1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

নারীদের এই জয় শুধু জয় নয়, বরং জবাব

রাশেদুজ্জামান রাশেদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২

লজ্জা-শরম নাই। মেয়ে মানুষ হ্যাফ প্যান্ট পরে ফুটবল খেলে, ক্রিকেট বল হাতে দৌঁড়াদৌড়ি করে, নারী হয়ে পুরুষদের মুখের উপর তর্ক করে, রাস্তায় বাইক নিয়ে রাতে অন্ধকারে একাই ঘুরে। মাথায় হিজাব ছাড়া রাস্তা-ঘাটে ঘুরে, পর পুরুষের সাথে বসে আড্ডা মারে, রাত দশটায় ক্যাম্পাস থেকে হলে ফিরে, এরকম আরও কি উদাহরণ আর খোটা মেরে বলে ছিঃ! ছিঃ নাউজুবিল্লাহ। দেশে আর দেশ নেই এযেন রসাতলে চলে গেছে।

এমন কথা গুলো গ্রামে কত শত মুরব্বিদের কাছে শুনেছি তার নেই কোনো শেষ। অপর দিকে শুনা যায় সভ্য সমাজে বাস করি। হঠাৎ কেউ অসভ্য সমাজ বলে ফেললে আমরা রেগে ক্ষেপে উঠি। চট করে বলে উঠি আমাদের সমাজ আধুনিকতার ছোঁয়ায় সর্বোচ্চ শিকড়ে পৌঁছে গেছে। বিশ্ব আমাদের হাতের মুঠোয়।

ফলে তাদের ভাবখানা এমন পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের যেকোনো কাজ করতে কোনো বাধাবিপত্তি নেই। বিশ্বজুড়ে পুরুষদের পাদচারণ। পথে ঘাটে কেউ পরুষদের আচার-আচরণ নিয়ে কেউ টুশব্দ করার সাহস পায় না। কেউ প্রশ্ন তোলে না পুরুষ কেন রাতের অন্ধকারে একা একা হাটেন। বিশ্ব খেলাধুলায় তারা কেন খেলেন? কেউ আঙুল তুলে কথা বলতে পারেন না। গবেষক থেকে শুরু করে সিনেমার ছায়াছবি আর কলে – কারখানা সহ যেখানেই পুরুষ কাজ করুক না কেন তাকে নিয়ে বির্তক তুলে না।

আমাদের সমাজের পুরুষের মস্তিষ্কের মধ্যে গেঁথে গেছে পুরুষ মানেই সমাজের সকল কাজে আধিপত্য থাকে। সমাজের সর্বসর্বা হলো পুরুষ। আর অপরদিকে পুরুষ শাসিত সমাজে নারী হলেন তার ঘরের বস্তু। নারীদের দ্বারায় শুধু রান্নার কাজ আর সন্তান লালন পালন করা ছাড়া অন্য কিছু করা সম্ভব নয়। এমন চিন্তায় বিস্তার ঘটাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এক বিশেষ মৌলবাদী গোষ্ঠী। যে গোষ্ঠীর দ্বারায় আমাদের কোমলমতি মাদ্রাসার শিশুরা বলাৎকারের শিকার হয় দিনের পর দিন। এ যেন এক অলিখিত বলাৎকারের মিছিল চলছে একাত্তরের বাংলায়।

মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় মৌলবাদের যে ঠাঁই নাই তার একটি আরও উজ্জ্বল নক্ষত্র হচ্ছে নারী শক্তির বর্হিপ্রকাশ। যে শক্তি ঐ পুরুষ শাসিত সমাজের নিয়ম ভাঙতে অগ্রণী ভুমিকা পালন করবে। নতুন প্রজন্মের নারীরা বুঝতে পারবে তাদের জীবনে মৌলবাদী গোষ্ঠী কতটা ভয়ানক। ফলে বলতে ইচ্ছে করে “অন্ধ সমাজের দ্বন্দ্ব ঠেকাতে,আসছে তারা ট্রফি হাতে নিয়ে। বেঁধে দেওয়া শিকল টারে, ছিন্ন করে আসছে তারা । বাংলার বাঘানীর বেশে।

বুকে আছে প্রতিবাদের আগুন। ইচ্ছে করে বলতে তারে! নারী জন্ম কি পুরুষের সেবাদাসী হয়ে? নারী জন্ম নিয়েছে কি শুধু সন্তান জন্ম দেওয়া বস্তু হিসাবে? মেয়ে হয়ে জন্ম হয়েছে বলে ঘরের কোণে দাসত্ব করে থাকবে। সময় এসেছে সমাজের দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে দেওয়া।

সময় এসেছে যারা নারীর পা পেছন থেকে কামড়ে ধরে আছে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা। কারণ নারীরা তার চিন্তার স্বাধীনতা চায়। তাদের চলার ও বলার নিজস্ব ছন্দ থাকতে চায়। নারীর সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ পুরুষের কাছে আর রাখতে চায় না। নারী শিরদাড়া সোজা করে দাঁড়াতে শেখেছে। তারা এখন জড়তাহীন ভাবে হাটতে চায়। অন্যায়ের বিপক্ষে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে দ্বিধাবোধ করে না। নারী শক্তিকে অবজ্ঞা করা পুরুষ শাসিত সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে নারীরাও পারে জয়ের কাপ ঘরে তুলতে।

তবে সেকেলে ভাবনায় স্থির থাকতে চায় পুরুষ শাসিত সমাজ। তারা এখনও নারীদের স্বাধীনতা দিতে প্রস্তুত নয়। ধর্মের নামে বড় হাতিয়ার ব্যবহার করে তারা নারীদের চারদেয়ালে বন্দী করে রাখতে চায়। মৌলবাদী গোষ্ঠী প্রশ্ন তোলে নারীরা শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা, বাণিজ্য ও খেলাধুলায় কেন আসবে? মেয়েরা কী পোশাক পরবে তা সিদ্ধান্ত পুরুষের? নারীরা কেন জিন্স পরল, কেন কপালে টিপ ‍দিল এমন চিন্তায় যেন ঘুম হয় না পুরুষদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও পোশাক সংক্রান্ত জ্ঞান দিতে চলে আসছে ধূর্ত ধর্মব্যবসায়ীরা। মেয়েরা গান করলে সমস্যা, নাচ করলে সমস্যা। মোটরসাইকেল চালাতে দেখলে তাদের গা জ্বলে উঠে।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’। তাঁর কবিতার চরণ যেন আজও প্রতিফলিত সম্প্রতি সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়শিপে নতুন ইতিহাস গড়েছে লাল সবুজের বাংলাদেশ। নেপালকে ৩-১ গোলে ধসিয়ে দিয়ে সাফ নারী ফুটবলে চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরেছে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সাবিনা, শিউলি, আঁখি, সানজিদা, কৃষ্ণা, রিতু চাকমা, মনিকা, মারিয়া, সামসুন নাহাররা অসাধারণ ফুটবল শৈলীতে বিজয় ছিনিয়ে এনে নারী শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছে।যেখানে ভারত, নেপালের মত শক্তিশালী দলকে হারিয়ে অগ্রগামীর তালিকায় শুধু বাংলাদেশ নাম ইতিহাস রচনা তৈরী করছে।নিজ দেশ বাংলাদেশকে আরও একবার পরিচয় করে দিলেন ফুটবলে নারীরা পিছিয়ে নেই। শিরোপা জয়ের মধ্যে দিয়ে দেশবাসীকে এক কাতারে রেখে আনন্দিত ও উল্লসিত করেছে। স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন আসে যদি ওই মৌলবাদী গোষ্ঠীর কথায় নারীরা ঘরে বসে থাকতো তাহলে কি শিরোপা জয়ের আনন্দ দেশকে উপহার দিতে পারত? প্রশ্নের উত্তর ঠিক তাদের কাছে থাকবে যারা কথায় কথায় বলেছে নারী ফুটবলারদের অর্জনকে পুঁজি করে কিছু মহল নাকি ইসলাম বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে।

খুব উদ্বিগ্নের সাথে বলতে হয় স্বাধীনতার ৫১ বছরের বাংলাদেশে নারীদের কোনো নিরাপদ নেই। ঘরে বাইরে নারী নির্যাতনের মিছিল বন্ধ করা যাচ্ছে না। নারীকে পণ্যের সাথে তুলনা করে নারী বিদ্বেষী বক্তব্য হরহামেশাই বলে যাচ্ছে এক শ্রেণির মৌলবাদী গোষ্ঠী। তবে মজার বিষয় নারী ফুটবলারদের অর্জন নিয়ে ওই মৌলবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কথা বলা তো কোনো ইসলাম বিদ্বেষ নয়। ‘ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ’ নামে ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠন গত কয়েক বছর আগে নারী ফুটবল খেলা বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন।

তারা নারী ফুটবলাদের নিয়ে ছড়িয়েছিল অনেক প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষ। ফলে যারা নারী অধিকার অর্জন ও সংকট নিয়ে কথা বলে তাদেরকে ইসলাম বিদ্বেষী মানুষ বানিয়ে সাধারণ জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে রাজনীতি করছে। অসহিষ্ণুতা, হিংসা ও বিদ্বেষ এর প্রচার করে যাচ্ছেন। মেয়ে হাফ প্যান্ট পরে ফুটবল খেলতে পারবে না। ফুটবল খেললে মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে না। আরও কত কী! কারা বলেছে? বলেছেন যারা ধর্মের নামে রাজনীতি করে।

সমাজে মৌলবাদী গোষ্ঠীর কামড়ে ধরা নারীর পায়ে ২৩ গোল শুধু জয় নয় জবাব দিয়েছেন বলেই নারী ফুটবলারদের অর্জনকে বিশ্লেষণ করা হয়। নারীরা দেশকে জয়ের মুকুট দিয়েছে কিন্তু এই জয়ের নেপথ্য আছে অনেক ইতিহাস ও সংগ্রামের কথা। ফুটবলারা অন্ধকার থেকে উঠে এসেছে আলোর মঞ্চে। তারা এসেছে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম থেকে। কারও বাবা কৃষক, কারও বাবা দিনমজুর। এর মধ্যে আছে সমাজের বেঁধে দেওয়া ধর্মীয় কূপমন্ডুকতা। লাঞ্ছনা গঞ্জনার শিকার হতে হয়েছে তাদের। মেয়েরা দর্শক ভর্তি গ্যালারিতে ফুটবল খেলবে তা মেনে নেওয়া যায় না।

এমন চিন্তায় স্থির মৌলবাদী গোষ্ঠী। তারা ধর্মান্ধতার বুলি আওরিয়ে সাধারণ মানুষের মন নিয়ে নানা খেলা খেলে নিজেদের ফায়দা লুটতে। এমন কি ধর্মান্ধ ও কুসংস্কারের কথা তুলে নারী নেতৃত্বকে সামনের পথে এগিয়ে দিতে চায় না। সমাজে যত ভাবে নারীকে ছোট করা সম্ভব তারা তা করেছে। টিপ্পনী কেটেছে কত! সকল বেড়াজাল ছিন্ন করে দেখিয়ে দিয়েছে কেমন করে জাতীয় মর্যাদা বয়ে আনতে হয়। ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী কিছু শিখুক বা না শিখুক তবে অপরাজিতা অগ্নিকন্যারা বাংলাদেশকে ভালোবেসে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভবিষৎতে আরও অনেক দূর পথ এগিয়ে যাবে এই শুভ কামনা থাকবে। তবে পাশাপাশি আমাদের দেশে সাংস্কৃতিক সংকট চলছে তা দূর করতে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ঘটাতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে প্রতিরোধ টিম গঠন করতে হবে।

লেখক : রাশেদুজ্জামান রাশেদ – প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ