গণফোরামের একাংশের সভাপতি, প্রখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেন ও তার মেয়ে কর ফাঁকির মামলা নিয়ে নতুন করে হোঁচট খেতে যাচ্ছেন। সম্প্রতি তাদের বিদেশে আইনি সেবার আয় নিয়ে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে দেখা যায়, বিদেশে কাজ করে পাওয়া এই আয় দেখানো হয়নি তার আয়কর রিটার্ন প্রতিবেদনে বা হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে।
ড. কামালের ২০১৯ সালে লাভ করা আন্তর্জাতিক সালিশ বিষয়ক অ্যাওয়ার্ডের তথ্য থেকে এই অপ্রকাশিত আয়ের বিষয়টি সামনে আসে।
ঢাকা কর অঞ্চল-৮ এর একজন করদাতা ড. কামাল হোসেন। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে প্রখ্যাত এ আইনজীবীর আয়ের অঙ্ক দাঁড়ায় ২০ কোটি ১১ লাখ টাকায়। অথচ নিজের আয়কর রিটার্নে সম্পদের পরিমাণ ১৯ কোটিই কম দেখিয়ে মাত্র ১ কোটি ৪ লাখ ৩ হাজার ৪৯৫ টাকা আয়কর রিটার্ন হিসেবে দাখিল করেন। সম্পদের তুলনায় আয়কর বিবরণীর এত বিশাল ফারাক রাজস্ব আদায়কারী সংস্থা এনবিআরের কাছে প্রশ্নের জন্ম দেয়।
এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী ড. কামাল হোসেনের সম্পদ ও আয়ের বিপরীতে অন্ততপক্ষে করের পরিমাণ হওয়ার কথা ৬ কোটি ৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে আগের অপরিশোধিত করের জন্য বিলম্ব মাশুলসহ আরও ৮৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন করবর্ষে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় দুইটি, সিটি সেন্টারে দুইটি; যার একটি ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট এবং আইএফআইসি ব্যাংকের একটিসহ মোট পাঁচটি অ্যাকাউন্টে জমা টাকার ওপর কর পরিশোধ করলেও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় ড. কামাল হোসেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস নামে থাকা অ্যাকাউন্টটির কথা আয়কর বিবরণীতেই গোপন করেছেন। অথচ অ্যাকাউন্টটিতে ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জমা হয়েছে ৫৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। শুধুমাত্র ২০১৭ সালে এক বছরে জমা হয়েছে ১১ কোটি ১২ লাখ টাকা। ‘ল ফার্মে’ ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ড. কামাল এবং ২০ শতাংশ তার মেয়ের।
এমন অবস্থায় এনবিআরের পক্ষ থেকে ড. কামাল হোসেনকে আয়কর পরিশোধের জন্য চিঠি দেয়া হয়। রাজস্ব বোর্ডের ডেপুটি কমিশনারও আদেশ দেন কর পরিশোধের। তবে আয়করের টাকা না দিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উল্টো সংশ্লিষ্ট যুগ্ম কমিশনারের কাছে আপিল করেন ড. কামাল হোসেন।
২০২০ সালের ২৫ জুন খারিজ হয়ে যায় ড. কামাল হোসেনের আপিল। জানানো হয়, আয়কর পরিশোধ করতেই হবে তাকে। কিন্তু এবারও নারাজ ড. কামাল। কর আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করলেন যুগ্ম কমিশনারের আদেশের বিরুদ্ধে। সবশেষ ট্রাইব্যুনালও ড. কামালকে কর পরিশোধ করতে হবে বলে সাফ জানায়। এরপরই কর পরিশোধের বদলে, ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধেই হাইকোর্টে রিট করেন জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী।
এর আগে ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির অভিযোগ আমলে নিয়ে তা খতিয়ে দেখতে এনবিআরকে চিঠি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন।
চিঠিতে দুদক জানায়, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ড. কামালের একাউন্টের অর্থ আয়কর নথিতে দেখাননি ড. কামাল। গত ৯ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকর্মীদের বিষয়টি জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।
গত ২১ জুন ফাঁকি দেয়া করের মধ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ৮৩ লাখ টাকা জমা দিতে বাধ্য হন ড. কামাল। তার আয়কর ফাঁকি দেয়ার মামলাটি বর্তমানে হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায়। এরইমধ্যে কর গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে সিনিয়র এই আইনজীবীর ২ লাখ ১৬ হাজার ৭১৮ মার্কিন ডলারের নতুন তথ্য। যা কিনা তার আয়কর রিটার্ন বা হাইকোর্ট নথিতে উল্লেখ নেই। অথচ ইউনাইটেড রিপাবলিক অব তানজানিয়া ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক হংকংয়রে মধ্যকার সালিশ নিষ্পত্তিতে বিপুল এই অর্থ আয় করেছেন ড. কামাল হোসেন।
এর আগে সরকারের কাছ থেকে লিজ নেয়া প্লটের ওপর নির্মিত বাড়ি শর্ত ভেঙে ভাড়া দেন তার দুই মেয়ে। যা তদন্ত করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।