1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

প্রশ্ন ফাঁসে ৬০ কোটি টাকা লেনদেন : বাতিল হতে পারে ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষা

ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১

আরও চার পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করেছে একই চক্র

পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিক্রি করে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে প্রায় ৬০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা চুক্তিতে সরবরাহ করা হয়। এসব ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করলে তাদের কাছ থেকেই মেলে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব জানতে পারে। চক্রের সদস্যরা জানায়, তারাই প্রশ্ন প্রণয়ন এবং পরীক্ষার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ছিল। পরীক্ষা আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়া আহ্‌ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে তিনজন সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। আরেকজন আহ্‌ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে কর্মরত। অন্যজন ওই চারজনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। এ চক্রই নানা সময়ে অনুষ্ঠিত ব্যাংকের আরও চারটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছিল। প্রশ্ন ফাঁসের এই সিন্ডিকেটের আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির আওতায় গত ৬ নভেম্বর সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের এক হাজার ৫১১টি পদে জনবল নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অভিযোগ উঠেছিল, পাঁচ ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) পদে নিয়োগের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। অনেক পরীক্ষার্থী সে সময় দাবি করেন, প্রশ্নপত্র অনেকের কাছে ছিল।

গতকাল ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, সরকারি পাঁচ ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রশ্ন ফাঁস চক্রের যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা হলেন- পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান মিলন, রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জানে আলম মিলন, জনতা ব্যাংকের অফিসার শামসুল হক শ্যামল, আহ্‌ছানউল্লার আইসিটি টেকনিশিয়ান মোক্তারুজ্জামান রয়েল ও জামালপুরের বাসিন্দা রাইসুল ইসলাম স্বপন। মোক্তারুজ্জামান আহ্‌ছানউল্লার অন্য সহযোগীদের মাধ্যমে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। গ্রেপ্তার পাঁচজনের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনে মামলা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগও তদন্ত করা হচ্ছে। প্রমাণ মিললে মানি লন্ডারিং আইনেও মামলা হবে।

হাফিজ আক্তার আরও জানান, প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে চুক্তি হলে প্রার্থীদের রাজধানীর বাড্ডা, বসুন্ধরা, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, রূপনগর, মিরপুর, মাতুয়াইল, শেওড়াপাড়া, শেরেবাংলা নগর ও পল্লবী এলাকায় নিয়ে যাওয়া হতো। গোপন বুথে পরীক্ষার পাঁচ-ছয় ঘণ্টা আগে তাদের প্রশ্ন দিয়ে উত্তরপত্র মুখস্থ করানো হতো। ১১টি বুথে অন্তত ২০০ পরীক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে তদন্তে। মোক্তারুজ্জামান প্রশ্ন ও উত্তর ফাঁসের মূল হোতা। মোক্তারের কাছ থেকে প্রশ্ন নিয়ে শ্যামল বিভিন্ন বুথে সরবরাহ করেন। জানে আলম মিলন বিভিন্ন পরীক্ষার্থী সংগ্রহ ও বুথ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে আহ্‌ছানউল্লা ভার্সিটিসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ডিবি জানায়, দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কাজ করতে থাকা ডিবির তেজগাঁও বিভাগের তেজগাঁও জোনাল টিমের কাছে গত ৫ নভেম্বর রাতেই তথ্য আসে, প্রশ্ন ফাঁস চক্র সক্রিয় রয়েছে। এরপর ডিবির টিমটি একজনকে ছদ্মবেশে পরীক্ষার্থী সাজিয়ে ৬ নভেম্বর সকাল ৭টায় প্রশ্ন ও উত্তরপত্র পেতে চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকে। স্বপনকে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করা হলে তারা পরীক্ষার্থীকে সেফ হাউসের মতো এক ধরনের বুথে নিয়ে যান। ওই সময় পুলিশ পরীক্ষার উত্তরপত্রসহ স্বপনকে হাতেনাতে আটক করে। পরে দেখা যায়, পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে স্বপনের কাছে পাওয়া প্রশ্নের হুবহু মিল। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানে আলম মিলনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জানে আলমের সূত্র ধরে দক্ষিণ বাড্ডা থেকে গ্রেপ্তার হয় শ্যামলকে। তার দেওয়া তথ্যে গ্রেপ্তার হয় মূল হোতা মোক্তারুজ্জামান রয়েলকে। তার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর লালবাগ থেকে ধরা হয় পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মিলনকে। ডিবি বলছে, পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের ধারাবাহিকতায় তাদের অভিযান চলছে।

প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অন্তত দুই হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর সরবরাহ করেছে চক্রটি। এমসিকিউ পরীক্ষার আগে ২০ শতাংশ, লিখিত পরীক্ষার আগে আরও ২০ শতাংশ ও নিয়োগ পাওয়ার পর বাকি ৬০ শতাংশ টাকা পরিশোধের শর্তে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। এ চক্রে এখন পর্যন্ত ২৫-৩০ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলো- আব্দুল্লাহ আল জাবের, এমদাদুল হক খোকন, সোহেল রানা, জাহিদ হোসেন, রবিউল ইসলাম, সম্রাট রাব্বানী, রুবেল, আপন, উজ্জ্বল, রাকিব, কাফি, নাদিম, রাজীব, লিটু, সবুজ, আলমাস আলী, মাইনুল, আতিক, মুকুল, জাকির, হেলাল ও মিঠু।

জানা গেছে, ২০২০ সালের শুরুর দিকে পাঁচটি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন ও পরীক্ষা আয়োজনের কাজটি পায় আহ্‌ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। এর আগেও এই প্রতিষ্ঠান ৮-৯ বার ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্নের কাজ পেয়েছিল।
তবে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির নির্বাহী পরিচালক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের যে তথ্য ডিবির মাধ্যমে পাওয়া গেছে, সে ব্যাপারে আহ্‌ছানউল্লা ইউনিভার্সিটির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। জবাব দিতে তাদের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। পুলিশি তদন্ত ও তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাখ্যা পাওয়ার পর প্রয়োজনে পরীক্ষা বাতিল করা হবে।

হুমায়ুন কবির আরও বলেন, পরীক্ষায় এ ধরনের জালিয়াতি শনাক্ত করার টুলস আমাদের হাতে নেই। এটা পুলিশের রয়েছে। তদন্ত বলতে যেটা বোঝায়, সেটা তারা করছে। এই চক্রের শিকড় খুঁজতে হবে।
আহ্‌ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির উপাচার্য প্রফেসর মুহাম্মদ ফাজলী ইলাহি বলেন, পুলিশের তরফ থেকে আমাদের টেকনিশিয়ান মোক্তারুজ্জামানের ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়ার পরই তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটিতে তার নাম ছিল না। কীভাবে, কার মাধ্যমে প্রশ্ন তার কাছে গেল, এটা এখনও আমরা জানি না। আহ্‌ছানউল্লা ইউনিভার্সিটির প্রেসেই প্রশ্ন ছাপা হয়েছিল। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটি গঠন করবে।

জানা গেছে, ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন-অর রশিদের একটি টিম গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় পরীক্ষা বাতিলের কথাও ওঠে।
হারুন-অর রশিদ বলেন, আহ্‌ছানউল্লা ইউনিভার্সিটি তাদের দায় এড়াতে পারে না। পুরো ব্যবস্থাপনায় তাদের আরও সতর্ক থাকার দরকার ছিল। জালিয়াতির কারণে বারবার একই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় হয়। পরীক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি হয়।
এক হাজার ৫১১টি পদের বিপরীতে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় অ্যাডমিট কার্ড নেন এক লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ চাকরিপ্রত্যাশী। তার মধ্যে ৫৬ শতাংশ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ