1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

নারী সেবার এক বছরের পরিক্রমা

ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২১

ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)

পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন তার কার্যক্রমের এক বছর পূরণ করল। এই এক বছরে কার্যক্রমটি ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন পরিষেবাটি নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযোগ গ্রহণ করে এবং অভিযোগকারীদের প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রযুক্তিগত ও আইনি পরামর্শ দিয়ে থাকে। সাইবার বুলিং, ট্রলিং, পরিচিতি তথ্য অপব্যবহার ও প্রকাশ, ব্ল্যাকমেইলিং, রিভেঞ্জ পর্নোসহ বিভিন্ন উপায়ে সাইবার স্পেসে যত হয়রানির ঘটনা ঘটে তার প্রধান শিকার হন নারীরা। ভুক্তভোগী নারীরা অধিকাংশ সময় বুঝতে পারেন না কীভাবে, কী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং কাকে বিষয়টি জানাবেন। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারকে জানাতে বা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ পুলিশ কর্মকর্তার কাছে তারা অভিযোগ জানানোর ব্যাপারে দ্বিধাবোধ করেন। এই নারীদের পাশে দাঁড়াতে ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন যাত্রা শুরু করেছিল। ‘নারীর জন্য নিরাপদ সাইবার স্পেস নিশ্চিতকরণ’ এ রূপকল্প নিয়ে পরিষেবাটি চালু হয়েছিল। ভুক্তভোগী নারীরা যাতে সহজেই তাদের হয়রানির বিষয়টি জানাতে যোগাযোগ করতে পারেন সে জন্য এ সার্ভিসের একটি হটলাইন নম্বর (০১৩২০-০০০৮৮৮) রয়েছে। এছাড়া, তাদের সমস্যা পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন-এর ফেসবুক পেজে মেসেজ পাঠিয়ে এবং ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করেও জানাতে পারেন।

বিগত এক বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কার্যক্রম শুরুর পর ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন-এর সঙ্গে মোট ১৭ হাজার ৭৭০ জন সেবাপ্রত্যাশী যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে ১২ হাজার ৯৪১ জন ভুক্তভোগী নারী সাইবার স্পেসে হয়রানির সমাধান পেতে যোগাযোগ করেছেন। ৮ হাজার ৩৩১ জনের অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রযুক্তিগত ও আইনগত পরামর্শ এবং সহায়তা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যেসব পন্থায় নারীদের সাইবার স্পেসে হয়রানি করা হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো ১. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্ব স্থাপন ও কথোপকথনের মাধ্যমে ছবি, ভিডিও ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে ব্ল্যাকমেল করা। ২. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীর ব্যক্তিগত ছবি/ভিডিও বা পরিচিতি তথ্য প্রকাশ করে হয়রানি করা। ৩. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর ছবি পাঠিয়ে বা আপত্তিকর ভাষায় নারীকে মেসেজ পাঠিয়ে হয়রানি করা। ৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইডি হ্যাক করে তাতে থাকা ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে ব্ল্যাকমেল করা। ৫. মোবাইল ফোনে কল করে হয়রানি।

প্রাপ্ত অভিযোগের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি ব্যবহার করে হয়রানি করার অভিযোগ সবচেয়ে বেশি, যা মোট অভিযোগের ৪৩ শতাংশ। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন-এ বিভিন্ন বয়সী নারী ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে মোট অভিযোগকারীর ১৬ শতাংশ ভুক্তভোগী ১৮ বছরের কম বয়সী। ৫৮ শতাংশ ভুক্তভোগীর বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছর। ২৪ বছর থেকে ৩০ বছর বয়সী ভুক্তভোগী ২০ শতাংশ এবং ৬ শতাংশ ভুক্তভোগীর বয়স ৩০ বছরের বেশি। উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভুক্তভোগী (মোট অভিযোগের ৬৪ শতাংশ) এবং চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ১৭ শতাংশ ভুক্তভোগী পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগ থেকে ৪ শতাংশ করে ভুক্তভোগী যোগাযোগ করেছেন। বরিশাল থেকে ৩ শতাংশ এবং রংপুর ও ময়মনসিংহ থেকে ২ শতাংশ করে ভুক্তভোগী যোগাযোগ করেছেন। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন নিয়মিত হটলাইনে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে কল পেয়ে থাকে। এখানে সাইবার স্পেসে হয়রানির শিকার ভুক্তভোগী নারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের অভিযোগ জানান। হটলাইন নম্বরে কলের মাধ্যমে সমস্যা শোনা হয় এবং আইনগত প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হয়। এটি ভুক্তভোগীদের জন্য প্রাথমিক কাউন্সেলিং হিসেবে কাজ করে। প্রাপ্ত অভিযোগের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাইবার অপরাধ প্রাথমিকভাবে তথ্যানুসন্ধান করে অভিযুক্তকে শনাক্ত করে। বাংলাদেশের যে স্থানে অপরাধী অবস্থান করছে বলে জানা যায়, সে স্থানের সংশ্লিষ্ট পুলিশ ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হয়। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযুক্ত কনটেন্টের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য গ্রহণ ও কনটেন্ট ডিলিটের জন্য রিপোর্ট করা হয়।

প্রাপ্ত অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানের সময় ভুক্তভোগীরা তাদের সমস্যার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ও প্রমাণ দিতে চান না। অনেকে তথ্য দিতে কালক্ষেপণ করেন। অনেকে যথাযথভাবে হয়রানির প্রমাণ দিতে পারেন না। তারা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডি বন্ধ বা কনটেন্ট ডিলিট করতে বেশি আগ্রহী থাকেন। সাইবার অপরাধ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে করা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অভিযুক্ত আইডির বিষয়ে সব সময়ে তথ্য পাওয়া যায় না, যা সাইবার অপরাধ তদন্তের অন্যতম সূত্র। এসব ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত মোট অভিযোগের মধ্য থেকে ৩৫২ জন অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয়েছে যারা দেশের বাইরে অবস্থান করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাহায্যে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। সাইবার স্পেসে নারীর হয়রানিরোধে ব্যক্তি সচেতনতার বিকল্প নেই। ব্যক্তিগত তথ্য আদান প্রদান, বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের তথ্য প্রকাশে সাবধান হতে হবে। সাইবার হয়রানির ধরন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া এবং ভুক্তভোগী কীভাবে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, অপরাধের প্রমাণ কীভাবে রাখবেন ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব হলে সাইবার স্পেসে নারীর হয়রানি অনেকাংশে হ্রাস পাবে। এ বিষয়ে সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। দিনে দিনে পাল্লা দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লেও আমাদের অনেক ব্যবহারকারীর নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা নেই। এ কারণে নিজের অজান্তেই অনেকেই অপরাধের শিকারে পরিণত হচ্ছেন। ইন্টারনেটে অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে তথ্য বা ব্যক্তিগত কন্টেন্ট শেয়ার করার বিষয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সময়ের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী বেড়ে চলা সাইবার অপরাধ দমনে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রয়াস একান্ত প্রয়োজন।

লেখক ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ বাংলাদেশ


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ