1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

তৃণমূলে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ

ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২১

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

গত ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৮ শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সহিংসতা, ব্যালট পেপার ছিনতাই, ভোটকেন্দ্র দখলের অপচেষ্টাসহ নানা অনিয়ম ও বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোটের আগের রাত এবং ভোট চলাকালে সংঘর্ষে এসব জায়গায় ছয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেটসহ কমপক্ষে ৩৩৭ জন। তবে এর বাইরেও হতাশার খবর হচ্ছে- এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বেশিরভাগ ইউনিয়নে পরাজিত হয়েছেন। যাদের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করার অনুমতি দিয়েছে দলটি। ফলে সর্বত্র এখন নৌকার ভরাডুবির কথা শোনা যাচ্ছে। যা দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকা দলের জন্য অশনিসঙ্কেত বলে মনে করি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিতেই স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীর জয় হয়েছে। কুমিল্লায় ১২টি ইউনিয়নে নৌকা, ৫টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। ফরিদপুরে ১০টি ইউপিতে নৌকা ও ৭টিতে বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। পটুয়াখালীর ১৩ ইউপিতে নৌকা, ৬টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। রংপুরের দুই উপজেলার ১৮ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ১১ জন, স্বতন্ত্র ছয়জন ও জাতীয় পার্টির একজন নির্বাচিত হয়েছেন। চৌগাছা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের দুজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাকি ৯টি ইউনিয়নের ভোটে তিনটিতে নৌকার প্রার্থী, চারটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও দুটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।

নওগাঁয় নৌকা প্রতীকের ১১ জন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ছয়জন ও স্বতন্ত্র তিনজন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ে নৌকা প্রতীকে ৬ জন এবং স্বতন্ত্র ৫ প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। নোয়াখালীতে বিদ্রোহী ৮ জন, আওয়ামী লীগের ৬ প্রার্থীর জয় হয়েছে। মেহেরপুরের ৯টি ইউনিয়নের ৭টিতে বিদ্রোহী প্রার্থীর জয় হয়েছে। সুনামগঞ্জের ১০টি ইউনিয়নের ৬টিতে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয় হয়েছে। কুষ্টিয়ায় ১৭টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের ৯ জন, বিদ্রোহী ৭ জন নির্বাচিত হয়েছেন। মাদারীপুরের কালকিনি ও ডাসারের ১৩টি ইউনিয়নে ৯ জন বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

আমরা জানি, নৌকা একটি জাতীয় প্রতীক। বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার প্রতীক। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত প্রতীক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবেগের প্রতীক। সেই নৌকা প্রতীক এখন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হেরে যাচ্ছে। নৌকা প্রতীকে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। ভেঙে ফেলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব ঘটনা আসলে কিসের নির্দেশ করে? আমার মনে হয়, তৃণমূলের নির্বাচনে এই জাতীয় প্রতীক নির্ধারণ করা একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কেননা শক্তিশালী বিরোধী দলহীন মাঠে আওয়ামী লীগই এখন আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী। এখানে স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা নৌকা তথা আওয়ামী লীগকে পরাজিত করছে। যা সামগ্রিক আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার পরিচয় দেওয়া হয়নি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলে জনপ্রিয় এবং ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হওয়ায় জনগণও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করেছে। মূলত ব্যক্তি ইমেজ ছাড়া শুধু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন এবং নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনকি কোনো কোনো কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে দুই-তিন ভোট পেতেও দেখা গেছে। তা-ও আবার আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে সুপরিচিত মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায়।

স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, যদিও নৌকা বা আওয়ামী লীগের প্রতি তাদের কোনো ক্ষোভ নেই। তাদের দাবি ছিল, যোগ্য ব্যক্তিকে কেন মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। যিনি মনোনয়ন দিয়েছেন; তিনি যেন বিজয়ী করে দেন। তাদের এ বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, এর জন্য তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও নেতৃবৃন্দকে দায়ী করছেন। যদিও স্থানীয় আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কার করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ছয়জন আওয়ামী লীগ নেতাকে নির্বাচনে বিরোধিতা করার কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। তা-ও আবার নির্বাচনের ঠিক আগের দিন। অনেক ক্ষেত্রেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের হাতেগোনা কয়েকজন নেতা ছাড়া বেশিরভাগই বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য গোপনে বা প্রকাশ্যে কাজ করেছেন। যা শুধু প্রার্থীকে অপছন্দ হওয়ার কারণে। কিংবা প্রার্থীর জনসম্পৃক্ততা না থাকার কারণে। অনেকেই বলছেন, ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’র কারণে অযোগ্য লোককে নৌকার মাঝি করা হয়েছিল। যার কারণে এমন ভরাডুবি হয়েছে। কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা তাহমিনা সিদ্দিকা এই রায়কে ‘মনোনয়ন বাণিজ্যের বিরুদ্ধে জনবিস্ফোরণ’ হিসেবে দেখছেন। তিনি মনে করেন, এ জনবিস্ফোরণ দলের বিরুদ্ধে নয়, ব্যক্তির বিরুদ্ধে। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান তার নির্বাচনী এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না দেওয়ার পক্ষে কথা বলেছিলেন। যার ফলে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়েছিলেন। কিন্তু আসলে বাস্তবতা তো তা-ই হয়েছে।

অপরদিকে, অনেক জায়গায় দলের লোকজনের হাতেই হামলার শিকার হয়েছেন অনেকেই। অনেকটা ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্বের মতো। আওয়ামী লীগের মতো বৃহৎ রাজনৈতিক দলের ভেতরে কিছুটা কোন্দল থাকতেই পারে। কিন্তু সেটা যদি ব্যাপক আকারে হয়, তবে দুঃখজনক নয় কি? মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থী- উভয়ই দলের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে একে অপরের ওপর হামলা-মামলার মতো কাজগুলো করার সাহস পাচ্ছেন। ফলে অস্থির হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। সংবাদপত্রের পাতা খুললেই চোখে পড়ছে সংঘর্ষের খবর। নির্বাচনের পর এখন নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কারণে পরবর্তী ধাপের নির্বাচনে যাতে এমন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ ধরে রাখার জন্য নির্বাচন কমিশন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

সে হিসেবে বলা যায়, তৃণমূলে নৌকা প্রতীক না দেওয়াই যৌক্তিক। এতে দলের ভেতরেই দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। দলের নেতাকর্মী বহিষ্কার হন। সর্বোপরি দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। এই নৌকা প্রতীকের কারণে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ। তাই এখনও সময় আছে- ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা নির্বাচন থেকে নৌকা প্রতীক সরিয়ে নেওয়াই হবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। দলের ভেতর বিভাজন সৃষ্টি করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সুযোগ কমে আসবে।

তৃণমূল রাজনীতিতে দলের পাশাপাশি নেতার গ্রহণযোগ্যতাকেও মূল্যায়ন করা জরুরি।

আমরা চাই না, আমাদের আবেগের প্রতীকের ভরাডুবি হোক। সাধারণ জনগণ যখন বলেন, নৌকার ভরাডুবি হয়েছে; তখন আমাদের ঐতিহ্যকে আঘাত করে। স্বাধীনতার প্রতীককে প্রশ্নবিদ্ধ করে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দলবিচ্ছিন্ন নন। বেশিরভাগ বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কারও কারও রাজনৈতিক ক্যারিয়ার দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তির চেয়েও শক্তিশালী।

স্থানীয় সংসদ সদস্য যদি স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মতামতের গুরুত্ব দিতেন, তাহলে হয়তো এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। মনে রাখতে হবে, স্থানীয় নির্বাচনও জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য অশনিসঙ্কেত বয়ে আনতে পারে।

লেখক : সাংবাদিক


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ