1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

দুরন্ত বাইসাইকেল রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ১০ দেশে

বাণিজ্য প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২

এক দশক ধরে দেশে প্রতি বছরই বাড়ছে বাইসাইকেলের চাহিদা। আমদানিনির্ভর এ খাতটিতে বেড়েছে উৎপাদন। স্থানীয় বাজারে দেশের মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ উৎপাদন করছে দেশীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ আরএফএল। হবিগঞ্জে আছে প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানিমুখী একটি কারখানা। সেখানে উৎপাদিত বাইসাইকেল রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের ১০ দেশে। আগামী পাঁচ বছরে দেশের ৮০ শতাংশ জোগান ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি বাড়াতে চায় আরএফএল-এর বাইসাইকেল ব্র্যান্ড ‘দুরন্ত’।

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে আরএফএল-এর দুরন্ত বাইসাইকেলের কারখানায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কারখানাটিতে উৎপাদন চলছে। পুরো কারখানায় কাজ করছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। কেউ মেশিনের সাহায্যে সাইকেলের চাকায় রিং লাগাচ্ছেন, কেউ সিট, কেউ আবার প্যাকেটিং করছেন। বাইসাইকেলের একেকটি কাজ হচ্ছে একেক জায়গায়। আবার সব কাজ শেষে প্যাকেটগুলো রাখা হচ্ছে সারিবদ্ধভাবে। কিছু বাইসাইকেল রাখা হয়েছে প্রদর্শনীর জন্য।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে দেশে বাইসাইকেলের আনুমানিক চাহিদা বছরে ২০ লাখ পিস। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে দেশের চাহিদার ৮ লাখ পিস বাইসাইকেল জোগান দেয় আরএফএল-এর দুরন্ত বাইসাইকেল। দেশে প্রায় ১৮শ কোটি টাকার এই বাজারে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৭-৮ শতাংশ। করোনায় স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও যানজটে নিরাপদ যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার বাড়ায় চাহিদা বেড়েছে আগের তুলনায় ২৫ শতাংশ।

বাংলাদেশে বেশি বাইসাইকেল উৎপাদন করে আরএফএল ও মেঘনা গ্রুপ। ২০১৪ সালে ‘দুরন্ত’ নামে বাইসাইকেল বাজারজাত শুরু করে আরএফএল। খুব অল্প সময়ে দেশের বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় বাইসাইকেল ব্র্যান্ড ‘দুরন্ত’। বর্তমানে ট্রাই, কিডস, জুনিয়র, অ্যাডাল্ট, এমটিবি, লেডিস, ট্র্যাডিশনাল ও ই-বাইক ক্যাটাগরিতে নানা ধরনের সাইকেল রয়েছে। সাধারণ দুরন্ত বাইসাইকেলের দাম ৮ থেকে ২০ হাজার টাকা হলেও ই-বাইসাইকেলের দাম ৩০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা।

কারখানা সংশ্লিষ্টরা জানান, আরএফএল-এর বাইসাইকেল উৎপাদন ও বিপণনে বর্তমানে আড়াই হাজারের বেশি জনবল কর্মরত। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি রয়েছেন নারী শ্রমিকও।

কারখানাটিতে কাজ করা নারী শ্রমিক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ৯ বছর ধরে কাজ করি, যা বেতন পাই পরিবার নিয়ে ভালোই চলতে পারি।

শারমিন আক্তার নামে আরেক শ্রমিক বলেন, কারখানাটিতে তিন বছর ধরে চাকরি করছি। কাজ করার পরিবেশটা বেশ ভালো লাগে। অধিকাংশ কাজই মেশিনে হয়। তাই কাজ করা অনেকটাই সহজ।

আরেক শ্রমিক রহম আলী বলেন, সকালে এসে কাজে লাগি। দুপুরে খাবারের বিরতি। বিকেলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কাজ ও বেতন ভালো। যে টাকা পাই ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার চলে।

বাইসাইকেলের উৎপাদন ও বিপণনের বিষয়ে দুরন্ত বাইসাইকেলের প্রধান অপারেটিং অফিসার মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কারখানাগুলোতে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই এলাকায়ও কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে অনেক নারী-পুরুষ কাজ পেয়েছেন। গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব কিছুটা হলেও ঘুচেছে।’

পরিবেশের দিকে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারখানাটি পরিবেশবান্ধব। পরিবেশের সব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা দেশীয় সাইকেলের বাজারের ৮০ শতাংশ জোগান দিতে চাই। বর্তমানে হবিগঞ্জের এই কারখানাটিতে বছরে আট লাখ ও রংপুরের গঙ্গাচড়ার কারখানায় তিন লাখ সাইকেল উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।’

বাইসাইকেল রপ্তানিতে আরএফএল

২০১৫ সালে আরএফএল বাইসাইকেলের রপ্তানি শুরু হয়। রপ্তানি শুরুর দুই বছর পরই জাতীয় রপ্তানি ট্রফিও অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮৩ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক কোটি ২০ লাখ ডলার ও ২০২০-২১ অর্থবছরে এক কোটি ৮৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে আরএফএল। রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় পরপর দুবার (২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছর) পেয়েছে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি। বর্তমানে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও বেলজিয়ামসহ ১০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ইংল্যান্ডের আরগোস, স্পোর্টসডিরেক্ট, টয়রাস্ ও ট্যানডেম, জার্মানির স্কুল এবং ডেনমার্কের এশিয়ান নরডিকের মতো প্রসিদ্ধ ব্র্যান্ডগুলোর সাইকেল তৈরি করছে আরএফএল। বাইসাইকেলের পাশাপাশি ফ্রেম, ফর্ক, টায়ার, টিউবসহ সাইকেলের কিছু কম্পোনেন্টও হচ্ছে রপ্তানি।

রপ্তানিতে সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা

চীনে এন্টিডাম্পিং শুল্ক থাকায় ইউরোপের দেশগুলোর ক্রেতারা বর্তমানে কম্বোডিয়া, বাংলাদেশ, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কা থেকে সাইকেল কিনতে আগ্রহী। তবে অবকাঠামোগত দিক থেকে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ এ খাতের রপ্তানি বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এজন্য প্রয়োজন সরকারের নীতিসহায়তা। রপ্তানিকারকদের জন্য বন্ড সুবিধার পাশাপাশি নগদ সহায়তা, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পুনরায় জিএসপি সুবিধা আদায় ও সম্ভাবনাময় দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়াতে পরিকল্পনা নেওয়া। এছাড়া এ খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি গড়ে না ওঠায় এই শিল্প প্রসারে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, রপ্তানিও বাড়ছে না। আমদানি করা কাঁচামাল সংকটের পাশাপাশি জাহাজ ভাড়াও অনেক বেশি।

এখনো ৬০ শতাংশ বাইসাইকেল আমদানি করা হয়। ফলে দেশে এ খাত বিকাশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে উৎপাদনকারীদের নানা ধরনের নীতি সহায়তার পাশাপাশি সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে আমদানির সঙ্গে জড়িতদের দেশে বাইসাইকেল শিল্প স্থাপনে উৎসাহ দেওয়ার।

আরএফএল বাইসাইকেল আমদানিনির্ভরতা কমাতে চায় জানিয়ে দুরন্ত বাইসাইকেলের প্রধান অপারেটিং অফিসার মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘দেশীয় চাহিদার ৬০ শতাংশ বাইসাইকেল এখনো আমদানি হয়। বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ পেলে দেশীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাইসাইকেল রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। করোনা সংকটে ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত দেশে সাইকেলের চাহিদা বেড়েছে। চীনের সঙ্গে সমস্যা হওয়ায় বিকল্প বাজার খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র। আমরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘আরএফএল আগামীতে ই-বাইকের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। নতুন কিছু ইলেকট্রিক বাইসাইকেল বাজারজাত করা হবে। বর্তমানে ১০টি দেশে রপ্তানি হয়। এ সংখ্যা আরও বাড়ানোর কাজ চলছে। ২০২২ সালের মধ্যে আরএফএল-এর দুরন্ত বাইসাইকেল যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির লক্ষ্যে কাজ করছে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ