কাজের সূত্রে বাংলাদেশে এসেছেন রাশিয়ার তরুণী অলগা টকচকিয়া। পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে চাকরি করছেন তিনি। কাজের ফাঁকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। তবে গত কয়েক দিনে তার কিছু ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ছবির গল্প বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ভাইরাল হওয়া শাপলা বিলের এই ছবিগুলো ২ অক্টোবর তুলি। অলগার সঙ্গে আমার জানুয়ারি মাসে ইনস্টাগ্রামে পরিচয় হয়। উনি নিজেই আমার অন্যান্য ছবি দেখে নক দেন। এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় উনার ছবি তুলেছি।’
অলগার ছবির মাধ্যমে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে ইতিবাচকভাবে প্রচারিত হচ্ছে জানিয়ে অনির্বাণ বলেন, ‘আমার ছবিগুলো দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সাইটে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যা আমাকে আনন্দিত করেছে। আমি চাই, আমার মাধ্যমে আমার দেশ পরিচিত হোক।’
বাংলাদেশের প্রেমে পড়া অলগা নিজের পরিচয় দেন ‘অলগেশ ইন বাংলাদেশ’ নামে। কাছের মানুষও তাকে এই নামে ডাকেন। অল্প অল্প বাংলাও বলতে পারেন তিনি।
বাংলাদেশকে একটি সুন্দর এবং অতিথিপরায়ণ দেশ উল্লেখ করে অলগা বলেন, ‘২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে আসার আগেই আমি ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ছিলাম। তাই প্রথম থেকেই মানিয়ে নিতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। তবে রাস্তার বিভিন্ন চিহ্ন না বোঝায় চলতে সমস্যা হতো। সেগুলোও রপ্ত করেছি। কথা বলা শিখতে অনেক বেশি সময় লেগেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে অনেক পছন্দ করি। পাবনায় যেখানে থাকি, সেটি কোনো বড় শহর নয়। এটি আমার জন্য ভালোই হয়েছে।
এখানে আমি এমন অনেক কিছু অনুভব করেছি, যা আমি অন্য কোথাও অনুভব করিনি। আমি গ্রামীণ জীবন দেখছি এবং প্রকৃতির কাছাকাছি এসেছি।’
অলগার কাছে বাংলাদেশের যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে, সেটি হলো নদী ও জলাশয়। তার মতে, বাংলাদেশের মাটির চেয়ে পানিই বোধ হয় বেশি!
অলগার প্রিয় কাজের একটি হলো নৌকায় চড়া। যেখানেই গেছেন এই অভিজ্ঞতা নেয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।
অলগা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের যে জায়গাগুলোতে গেছি, সেগুলো ঠিকমতো গুনিনি। তবে ২০ থেকে ২৫টি জেলায় ঘুরেছি। আমি এখনও রংপুর এবং ময়মনসিংহে যাইনি। তবে রাজশাহী এবং ঢাকার জেলাগুলোতে অনেক ঘুরেছি। এই দেশে আমার প্রিয় জায়গা পার্বত্য চট্টগ্রাম। তবে সেখানে বিদেশিদের ভ্রমণ আরও সহজ হলে ভালো হতো।’
ভাইরাল হওয়া ছবি ও মানুষের ইতিবাচক কমেন্টের বিষয়ে অলগা বলেন, ‘অনির্বাণ আরও তিনবার আমার ছবি তুলেছে। একই ছবি আমি যখন ফেসবুকে পোস্ট করি, তেমন রিচ হয় না। তবে অনির্বাণ ফেসবুকে দিতেই ভাইরাল হয়ে গেল। তাই ক্রেডিট অনির্বাণের। সে বাংলাদেশের একজন মেধাবী ফটোগ্রাফার।’
বাংলাদেশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমার এখন সুন্দর জীবন ও স্থিতিশীল চাকরি আছে। প্রতিটি কোণে আমার জন্য অ্যাডভেঞ্চার অপেক্ষা করছে। আমি সত্যিই এই দেশটিকে পছন্দ করি। এখানে দীর্ঘ সময় থাকলে ভালো লাগত, তবে কিছু ব্যক্তিগত পরিস্থিতির কারণে আমি শিগগিরই চলে যাব। আমি নিশ্চিত যে, এটি এই সুন্দর দেশের সঙ্গে আমার সংযোগ ছিন্ন করবে না।’
বাংলা ভাষা নিয়ে অলগা বলেন, ‘আমি কাজ চালানোর মতো বাংলা বলতে পারি। ভাষার ওপর জাতীয় পরিচয় নির্ভরশীল এমন দেশে বাস করাটা আমার জন্য বিশেষ ঘটনা। মানুষ যেভাবে তাদের মাতৃভাষাকে সম্মান করে, এটি আমি বেশ উপভোগ করি। এটি আমার নিজের মাতৃভাষা নিয়েও ভাবতে শিখিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলা বলার সময় আমি খুব সতর্ক থাকি, যাতে আমার কথায় কেউ কষ্ট না পায়।’
সুযোগ হলে অলগা বাংলাদেশের পর্যটন খাতে কাজ করতে চান। সেটি সম্ভব না হলেও বছর দশেক পরে বাংলাদেশের অগ্রগতি দেখতে ফিরতে চান তিনি।
অলগা জানালেন, বাবা-মার একমাত্র সন্তান তিনি। তারা সব সময়ই দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে অলগার আগ্রহকে উৎসাহ জুগিয়েছেন। যদিও অলগার বাবা-মার কেউই এখনও বাংলাদেশে আসেননি।
অলগা জানালেন, বাংলাদেশে এসে জীবনের সবচেয়ে সুন্দর উপহারটি খুঁজে পেয়েছেন তিনি। এখানে এসেই দেখা পেয়েছেন নিজের মনের মানুষের। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার সঙ্গে ঘর বাঁধতে যাচ্ছেন অলগা।