পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা তাদের ক্রীড়া নৈপুণ্যের পাশাপাশি উদ্ভট নানা আচরণের জন্যেও ক্রিকেট জগৎে যথেষ্টই আলোচিত।
এবার অবশ্য তা ছাড়িয়েছে সব মাত্রাই।
বাংলাদেশ সফরকারী পাক উইকেটকিপার রিজওয়ানকে গত সন্ধ্যায় বিমানবন্দরে ঘুরতে দেখা যায় সাদা একটি বালিশ হাতে। কোনো অবস্থাতেই বালিশটি তিনি হাতছাড়া করছিলেন না। অত্যন্ত সাধারণ দর্শন এ বালিশ। গতানুগতিক বিভিন্ন হোটেলে যেসব বালিশ থাকে তেমনই দেখতে। যদিও তার দাবী বালিশটি তার নিজস্ব, এবং সবখানেই তিনি বালিশটি বহন করে থাকেন। কিন্তু এ উত্তরে মনের জিজ্ঞাসা তো মেটেই না, বরং উদ্রেক হয় আরো নানা প্রশ্নের।
প্রথমত যেখানে সফরকারী দলের থাকা খাওয়ার সব আয়োজনই স্বাগতিক দেশ করে থাকে এবং তাতে নিশ্চিত করা হয় আন্তর্জাতিক মান সেখানে কোনো ক্রিকেটারের হুট করে বালিশটাই কেনো সবখানে বয়ে বেড়াতে হবে সে প্রশ্ন তো থাকেই। তবে তারচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে ওঠে যেটি তা হচ্ছে ক্রিকেটারদের বাকি সব সরঞ্জাম যখন লাগেজ ভ্যানে আলাদা ভাবে বহন করা হচ্ছিলো তখন বিমানবন্দরে হ্যান্ডব্যাগের পরিবর্তে বালিশটি হাতে নিয়েই কেনো ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন রিজওয়ান। এমনকি অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের চোখ এড়ায়নি ক্রিকেটপ্রেমী অটোগ্রাফশিকারীদের অটোগ্রাফ দেয়ার সময়েও বালিশটি আঁকড়ে রাখার রিজওয়ানের অস্বস্তিকর চেষ্টা।
যদিও রিজওয়ানের বক্তব্য হচ্ছে বালিশটি তিনি নিজের বাসা থেকেই নিয়ে এসেছেন কিন্তু প্রশ্ন গিয়েছে পিসিবি’তেও। সেখান থেকেও মিলেছে গৎবাধা উত্তরই- “বালিশটি রিজওয়ানেরই এবং তা তিনি বাড়ি থেকেই বহন করে চলেছেন।” কিন্তু এমন উত্তরে আত্মতুষ্ট হওয়া বেশ কঠিনই। বিশেষত ঘরোয়া বালিশের কভার সাধারণত এমন ধবধবে সাদা হয়না। আর পাকিস্তানি সংষ্কৃতিতে সাধারণত বিছানার চাদর, বালিশের কভার বা পর্দার মতো জিনিসে ঝলমলে রঙের ব্যবহারই চিরায়ত। তদুপরি নিয়মিত ব্যবহার করা বালিশ এতোটা নতুন অবস্থায় থাকাটাও অসম্ভব ব্যাপার, কিন্তু রিজওয়ানের হাতের বালিশটি স্পষ্টতই সম্পূর্ণ নতুন অবস্থায় ছিলো যা চোখের দেখায়ও বুঝতে কষ্ট হয় না।
সুতরাং অঙ্কটি যেনো একেবারেই মিলছে না। বরং প্রশ্ন জাগাচ্ছে দ্বিগুণ গতিতে। এই আলোচনার ছাপ পড়েছে নেটজগতেও। নেটিজেনদের কাছথেকে উঠে আসছে নানা মতামত।
তরুণ কলামিস্ট ও সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট হামজা রহমান অন্তর এই প্রসঙ্গে মন্তব্যে বলেন “সাধারণত আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দলগুলোর এয়ারপোর্ট চেকিংয়ের ক্ষেত্রে পারসোনাল চেকিং ও হ্যান্ড লাগেজের ক্ষেত্রে প্রচুর ছাড় দেওয়া হয়। আর সেই জায়গায় হ্যান্ড লাগেজের পরিবর্তে একটি বালিশ আকৃতির বস্তু নিয়ে রিজওয়ানের ঘুরাঘুরি কোনো সাধু পরিণতির কথা অন্তত ভাবতে দেয় না।”
এক নেটিজেন অবশ্য টেনেছেন আরো সহজ সমাধান। ফেসবুকে করা তার মন্তব্যটি হুবুহু এরুপ “দেখেই বোঝা যায় চুরির মাল। হোটেল থেইকা ঝাইরা দিছে। পাইক্যাগো হোটেলের মালামাল চুরির কাহিনী তো নতুন না।”
আরেক নেটিজেন অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার সাথে ম্যাচের আগে রিজওয়ানের রহস্যজনক অসুস্থতা ও আইসিইউতে যাওয়া এবং সেখান থেকেই নাটকীয়ভাবে সরাসরি খেলার মাঠে যাওয়ার ইঙ্গিত করে বলেছেন, “বালিশ ঘাটলে নানা জাতের প্যারাসিটামল পাওয়া যেতে পারে। সেইসব প্যারাসিটামল আরকি, যেগুলো খেয়ে খেলার আগের রাতে আইসিইউয়ে যাওয়া লাগে আবার খেলার দিন সরাসরি মাঠেও নামা যায়।”
অবশ্য রিজওয়ানের হাতে চুরির বালিশই থাকুক বা বালিশসদৃশ বস্তু, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যে তার ইতিহাসে এমন অদ্ভূত দৃশ্য খুব বেশি দেখেনি তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।