1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সম্প্রীতির ঐতিহ্য

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২১

রুশ সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক লিও টলস্টয় বলেছিলেন, একটি দেশকে ধ্বংস করতে হলে সে দেশের মানুষের মধ্যে ধর্মের নামে লড়াই লাগিয়ে দিলেই চলবে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বহুবার এবং বহুভাবে ধর্মের বাড়াবাড়ি নিয়ে বাঙালিকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে ধরে/অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে।’ সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মকে কেন্দ্র করে কিছু পরিকল্পিত উন্মাদনা এমনকি সহিংসতার ঘটনায় টলস্টয় ও রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতি দুটি মনে পড়ে।

বাংলাদেশে সব ধর্মের, সব বর্ণ ও গোত্রের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করেছে। সম্প্রীতির এই ঐতিহ্য প্রকৃতিগতভাবে লালিত। বাঙালির ইতিহাসে যা কিছু মহৎ, যা কিছু বৃহৎ, তার সবটাই সম্প্রীতির অর্জন এবং এই শক্তি বাঙালির সভ্যতা নির্মাণ করেছে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটিয়েছে। সম্প্রীতি যখনই দুর্বল করা হয়েছে তখনই অকল্যাণ এসেছে। সাধারণ মানুষ কখনোই ধর্ম-সংঘাত তৈরি করে না; কোনো দেশেই করেনি। এমনটি করে স্বার্থান্বেষীরা। তারা কখনও রাজনীতি করে, কখনও ব্যবসা করে, কখনও অন্যের হয়ে ভাড়া খাটে কিংবা অন্ধতায় ভোগে। এই মাটিতে একবার নয়, আগেও বহুবার স্বার্থান্বেষী কিছু মহল সম্প্রীতির সহজাত বাঁধনে ফাটল ধরাতে চেয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে সফলও হয়েছে।

পাকিস্তান আমলে ব্যাপারটা ঘটেছে রাষ্ট্রশক্তির মাধ্যমে; পরিকল্পিতভাবে। কিন্তু যে সম্প্রীতি বাংলার মাটিতে সহজাত, সে কি হার মেনেছে? মানেনি। বাঙালি নতুন করে সংঘবদ্ধ হয়েছে; প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে বিভাজনের শক্তির বিরুদ্ধে। একটি কথা ভুলে যাওয়া উচিত নয়- পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিনির্মাণ হয়েছে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক জাতিসত্তার শক্তিতে, যা আমাদের জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি। কিন্তু সেই ভিত্তিতে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চলছে বারবার।

মুক্তিযুদ্ধ শেষে ভারতের শরণার্থী শিবির থেকে প্রায় এক কোটি দেশত্যাগী মানুষ, মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসে। ধ্বংস ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক নতুন বাংলাদেশ জেগে ওঠে। কিন্তু ওই জেগে ওঠা স্থায়ী হয়নি। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি। তার পর থেকে শুরু হয় উল্টো যাত্রা। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা আদিবাসীসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিপন্ন করতে শুরু করে। সাম্প্রদায়িকতা নতুন করে গ্রাস করতে থাকে সমাজকে।

স্বাধীনতার পর সবারই আশা ছিল, বাংলাদেশ হবে আধুনিক ও গণতান্ত্রিক। কিন্তু ১৯৭৫-এর পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অনেকটাই পাকিস্তানি ধারায় ফিরে যায়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সমাজ-প্রগতি ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে হত্যা করা হয়। জাতির পিতা চেয়েছিলেন বাংলাদেশ হবে গণতান্ত্রিক, সমাজতন্ত্রী, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক শক্তির টানা ১৩ বছর রাষ্ট্র শাসনের পরও সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়েছে, বলা যাবে না। বাংলাদেশকে আজও ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে। কারণ স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি সম্মিলিতভাবে অপচেষ্টায় লিপ্ত। এই অপতৎপরতা রুখতে প্রয়োজন সব মানুষের সম্মিলিত প্রয়াস। প্রয়োজন সম্প্রীতির, মনুষ্যত্বের পুনরাভিযান। সাম্প্রদায়িকতার অশুভ প্রবণতায় সামাজিক সহনশীলতা বিনষ্ট হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সংখ্যাগুরুর ধর্মীয় পবিত্রতা। অতএব দুষ্ট প্রবণতা থেকে সমাজকে মুক্ত করতেই হবে। এই মুক্তি সরকার একা দিতে পারে না। এ জন্য প্রগতিমনা সবাইকে এক কাতারে দাঁড়াতে হবে দলমত-ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে।

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও চেতনা সবল করতে হবে। বাংলাদেশ এমন এক রাষ্ট্র, যার ভিত্তি সব ধর্ম, সব বর্ণ, সব গোত্রের সম্প্রীতি। এই ভিত্তিকে যারা দুর্বল করতে চায়, তারা কেবল এই রাষ্ট্রেরই প্রতিপক্ষ নয়, তারা সভ্যতা ও মনুষ্যত্বেরও প্রতিপক্ষ। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ বলেছেন, আমরা হিন্দু ও মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি। জয় হোক মানবতার।

লেখক: শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ, সাংবাদিক। jsb.shuvo@gmail.com


সর্বশেষ - জাতীয় সংবাদ