1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সাম্প্রদায়িকতা কোনোভাবেই ইসলাম নয়

ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২১

আবদুল মান্নান

হিন্দুস্তান টাইমস ভারতের একটি বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা। কিছুটা দলনিরপেক্ষ বলা যায়। সম্প্রতি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গা উৎসবকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৪ অক্টোবর তাদের অনলাইন বাংলা সংস্করণে শিরোনাম করেছে ‘হাসিনাকে বিব্রত করতেই বাংলাদেশি পুজোমণ্ডপে তাণ্ডব, আঙুল জামায়াত-ই-ইসলামের দিকে’। কী ঘটেছিল কুমিল্লায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই পূজা উৎসব ঘিরে, তা দেশের মানুষ ইতোমধ্যে জেনেছে। কুমিল্লার নানুয়ার দিঘিরপাড়ে অবস্থিত একটি অস্থায়ী পূজামণ্ডপে কে বা কারা বুধবার ভোরের দিকে মণ্ডপের বাইরে প্রতিমার কোলে একটি পবিত্র কোরআন শরিফ রেখে যায়। আইনস্টাইনের মতো কোনো বড় বিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই, এটা বলার জন্য। এ কাজ কোনো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাজ নয়। কারণ, তারা কোন উদ্দেশ্যে নিজের পায়ে কুড়াল মারতে চাইবে?

যে অর্বাচীন দুর্বৃত্ত এ কাজটি করেছে, সে পবিত্র কোরআন শরিফকে তো অপমান করেছেই, একই সঙ্গে শান্তির ধর্ম ইসলামকেও অপমানিত করেছে। এই অপকর্মের পেছনে ধর্ম ছিল না। ছিল অপরাজনীতি এবং হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, তা করেছে স্রেফ দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরোধী পক্ষ; ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে। শেখ হাসিনার দুর্ভাগ্য হচ্ছে, সব অপকর্মে তাদের সঙ্গী হয় আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী ছদ্মবেশী জামায়াতি আর বিএনপি, যাদের গোপন এজেন্ডা হচ্ছে যে কোনোভাবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারলে তারা আবার নিজ নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করবে। শেখ হাসিনার বড় দুর্বলতা হচ্ছে, তাকে যারা ঘিরে আছেন তাদের সবাইকে তিনি পিতার মতো কোনো রকম সন্দেহের চোখে না দেখে বা তাদের অতীত কর্ম সম্পর্কে কোনো খোঁজখবর না নিয়ে তাদের সহজেই বিশ্বাস করেন। অনেকে মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী কোনো ব্যক্তিকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করার আগে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে খোঁজখবর নেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- তারা কি সবাই সব সময় তাকে সঠিক তথ্য দেন? একটি উদাহরণ দিই। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন উদাহরণ আছে যে, মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিয়োগকৃত একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বাধ্যতামূলক অপসারণ করা হলো। দেখা গেল, সেই একই ব্যক্তিকে পুনরায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হলো। কী এমন ঘটল যে ব্যক্তিকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক একটি পদ থেকে অপসারণ করে অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হলো? এ কাজটি জানাজানি হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বিব্রত হওয়ার মতো অনেকে মন্তব্য করেছেন। সময় এলে এমন অনেক কথা বলার আছে।

যারা এসব অপকর্ম করে তাদের সবাই চেনে। প্রধানমন্ত্রী বিব্রত হবেন মনে করে অনেকে অনেক সত্য কথা তার কাছ থেকে গোপন করেন। আমার বিশ্বাস, তা সঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রী সঠিক ও সত্য কথাগুলো শুনতে চান। কিন্তু তার চারপাশে যে একটি অদৃশ্য দেওয়াল সৃষ্টি করা হয়েছে তা অনেকের জন্য ভেদ করা সম্ভব নয়। অথচ আওয়ামী লীগের কোনো পদ-পদবিতে নেই কিন্তু সর্বদা বঙ্গবন্ধুকন্যার মঙ্গল কামনা করেন তেমন মানুষের অভাব নেই। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে কলকাতা থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফের অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক দেবদীপ পুরোহিত তার পত্রিকায় শেখ হাসিনা সম্পর্কিত উপসম্পাদকীয়তে লিখেছিলেন- ‘বাংলাদেশ আর কখনও একজন হাসিনা পাবে না।’ তিনি কি খুব ভুল বলেছেন? মোটেও না। এমনটা চলতে থাকলে মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে- শেখ হাসিনার অবর্তমানে আওয়ামী লীগকে হারিকেন দিয়ে খুঁজতে হবে।

কুমিল্লার অপকর্মের রেশ দেশের অন্যান্য অংশ চট্টগ্রামের বাঁশখালী, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালীসহ আরও কিছু জায়গায় ছড়িয়েছে। মানুষ মারা গেছে। দেশের মিডিয়ায় তার তেমন আলোচনা বা প্রচার না হলেও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তা ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো আছেই। যারা এ অপকর্মে জড়িত ছিল তারা বেশ পরিকল্পিতভাবেই মাঠে নেমেছিল। মাঠে ছিল না প্রশাসন আর দেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। কোনো কোনো স্থানে, যেমন পাবর্ত্য চট্টগ্রামের লামায় আওয়ামী লীগ নামধারী জনপ্রতিনিধিরা দুর্বৃত্তদের সঙ্গী হয়েছে। যারা চাইছিল, দেশের বা শেখ হাসিনার ভাবমূর্তির ক্ষতি করবে, তা করতে তারা সক্ষম হয়েছে। খবর নিয়ে জেনেছি, কোনো কোনো স্থানে দুর্বৃত্তরা এমন বেপরোয়া ছিল; তেমনটি মুক্তিযুদ্ধের সময়েও দেখা যায়নি। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে পার পাওয়া যাবে না। যেসব জায়গায় এই অপকর্মগুলো ঘটেছে সেসব জায়গার জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের টেলিফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। তারা মনে হয়, উটপাখির নীতি গ্রহণ করেছেন। এতে কার লাভ কার ক্ষতি? লাভ অবশ্যই যারা শেখ হাসিনার ক্ষতি করতে চায় তাদের, আর ক্ষতি দেশের ভাবমূর্তির।

এবার আসি পবিত্র ইসলাম ধর্ম এসব বিষয়ে কী বলে তা নিয়ে। আল্লাহর রাসুল (সা.) যখন পবিত্র মক্কা থেকে পবিত্র মদিনায় হিজরত করলেন তখন পবিত্র মদিনার জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ ইহুদি, ১৫ শতাংশ মুসলমান। বাকিরা কেউ ছিল অগ্নি উপাসক বা পশুপাখির উপাসক। আল্লাহর নবী সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রচনা করলেন বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান, যাকে বলা হয় মদিনা সনদ, যাতে ৪৭টি ধারা ছিল। এই সনদ ছিল মানবাধিকারের শ্রেষ্ঠ দলিল। কারণ এ সনদে মদিনা নগরীতে সব নাগরিকের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ইহুদি আর অন্য সবাই নিজ নিজ ধর্ম-কর্ম পালনে কোনো বাধার সম্মুখীন হবে না। এটি ছিল সত্যিকার অর্থে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রথম দলিল, আর পবিত্র মদিনা হলো প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। আল্লাহর রাসুলের আমলে মক্কা বা মদিনা দুটো স্থানই ছিল গোত্রে বিভাজিত। আল্লাহর রাসুল কখনও কাউকে জোর করে মুসলমান বানানোর চেষ্টা করেননি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন- ‘হে মানব জাতি! আমি নর ও নারী থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছি। আর আমি বিভিন্ন গোষ্ঠী ও গোত্রে তোমাদের বিভক্ত করেছি, যেন তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো’ (সুরা আল হুজরাত, আয়াত :১৩)। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যাদের উপাস্যরূপে ডাকে তোমরা তাদের গালমন্দ করো না। নতুবা তারা শত্রুতাবশত না জেনে আল্লাহকেই গালমন্দ করবে’ (সুরা আন আম :১০৮)। আল্লাহ্‌র নবী বলেন- ‘হে মানবমণ্ডলী! সাবধান, তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। কেননা, তোমাদের আগের জাতিগুলো ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে’- বিদায় হজের ভাষণ। (ইবনে মাজা, কিতাবুল মানসিক)। তিনি আরও বলেন, ‘সাবধান! মুয়াহিদ (মুসলমান শাসনে বসবাস করা অন্য ধর্মের মানুষ) কোনো ব্যক্তির ওপর জুলুম করবে বা তার প্রাপ্য কম দেবে কিংবা তাকে সামর্থ্যের বাইরে কিছু করতে বাধ্য করবে অথবা তার সন্তুষ্টিমূলক সম্মতি ছাড়া তার কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করবে, কিয়ামতের দিন আমি তার বিপক্ষে বাদী হবো’ (সুমানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩০৫২)।

এসব কথা আমাদের আলেমরা কদাচিৎ মানুষকে বলেন। যারা ওয়াজের নামে মানুষের সঙ্গে রং-তামাশা করেন তাদের কারও ইসলাম সম্পর্কে সঠিক কোনো জ্ঞান নেই। কারণ এদের বেশিরভাগই কওমি মাদ্রাসার ছাত্র, যেখানে মূলত শেখানো হয় অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি ঘৃণা করতে আর কোনো রকম কারণ ছাড়া অন্যের ক্ষতি করতে। তৈরি হয় অর্ধশিক্ষিত কাঠমোল্লা।

এবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা নিয়ে যা হলো তা একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশমাত্র। সামনে আরও আসছে। এটি প্রধানমন্ত্রীকে অনুধাবন করতে হবে। যত দ্রুত তিনি তা করবেন ততই তার এবং দেশের জন্য মঙ্গল। একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ হিসেবে এ দেশের সব সনাতন ধর্মাবলম্বীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী ও নিজে লজ্জিত।

বিশ্নেষক ও গবেষক


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ