1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পাম জুমেইরাহ: ২০ বছরে দুবাইয়ের বিখ্যাত মানবনির্মিত দ্বীপ

ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ৯ নভেম্বর, ২০২১

দ্বীপ থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল দূরে পারস্য উপসাগরের তলদেশ থেকে ১২০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার বালু তুলে আনা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উত্তরে অবস্থিত হাজার পাহাড় থেকে আনা হয় ৭ মিলিয়ন টন পাথর।

৫২ তলা ভবনের সমান উচ্চতায় দাঁড়িয়ে নিচের একটি দ্বীপের দিকে ইশারা করলেন আলি মনসুর; জানালেন দুই দশক আগে এই দ্বীপ নির্মাণ করতে কি অমানুষিক পরিশ্রম করেছিলেন তিনি। পাঠক নিশ্চয়ই ভাবছেন, মানুষ কি করে একটা আস্ত দ্বীপ নির্মাণ করবে? দ্বীপ তো প্রাকৃতিক সৃষ্টি! কিন্তু না, দুবাইয়ে এই অসম্ভব কর্মটিকেই সম্ভব করে তোলা হয়েছে। আলি মানসুরের ভাষ্যে, এমন অভিজ্ঞতা এক জীবনে একবারই হয় এবং এটি ছিল তার জন্যে বিরাট চ্যালেঞ্জ।

বলা হচ্ছে দুবাইয়ের বিখ্যাত পাম জুমেইরাহ দ্বীপের কথা। পাম গাছের আকৃতির এই দ্বীপের পুরোটাই মানুষের হাতে নির্মিত। প্রাচীন সমুদ্রসৈকত, বিলাসবহুল হোটেল এবং ৮০,০০০ মানুষ নিয়ে এই দ্বীপ। মানসুরই জানালেন, এ ধরনের দ্বীপ নির্মাণ প্রকল্প এটিই প্রথম।

১৯৯৮ সালে একটি কনসালটেন্সি ফার্মে কাজ করার উদ্দেশ্যে কানাডা থেকে দুবাইয়ে চলে আসেন আলি মানসুর। পেশায় তিনি একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ২০০১ সালের জুনে যখন পাম জুমেইরাহ প্রকল্পের কাজ আরম্ভ হয়, তখন দূর থেকে দেখেছিলেন তিনি।

“২০০২ সালে যখন প্রথম স্যাটেলাইট ছবি্তে দেখা গেল সমুদ্রের বুকে জেগে উঠছে এক টুকরো দ্বীপ, তখন আমি খুব কৌতূহলী হয়ে উঠলাম। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম যে এই প্রকল্প নিয়ে যারা কাজ করছে, সেই কোম্পানিতে আমি যোগ দিবোই এবং এর জন্য যা যা দরকার আমি করবো”, বলেন মানসুর।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক বছর পরেই পাম দ্বীপের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘নাখিল’-এ যোগ দেন মানসুর। আজ তিনি প্রতিষ্ঠানটির একজন উপদেষ্টা এবং নাখিল মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রকল্প পরিচালক।

সবচেয়ে দারুণ খবর হলো, প্রকৌশল বিদ্যার অভূতপূর্ব নিদর্শন এই পাম জুমেইরাহ দ্বীপ ২০২১ সালেই তার ২০ বছর পূর্ণ করেছে।

যেভাবে নির্মাণ হলো দ্বীপ

কোনো স্টিল বা কংক্রিট নয়, পাম জুমেইরাহ দ্বীপের ভিত্তি নির্মিত হয়েছে শুধুমাত্র বালু ও পাথর দিয়ে। দুবাই চারদিকেই মরুভূমি দিয়ে ঘেরা থাকলেও, দেশের এই অফুরান সম্পদের উপর ভরসা করতে পারেননি নির্মাতারা। তার কারণ, মরুভূমির বালু পানিতে ভিজলেই তরলিত হয়ে যায়।

দ্বীপ থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল দূরে পারস্য উপসাগরের তলদেশ থেকে ১২০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার বালু তুলে আনা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উত্তরে অবস্থিত হাজার পাহাড় থেকে আনা হয় ৭ মিলিয়ন টন পাথর।

সমুদ্রের বড় ঢেউ ও ঝড়ো বাতাস থেকে দ্বীপকে রক্ষা করতে ১১ কিলোমিটার লম্বা অর্ধচন্দ্রাকৃতি বাঁধ নির্মাণ করা হয় এই পাথরগুলো দিয়ে। নাখিল কোম্পানির দাবি, দ্বীপটি নির্মাণে যে পরিমাণ বালু ও পাথর ব্যবহার করা হয়েছে, তা দিয়ে পুরো পৃথিবীকে তিনবার ঘিরে ফেলার মতো দুই মিটার লম্বা দেয়াল তৈরি করা যাবে!

৫৬০ হেক্টর (১৩৮০ একর) আয়তনের পাম জুমেইরাহ দ্বীপ এতটাই বিশাল যে পাতা আকৃতির এই দ্বীপটি নির্মাণ করতে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হয়েছে মানসুর ও তার সহকর্মীদের।

আলি মানসুর যে শুধুমাত্র একজন ইঞ্জিনিয়ার তা নয়, তিনি একজন পাকা ডুবুরিও বটে! পাঁচ সহকর্মীকে সাথে নিয়ে তিনি নিজে পানির নিচে বাঁধের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করেছেন। সমান্তরালভাবে বিভিন্ন লেভেলে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন তারা। এই কাজটি সম্পন্ন করতে ১০ সপ্তাহ সময় লেগেছে মানসুর ও তার টিমের।

মানসুর বলেন, “যদিও আমাদের অনেক সফটওয়্যার আছে। কিন্ত আমি মানুষটা একটু ওল্ড স্কুল, তাই স্বচক্ষে দেখা আমার জন্য খুব দরকারি ছিল।”

নতুন মাত্রা যোগ!

দ্বীপ তো তৈরি হলো, কিন্তু লোকে সেটা না দেখতে পেলে লাভ কি? পাম জুমেইরা দ্বীপ দর্শন করা কিন্তু খুব সহজ ছিলনা, তবে তা প্রথম ২০ বছরের জন্য। এযাবত বিশালাকৃতির এই দ্বীপটি দেখার একমাত্র উপায় ছিল হেলিকপ্টার থেকে দেখা কিংবা বিমান থেকে দ্বীপে লাফিয়ে পড়া!

কিন্তু দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য চলতি বছরের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো ৫২ তলাবিশিষ্ট একটি টাওয়ার তৈরি করেছে নাখিল। ‘ভিউ অ্যাট পাম’ নামে পরিচিত এই ৩৬০ ডিগ্রি পর্যবেক্ষণ ডেকে দাঁড়িয়ে পাম দ্বীপের সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে পারবেন সাধারণ মানুষ।

নাখিল কোম্পানির অ্যাসেটস ডিরেক্টর গেইল স্যাংস্টার বলেন, “আমরা সত্যিকারের পাম দ্বীপের উপর একের পর এক ভিন্ন ভিন্ন জিনিসের পরত চড়িয়েছি। তাই এই দ্বীপটি শুধুমাত্র থাকার জন্যই নয়, এটি একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রও বটে!”

চলতি বছরের মধ্যেই নবনির্মিত পাম টাওয়ারের একটি অংশ খুলে পুরোপুরি উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা রয়েছে। দ্বীপের আটলান্টিস রিসোর্ট এবং পাম ওয়েস্ট বিচের পাশাপাশি এবার নতুন আকর্ষণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে ‘ভিউ অ্যাট দ্য পাম’ টাওয়ার।

গত বছর ‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঝর্ণা’ হিসেবে গিনেস বিশ্ব রেকর্ডের স্বীকৃতিও পেয়েছে পাম জুমেইরাহ। তাই নাখিল এর কর্তাব্যক্তি স্যাংস্টারের মনে কোনো সন্দেহ নেই যে, পাম দ্বীপের ভবিষ্যত এখন আরও উজ্জ্বলভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

পাম দ্বীপের প্রতিটি ইঞ্চি নিজ চোখে দেখেছেন আলি মানসুর। তিনিও মনে করেন, ৩৬০ ডিগ্রি ওপেন ভিউর মাধ্যমে দ্বীপের প্রতিটি স্থাপনা ও সৌন্দর্য্য এত স্পষ্টভাবে দেখা যায় যে তা দ্বীপটিকে আরও দুর্দান্ত করে তোলে। তাই দুবাই ভ্রমণে গেলে আপনিও কিন্তু চাইলে এই মানবনির্মিত দ্বীপে একবার ঢুঁ মারতে পারেন!


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ