1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কেন বিদেশে হবে?

আমীন আল রশীদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২১

সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বর্ণনা করতে গিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বলেছেন, ‘বেগম জিয়া জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।’ তার সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান ২০ নভেম্বর ফেসবুকে লিখেছেন, খালেদা জিয়া তার পুরানো জটিল রোগগুলো ছাড়াও ডিকমপেন্স্যাটেড লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন।

শরীর থেকে রক্ত যেতে যেতে তার হিমোগ্লোবিন একেবারে কমে গেলে এবং রক্তবমি হতে থাকলে তাকে এবার হাসপাতালে নেয়া হয়। মারুফ কামাল খানের অভিযোগ: বেগম জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ এবং হার্ট, কিডনি ও চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি নিয়মিত চিকিৎসাধীন ও চিকিৎসকদের তদারকিতে ছিলেন। তাকে জেলে নেয়ার পর সব বন্ধ হয়ে যায়। উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হতে থাকে, তার অবস্থারও গুরুতর অবনতি ঘটে।

এ অবস্থায় কয়েকটি বিষয় ও প্রশ্ন সামনে আসছে।

১. বিএনপির দাবি ‘সুচিকিৎসার’ জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দেয়া হোক।

২. দণ্ডবিধির ৪০১ ধারা প্রয়োগ করে খালেদা জিয়ার শাস্তি মওকুফ করা হোক। এই ধারায় বলা হয়েছে, সরকার যেকোনো সময় বিনাশর্তে বা দণ্ডিত ব্যক্তি যা মেনে নেয় সেরূপ শর্তে যে দণ্ডে দণ্ডিত হয়েছে, সেই দণ্ডের কার্যকরীকরণ স্থগিত রাখতে বা সম্পূর্ণ দণ্ড বা দণ্ডের অংশবিশেষ মওকুফ করতে পারবেন। তার মানে হলো- আদালত কোনো নাগরিককে কোনো অপরাধের জন্য দণ্ড দিলেও সরকার তার নির্বাহী ক্ষমতাবলে ওই দণ্ড মওকুফ বা স্থগিত করতে পারবেন। এটি সরকারের একটি বিরাট ক্ষমতা।

৩. খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হলে অপরাধ স্বীকার করতে হবে। প্রশ্ন হলো- খালেদা জিয়া কেন তার ‘আপসহীন নেত্রী’র বিশেষণের সঙ্গে ‘আপস’ করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন এবং কেন নিজের অপরাধ স্বীকার করবেন?

৪. বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সাংবিধানিকভাবেই তার ক্ষমতা এতই যে, তিনি শুধু প্রাকৃতিক বিষয়গুলোর বাইরে সব করতে পারেন। সুতরাং তিনি চাইলেই বিএনপির দাবি অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া সম্ভব। কিন্তু তিনি কেন চাইবেন?

যিনি বিশ্বাস করেন এবং আদালত যেখানে রায়ও দিয়েছেন যে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তাকে (তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা) হত্যার জন্য যে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, সেটি তখনকার বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নির্দেশেই হয়েছে। সুতরাং যে দল তাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড মারল, সেই দলের শীর্ষ নেতার দাবি মেনে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর মতো মহানুভবতা তিনি কেন দেখাবেন? আমাদের দেশের প্রতিহিংসার রাজনীতিতে এই ধরনের মহানুভবতা বা পরমতসহিষ্ণুতা কবে ছিল?

৫. মির্জা ফখরুলের ভাষ্য জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণের সবশেষ পরিণতি হিসেবে যদি দেশের মাটিতেই খালেদা জিয়ার মৃত্যু হয়, তাহলে কী পরিস্থিতি তৈরি হবে এবং তার মৃত্যুর দায় সরকারের উপরে এসে পড়বে কি না?

৬. এখানে খালেদা জিয়ার মৃত্যু হলে তার দল কি সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করে দেবে? সেই ক্ষমতা তাদের আছে বা জনগণ তাদের সেই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে?

এসব প্রশ্নের নির্মোহ এবং পক্ষপাতমুক্ত উত্তর দেয়া যে কারো পক্ষেই কঠিন। তবে যে বিষয়টি এখন সামনে আনা দরকার তা হলো- খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য কেন বিদেশে নিতে হবে? দেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের উপরে তার বা তার পরিবার ও দলের কেন আস্থা নেই? দেশে কি তার রোগের চিকিৎসা নেই? যদি না থাকে তাহলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পঞ্চাশ বছরে চিকিৎসাব্যবস্থার কী উন্নতিটা হলো?

কেন স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশে এমন একটি চিকিৎসাব্যবস্থা গড়ে তোলা গেল না, যেখানে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সুচিকিৎসার নিশ্চয়তা দেয়া যায় এবং সেই চিকিৎসার উপরে তার পরিবার ও দলের পূর্ণ আস্থা রয়েছে? কেন দেশের এমপি-মন্ত্রী এমনকি মহামান্য রাষ্ট্রপতিকেও চিকিৎসা, এমনকি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্যও সিঙ্গাপুর যেতে হয়? কেন সামান্য একটু জটিল রোগ কিংবা দুর্ঘটনায় হাড়গোড় একটু বেশি ভাঙলেই তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠাতে হয়? কেন মেডিক্যাল কলেজগুলো থেকেও অসংখ্য রোগীকে ঢাকায় পাঠানো হয়? তাহলে এইসব মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা শহরের হাসপাতালগুলো রেখে লাভ কী?

খালেদা জিয়াকে বিদেশেই কেন নিতে হবে?

মারুফ কামাল খান লিখেছেন, খালেদা জিয়া তার পুরানো জটিল রোগগুলো ছাড়াও ডিকমপেন্স্যাটেড লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর দুটি মাত্র চিকিৎসা। স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন থেরাপি এবং তাতেও কাজ না হলে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা। এর কোনোটিই বাংলাদেশে সম্ভব নয় এবং করার সুযোগ নেই। তার দাবি, বর্তমানে খালেদা জিয়ার যে অবস্থা তাতে দেশে চিকিৎসার সুযোগ নেই বললেই চলে।

সরকারের তরফে বলা হচ্ছিলো, বিএনপি বা খালেদা জিয়ার পরিবার চাইলে তার চিকিৎসায় বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনতে পারে। কিন্তু এ বিষয়ে বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার গত ২৬ নভেম্বর রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে বলেছেন, বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনেও লাভ নেই। কারণ পরীক্ষার ল্যাব, যন্ত্রপাতি, হাসপাতাল সবই বাংলাদেশের— যার উপরে মানুষের আস্থা নেই। অতএব তাকে বিদেশেই নিতে হবে।

মুদ্রার অন্যপিঠ হলো- করোনার দুই বছরে দেশের মানুষ বিদেশে চিকিৎসা করাতে যায়নি বা যেতে পারেনি। এই সময়ের মধ্যে কি কেউ এমন কোনো অসুস্থ হননি যাতে করে তাকে বিদেশে নেয়ার প্রয়োজন ছিল? নাকি প্রয়োজন হলেও বাধ্য হয়ে তারা অপেক্ষা করেছেন?

এমন কোনো ঘটনা কি ঘটেছে যে, কোনো একজনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পারায় তার মৃত্যু হয়েছে? এরকম ঘটনা যদি ঘটে থাকে তাহলে তার সংখ্যা কত— সেটি কি কোনোদিন জানা যাবে? আর যদি এরকম ঘটনা না ঘটে থাকে, অর্থাৎ বিদেশে না গিয়েও যদি রোগ ভালো করা যায় তাহলে ভবিষ্যতে কি চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য-পরীক্ষার জন্য মানুষের বিদেশমুখিতা কমবে? ক্ষমতাবান ও পয়সাওয়ালারা কি চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য-পরীক্ষার জন্য আগের চেয়ে কম বিদেশে যাবেন বা এখন থেকে চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য-পরীক্ষা দেশেই করবেন?

ধরা যাক সরকার কোনোভাবেই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে দিল না এবং দেশেই তার মৃত্যু হলো। তারপর কী হবে? বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দেবে এবং সাধারণ মানুষ সেই ডাকে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নেমে যাবে? কেন নামবে? তার স্বার্থ কী?

আওয়ামী লীগের পতনের পরে বিএনপি ক্ষমতায় এলে সাধারণ মানুষের লাভ কী? তাছাড়া সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দল যেরকম সংগঠিত ও শক্তিশালী থাকা দরকার, বিএনপির সেটি আছে? গত কয়েক বছরে বিএনপি কোনো আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে?

লেখক: আমীন আল রশীদ, সাংবাদিক ও কলাম লেখক।


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ