1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সরকারি জায়গায় অনুমোদন ছাড়া মসজিদ নির্মাণে শরিয়তের বিধান

ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১

মুফতী ফয়জুল্লাহ আমান
মসজিদ আল্লাহর ঘর। কোনো মানুষের ঘর নয়। মসজিদ পবিত্র স্থান। মহত্তর ফজীলতপূর্ণ স্থান। যেসব স্থানকে মানুষ আল্লাহর নামে আল্লাহর ইবাদতের জন্য ওয়াকফ করে দেয় তাকেই আমরা মসজিদ বলি। তা না হলে রাসূল সা. বলেন পুরো পৃথিবীকেই আমার জন্য মসজিদ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে [বুখারী শরীফ, সালাত অধ্যায়]। এ হাদীসের অর্থ হচ্ছে, পৃথিবীর যে কোনো স্থানেই নামাজ আদায় করা যায়। ঘরের ভেতর, বাইরে, মাঠে, দোকানে, বনে, জঙ্গলে, মরুভূমিতে, জলাশয়ে, এমনকি বিমানে চড়ে আকাশে, সবখানেই নামাজ আদায় করা যায়। পবিত্র প্রতিটি স্থানেই আল্লাহর উদ্দেশে সেজদা করা যায়, আল্লাহকে ডাকা যায়, আল্লাহর ইবাদত উপাসনা করা যায়। মসজিদ হওয়া শর্ত নয়।

তবে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়লে অধিক সাওয়াব লাভ হয়। একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করলে সাতাশ গুণ বেশি সওয়াব লাভের আশার বাণী শুনিয়েছেন রাসূল সা.। এখন কথা হচ্ছে, কোনো স্থানে শরিয়তভিত্তিক মসজিদ হওয়ার জন্য শর্ত কী, যেখানে নামাজ পড়লে অধিক সাওয়াব লাভ করা যাবে? এর সহজ সমাধান হচ্ছে, মসজিদের জায়গা আল্লাহর নামে ওয়াকফ করতে হবে। সেখানে কোনো ব্যক্তির মালিকানা থাকতে পারবে না। এবং যে স্থানটি আল্লাহর নামে ওয়াকফ করা হবে সেটির সাত তবক জমিন থেকে নিয়ে সাত তবক আসমান পর্যন্ত ঐ বরাবর সমস্থ স্থান জুড়েই মসজিদ হয়ে যাবে। সাধারণ জনগণের একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ স্থানান্তরও করা যাবে না। সরকার অবশ্য রাস্তাঘাট ইত্যাদি বাস্তব কোনো জরুরি প্রয়োজনে মসজিদ স্থানান্তর করতে পারে। সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। আমরা এখানে আলোচনা করব সরকারি খাস জমিতে মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে।

শুরুতেই বলা হয়েছে, মসজিদ হওয়ার জন্য ওয়াকফ হওয়া আবশ্যক। কাজেই ব্যক্তি মালিকানা হলে ব্যক্তি কর্তৃক মসজিদের স্থানটি ওয়াকফ করতে হবে। আর যদি সরকারি জমি হয় তাহলে সরকার কর্তৃক তা মসজিদের জন্য নির্ধারণ করতে হবে। অথবা সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া আবশ্যক। সরকারের অনুমোদনবিহীন সরকারি জায়গার উপর মসজিদ করা হলে তা শরিয়তের বিধান অনুযায়ী মসজিদ হবে না।

আজকাল প্রায়ই দেখা যায় স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন সরকারি জায়গার উপর সরকারি অনুমোদন ছাড়াই মসজিদ নির্মাণ করে। মসজিদের আশপাশে দোকান ভাড়া দেওয়া হয়। এবং এভাবে মসজিদ নির্মাতা ব্যক্তি বা গোষ্ঠী মসজিদ বানানোর নাম করে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করে। এটি ইসলামী শরীয়াতের দৃষ্টিতে খুবই গর্হিত কাজ। প্রথমত এটি ধর্ম নিয়ে ব্যবসার শামিল। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন, তোমার সামান্য দুনিয়াবী স্বার্থে আল্লাহর আয়াত বিক্রি করো না। এর অর্থ হচ্ছে, তোমাদের নিজেদের পার্থিব স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করো না।

দ্বিতীয়ত ইসলামী ফিকাহের গ্রন্থসমূহে এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে মাসআলা বর্ণনা করা হয়েছে। চার মাযহাবের সমস্ত ইমাম এ বিষয়ে একমত হয়ে রায় দিয়েছেন, এভাবে মসজিদ বানানো হলে মসজিদ হবে না। এমন স্থানে নামাজ পড়লে সাওয়াবের বদলে গুনাহ হবে বলে রায় দিয়েছেন ফিকাহ বিশেষজ্ঞগণ। (দেখুন ইবনু কুদামা রচিত আলমুগনি..।)

মসজিদ নির্মাণ নিঃসন্দেহে অনেক সাওয়াবের কাজ। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেন, মসজিদ নির্মাণ করে ঐসব মানুষ যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে এবং পরকালের প্রতি ঈমান আনে।.. [সুরা তাওবা]

রাসুল সা. বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মসজিদ বানাবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন। (আহমাদ) একজন এককভাবে মসজিদ নির্মাণ না করতে পারলে মসজিদ নির্মাণে অংশগ্রহণ করলেও উক্ত ফজিলত লাভ করবে। কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, পাখির বাসা পরিমাণ সামান্য স্থানও যদি মসজিদ হিসেবে নির্মাণ করে সেও উক্ত সাওয়াব লাভ করবে। আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ বানিয়ে রাখবেন।

মসজিদ নির্মাণের ফজিলত জেনেই যে স্বার্থান্বেষী মহল সরকারি জায়গায় মসজিদ বানায় তা নয়। নবীজীর আরেকটি হাদীসও মনে রাখতে হবে। বুখারি শরিফের প্রথম হাদিস। রাসুল সা. বলেন, প্রতিটি আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ আমল বাহ্যিকভাবে যত সুন্দর হোক, নিয়ত যদি ঠিক না থাকে তাহলে সেই আমলের কোনো মূল্য নেই। আল্লাহ সঠিক নিয়ত ছাড়া কোনো আমল কবুল করেন না।

সাথে সাথে মনে রাখতে হবে, ভালো নিয়ত হলেই হবে না। পদ্ধতিও সঠিক হতে হবে। নিয়তও সঠিক হতে হবে। হালাল ও পবিত্র উপার্জন থেকে মসজিদ তৈরি করতে হবে। অনুমোদন ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির জমি বা কোনো সরকারি জমির উপর মসজিদ বানানো, যত ভালো নিয়তেই হোক, তা কোনো ভালো কাজ হবে না। যেমন কেউ যদি ঘুষের টাকায় মসজিদ নির্মাণ করে এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে সাওয়াবের প্রত্যাশা করে তাহলে সাওয়াব তো পাবেই না, বরং এভাবে হারাম পন্থায় আল্লাহর কাছে সাওয়াব প্রত্যাশা করার কারণে কাফের হয়ে যাবে। মুসলিমই থাকতে পারবে না। এক হচ্ছে চুরি করা, আরেক হচ্ছে চুরি করা আল্লাহকে খুশি করার জন্য। চুরি করা নিঃসন্দেহে কবিরা গুনাহ; কুফুরি নয়। কিন্তু যদি কেউ চিন্তা করে অমুক হিন্দু বা মন্দ লোকের সম্পত্তি চুরি করলে আল্লাহ খুশি হবেন। আল্লাহকে খুশি করার জন্য যদি কেউ এভাবে চুরি করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।

সুদ ঘুষ চুরি ও দুর্নীতির অর্থ দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করা বৈধ নয়। এসব হারাম উপার্জনের টাকা সাওয়াবের নিয়ত ছাড়াই সদকা করে দেওয়ার বিধান রয়েছে শরীয়তে। সাওয়াবের নিয়ত করলে ঈমানহারা হবার আশংকা থাকে। তিরমিযি শরিফের প্রথম হাদিসে রাসুল সা. বলেন, আল্লাহ হারাম সম্পত্তি থেকে কোনো সদকা কবুল করেন না।

এসব বিষয় সামনে রাখলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি, এসব অনুমোদনহীন সরকারী ভূমিতে নির্মিত মসজিদগুলো ইসলামী শরিয়াতের দৃষ্টিতে মসজিদ হয় না। কেবল নামাজের স্থান বলা যেতে পারে। স্থানীয় লোকেরা যথার্থ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে সরকারি অনুমোদন নিতে পারলেই কেবল এগুলো মসজিদ হিসেবে পরিগণিত হবে। সরকারি জায়গা-জমি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের মালিকানাধীন। সেখানে মসজিদ করার নামে দখল করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি দখল করলে কেবল একজনের হক নষ্ট করা হয়, কিন্তু সরকারি জায়গা দখল করলে (সেখানে মসজিদ করা হলেও) সমস্ত জনগণের সম্পত্তি দখলের গুনাহ। এমন বিরাট গুনাহর কাজ করেও যে বা যারা সাওয়াবের প্রত্যাশা করে তাদের ধর্মত্যাগী কাফের না বললেও হতভাগা নির্বোধ তো বলতেই হয়। আল্লাহ আমাদেরকে এ ধরনের অবৈধ এবং আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয় কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। এমন অপকর্ম যারা করে চলেছেন তাদেরকে হেদায়াত করুন।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ