1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

রোজগারবিহীন তারেক : বিলাসী জীবন লন্ডনে

ইবার্তা সম্পাদনা পর্ষদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১২ নভেম্বর, ২০২১

ব্যক্তিগত রোজগার না থাকলেও লন্ডনে পরিবার নিয়ে বিলাসী জীবনযাপন করছেন একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তারেক জিয়া। প্রতিমাসে খরচ করেন লাখ লাখ টাকা। ব্যবহার করেন একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি। বাজার করেন লন্ডনের অভিজাত বিপণি বিতানে। বসবাস করেন লন্ডনের ব্যয় বহুল অভিজাত এলাকায়। লন্ডনে বিলাসী জীবনযাপন করে সাজা মাথায় নিয়ে বসবাস করেই বিএনপি দলটি চালান তারেক জিয়া। এমন বিলাসী জীবনযাপন নিয়ে দেশে, বিদেশে এবং দলের ভেতরে-বাইরে রীতিমতো আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। প্রশ্ন উঠেছে, তারেক জিয়ার বিলাসী জীবনের অর্থ কোথা থেকে আসে? এই প্রশ্নটি তুলেছেন যুক্তরাজ্যে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাজ্য সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লন্ডনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেয়া নাগরিক সংবর্ধনায় তারেক জিয়ার বিলাসী জীবনযাপনের অর্থ কোথা থেকে আসে সেই প্রশ্ন তোলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পুত্রদের দুর্নীতির খোঁজ বের করেছে আমেরিকা আর সিঙ্গাপুরও। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, তারেক জিয়ার লন্ডনে এমন বিলাসী জীবন যাপনে ব্যয় হওয়া টাকার অধিকাংশ অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে পাচার করা হয় বলে যে অভিযোগ উঠেছে তার তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থা। এ জন্য তারেক রহমানের যাবতীয় সম্পদ, আয় ও ব্যয় হওয়া অর্থের উৎস সম্পর্কে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক জরুরী সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সম্পদের বিষয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক দুদক অত্যন্ত কঠোর গোপনীয়তার মধ্যদিয়ে তারেক রহমানের সম্পদ, আয় ও ব্যয় হওয়া অর্থের উৎস সম্পর্কে তদন্ত করে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন বিষয়টি অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করেছেন দুদকের একজন উপ-পরিচালক। সম্প্রতি তিনি অবসরে যাওয়ায় নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে দুদক। নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন দুদকের একজন সহকারী পরিচালক।

দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তদন্তে অনেক বিষয়ের সত্যতা মিলেছে। তবে সেই সব বিষয় কি কি- তদন্তের স্বার্থে তা তিনি প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তারেক রহমানের সম্পদ ও আয়-ব্যয়ের তদন্তের বিষয়ে দুদকের বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তাও কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দর মির্জাকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে লন্ডনেই হোটেলের ম্যানেজার, উগান্ডার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইদি আমিনকে সৌদি আরবে ঝাড়ুদার, ইরানের নেতা রেজা শাহ পাহলবীকে প্রচুর অর্থকষ্টে জীবনযাপন করতে হয়েছিল; সেখানে বিনা রোজগারে তারেক রহমানের বিলাসী জীবন যাপন করার বিষয়টি বিস্ময়কর। আলোচনা-সমালোচনায় বিষয়টি শুধু বাংলাদেশ নয়, খোদ যুক্তরাজ্যসহ বিদেশের সীমানায়ও স্থান করে নিয়েছে। তারেক জিয়ার বিলাসী জীবন যাপনের জন্য ব্যয় হওয়া অর্থ কিভাবে, কোথা থেকে আসছে তা নিয়ে খোদ যুক্তরাজ্যেও ব্যাপক গুঞ্জন আছে। যুক্তরাজ্য সরকার, দেশটির একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও বিষয়টির তদন্ত করে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যে অনেকটা প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়ান তারেক রহমান। প্রকাশ্যে ঘোরাফেরার কারণেই তারেক জিয়ার বিলাসী জীবনযাপন সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। শুধু যে মানুষের মুখে মুখে তাই নয়, রীতিমত গণমাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে তারেক রহমানের বিলাসী জীবনযাপনের নানা কাহিনী।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় সাপ্তাহিক জনমত ম্যাগাজিনের ৪৬ সংখ্যায় প্রকাশিত এক বিশেষ প্রতিবেদনে তারেক রহমানের বিলাসী জীবনযাপন সম্পর্কে নানা তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে মোট ২৫ মামলা ঝুলছে। ২০০৭ সালে এসব মামলা দায়ের হয়। তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে ১৪ মামলা আছে। এরমধ্যে ২০০৯ সালে একটি মামলা প্রত্যাহার করা হয়। বর্তমানে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে প্রায় এক ডজন মামলা ঝুলছে। ফেরার হয়েও তারেক রহমান লন্ডনে বিলাসী জীবনযাপন করছেন। এর মধ্যে চারটি মামলা উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। বাকি অর্ধডজনের বেশি মামলা চলমান আছে। যার মধ্যে ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলেও তা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন।

লন্ডনে পালিয়ে থাকা তারেক জিয়াকে পলাতক দেখিয়েই শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টায় একুশে গ্রেনেড হামলার মামলাটির এই রায় দিয়েছে ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল। তাতে তারেকের সাজা হয়েছে যাবজ্জীবন। এর আগে আরও দুইটি মামলার একটিতে সাত বছর ও অন্যটিতে দশ বছর সাজা দেয়া হয়েছে তাকে। তবে সব সাজা একসঙ্গে কার্যকরের উল্লেখ থাকায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেককে যাবজ্জীবন সাজাই খাটতে হবে। পলাতক হওয়ায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপীলের সুযোগও পাচ্ছেন না তিনি। ২০০৭ সালে জরুরী অবস্থার মধ্যে গ্রেফতার হয়ে পরের বছর মুক্তি পেয়ে যুক্তরাজ্য যাওয়া তারেক সেখানে নানা সভা-সমাবেশে দেশের স্বাধীনতার মৌলিক কিছু বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেয়ার পর তার বার্তা-বিবৃতি প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয় হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই লন্ডন থেকে দলীয় ফোরামে বক্তৃতা-বিবৃতি, ভার্চুয়ালি সভা-সমাবেশ করে বেড়াচ্ছেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বন্দী হওয়ার পর তারেক জিয়াকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়ার কথাও জানানো হয়।

স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে যাওয়ার পর তারেকের দেশে ফেরার কথা বিএনপি নেতারা বলে এলেও নির্দিষ্ট করে কোন সময় কখনও বলেনি। মামলাগুলোর রায়ের পর তার সামনে থাকছে কারাগার, ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত বলে ভোট করার অযোগ্যও তিনি। আবার যুক্তরাজ্যে থাকা তারেকের হাতে এখন বাংলাদেশী পাসপোর্টও নেই। রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য তিনি পাসপোর্ট স্যারেন্ডার করায় তিনি এখন বাংলাদেশের নাগরিকও নন বলে সরকারের দাবি; যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন, তারেক পাসপোর্ট যুক্তরাজ্য সরকারকে জমা দিলেও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছাড়েননি। জীবনে আর রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে তারেক রহমান চিকিৎসা সেবা নিতে প্যারোলে মুক্তি পান। ২০০৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডনে যান। চিকিৎসা নিতে থাকেন লন্ডনের ওয়েলিংটন হসপিটালে। সেই থেকে বসবাস শুরু করেন লন্ডনেই। এদিকে বিভিন্ন মামলার শুনানিতে আদালতে উপস্থিত না থাকার কারণে আদালত তারেক রহমানকে পলাতক বিবেচনা করে তার জামিন বাতিল করে। সেই মোতাবেক তারেক রহমান পলাতক আসামি।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা থাকাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক আসামি হিসেবে তারেক রহমানকে গ্রেফতার করতে ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইন্টারপোলে বার্তা পাঠায় বাংলাদেশ পুলিশ। ওই বছরের ১৩ এপ্রিল তারেক রহমানকে ধরিয়ে দিতে রেড নোটিস জারি করে ইন্টারপোল। রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকার যৌক্তিকতা তুলে ধরে ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ ইন্টারপোল কর্তৃপক্ষ রেড নোটিসের তালিকা থেকে তারেক রহমানের নাম প্রত্যাহার করে নেয়।

আইনমন্ত্রী বিশিষ্ট ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ আনিসুল হক বলেছেন, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে কোন বন্দী বিনিময় চুক্তি নেই। এজন্য তারেক জিয়াকে ফেরত আনতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য সরকারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলছে। শুধু তারেক রহমান নয়, এুকশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিদেশে পলাতক সব আসামিকেই ফেরত আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে।

গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান লন্ডনে যাওয়ার পর থেকেই এনফিল্ড টাউন ও সাউথ গেট এলাকার মাঝামাঝি অবস্থিত যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতার কেনা একটি বিলাসবহুল বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। লন্ডনে দীর্ঘ সময় বসবাসের সুযোগ করে নেয়ার পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। এজন্য তিনি ২০০৮ সালেই লন্ডন থেকে বার এ্যাট ল ডিগ্রী (ব্যারিস্টার) সম্পাদনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু তারেক রহমান বাংলাদেশী গ্র্যাজুয়েট হওয়ায় বিপত্তি দেখা দেয়। ব্রিটেনের নিয়মানুযায়ী তাকে প্রথমেই লন্ডনের কোন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রী অর্জন করার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। তিনি ব্যাচেলর ডিগ্রী অর্জন করতে ব্যর্থ হন। এক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক সুবিধাও পাননি তিনি। এরপর তিনি সাউথ ব্যাংক ইউনিভার্সিটি এবং কুইন মেরী ইউনিভার্সিটিতে ব্যাচেলর ডিগ্রী ছাড়াই বার এ্যাট ল করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ তারেক রহমানকে সরাসরি ফিরিয়ে দেয়। এরপর থেকে অনেকটা স্থায়ীভাবেই উক্ত বাড়িতেই বসবাস শুরু করেন তিনি। বাড়িটি ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে উল্লেখিত বিএনপি নেতা কিনেন। এক সময় বাড়িটির মাসিক মর্টগেজ হিসেবে ৩৩৫ পাউন্ড দিতে হতো সেদেশের সরকারকে। তা কমে ২২০ পাউন্ডে ঠেকেছে। বাড়িতে থাকলেও মর্টগেজের টাকাও তারেক রহমান দেন না। লন্ডনে যাওয়ার পর আলোচ্য বিএনপি নেতা তার ব্যক্তিগত জাগুয়ার গাড়িটি তারেক জিয়াকে দেন। মাসিক ৮শ’ পাউন্ড বেতনে গাড়িটির চালক হিসেবে নিয়োগ পান শরীফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। পরে তারেক জিয়া ক্যাব্রিজ হিথ রোড থেকে দুটি বিলাসবহুল গাড়ি কেনেন। এর মধ্যে একটি বিএমডবিব্লিউ সেভেন সিরিজের। অপরটি অডি।

তারেক জিয়া নিজের গাড়িতে করে প্রায়ই মেয়ে জাইমা রহমানকে স্কুল থেকে আনার জন্য গাড়ির চালকের সঙ্গে স্কুলে যেতেন। মাঝে মধ্যে তিনি পরিবার নিয়ে বাসার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করতেন পন্ডার্স এ্যান্ডের টেসকো দোকান থেকে। কেনাকাটায় সহায়তা করতেন আলোচ্য বিএনপি নেতার রেস্টুরেন্টের কয়েক বিশ্বস্ত কর্মচারী। প্রায় প্রতিদিনই রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আসত তারেক রহমানের পরিবারের জন্য। প্রতিমাসে লেক সাইড ও বøু ওয়াটার এবং সেন্ট্রাল লন্ডনের সেলফ্রিজেস থেকে শপিং করতেন। এছাড়া সেলফ্রিজেসের হোম এক্সেসরিজেও যেতেন। সেলফ্রিজ ও বøু ওয়াটার যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বিলাসবহুল এবং ব্যয়বহুল শপিং মল। ব্রিটেনের ধনীরাই সাধারণত সেখানে কেনাকাটা করে থাকেন। এছাড়া তারেক রহমান প্রায়ই সপরিবারে উডগ্রীন সিনে ওয়ার্ল্ডে সিনেমা দেখতেন। মাঝেমধ্যে আপ্টন পার্কের বলিনেও সিনেমা দেখতেন। তিনি লন্ডন বিএনপির নেতার মেয়ের বিয়েতে হাজির হয়েছিলেন। সেখানে তাকে ছড়ি হাতে দেখা গিয়েছিল। উল্লেখিত বিএনপি নেতা অবশ্য মারা গেছেন। তিনি এখন বসবাস করছেন লন্ডনের কিংসটনে। এ এলাকার ৩/৪ বেডরুমের বাসার মাসিক ভাড়া ১২শ’ থেকে ৫ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত। সি ব্যান্ডের বাসার জন্য কাউন্সিল ট্যাক্স ১৪৭৪ পাউন্ড ৬৭ পেন্স। বিদ্যুত গ্যাসসহ ইউটিলিটি বিল ন্যূনতম ১৫০ পাউন্ড। পরিবারের যাতায়াত খরচ ন্যূনতম একশ’ পাউন্ড। এছাড়া লন্ড্রি, পোশাক, সংবাদপত্র, মোবাইল ও টেলিফোন বিলসহ ন্যূনতম ৭ থেকে ৮শ’ পাউন্ড খরচ আছে। সব মিলিয়ে ন্যূনতম ৪ হাজার পাউন্ড খরচ রয়েছে তারেক জিয়ার। বিগত প্রায় ১৩ বছর ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন তিনি। দীর্ঘ সময়ে তিনি কোন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। স্ত্রী ডাঃ জুবাইদা গুলশান আরাও কিছু করেন না। উপরন্তু মেয়ে জাইমা লন্ডনে পড়াশোনা করছে। সাধারণত বাইরে বের না হলেও মেয়েকে স্কুল থেকে আনার জন্য প্রায়ই চালকের সঙ্গে বাইরে যান।

গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রটি বলছেন, তারেক রহমান ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন। বাংলাদেশে তারেক জিয়া ও তার মা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বেশ কয়েকটি ব্যাংক এ্যাকাউন্ট জব্দ করা আছে সেখানে। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর অবৈধভাবে সিঙ্গাপুরের ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত নিয়ে আসা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। সোনালী ব্যাংকের রমনা কর্পোরেট শাখায় দুদকের এ্যাকাউন্টে ২০ লাখ ৪১ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার এসেছে।

দুদকের তদন্ত টিম জানায়, ২০০৮ সালে প্রথম অর্থ পাচারের অনুসন্ধান শুরু হয়। অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের উপপরিচালক আবু সাঈদ এ বিষয়ে তদন্ত করেন। ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেয়া হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী কোকোর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০০৯এর ৪ (২) ধারায় মামলার অনুমোদন দেয় কমিশন। ১৭ মার্চ রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়েরের পর দুদক এ ঘটনার জোরালো তদন্ত করে। তদন্তে কোকোর সঙ্গে সায়মনের নাম আসায় দুদজনের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে আদালতে চার্জশীট দেয় দুদক। ২০১০ সালের ৩০ আগস্ট বিচার কাজ শুরু হয়। এরপর রায় হয় বহুল আলোচিত মানিলন্ডারিং মামলার। রায়ে উল্লেখ করা হয়, আসামি আরাফাত রহমান (কোকো) ও ইসমাইল হোসেন ওরফে সায়মন মানিলন্ডারিং আইন ২০০২ এর ১৩ (২) ধারায় ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আদালতে ২০ লাখ ৪১ হাজার, ১৪৩ সিঙ্গাপুরি ডলার ও ৯ লাখ ৩২ হাজার ৬৭২ মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্ত করা হয়। দুদক জানায়, পাচার হওয়া মার্কিন ডলার আনার চেষ্টায় রয়েছে দুদক।

গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সহযোগিতায় সিঙ্গাপুরে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পাচার করা হয়েছে। যা পরবর্তীতে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। সেই টাকা পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকে ফেরত আনা হয়েছে। এছাড়া তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে ৬ কোটি ১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। বিদেশে অবৈধভাবে অর্থ পাচারের অভিযোগে তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ আদালতে তথ্য-প্রমাণ দাখিল ও সাক্ষীদের জবানবন্দীর ভিত্তিতে চার্জ গঠন করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার দুই ছেলে তারেক জিয়া ও আরাফাত রহমান কোকো বিদেশে টাকা পাচার করেন। এর মধ্যে আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়ায় থাকাকালেই মারা যান। আর এখন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পলাতক জীবনযাপন করছেন তারেক জিয়া। লন্ডনে তারেক জিয়া ব্যক্তিগত আয় রোজগারবিহীন একজন বেকার মানুষের এমন বিলাসী জীবনযাপনের ঘটনা রাজা, বাদশা, নবাব, রাজপুত্রের রাজকীয় বিলাসী জীবনযাপনকেও হার মানায়।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ