1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পোশাক রপ্তানিতে ইউরোপের বাজারে চীনকে ছাড়াল বাংলাদেশ

বাণিজ্য প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০২২

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়েছে ইউরোপের দেশগুলো। মূল্যস্ফীতি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় মানুষ পোশাক কেনা কমিয়ে দিচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে পোশাক রপ্তানিতে দাপট দেখিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পোশাক আমদানি এ সময়ে এক হাজার ১৩১ কোটি বা ১১.৩১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বেশি। যেখানে তাদের বৈশ্বিক আমদানি বেড়েছে ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

আর এর মধ্য দিয়ে ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানিতে চীনকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। ইউরোপীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের সর্বশেষ পোশাক আমদানি পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে এই তথ্য। গতকাল শনিবার বিজিএমইএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাট চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে ইউরোপের পোশাক আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানির প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ ছিল। এই সময়ে (জানুয়ারি-জুন) বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের বাজারে পোশাক আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪৫ শতাংশ (৪৪ দশমিক ৬০ শতাংশ) বেড়েছে। যেখানে তাদের বৈশ্বিক আমদানি বেড়েছে ২৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এর মাধ্যমে ৬ মাসে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পোশাক আমদানি ১১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ পোশাক আমদানির উৎস চীন। আলোচ্য সময়ে চীন থেকে ইউরোপের পোশাক আমদানি ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়েছে। চীন থেকে এ সময়ে আমদানি হয় ১২ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারের পোশাকপণ্য। অপরদিকে তুরস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৃতীয় বৃহত্তম পোশাকের উৎস। আলোচ্য সময়ে তুরস্ক থেকে ইউরোপের পোশাক আমদানি ২০ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে তুরস্ক থেকে ১০ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে ইইউ। ইউরোপের অন্যান্য শীর্ষ পোশাক আমদানির উৎস যেমন- কম্বোডিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং ভারত থেকে আমদানি যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, ৪০ দশমিক ১৫ শতাংশ, ৩২ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং ২৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়েছে।

ইইউ বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা নিয়ে কথা বলেন তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল। তিনি বলেন, মূলত করোনা মহামারি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো এবং ভোক্তাদের কেনাকাটা বাড়ানোর ফলে ইউরোপের খুচরা বিক্রি স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মন্দার কারণে ২০২২ সালের বাকি সময়টিতে প্রবৃদ্ধির এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা কতটা টিকে থাকবে, তা ভাবনার বিষয়। তিনি আরো বলেন, অস্বাভাবিক দীর্ঘ গ্রীষ্মের কারণে শীতের পোশাকের চাহিদাও ইউরোপে বর্তমানে তুলনামূলকভাবে কম। বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানি চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য হারে প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছিল। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের আমদানি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পারে। তবে পরবর্তীতে অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে খুচরা বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় ক্রেতারা আপাতত সতর্ক অবস্থানে আছেন বলেও জানান মো. মহিউদ্দিন রুবেল।

অন্যদিকে আমেরিকার অফিসিয়াল ডেটা সোর্স ‘অফিস অব টেক্সটাইল এন্ড অ্যাপেরেল (ওটিইএক্সএ)’ চলতি বছরের জানুয়ারি-জুলাই সময়ের জন্য সর্বশেষ পোশাক আমদানির পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। ওটিইএক্সএর মতে, ২০২১ সালের একই সময়ের (জানুয়ারি-জুলাই) তুলনায় বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার পোশাক আমদানি ৫৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। আর পুরো বিশ্ব থেকে তাদের আমদানি বেড়েছে ৩৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। উল্লেখিত সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে ৫ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করেছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে চীন থেকে আমদানি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪০ শতাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য শীর্ষ পোশাক আমদানির উৎস চীন। আলোচিত সময়ে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্র পোশাক আমদানি করেছে ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারের। একই সময়ে ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ৩৫ দশমিক ৩০ বেড়েছে, আমদানি পৌঁছেছে ১০ দশমিক ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। অন্যান্য শীর্ষ দেশ যেমন ইন্দোনেশিয়া, ভারত, কম্বোডিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি একই সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

আট বছরে ইউরোপ-আমেরিকায় পোশাক রপ্তানি বাড়তে পারে : তৈরি পোশাক খাত থেকে চীনের হিস্যা কমতে থাকা এবং নিজস্ব স্ট্রং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হওয়ায় তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ (ইউকে সহ) ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ এই দুই বাজারে বাড়তি ৫৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করার সম্ভব বলে জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ এন্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড)। এর মধ্যে আলোচ্য সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২৪ বিলিয়ন ডলার ও ইউরোপের বাজারে ৬৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব। র‍্যাপিড বলছে, বর্তমান অবস্থায়ও ইউরোপে বাড়তি ১৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের, কিন্তু তা ধরতে পারছে না দেশ। তবে এর কার্যকারণ সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়নি র‍্যাপিড । তাছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা হারানো এবং জিও পলিটিক্যাল ইস্যুর কারণে কিছু অনিশ্চয়তা ও চ্যালেঞ্জও রয়েছে বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে, আর তৈরি পোশাকের ৮০ শতাংশের বেশি রপ্তানি হয় ইউরোপ (ইউকেসহ) ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। এর ভিত্তিতে র‍্যাপিড স্টাডিতে দেখিয়েছে, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাংলাদেশের মূল ভরসার জায়গা ঘুরেফিরে ইউএস ও ইউরোপের বাজারই। নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারে খুব বেশি পরিমাণে তা বাড়ার সম্ভাবনা নেই। সর্বশেষ অর্থবছরে নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেটে ১৬টি অঞ্চলে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রের (আইটিসি) তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারির ১০ বছর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইউকেসহ) পোশাক রপ্তানি বার্ষিক গড় ১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ৯ শতাংশ। ইউএস অ্যাপারেল ইমপোর্টের আকার বর্তমানে ৮৭ বিলিয়ন ডলার এবং ১০ বছর ধরে গড়ে তা ২.৮ শতাংশ হারে বেড়েছে। আগামী ৮ বছরে তা ৩ শতাংশ হারে বাড়লে এই বাজারের আকার হবে ১১৫ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে ইউরোপের পোশাক আমদানির পরিমাণ (ইন্ট্রা ইউরোপিয়ান কান্ট্রিসহ) ২০০ বিলিয়ন ডলার। গত ১০ বছরে এটি গড়ে ২.৮২ শতাংশ হারে বেড়েছে। আগামী ৮ বছরে ৩ শতাংশ হারে বাড়লে এর আকার হবে ২৬০ বিলিয়ন ডলার, যেখানে বাংলাদেশের শেয়ার হতে পারে ৬৫ বিলিয়ন ডলার।

সম্প্রতি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) ২০৩০ সাল নাগাদ পোশাক রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলার করার একটি লক্ষ্য ঠিক করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কী ধরনের রোডম্যাপ হবে, তা নির্ধারণে কাজ করছে সংগঠনটি। চলতি বছরের শেষ নাগাদ সংগঠনটি এ রোডম্যাপ প্রকাশ করতে পারে। বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, আমরা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ২০৩০ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রার বিষয়টি সামনে এনেছি এবং এটি সম্ভব। এ জন্য ম্যান মেইড ফাইবারের এক্সপোর্ট বাড়াতে সরকারের পলিসি সাপোর্ট, ইজ অব ডুয়িং বিজনেস, অবকাঠামোসহ উন্নয়নে গুরুত্ব দেন তিনি। অবশ্য ২০৩০ সালেই বাংলাদেশ ১০০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করতে পারবে কিনা, বর্তমান বাস্তবতায় তা নিয়ে সংশয় রয়েছে কিছু উদ্যোক্তার।

চীনের ছেড়ে দেয়া বাজারের বড় অংশই পাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম : গত এক দশকের বেশি সময়ের পোশাকের আমদানি রপ্তানির পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, বড় দুই পোশাকের বাজারে চীনের শেয়ার কমতির দিকে, যার বড় অংশই পেয়েছে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। ২০১০ সালে ইউরোপে পোশাকের বাজারে চীনের অংশ ছিল ৪৫ শতাংশ, যা ২০২১ সালে ৩০ শতাংশে নেমেছে। একই সময়ে আলোচ্য বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ভিয়েতনামের বেড়েছে সামান্য। অন্যদিকে ১০ বছরের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের অংশ ৪০ শতাংশ থেকে অর্ধেকে নেমেছে, যার বেশিরভাগই গেছে ভিয়েতনামের কাছে।
এই সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়লেও ভিয়েতনামের তুলনায় কম হারে বেড়েছে।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ