1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

পাকিস্তানি পতাকা হাতে এরা কারা?

কাওসার চৌধুরী : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২১

ডিসেম্বরের ঠিক আগ মুহূর্তে, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশে ক্রিকেট এবং হকি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার কেন যে এমন ইচ্ছা হলো বাংলাদেশ ক্রীড়া নিয়ন্ত্রক বোর্ডের- সেটা ঠিক বোঝা গেল না। ক্রিকেট সিরিজ নভেম্বরে হলেও হকি প্রতিযোগিতা ডিসেম্বরে হতে যাচ্ছে। ডিসেম্বর বাঙালির বিজয়ের মাস। এই মাসে সেই বিজয়টা হয়েছিল পাকিস্তানকে ৯ মাসের যুদ্ধে পরাজিত করে। এ বিষয়টি কি জাতীয় ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের নীতিনির্ধারকদের মনে তরঙ্গ তোলেনি! তার ওপরে এই ডিসেম্বরেই জাতি উদযাপন করছে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ৫০ বছরপূর্তি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী।
খেলায় জয়-পরাজয় থাকবেই। ক্রিকেটে বিশ্বের প্রায় সব দলকেই পরাজিত করেছে বাংলাদেশ। কিছুদিন আগে তো টি২০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে টাইগাররা তুলাধুনা করল বাংলাদেশের মাটিতেই। টি২০ বিশ্বকাপে (২০২১) রানার্সআপ নিউজিল্যান্ডকে বাংলাদেশ হোয়াইট ওয়াশ করেছিল- সে ইতিহাস খুব দূরের নয়। ভারত, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো শক্তিশালী দলকে পরাস্ত করেছে আরও আগেই। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ‘সুপার ১২’-তে দাঁড়াতেই পারল না কোনো দলের বিরুদ্ধে! খেলায় জয়-পরাজয় নিয়ে বড় ধরনের কোনো আক্ষেপ নেই। আক্ষেপ আছে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের এই ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে গ্যালারি এবং স্টেডিয়ামের বাইরে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো ঘটে গেল; তার পরম্পরায়।
গ্যালারিতে বাংলাদেশের ক’জন তরুণ পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে যে নর্তনকুর্দন এবং পাকিস্তানের প্রতি যে ধরনের ভালোবাসা প্রদর্শন করল, সেগুলো অত্যন্ত দৃষ্টিকটু, ঘোরতর আপত্তিকর এবং নিন্দনীয়। স্টেডিয়ামের বাইরে বিভিন্ন টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে তারা যা বলেছে, তা খুবই হাস্যকর এবং অগ্রহণযোগ্য। এমনটি জাতির প্রতি অবহেলা, অপমান এবং নিজের জন্মভূমির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া কিছুই নয়। যখন নিজ দেশের সঙ্গে অন্য কোনো দেশের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, তখন নিজের দেশকে সমর্থন না করে অন্য দেশকে সমর্থন করাটা নিন্দনীয় তো নিশ্চয়ই, অপরাধও বটে। এমন কাজ যারা করেছে, তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের সংবিধানে কোনো ‘অনুচ্ছেদ’ নেই। সে রকম কোনো অনুচ্ছেদ পৃথিবীর কোনো দেশের সংবিধানে নেই বলেই আমি নিশ্চিত। আইন দিয়ে শ্রদ্ধা-ভালোবাসা পাওয়া যায় না। নীতি-নৈতিকতা, দেশপ্রেম এগুলো হৃদয় থেকে উৎসারিত হতে হয়।
খুব বিস্ময় জাগে, যখন ভাবি, এই তরুণদের অভিভাবকরা কি জাতি হিসেবে নিজেদের জন্মের ইতিহাস তাদের সন্তানদের বলেননি? নাকি তারা নিজেরাও পাকিস্তানের প্রতিনিধি? তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযম ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে বসে ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি’ গঠন করে তাদের ‘রেখে যাওয়া আওলাদ’দের সঙ্গে নিয়ে আবারও ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল। বাংলাদেশকে আবারও তারা পাকিস্তানের অঙ্গীভূত করার অভিযান শুরু করে। যার রক্তাক্ত ভয়াবহ ফল পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাকাণ্ড, বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবারকে হত্যা। বিদেশে থাকার কারণে সেই সময়ে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা রক্ষা পেয়েছিলেন।
একটু পেছনে তাকাই। এই সেই পাকিস্তান; একাত্তরে যারা নিজেদের সৈন্যবাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে। দুই লাখ বাঙালি নারীকে ধর্ষণ করেছে; চার লাখ বাঙালি নারীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। পাকিস্তানিদের এই সম্মিলিত বাহিনীর গণহত্যা এবং নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশের এক কোটি নিরীহ মানুষকে দেশ ছেড়ে ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়ে কষ্টকর জীবন যাপন করতে হয়েছে দীর্ঘ ৯ মাস। সনাতন ধর্মের অনেককে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের অসংখ্য স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, মসজিদ-মন্দির-গির্জা-প্যাগোডা, সাধারণ মানুষের লাখ লাখ বাড়িঘর পাকিস্তানি এবং তাদের দোসরদের আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। পাকিস্তানের সেই সম্মিলিত বাহিনীর সব যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। সেই বিচারে কয়েকজনের শাস্তি কার্যকর হয়েছে, বাকিদের বিচারকাজ চলমান।
নতুন প্রজন্মের জানা উচিত, ভ্রান্ত ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব’কে ভিত্তি করে সেই যে ‘ভারত বিভক্তি’ হলো, যার ফলে লাখ লাখ মুসলমান এবং সনাতন ধর্মের মানুষকে তাদের নিজেদের জন্মভূমি ফেলে চলে যেতে হলো ধর্মের ভিত্তিতে গড়া ভারত কিংবা পাকিস্তানে। সেই ভ্রান্তির নিষ্ঠুরতা এবং গোঁড়ামির বেড়াজাল থেকে আমরা আজও মুক্তি পাইনি। যার গনগনে দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে পৌনঃপুনিক ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক অসহিষুষ্ণতাগুলো।
‘৭৫-পরবর্তীকালে খুব সুকৌশলে মুক্তিযুদ্ধ আর নতুন প্রজন্মের মাঝে দেয়াল তৈরি করে দেওয়া হয়। নতুন প্রজন্ম পড়ে যায় ইতিহাসের আড়ালে। ইতিহাসের পাতায় জমতে থাকে ঘন শ্যাওলা। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে গোদের ওপরে বিষফোঁড়া হয়ে এলো এই সেদিনের নতুন উপসর্গগুলো!
কেউ কেউ বলে থাকেন, খেলা তো খেলাই। এখানে রাজনীতি টানছেন কেন? তাদের জন্য বলি, পাকিস্তানি ক্রিকেট দল ঢাকার মাঠে অনুশীলনে যে তাদের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দিল, সেটা কি অরাজনৈতিক কোনো বিষয়? মিরপুর স্টেডিয়াম কি মরুভূমি? কিংবা সেই মাঠে কি ৭০-৮০টি দল অনুশীলন করছিল সেই সময়ে, যার ফলে পাকিস্তানি দলকে খুঁজে পাওয়ার জন্য জাতীয় পতাকা ধরেই এগোতে হবে? আমার এক বন্ধু বললেন, অনুশীলনে পাকিস্তানি পতাকা ওড়ানো, খেলার দিন গ্যালারিতে পাকিস্তানি পতাকা নিয়ে বাঙালি তরুণদের উল্লাস, বিজয়ের মাসের প্রাক্কালে ক্রিকেট এবং বিজয়ের মাসে হকি খেলার আয়োজন- এগুলো এক সুতোয় গাঁথা! তার আশঙ্কা যদি সত্যি হয় তাহলে বলতে হবে, আমাদের সামনে খুব কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। এখনই যদি এসব ষড়যন্ত্র শক্ত হাতে মোকাবিলা করা না হয়, তাহলে মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অনেক মহান অর্জন ভেসে যাবে ষড়যন্ত্রের কাদাজলে।
আগামী ২০ বছর পরে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেওয়া মানুষদের খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। প্রাকৃতিক নিয়মেই তারা হারিয়ে যাবেন। দেশ চলে যাবে সত্যিকার অর্থেই নতুন প্রজন্মের হাতে। তখনও নতুন প্রজন্ম বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কতখানি ধারণ করবে, লালন করবে, সেটা নির্ভর করছে আমরা কতখানি পোক্তভাবে তাদের হাতে এগুলো দিতে পেরেছি এবং তারা কতখানি আসলেই সেগুলো গ্রহণ করেছে তার ওপর। অন্য অনেক কিছুর পাশাপাশি এনব বিষয় অনেক গুরুত্ব দিয়ে ভাবার এখনই সময়।

লেখক: কাওসার চৌধুরী, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও অভিনেতা।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ