংগঠনিক বিশেষত তথাকথিত নেতাকর্মী অর্থাৎ ক্ষতিকারকদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে। আওয়ামী লীগের সাচ্চা সমর্থকদের কাছে দলের অভ্যন্তরে জায়গা পাওয়া আওয়ামী লীগ অংশের অবস্থানে খুবই ব্যথিত করে।
বিশ ত্রিশ বছর আগের আওয়ামী লীগের অনেক সক্রিয় কর্মী এখন উপায়ন্ত না দেখে র্নিবাক হয়ে গেছেন। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে জাতীয় সংকটের সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানুষের মানুষের পাশে থাকে। এটা হচ্ছে জন্মসূত্রে পাওয়া আওয়ামী লীগের সংগ্রামী চেতনা। এবার করোনাকালীন সময়েও দেশের সর্বত্রই আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরাই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা মনে করেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়েও জনগণের সেন্টিমেন্টের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে দেখছে না। যাদের কারণে এক সময় আওয়ামী পরিবারের সন্তানরা রাতে বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি তাদের কেউ কেউ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। তারা এখনও আওয়ামী লীগের সাচ্চা নেতা কর্মীদের এখনও হয়রানি করে যাচ্ছে। খুব কম সংখ্যক আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী দুর্নীতি করে কিন্তু গোটা দলকে প্রশ্নের মুখোমখি করে দেয়। আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন সংস্থা বলে পৃথিবীর যে ক’জন সরকার প্রধান সততা ও স্বচ্ছতার পরীক্ষায় কালোত্তীর্ণ হয়েছে তার মধ্যে শেখ হাসিনা অন্যতম।
মনে পড়ছে পণ্ডিত নেহরুর সময়কার আর একটি ঘটনা। কে, ডি. মালব্য তখন ছিলেন খনিমন্ত্রী। কোন এক নির্বাচনের সময় তিনি একজন শিল্পপতির কাছে দশ হাজার টাকা চেয়েছিলেন একজন দলীয় প্রার্থীর জন্যে। কয়েকদিন পরে পণ্ডিতজি তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে সেই চিঠিটি দেখালেন। মালব্যকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, চিঠিটি কি তাঁর? মন্ত্রী বললেন, তাঁরই বটে। “তা হলে আমাকে আপনার পদত্যাগ গ্রহণ করতে হবে,” পণ্ডিতজি জানালেন। পদত্যাগপত্র তিনি পেয়ে গেলেন কয়েক ঘন্টার মধ্যেই। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে কংগ্রেস নেতাদের সৎভাবে জীবনযাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। বলেছিলেন, যে ভ্রষ্টাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তা সহ্য করার চেয়ে বরং তিনি কংগ্রেসের গোটা সংগঠনটিকে সুন্দরভাবে কবর দিয়ে দেবেন। (‘হরিজন’, ২৭ মে, ১৯৩৯)।
আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন , ‘আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম ’ । যে আওয়ামী লীগের স্বপ্ন তাঁর মহান পিতা দেখেছিলেন তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাগ্রত করেছিলেন। ষাটের দশকে , সত্তর দশকে সেই আদর্শের ঝান্ডার জন্যে জীবনের সবোর্চ্চ ত্যাগ স্বীকারে দৃঢ় প্রতীজ্ঞ ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন এই দলের হাল ধরেন তখন ঘোর অমানিশার অন্ধকার। এ তুফান ভারী দিতে হবে পাড়ি, এই সংকল্পবদ্ধ প্রতিজ্ঞা নিয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশ জাতি ও দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেই দলে ছদ্মবেশী আওয়ামী লীগারদের , মতলববাজ আওয়ামী লীগারদের যখন আস্ফালন দেখেন তখন সাচ্চা আওয়ামী লীগারদের মনটা ভারী হয়ে যায়।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে একজন সাবেক আমলা আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিলেন ; বেগম খালেদা জিয়ার নাকি কাছের লোক ছিলেন। বাজারে তার লেখা কয়েকখানা বইও আছে। ‘চিরঞ্জীব জিয়া’, ‘ছোটদের জিয়াউর রহমান ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ’, ‘আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া’ প্রভৃতি। এই জাতীয় মানুষের যোগদানের গুরুত্ব ও উপযোগিতার কোনো রকম ব্যাখ্যা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের কাছে উপস্থাপন করেন না। যে আওয়ামী লীগের মাঠের কর্মী যুক্তির শক্তিতে পিছিয়ে থাকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত নবজাত বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান সব নিয়ে গেছে আমাদের কাছ থেকে… শুধু চোরগুলোকে রেখে গেছে।’ ‘চাটার দল’ চোরগুলোকে রেখে যাওয়ার পরিণতিতে কীভাবে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত কার্যকরী হয়ে হাজার বছরের সবচেয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল, তা জাতির অভিজ্ঞতার মধ্যে রয়েছে। তবে তখনকার চেয়ে পরিস্থিতি এখন ভিন্ন এইদিক থেকে যে, দেশ এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত নয়, খাদ্য ঘাটতিও নেই, ভিক্ষুকও নই আমরা,’ দেশ রয়েছে উন্নয়নের ধারায়।
তিন.
আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা জন্মসূত্রে আত্মউৎর্সীকৃত হয়ে থাকে। ইতিহাস সেটারই সাক্ষ্য দেয়। বিশিষ্ট রাজনৈতিক লেখক ও গবেষক ড. শ্যামলী ঘোষের ‘আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ -১৯৭১ ’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের রপান্তরিত রুপ, সেই বই এর এক জায়গায় লেখা হয়েছে সাচ্চা আওয়ামী লীগের কর্মী বলতে কাদেরকে বোঝায় । ‘ওয়াকিবহাল সূত্রে জানা যায় যে ভাষা আন্দোলন বিষয়ক বিতর্কে অংশগ্রহণ ছাড়াও পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের কর্মীরা ১৯৫১ সালের আদমশুমারি চলাকালে গণনাকারীদের নিকট জনগণ যাতে তাদের উর্দু ভাষার জ্ঞানের কথা স্বীকার না করে সে কথা বোঝানোর জন্য নীরব অভিযান চালায়। তারা যে এ ব্যাপারে কিছুটা সফলকাম হয়েছিল সেন্সাস কমিশনারের মন্তব্য থেকে জানা যায়।’ ( বই এর পৃষ্টা ৭ , প্রকাশক – ইউপিএল ) । তাই এখনকার সময়ে আওয়ামী লীগের ভিতরের দুর্বিনীত ছদ্মবেশী আওয়ামী লীগারদের কার্যক্রম দেখে আওয়ামী সর্মথকরা বিষন্নতায় ভোগে । সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহারে‘ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে নীতি গ্রহণ ’ ( ইস্তেহারের ৩.৫ ) করার কথা খুবই স্পষ্ট করে বলেছে।
সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে। ‘দুর্নীতি একটি বহুমাত্রিক ব্যাধি। পেশিশক্তির ব্যবহার ও অপরাধের শিকড় হচ্ছে দুর্নীতি। যার ফলে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের অবক্ষয় বা পচন শুরু হয় এবং অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন প্রভৃতি কোনো ক্ষেত্রেই ইস্পিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় না। দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও আইনের প্রয়োগ মুখ্য হলেও তা শুধু সরকারের দায় নয়, জনগণেরও দায় রয়েছে। আমরা মনে করি, দুর্নীতি দমনে প্রয়োজন সরকার ও জনগণের সমন্বিত উদ্যোগ । ’
১৯৭৪ সালের ১৮ জানয়ারি আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অসাধারণ বক্তব্য রেখেছিলেন। সেই বক্তব্যেও সব’টি বাক্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লেখার এই অংশে তাঁর বক্তব্যের কয়েকটি লাইন এখানে উৎকলন করছি আজ প্রয়োজন ছিল আওয়ামী লীগের কিছু ইতিহাস বলার, প্রয়োজন ছিল আপনাদের কিছু পথ দেখানোর। শুধু একটা কথা বলে যাই-শেষ কথা আমার, যে কথা আমি বারবার বলেছি- সোনার বাংলা গড়তে হবে। এটা বাংলার জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের প্রতিজ্ঞা। আমার আওয়ামী লীগের কর্মীরা, যখন বাংলার মানুষকে বলি তোমরা সোনার মানুষ হও তখন তোমাদেরই প্রথম সোনার মানুষ হতে হবে। তাহলেই সোনার বাংলা গড়তে পারবা। আর যারা দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সংগ্রাম করেছো, তারা বাংলার দুঃখী মানুষের কাছ থেকে সরে যেও না।
… আজ বাংলার নিভৃত কোণে আমার এক কর্মী পড়ে আছে, যার জামা নাই, কাপড় নাই। তারা আমার কাছে আসে না। আপনাদের অনেকেই এখানে। কিন্তু আমি যদি চর কুকরীমুকরী যাই, আমার ঐ ধরনের কর্মীকে আসে দেখি। এদের সাথে আমার রক্তের সম্বন্ধ। আজো আমি দেখি তার পরণে ছেঁড়া লুঙ্গি। আজো দেখি, সেই ছেঁড়া পায়জামা, ছেঁড়া শার্ট, পায়ে জুতা নাই। বাংলাদেশে আমার এ ধরনের লক্ষ লক্ষ কর্মী পড়ে আছে। কিন্তু কিছু কিছু লোক যখন মধু-মক্ষিকার গন্ধ পায় তখন তারা এসে আওয়ামী লীগে ভিড় জমায়। আওয়ামী লীগের নামে লুটতরাজ করে। পারমিট নিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগ কর্মীরা, আওয়ামী লীগ থেকে তাদের উৎখাত করে দিতে হবে- আওয়ামী লীগে থাকার তাদের অধিকার নাই।’
১৯৭২ সালে ২২ সেপ্টেম্বরে ওই সময় প্রকাশিত জাতীয় পত্রিকাগুলোর একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল এমন । “ আওয়ামী লীকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য আরও এমসিএ ও দলীয় নেতাকে বহিষ্কার করা হবে। আরও ১৯ জন এমসিএ বহিষ্কৃত ’ । সংবাদ বিবরণীতে উল্লেখ ছিল, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান গণপরিষদ সদস্যদের দল থেকে বহিষ্কারের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। তিনি জানান, এসব গণপরিষদ সদস্য ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জনস্বার্থবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি বলেন, ‘এসব সদস্যের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।’ তিনি আরও জানান যে, দলকে দুর্নীতিবাজ গণপরিষদ সদস্য ও কর্মীদের থেকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজন হলে আরও এনসিএ এবং নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বহিষ্কার করা হবে।
উল্লেখযোগ্য যে, রাষ্ট্রপ্রধানের জারিকৃত এক অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, কোনও গণপরিষদ সদস্য তার সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সদস্য পদ হারালে তার গণপরিষদের সদস্য পদও বাতিল বলে গণ্য হবে। ফলে ১৯ জন গণপরিষদ সদস্য আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হওয়ায়, স্বাভাবিকভাবেই গণপরিষদের তাদের সদস্য পদ বাতিল হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী যুব নেতাদের মতে, একশ্রেণির এমসিএ দলীয় কর্মী ও নেতা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে জনগণের সংগ্রামী প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ ও দলের নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত সরকারকে জনগণের কাছে হেয় প্রতিপন্ন ও দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী চক্রের হাতকে শক্তিশালী করছিল।”
লেখক : রাজনীতিক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ