1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

৭ নভেম্বর : কলঙ্কিত দিনের কুশীলবদের বিচার হোক

মাহজাবীন খালেদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২১

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর; প্রতি বছর এই দিনটি পালিত হয় বিভিন্নভাবে। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন মতামত আসে বিভিন্ন যুক্তি থেকে। এর কারণ ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়েছিল এবং তার থেকে আমরা এখনও মুক্ত হতে পারিনি।

যারা এই কলঙ্ক থেকে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তারা এই দিনকে ‘বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস বলতে চায়। এই দিনে যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছে- সে বিষয়টি মানুষকে ভুলিয়ে রাখার অপচেষ্টা তাদের চলমান।

বাংলাদেশে দুটি বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জাসদ ৭ নভেম্বরকে পালন করে তাদের বিপ্লবের বীরত্ব জাহির করে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- আসলেই কি আপনারা এই দিনকে সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান বা জাতির বিপ্লব ও সংহতি বলে চালিয়ে যাবেন? বাংলাদেশের মানুষ তো জানে, এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে কত নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে বিশ্বাসঘাতক খুনি মোশতাক চক্র। মোশতাক রাষ্ট্রপতি হলেও দেশ পরিচালনার মূল দায়িত্ব পালন করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী ফারুক-রশিদ-ডালিম-নূর চক্র। তারা বঙ্গভবনে বসে উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের ওপর খবরদারি করতে থাকে। আর্মির মধ্যে চেইন অব কমান্ড পুরোপুরি ভেঙে যায়। কর্নেল শাফায়াত জামিলসহ অনেক আর্মি অফিসার তৎকালীন চিফ অব আর্মি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা কেউই তার থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। তারা বুঝতে পারেন, জিয়া এ ব্যাপারে তাদের সমর্থন দেবেন না। কারণ মোশতাক চক্রেরই অংশ জিয়া।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের উৎখাত করার জন্য ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ প্রথম একটি কার্যকর পদক্ষেপ নেন ১৯৭৫ সালের ২ নভেম্বর রাতে। প্রথমেই তিনি জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করেন। এই অভ্যুত্থানে খালেদ মোশাররফের সঙ্গে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসাররাও যুক্ত হন। খালেদ মোশাররফ জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করেছিলেন। কিন্তু বাসার ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেও তার বেডরুমের ফোন সচল ছিল। সেই ফোন থেকে তিনি কর্নেল তাহেরকে বলেছিলেন- ‘সেভ মাই লাইফ’। জিয়ার ডাকে বিপ্লবের আরেকটি সুযোগ মনে করে তাহের তার সৈনিক সংস্থা নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন। তাদের এই বিপ্লব ছিল হঠকারিতা এবং মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের রক্তের বিনিময়ে তাদের এই বিপ্লব। ৭ নভেম্বর রাত ১২টার দিকে শ্রেণিহীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভিলাষ বাস্তবায়নে পুরো ক্যান্টনমেন্ট উত্তেজিত করে তোলা হয় খালেদ মোশাররফের বিরুদ্ধে। সুপরিকল্পিতভাবে খালেদকে ভারতের চর, দেশ বিক্রি করে দেওয়া দালাল হিসেবে প্রচার করে লিফলেট বিলিয়ে প্রত্যেক সৈনিকের মাথায় ঢুকিয়ে দেয় এক স্লোগান- ‘সিপাহি সিপাহি ভাই ভাই/ অফিসারদের রক্ত চাই।’

তথাকথিত সিপাহি বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী সৈনিকরা যখন বঙ্গভবনের ফটকে এসে সিপাহি সিপাহি ভাই ভাই/ অফিসারদের রক্ত চাই স্লোগান দিচ্ছিল, তখন পাহারারত বেঙ্গলের সৈনিকরাও বিপ্লবী সৈনিকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বঙ্গভবনকে সম্পূর্ণভাবে অরক্ষিত রেখেই অন্যান্য সৈনিকের সঙ্গে স্লোগান দিতে দিতে চলে যায়। ফলে বঙ্গভবনের অভ্যন্তরে সভায় ব্যস্ত ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ও অন্য অফিসাররা হঠাৎ সম্পূর্ণ অনিরাপদ হয়ে পড়েন।

জাসদ নেতা কর্নেল (অব.) আবু তাহের তার বিপ্লবী সংস্থার মাধ্যমে খালেদ মোশাররফকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করার উদ্যোগ নেন। তাই মোশাররফের অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর ১৫ আগস্ট ব্যবহূত ট্যাঙ্কগুলো সেনানিবাসে ফিরিয়ে আনা হলেও বেঙ্গল ল্যান্স আর টু ফিল্ড আর্টিলারি ফারুক-রশিদ-মোশতাক চক্রকে সমর্থনকারী এই দুই সেনা ইউনিট সদস্যদের ঢাকার রাজপথে দেখা যায়। এর মধ্যে বন্দিদশা থেকে জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করে নিয়ে যাওয়া হয় টু ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টে। সেদিন জিয়াকে মুক্ত করার ব্যাপারে সামরিক বাহিনীতে থাকা জাসদের গণবাহিনীর গোপন সংগঠন সৈনিক সংস্থার সদস্যরাও সক্রিয় হয়। মুক্ত হয়েই জিয়া তাহেরকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন- ‘বন্ধু, তোমার এই উপকার আমি কোনোদিন ভুলব না।’

খালেদ মোশাররফের কাছে যখন জাসদ ও সৈনিক সংস্থার কর্মকাণ্ডের কথা পৌঁছায় তখন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল না। পরিস্থিতির অবনতির সংবাদ শুনে দশম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক কর্নেল নওয়াজিশের আশ্বাসে ইঙ্গিত পেয়ে খালেদ মোশাররফ বীরউত্তম, কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীরবিক্রম ও কর্নেল এটিএম হায়দার বীরবিক্রম সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করেন। কর্নেল নওয়াজিশ খালেদের আগমনের খবর তৎক্ষণিক টেলিফোনে সদ্যমুক্ত জিয়াউর রহমানকে জানান। ভোর বেলা সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয় এক দল উচ্ছৃঙ্খল সৈনিক। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় দশম বেঙ্গলের সৈনিক। এই উচ্ছৃঙ্খল সৈনিকদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মেজর আসাদ ও জলিল। এই দুই মেজরের গুলিতেই জেনারেল খালেদ, কর্নেল হুদা ও কর্নেল হায়দার নিহত হন।

২ নম্বর সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সাহসী নেতৃত্ব প্রদান ও নিখুঁত সামরিক পরিকল্পনা গ্রহণে দক্ষতা দেখান। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে অক্টোবর মাসে সম্মুখযুদ্ধে খালেদ মোশাররফ আহত হন। চিকিৎসা শেষে ফিরে আসেন এবং স্বাধীন দেশের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতার জন্য বীরউত্তম খেতাব দেওয়া হয় তাকে।

আজকের এই দিনে আমরা স্মরণ করি খালেদ মোশাররফকে। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের কাছে সবিনয় আবেদন করছি, ‘৭৫-এ আমার বাবাসহ সব মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ও তাদের পরিবারের হত্যার তদন্ত ও বিচার করা হোক। জিয়াউর রহমানের নির্দেশে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। যারা এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের ব্যাপারেও তদন্ত হওয়া দরকার।

বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে জাতিকে কলঙ্ক ও অভিঘাত থেকে মুক্ত করাই আজ আমাদের দাবি। আশা করি, ৭ নভেম্বরের ঘটনা তদন্ত করে তা প্রকাশ করা হবে জাতির সামনে। ৭ নভেম্বরকে কলঙ্কিত দিন হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা ও সৈনিক হত্যা দিবস ঘোষণা করা হোক রাষ্ট্রীয়ভাবে।

লেখক:- মাহজাবীন খালেদ, সংসদ সদস্য; ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের কন্যা


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ